তাসের আড্ডা ৪

মার্চ

১১, ২০১৭শুজা রশীদ

এই শনিবারে সাইদের বাসায় আড্ডা হল না, কারণ তার বাসায় পরের সপ্তাহে মেহমান আসবেন। ক’দিন নাকি থাকবেন তারা। সেই জন্য রুমা আগে থেকেই সরাসরি কবিরকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে তাসের আড্ডার কেউ যদি শনিবারে তার বাসার ত্রিসীমানার কাছে আসে তাহলে খবর হয়ে যাবে।  সাইদকে বলে নাকি কোন লাভ নেই কারণ তার অজুহাত হচ্ছে সে ‘ছেলেগুলোকে মানা করতে পারে না’। কবির বিপদে পড়ে যায়। তাকে ফোন করার অর্থ বাকি তাসাড়ু এবং আড্ডাবাজদেরকে নিষেধ করে দেয়া। সমস্যা হচ্ছে তারা শনিবারে তাস এবং আড্ডা হবে এই আশায় দিন গোনে। তাদের মন খারপ হয়ে যাবে।

বেশ কিছু ঝুট ঝামেলা হলেও শেষ পর্যন্ত রনির বাসায় খেলার ব্যবস্থা হল। রনির বেসমেন্ট ফিনিসড নয়। সুতরাং লিভিং রুমেই আস্তানা গাড়তে হল। তার স্ত্রী বেলার মেজাজ রুমার চেয়ে কিঞ্চিৎ ভালো হলেও বেশী শব্দ টব্দ তার পছন্দ হয় না।

তাস বাটতে বাটতে জালাল বলল, “আজকে মন দিয়ে খেলতে হবে। কোন রকম আলাপ টালাপ চলবে না। কথা বলতে গেলেই আমার ভুল ভাল হয়ে যায়। কবিরের বকা খেতে হয়।”

সাইদ বলল, “বেশী হৈ হট্টগোল হলে বেলাও ক্ষেপে যেতে পারে। শেষে খেলাটেলা ফেলে দৌড়াতে হবে।”

বেলা শুনে ফেলল। সে উপর থেকে গলা বাড়িয়ে বলল, “কেন সাইদ ভাই, আমি আপনাদের কখন বকা দিয়েছি? আমার বরটার কোন কান্ডজ্ঞান নেই, তাকে বকা দিতে হয়। আপনাদের ভয় পাবার কোন কারণ নেই।”

সাইদ তরী সামলানোর জন্য তাড়াতাড়ি বলল, “বেলা, আমি তো ঠাট্টা করছিলাম মাত্র।”

জালাল তাস বাট করেছে। সে কপট গাম্ভীর্য নিয়ে বলল, “তাস খেলতে এসেছেন, চুপচাপ খেলবেন। ঘরে বসে হাতী ঘোড়া মেরে কোন লাভ আছে?”

জিত হাসতে হাসতে বলল, “আরে বাহ, দাদা দেখি আজকে খুব সাধু বনে গেলেন!”

রনি নিজের হাতের তাস সাজাতে সাজাতে বলল, “ট্রাম্পকে নিয়েও কিছু বলা যাবে না? তাহলে তো জীবনটা ষোল আনাই  মিছা।”

জিত বলল, “আপনারা যাই বলেন, আমাদের জুনিয়র তো বেশ ভালোই দেখিয়ে দিয়ে এলো। তুমি বাবা ট্রাম্প, ভেবেছ জুনিয়রকে ট্রাম্প করবে, দেখ, আমাদের মন্ত্রী মশাই সব কুল রক্ষা করে দিব্যি ঘরে ফিরে এসেছে।”

কবির হাসতে হাসতে বলল, “দু’জনের হাত মেলানোর ছবিটা দেখেছেন? ট্রাম্পের বদভ্যাস হচ্ছে হাতে হাত ধরে রেখে টানাটানি করা। অপ্রস্তুত থাকলে হুমড়ী খেয়ে পড়ার অবস্থা হতে পারে। জাস্টিন মনে হয় আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েই গিয়েছিল। হাত মেলানোর সময় ট্রাম্পের একটা কাঁধে হাত দিয়ে রেখেছিল। টান দেবার সুযোগই দেয় নি।”

জালাল বলল, “মনে তো হচ্ছে কানাডার উপর তার নেক নজর আছে। বাবা, মেক্সিকোর সাথেই তুই যা রাগারাগি করবার কর। আমাদেরকে খামাখা ঝামেলায় ফেলিস না।”

রনি খুক খুক করে হাসল। “হ্যাঁ বাবা, হাজার হাজার মাইল দেয়াল দে আর বেড়া দে, যা ইচ্ছা কর। আমাদের বাড়া ভাতে ছাই দিস না।”

