তাসের আড্ডা – ৩

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭

শুজা রশীদ

রূমা এই সপ্তাহে গেছে মন্ট্রিয়লে তার বোনের বাসায় বেড়াতে। সাইদের বাসায় বিশাল পার্টি বসে গেছে। বিকাল হতে পারে নি সবাই হাজির। সাইদ অবশ্য আগেই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে, চা নাস্তা খেতে চাইলে নিজেরা বানিয়ে নেবে। সে কাউকে খাতির করতে পারবে না। নিজের স্ত্রীকেই কখন করে না (এবং যে কারণে প্রচুর গঞ্জনা সহ্য করতে হয়) আর বন্ধু -বান্ধব! তাতে অবশ্য কেউ কোন আপত্তি করে নি। রূমা ভাবীর ফ্রিজে এবং কিচেন কেবিনেটের মধ্যে রাজ্যের খাবার দাবার সবসময় মজুত থাকে। বিশেষ সমস্যা হলে পিজ্জা অর্ডার দিলেই হবে।

আজ লাল ভাই সবার আগে এসে হাজির হয়েছে। তার বিবি সাহেব নাকি সকাল থেকে বান্ধবীদের নিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরছে। তার সময় কাটছিল না। সাইদকে একটা কল করে বিকাল হবার আগেই সে চলে এসেছে। আসা অবধি সবাইকে কল করে করে মাথা খারাপ করে ফেলছে। তার যন্ত্রণাতেই হোক আর পুরো বাড়ী নিজেদের হাতে পাবার আনন্দেই হোক,  রনি জালাল, কবির এবং জিত ছয়টা বাজার আগেই হাজির হয়ে গেল।

রূমা বাসায় না থাকায় সবার মধ্যে একটা মুক্ত মুক্ত ভাব দেখা যাচ্ছে। গলা নামিয়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই। কবির খেলা শুরু হবার আগেই উপরে গিয়ে সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এলো, সাথে যেখানে যা খুচরা খাবার পাওয়া গেল সব তুলে নিয়ে এলো। রূমা সারা সপ্তাহ বাসায় ফিরছে না, সুতরাং এইসব ছুটকা ব্যাপার সে ফিরে এসে ধরতে পারবে না।

আজকে জালাল প্রথম বাট করতে শুরু করল। সে সময় নিয়ে শাফল করছে। তার কাজকর্ম বরাবরই একটু ধীর স্থির। তার ধীরতা দেখে রনি অধৈর্য হয়ে অন্য আলাপ শুরু করল। “ট্রাম্প এবং তার সিক্রেট ডোশীয়ার সম্বন্ধে কার কি অভিমত?”

কবির হতাশ ভঙ্গীতে মাথা নাড়ল। “আগামী চার বছরে কত নাটক যে হবে আমি শুধু সেটাই ভাবছি। প্রস্টিটিউট, ঘুষ, রাশানদের সাথে আঁতাত করে ডেমোক্রাটদের কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করা – এতো একেবারে তৃতীয় বিশ্বের কেচ্ছা।”

সাইদ মুচকি হেসে বলল, “ভুলে যেও না, এইসবের কোন কিছুই কিন্তু প্রমাণিত হয় নি।”

রনি বাঁকা গলায় বলল, “এই জাতীয় তথ্য সন্দেহতীতভাবে প্রমাণ করাটা একরকম অসম্ভবই বলা যায়। বিশেষ করে রাশিয়ানরা যদি সত্যিই জড়িত থাকে তাহলে তারা কোন ভাবেই সত্য বেরিয়ে আসতে দেবে না। ক্রিস্টোফার স্টিল, প্রাক্তন ব্রিটিশ স্পাই, যে ট্রাম্পের উপর এই ডোশীয়ারটা তৈরী করেছে, সে তার পেশায় সম্মানিত। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে এসব তথ্য বের করেছে। ট্রাম্প ব্যাটা তো প্রথমে স্বীকারই করছিল না যে দুই পাতার সামারি রিপোর্টটা তাকে দেখানো হয়েছিল। পুটিনের সাথে এই ব্যাটার গলায় গলায় ভাব। একে বিশ্বাস করা যায় না।”

সাইদ বলল, “এই জাতীয় ব্যাপার এতো সহজে বিচার করা যায় না। প্রমাণ যদি না করা যায় তাহলে কিসের উপর ভিত্তি করে একশন নেয়া যাবে? তাছাড়া ভুলে যেও না, এই পুরো এসাইনমেন্টের পেছনে প্রথমে ছিল ট্রাম্পের রিপাব্লিকান কোন প্রতিদ্বন্দ্বী, পরে হিলারীর টিম। আরেকটা বড় সমস্যা হল, স্টিলের সোর্স – মাইকেল কোহেন – ট্রাম্পের উকিলদের একজন, সরাসরি বলছে সে কখন প্রাগে যায়ইনি। স্টিলের ভাষ্য অনুযায়ী মাইকেল কোহেন প্রাগে গিয়ে আলেগ সলদুখিন নামে একজন রাশীয়ান অফিসিয়ালের সাথে দেখা করেছিল।  আলেগও বলছে সে কখন মাইকেল কোহেনের সাথে দেখা করে নি।”

জালাল বলল, “আচ্ছা, সত্যি কি মিথ্যা সেটা না হয় প্রমাণ করা গেল না, কিন্তু একটা কথা বলেন, সে প্রেস কনফারেন্সে যেভাবে ঈঘঘ কে কোন ঠাসা করল, এটা কি ঠিক হয়েছে?”

সাইদ বলল, “কোন প্রমাণ ছাড়া তাদের কি এই খবর ছাপানো ঠিক হয়েছে? তোমাদের কি মনে হয়?”

জিত বলল, “এটা তো একেবারে উড়ো খবর ছিল না। সিক্রেট সার্ভিস এটাকে গুরুত্ব দিয়েছে। স্বীকার করছি সব খবর মাধ্যমগুলো যদি প্রমাণ ছাড়া এই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ খবর ছাপাতে শুরু করে, তাহলে ভালোর চেয়ে মন্দই বেশী হবে। সংবাদ মাধ্যমগুলোর উপর থেকে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে, কিন্তু তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিমিত প্রমাণ নিয়ে হলেও কিছু তথ্য পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয়াটা সাংবাদিকদের দায়িত্ব। সামান্য কত খবর থেকেই তো কত বড় বড় তথ্য বেরিয়ে আসে।”

সাইদ বলল, “কিন্তু এখনকার সময়ে ভুয়া খবরও একটা ভয়ানক সমস্যা হয়ে দাড়াচ্ছে, সেটা ভুলে যেও না। সংবাদ মাধ্যমগুলোর ভীষণ সতর্ক হওয়া উচিৎ। পাকিস্তানের ডিফেন্স মিনিস্টার খাজা আসিফের কথাতো নিশ্চয় মনে আছে?”

কবির বলল, “খবরটা পড়ে খুব মজা পেয়েছিলাম। AWDNews  একটা ভুয়া খবর ছেপেছিল। ইস্রায়েলের ডীফেন্স মিনিস্টার মশে ইয়ালন নাকি বলেছিল পাকিস্তান যদি সিরিয়ায় সৈন্য পাঠায় তাহলে ইস্রায়েল নিউক্লিয়ার বম্ব মেরে পাকিস্তনকে ধুলায় মিশিয়ে দেবে। সে খবর দেখে খাজা সাহেব পাল