সাইদ বলল, “আরে আমাদের সাথে বেশী বিটলামী করলে সমস্যা আছে। ওরা যেমন আমাদের সবচেয়ে বড় খদ্দের, আমরাও তেমনি ওদের সবচেয়ে বড় খদ্দের। কিছু কিছু ব্যাপারে হয়ত ঝামেলা করতে পারে কিন্তু NAFTA তে বড় সড় কোন পরিবর্তন করতে গেলে তাকে কংগ্রেসে যেতে হবে। যার অর্থ আমারিকান কম্পানীগুলোর সাথে আলাপ আলোচনা হবে। আমাদের সরকার বেশ কিছু জিনিষের আমদানি নিয়ন্ত্রন করে – যেমন দুধ, পনির, পল্ট্রি, মদ ইত্যাদি । নতুন সরকার হয়ত চেষ্টা করবে চাপ দিয়ে নিয়ন্ত্রণটা কমানোর। দেখা যাক কি হয়। বেশী ভয় পাবার কিছু নেই। ”

জালালের তাস বাটা শেষ হয়েছ। সে বলল, “এবার মুখ বন্ধ করে খেলেন।  ট্রাম্প, জাস্টিন – কিচ্ছু চলবে না। আজকে খেলায় না জিতে বাসায় ফিরছি না।”

নিঃশব্দে এক হাত খেলা হল। জালাল গেম দিয়ে এক গাল হেসে বলল, “দেখলেন তো। মাথা ঠান্ডা করে খেললে কেমন ভালো খেলি।”

রনির হাত এবার ছিল লবডঙ্কা। সে ভ্রু কুঁচকে বলল, “আমার হাতে একটা পয়েন্ট পর্যন্ত ছিল না। আপনি গেম দেবেননা তো কি ভুতে দেবে?”

সাইদের বাট। সে শাফল করতে করতে বলল, “মাত্র তো খেলা শুরু। কিচ্ছু ভেব না। ওকে একটু উপরে তুলে দিয়ে মইটা সরিয়ে নেব।”

এক চোট হাসি হল। জালাল নির্বিকার গলায় বলল, “হিংসে হচ্ছে তাইত? আচ্ছা, এইবার বলেন মোশান ১০৩ নিয়ে কার কি ভাবনা? ”

জিত বলল, “এটা একটা খুবই ভালো ব্যাপার হচ্ছে। ট্রাম্প আসা অবধি হঠাৎ করে যেভাবে নানা ধরনের মুসলিম বিরোধী বিদ্বেষমূলক কাজ কর্ম শুরু হয়েছে, সেটাকে অবদমন করবার জন্য এই জাতীয় কিছু উদ্যোগের দরকার আছে। কুইবেকে কি হল চিন্তা করে দেখেন? সাধারণ মানুষেরা মসজিদে নামাজ পড়ছে, একটা অমানুষ কিভাবে তাদেরকে গুলি করে মারল! সবাই বলছে এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু আমার তা মনে হয় না। ওর মত আরোও অনেকেই আছে কানাডার আনাচে কানাচে কিংবা হয়ত আমাদের মধ্যেই, যাদের মধ্যেও সুপ্ত ঘৃণা আছে। আজ একজন হত্যাকান্ডে নেমেছে, কাল যে অন্য কেউ তার পদানুসরণ করবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়?”

জালাল বলল, “কনজারবেটিভরা খামাখা এটা নিয়ে কেন ঝেমেলা করছে বুঝতে পারছি না।”

সাইদ বলল, “তাদের ভাষ্য হচ্ছে শুধু ইসলামোফোবিয়া নিয়ে কথা বলা কেন? এটা তো অন্য যে কোন ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। সাধারণ মানুষদের ভেতরেও অনেকে সমর্থন করছে না।  তাদের ভয় , এই মোশনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তিতে যদি নতুন কোন আইন তৈরী করা হয় তখন হয়ত উগ্রপন্থী মুসলমানদেরকে নিয়ে কিংবা বিতর্কিত প্রথা নিয়ে সমালোচনা করলেও অপরাধ বলে পরিগণিত হবে। কোর্ট কাচারী হবে। কোন ধর্মেরইতো আর সব কিছু সবার কছে গ্রহণ যোগ্য নয়।”

কবির বলল, “জিত দা ঠিকই বলেছেন। গত কয়েক মাস ধরেই লক্ষ্য করছি এমনকি গ্রেটার টরন্টো এরিয়াতেও বেশ কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। আর কিছু না হোক মানুষের মনযোগ আকর্ষণ করবার জন্যেও এটার দরকার। আমরা ধরেই নেই কানাডাতে সবাই মিলে মিশে খুব সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বাস্তবে সেটা কতখানি সত্য?”

সাইদ বাট করেছে। নিজের হাত দেখে রনি ঠোঁট উল্টে ফেলল। আজকে কার মুখ দেখে উঠেছিল? সে হাতের তাস টেবিলে উলটে ফেলে বলল, “আমার কিন্তু এই ব্যাপারে একটু ভিন্ন মত আছে। জানি, দুনিয়াব্যাপি উগ্রপন্থী মুসলিমদের রক্তারক্তি কান্ড দেখে কারো কারো মনে হয়ত সামগ্রিকভাবে  মুসলমানদের প্রতি একটা ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে, যেটা খন্ডন করাটা এই দেশের মুসলিমদের অবশ্য করণীয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলামোফোবিয়া বলতে ঠিক কি বোঝায়? বিতৃষ্ণার বশবর্তি হয়ে মুসলিমদের প্রতি অযাচিত আচরণ করা, তাই তো? কিন্তু এই বিতৃষ্ণা তৈরী হচ্ছে কেন? মানছি, কিছু কিছু মানুষ আছে যারা এমনিতেই বৈরীভাবাপন্ন, মনে করে এই দেশ তাদের, নতুন ইমিগ্রান্টরা এসে সব ভেস্তে দিচ্ছে। তারা সবাইকেই অপছন্দ করে, মুসলিমদের হয়ত বেশী করে। আমার ধারণা কিছু কিছু সাধারণ মানুষদের মধ্যেও অল্পবিস্তর বিতৃষ্ণা তৈরী হয়েছে, প্রধানত ভীতিবোধ থেকে। ইউরোপে, মধ্য প্রাচ্যে, আমেরিকে এবং আমাদের কানাডাতেও বিচ্ছিন্ন ভাবে হলেও উগ্রপন্থী মুসলিমরা যে রক্তপাত ঘটিয়েছে এবং ঘটাতে চেয়েছে, সেটা তো আমরা সবাই জানি। একটা আশংকার মধ্যে ক্রমাগত থাকতে থাকতে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভয় কিন্তু বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যেও সংক্রামিত হতে পারে। আর ভয় থেকে যদি মানুষের মনে কারো প্রতি বিতৃষ্ণার সৃষ্টি হয়, তখন কিন্তু পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে। ”

জালাল নিজের তাস নিয়েই বেশী মশগুল ছিল। সে এক গাল হাসি দিয়ে বলল, “বাহ বাহ, এই না হলে তাস!”

জিত বলল, “আজকে জালাল দার কপাল বেশ ভালো যাচ্ছে মনে হচ্ছে।”

সাইদ খোঁচা দিয়ে বলল, “হাসো হাসো। পরে যখন আমরা ভালো হাত পাবো, তখন নাকের জল চোখের জল এক হবে।”

কবির আগের আলাপে ফিরে গিয়ে বলল, “আচ্ছা রনি ভাই, তাহলে আপনার কি মত? ইসলামোফোবিয়া নিয়ে আমরা কিছু করব না? চুপ করে থাকাটা কি আরোও খারাপ না?”

রনি বলল, “চুপ করে থাকার প্রশ্নই আসে না। এটা আমাদের সবার অস্তিত্বের ব্যাপার। কিন্তু আমার ব্যাক্তিগত অভিমত হচ্ছে  আমাদের গঠন মূলক কিছু করা প্রয়োজন। সাধারণ মানুষদের বোঝা দরকার যে আমরা সবাই একই নৌকার যাত্রী। তারা যেমন সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভীত, সে মুসলিম হোক আর খৃষ্টান হোক আর শিখ হোক, জাতি -ধর্ম-নির্বিশেষে আমরাও সেই একই ভয়ে ভীত। একজন নারীর মাথায় কাপড় দেবার অর্থ তারা নিপিড়ীত নয় কিংবা উগ্রপন্থী নয়। তারা তাদের নিজস্ব আচার-আচরণ-সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় চেতনায় উদবুদ্ধ হয়ে এই প্রথা পালন করেন। একইসাথে আমাদের সামগ্রিকভাবে উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে আরোও বেশী সোচ্চার হতে হবে। কানাডা থেকে ছেলেমেয়েরা মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছে ইসলামিক স্টেটের হয়ে যুদ্ধ করতে। তারা তো আমাদেরই কারো না কারো সন্তান। আমাদের দায়িত্ব তাদেরকে নিবারণ করা। মোশন বা আইন দিয়ে ভয় ভাংগানো যায় না,

সেই জন্য দরকার আমাদের সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা।”

জালাল বলল, “আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি। লাল ভাইতো আজ আসেন নাই। তার অনুপস্থিতিতেই বলতে হচ্ছে। উনি তো বিশ্বাস করেন মুসলমান ছাড়া আর কেউ বেহেশতে যাবে না। এখন একটা খৃষ্টান যদি এই কথা শোনে তাহলে সে কি ভাববে? এই জাতীয় বিশ্বাস বা অভিমতকে কি ধর্মীয় স্বাধীনতা বলে চালিয়ে দেয়া যাবে?”

সাইদ বলল, “ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট। কয়েক দিন আগে এক বাসায় গেছি মিলাদ পড়তে। সেখানে এক ভদ্রলোক এসেছিলেন মিলাদ পড়াতে। তিনিও এক পর্যায়ে এই কথা বললেন। অনেক মুসলিম পরিবারেই বিধর্মিদেরকে নিয়ে অনেক আপত্তিজনক কথাবার্তা বলা হয়। সেগুলো কি ঠিক? ফ্রান্সে এক শহরে এক তরুণী পাবলিক পার্কে বিকিনি পরে সান বাথ করছিল। সেই সময় পাঁচজন মুসলিম মেয়ে গিয়ে তাকে মারধোর করে। কারণ তার পোষাক আষাক তাদের পছন্দ হয় নি। এটা নিয়ে বেশ প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। আমরা যদি চাই অন্যরা আমদেরকে সম্মান করুক, আমদেরকে যথাযথ ইজ্জত দিক, তাহলে আমাদেরও কি একইভাবে আচরণ করা উচিৎ নয়? ঘরে এবং বাইরে?”

ফোন বেজে উঠল। কবিরের ফোন। লাল ভাই। “কবির ভাই, আমাকে ছাড়াই আজকে শুরু করে দিলেন আপনারা?”

কবির বলল, “আপনি কোথায়? চলে আসেন। রনি ভাই আপনাকে জানায় নাই? আজকে তো তার বাসায়।”

লাল ভাই হাসল। “কেন জানাবে না। আমি তো বউ নিয়ে আসছি। এই জন্য একটু দেরী হল। বেগম সাহেবের আবার একটু সময় লাগে সাজ গোজ করতে।”

কবির অবাক হয়ে বলল, “ভাবী আসছে? বেলা ভাবী জানে?”

লাল ভাই হাসল। “ভাবীতে ভাবীতে যোগাযোগ না হলে তাদেরকে কি কোথাও নেয়া যায়? মহিলাদের কি যেন একটা প্ল­্যান হয়েছে।”

কবির ফোন রাখতে জালাল বলল, “কি ঘটনা? লাল ভাইয়ের অনুপস্থিতির কারণ কি?”

কবির রনিকে লক্ষ্য করে বলল, “ভাবীকে নিয়ে আসছে। ভাবীদের নাকি কি প্রোগ্রাম ঠিক হয়েছে।”

রনি কপাল কুঁচকাল। “তাই নাকি? বেলা তো আমাকে কিছু বলে নি। তাস খেলব বলে কি ঝাড়িটাই না দিল। এখন আবার নিজেরা প্ল­্যান করে বসে আছে!”

সাইদ নীচু গলায় বলল, “প্ল­্যান করলেই তো ভালো। নিশ্চিন্তে খেলা যাবে। আগে বললে তো আমি রুমাকেও নিয়ে আসতাম। ”

বেলা নীচে নেমে এলো। “আপনাকে কিচ্ছু করতে হবে না সাইদ ভাই।  আমরাই তাকে তুলে নেব।”

রনি বলল, “যাচ্ছো কোথায়? নিশ্চয় খাওয়া দাওয়া।”

বেলা মুচকি হাসল। “দশ পদের ভর্তা খেতে যাচ্ছি। তুমিতো আবার ওসব পছন্দ কর না। সুতরাং মন খারাপ কর না। তাস খেলে পেট ভরাও।”

জালাল বলল, “বেলা ভাবী, রুমা ভাবীর বাসায় গেলে কিন্তু আমাদেরকে অনেক ধরণের নাস্তা খাওয়ায়। “

বেলা বলল, “আমার এখানেও পাবেন। ধৈর্য ধরেন। লাল ভাই-ভাবী আসুক। তখন দেব।”

রনি বলল, “আর কে কে যাচ্ছে?”

মুখ ঝামটা দিল বেলা। “তোমার এতো খবরের দরকার কি? যা করছ কর।”

রনি বলল, “বাচ্চাদেরকে নিয়ে যাচ্ছ তো? ওদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা কিন্তু আমি করতে পারব না।”

বেলা ভ্রু কুচকাল। “তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না। ওরাই যা করার করে নেবে। কি যেন আলাপ করছিলে তোমরা শুনলাম, ইসলামোফোবিয়া নিয়ে।”

কবীর বলল, “হ্যাঁ ভাবী। রনি ভাই বলছে এসব নিয়ে বেশী বাড়া বাড়ি না করতে।”

বেলা বিড়বিড়িয়ে বলল, “তাতো বলবেই। নামাজ কালামের নাম নেই।”

রনি বিরক্ত গলায় বলল, “আরে, তুমি আমার পেছনে লেগেছ কেন?”

এক পশলা হাসি হল। রনি তাড়া দিল, “আরে, ডাক দেন তো। কার ডাক? খেলার সময় যত ঝামেলা।”

বেলা রনিকে ক্ষেপানোর জন্য বলল, “এরপর থেকে আমরা মেয়েরাও তোমাদের সাথে বসব আড্ডা দিতে। সাইদ ভাই, ট্রাম্প আর শোয়ার্জেনেগারের ফাইট্টা কেমন লাগল? ”

সাইদ হাসতে হাসতে বলল, “তুমি পড়েছ?”

“এমন মজার একটা ব্যাপার পড়ব না! শোয়ার্জেনেগার একেবারে এক ঘুষিতেই নক আউট করে দিয়েছে ট্রাম্পকে।”

জালাল বলল, “কোনটার কথা বলছেন, ভাবী? মনে হচ্ছে আমি মিস করেছি।”

বেলা বলল, “শোয়ার্জেনেগারের টিভি প্রোগ্রাম এপ্রেন্টিস-এর রেটিং  নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিল ট্রাম্প। তখন শোয়ার্জেনেগার পালটা বলে, ‘এসো, আমরা স্থান বদল করি। তুমি এপ্রেন্টিস কর আর আমি প্রেসিডেন্ট হই । মানুষ জন আবার একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে…”

কলিং বেল বাজছে। বেলা দরজা খুলতে গেল। লাল ভাই এবং আলেয়া ভাবী। লাল ভাই ছেলেদের সাথে যোগ দিল। আলেয়া গেল বেলার সাথে ফ্যামিলি রুমে।

কবির বলল, আপনাকে খুব মিস করছিলাম আজকে। একটু আগেই ইসলামোফোবিয়া নিয়ে খুব আলাপ জমে গিয়েছিল…”

রনি সারেন্ডার করল। “থাক, আর পাগল ক্ষেপিও না। ভয়ে মসজিদে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।”

লাল ভাই তীব্র স্বরে প্রতিবাদ করল। “এই কথাটা ঠিক বললেন না। কয়দিন শরীরটা ভালো ছিল না তাই একটু বন্ধ রেখেছি।”

জিত বলল, “লাল ভাই, এটাতে এতো লজ্জা পাবার কিছু নেই। এতো বড় একটা ঘটনা ঘটল, সবারই একটু সাবধান হওয়া উচিৎ। সন্ত্রাসীর তো আর জাত, ধর্ম, দিন-ক্ষণ নেই। যদিও তারা ব্যাটাকে সন্ত্রাসী বলে নি, কিন্তু আমি তো কোন ফারাক দেখি না। ”

সাইদ বলল, “কেউ যদি কোন বিশেষ মতাবলম্বী হয়ে সন্ত্রাসমূলক কাজকর্ম করে তাহলে তাকে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে।  এই ক্ষেত্রে মনে হয় সেটা প্রমাণিত হয় নি। এটা স্রেফ বিদ্বেষমূলক।  কিন্তু কি নামে ডাকা হল সেটা দিয়ে কি আসে যায়? সাবধানের মার নেই। মসজিদে নামাজ পড়ার সময় পাহারাদার রাখা উচিৎ।”

লাল ভাই বলল, “আল্লাহর নাম নিয়া যাই। যা হবার হবে। যদিও কয়েক দিন যাই নাই। মিথ্যা বলব না। শরীরটা একটু খারাপ ছিল। ভয়ও একটু ছিল। এখন আবার যাচ্ছি।”

আলেয়া মনে হয় আলাপ শুনে উঠে এসেছিল। সে বলল, “লিবারেল এমপি ইকরা খালিদ কেমন জঘন্য জঘন্য মেসেজ পেয়েছে দেখেছেন আপনারা? মোশন ১০৩ তারই তৈরী। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় কানাডাতে এই ধরণের মানুষ বসবাস করে। গালাগালি করছে, বেরিয়ে যেতে বলছে, এটা নাকি আমাদের দেশ না। এতো বছর পর এই সব কথা উঠছে? সবই কি ট্রাম্পের দোষ নাকি এই মনভাব সব সময়েই ছিল?”

সাইদ বলল, “একটা গ্রুপের মধ্যে এই ধরণের চিন্তা ভাবনা নিশ্চয় সব সময়েই ছিল। কিন্তু তারা এতো দিন চুপ করে ছিল। এখন চারদিকে ডানপন্থীদের চোটপাট দেখে হয়ত তাদের মনে হচ্ছে এটাই উত্থানের সময়। ট্রাম্পের প্রভাব তো অবশ্যই আছে, কিন্তু শুধু তাকে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। হয়ত আমাদের সবারই অল্প বেশী দোষ আছে। আমরা এতো বছর ধরে এখানে আছি, আমাদের কয়জন এদেশীয় বন্ধু বান্ধব আছে? আমরা না পেরেছি এদের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে, না পেরেছি ওদের সাথে ওঠা বসা করতে সাংস্কৃতিক বিভেদের জন্য। বিশ বছর আর চল্লি­শ বছর – দূরত্ব কিন্তু একটুও কমে নি।”

কবির বলল, “কিন্তু আমাদের তো মাল্টাই ন্যাশনাল দেশ হবার কথা। আমারা যার যার ধর্ম, ভাষা এবং সংস্কৃতি নিয়ে সহাবস্থান করব।  এটা নিয়ে তো কোন বিতর্কের অবকাশ নেই।”

সাইদ হাসল। “মাল্টাই ন্যাশনালিজমের মধ্যেও কিছু কিছু জিনিষ থাকতে হবে যেটা বন্ধনের সৃষ্টি করবে। কখন সেটা ভাষা হতে পারে, কখন ধর্ম, আবার কখন সংস্কৃতি। ক’দিন আগেই একটা সার্ভে করা হয়েছিল। কোন বিষয়টাকে একটি দেশের মানুষ একাত্ব হবার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। অধিকাংশ দেশেই এসেছে ভাষা কিন্তু কানাডায় অধিকাংশ মানুষ বলেছে সংস্কৃতি। আমরা কি সেই একাত্মতা, সেই বন্ধন সৃষ্টি করতে পেরেছি?”

রনি মাথা নাড়ল। “বিন্দু মাত্র না, বরং আমরা দিনকে দিন নিজেদেরকে আরোও দূরে সরিয়ে নিচ্ছি। দেখা যাচ্ছে আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে বিশেষ স্কুলে পাঠাচ্ছি, মুসলমানদের জন্য পৃথক এলাকা তৈরী করবার চেষ্টা করছি, অনেক ক্ষেত্রেই ছেলেমেয়েদেরকে উন্মুক্ততার পরিবর্তে সংকীর্ণ করে তুলছি। শুধু অন্যদেরকে দোষারোপ করে কোন সমস্যার সমাধান হয় না।  নিজেদেরও চেষ্টা করতে হয়।”

বেলা প্রতিবাদ করল, “বাবা মা হিসাবে আমাদের একটা দায়িত্ব আছে না? আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে আমরা আমাদের বিশ্বাস এবং মানসিকতা দিয়ে বড় করব না? এদের মত করে লাগাম ছেড়ে দেব? যাও, যা ইচ্ছে করে বেড়াও! দশজনের সাথে ডেটিং করে বেড়াও? প্রশ্নই আসে না। আমার ছেলেমেয়েদের আমি কিছুতেই ওরকম হতে দেব না।”

রনি বলল, “আরে, শুধু কথা হচ্ছে, খেলা টেলা হচ্ছে না।”

বেলা বলল, “দেখেছেন, যখন কথায় পারে না তখন কিভাবে ঘুরিয়ে ফেলে।”

রনি বিরক্ত কন্ঠে বলল, “আরে, না পারার কি হল? যা সত্য তাই বলছি। সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোন দেশে মাথা উঁচিয়ে বসবাস করা যায় না। একটা যোগাযোগ প্রতিষ্ঠীত করতেই হবে। তার মানে এই নয় যে সব কিছুতে অন্যদেরকে অনুসরণ করতে হবে, কিন্তু সব খানে গিয়ে নিজেদের ghetto তৈরী করাও ঠিক নয়।”

বেলার ফোন এসেছে। রুমা। তারা কখন আসবে জানতে চাইছে। বেলা আলেয়াকে নিয়ে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেল। জিত পিছু ডাকল, “বৌদি, আমাদের চা নাস্তা!”

বেলা হাসতে হাসতে বলল, “একটু কষ্ট করে বানিয়ে নিন ভাই। আপনাদের বন্ধুকে বলেন। সব সময় তাস খেলছেন, একটু খাতির যতœ করবে না?”

লাল ভাই বলল, “কার হাতে আমাদেরকে ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছেন ভাবি। কপালে কিছুই জুটবে না।”

বেলা হাসতে হাসতে দরজা লাগিয়ে চলে গেল। রনি গলা বাড়িয়ে জানতে চাইল, “ফিরবে কখন?”

কোন জবাব এলো না।

জালাল বলল, “আচ্ছা, এবার একটু খেলা যাক। খেলতেই তো পারলাম না। বাট কার?”

জিতের বাট। সে দ্রুত বাট করল।

রনি তিক্ত গলায় বলল, “এবার একটু ভালো কার্ড আয়। একেবারে ট্রাক চাঁপা পড়ছি আজকে।”

হাত দেখে সে বিরক্ত হয়ে বলল, “চা বিরতি। এই হাত ভন্ডুল।”

জালাল তারস্বরে প্রতিবাদ করল, “কিসের চা বিরতি। বসেন। নির্ঘাত গেম হবে এবার।”

জালাল একাই চব্বিশ পয়েন্ট পেয়েছে। সে একাই কল দিল। সহজেই গেম হল। আকর্নবিস্তৃত হাসি দিয়ে বলল, “বলেছিলাম না গেম হবে। দেখলেন?”

রনি গম্ভীর গলায় বলল, “আপনার আজকে কোন চা নাস্তা নাই।”

হাসির হল্লা উঠল। জামালের বাট। সে বাটতে বাটতে বলল, “আচ্ছা, আমাদের জাস্টিন ট্রুডোতো বলেছিল ইলেকটোরাল রিফর্ম করবে। এখন তো পিছিয়ে গেল। এটা নিয়ে আপনাদের কি অভিমত?”

জিত বলল, “ইলেকশনে জিতে কেউ রিফর্ম করে? দেখা যাবে রিফর্ম করে শেষে হারু পার্টি হয়ে গেছে। আমি জাস্টিন হলে আমিও তাই করতাম।”

জালাল বলল, “কিন্তু সে যে

কথা দিয়েছিল, তার কি হল? ভোটের আগে কথা দিয়ে পরে সেই কথা না রাখাটা কি ঠিক? তাহলে তাকে আমরা ভোট দিলাম কিসের উপর ভিত্তি করে?”

সাইদ বলল, “সব সময় যে কথা রাখতেই হবে এমন কোন কথা নেই। মাঝে মাঝে হয়ত না রাখাটাই ভালো। আমেরিকার দিকে তাকিয়ে দেখ। ট্রাম্প যা যা কথা দিয়েছিল সেগুলো রাখার জন্য একেবারে মরীয়া হয়ে উঠেছে, তাতে দেশের ভালো হল কি খারাপ হল, সেদিকে পর্যন্ত খেয়াল নেই। মেক্সিকোতে দেয়াল দেবে। খরচ হবে পঁচিশ বিলিয়নের মত। অথচ সবাই বলছে যদি কিছু দিতেই হয় বেড়া দাও। পাঁচ বিলিয়ন খরচ, কাজও করে দেয়ালের চেয়ে ভালো কারণ ওপাশে কি হচ্ছে দেখা যায়। ব্যাটা গাড়োল এখন পর্যন্ত দেয়াল-দেয়াল করছে। ওর ইমিগ্রেশন একজেকিউটিভ অর্ডার যেমন দুই কোর্টে গিয়ে ধরা খেল। বোঝাই যাচ্ছিল এটা কোর্টে টিকবে না। সুতরাং জাস্টিন হয়ত একদিক দিয়ে ঠিকই করেছে। এখন কানাডার সামনে একটু অনিশ্চিত সময়। ইলেকটোরাল রিফর্ম নিয়ে ব্যস্ত হবার কোন কারণ নেই। তাছাড়া একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে দুই তৃতীয়াংশ মানুষ এখনকার ভোট ব্যবস্থায় মোটামুটিভাবে সন্তুষ্ট।”

রনি বলল, “ভোট তো দেয়ই না অনেকে। ২০১৫ তে সবচেয়ে ভালো ভোটার টার্ন আউট হয়েছিল, তাও ৭০% এর নীচে। সেই ৭০ % এর দুই তৃতীয়াংশ মানে পুরো জনসংখ্যার ৫০% এর চেয়েও কম।  যার অর্থ বাকী অর্ধেক জনগন হয়ত অন্য কিছু চায়।  গত ভোটের কথাই যদি ধরেন, মোট ৪০% এর মত ভোট পেয়ে লিবারেলরা জিতেছে ১৮৪ টা সিট, আর কনজারবেটিভরা ৩২% এর মত ভোট পেয়ে জিতেছে মাত্র ৯৯ টা। এটা কি কোন যুক্তিগত নিয়ম হল? এর অর্থ হচ্ছে জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে সীট বিতরণ হচ্ছে না। আমেরিকাতেও একই সমস্যা হয়েছে গত ভোটে। হিলারী দুই মিলিয়নের মত বেশী ভোট পেয়েও হারু পার্টি। এখন কথা হচ্ছে, গণতন্ত্র আমরা বলছি সংখ্যাগরিষ্ঠতার মতামতের উপর নির্ভর করে, অথচ আসলে তা হচ্ছে না।”

লাল ভাই বলল, “গত ইলেকশোনে হেরে গিয়ে রনি ভাইয়ের সেই যে মেজাজ খারাপ হয়েছে, এখনও ঠিক হয় নি।”

রনি বলল, “হেরেছি তো ভাই আমাদের নিজেদের জন্যই। বিল C-24 ই আমাদের কাল হল। তাছাড়া হারপারও তো অনেকদিন থাকল ক্ষমতায়। মানুষ একটা পরিবর্তনও চাচ্ছিল। আমার ভাই জাসটিনকে নিয়ে কোন সমস্যা নেই। অন্তত এখনও না। কিন্তু হলিউডের নায়কদের মত দ্যুতি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এক ব্যাপার আর সব কুল রক্ষা করে দেশ চালানো আরেক ব্যাপার। যেখানে ২০৪০ সালে আমাদের federal debt চুকে যাবার কথা ছিল সেখানে এখন ২০৪৫ সালে ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার ঋন থাকবে। দেখা যাক কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়।”

কবির উঠল। “রনি ভাই, আপনি আমাদের কে আপ্যায়ন করবেন সেই আশা নেই। আমিই যাচ্ছি। কে কি খাবেন বলেন?”

সবার অর্ডার নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল কবির। লাল ভাই গেল নাস্তার সন্ধানে। রনি বলল, “ফ্রিজে মিষ্টি আছে। ওগুলোতে যেন হাত দেবেন না। আমার ফেভারিট।”

সাইদ বলল, “কালো জাম হলে আমার জন্য দুটা নিয়ে আসেন।”

জালাল বলল, “আমিও দুইটা।”

রনি বিড়বিড়িয়ে বলল, “বলাই ভুল হয়েছে। লাল ভাই হয়ত দেখতই না।”

লাল ভাই পুরা মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে এসে হাজির হল। “যত ইচ্ছা খান। রনি ভাইয়ের কৃপা। একটু দোয়া করবেন তার জন্য।”

রনি সবার আগে নিজেই পুরো একটা মিষ্টি গালে ঢুকিয়ে ফেলল। “মারাত্বক!”

লাল ভাই প্লেট, চামচ নিয়ে এল। প্লেটে একটা মিষ্টি তুলে, চামচ দিয়ে একটুখানি কেটে মুখে দিয়ে বলল, “আলহামদুলিল্লাহ্। দেশী মিষ্টির চেয়ে ভালো আর কি আছে? জিত দা, একটা জোক বলেন। মিষ্টি খেতে খেতে একটা জোক শুনতে মন চায়।”

জিত বলল, “এখন তো ট্রাম্পকে বাদ দিয়ে কোন জোক হয় না। দুইটা জোক বলছি। কিন্তু বলার আগে একটা সতর্কবাণী,  বর্ডারের ওপারে যাবার প্ল­্যান থাকলে ফোনে, ল্যাপটপে কোথাও যেন ট্রাম্প সম্বন্ধে কোন হাসি ঠাট্টার কিছু না থাকে। তারা নাকি চেক করছে। ঢুকতে দিচ্ছে না। এইবার জোকগুলা বলি। প্রথম জোকটা একটা মেক্সিকান ছেলেকে নিয়ে। সে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে দেখা করতে এসেছে। দেখা হতে সে বল্ল, ‘আমি একদিন প্রেসিডেন্ট হতে চাই।’

ট্রাম্প তার কথা শুনে মুখ বাঁকিয়ে বলল, “তুমি কি গাধা, না গরু, না পাগল, না ছাগল?”

ছেলেটা মন খারাপ করে বলল, “থাক, আমি আর হতে চাই না। প্রেসিডেন্ট হবার জন্য এতো কিছু লাগে তাতো জানতাম না।’ ”

জিত লাজুক গলায় বলল, “পরের জোকটা একটু নাজুক প্রকৃতির। নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন।”

জালাল বল্ল, “আর ঢং করবেন না। তাড়াতাড়ি বলেন।”

“এখন তো শীতকাল। রাতে খুব তুষার পড়েছে। হোয়াইট হাইজের লন তুষারে ঢেকে গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে তাকিয়ে দেখে লনের তুষারের উপর প্রস্রাব দিয়ে কেউ লিখে রেখেছে ‘Donald Trump sucks’। দেখে প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে তার সব সিকিউরিটি স্টাফকে ডেকে পাঠাল। ‘আমার লনে আমার নামে বাজে কথা লিখেছে কেউ। যেভাবে হোক বের কর কার এতো বড় বুকের পাটা।’

সিকিউরিটি স্টাফরা খুব ছুটাছুটি করে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রহস্য বের করে ফেলল। ট্রাম্পকে খবর দেয়া হল। ট্রাম্প বলল, ‘বল, কে সে? কার এতো সাহস?’

সিকিউরিটি স্টাফরা কেউ কিছু বলছে না। শেষে বার কয়েক ধমক খাবার পর একজন বলল, ‘স্যার, দু’টা খবর আছে। একটা খুব খারাপ, আরেকটা ভয়ানক খারাপ। কোনটা আগে শুনবেন?’

‘খুব খারাপটা আগে দাও।’

‘স্যার, প্রস্রাবটা মাইক পেনসের।’

‘কি? ছিঃ ছিঃ… শেষ পর্যন্ত আমার ভাইস প্রেসিডেন্ট… আচ্ছা ভয়ানক খারাপ খবরটা কি?’

সিকিউরিটি অফিসার আমতা আমতা করে বলল, ‘স্যার, হাতের লেখাটা মেলানিয়ার।’ ”

শুজা রশীদ, টরন্টো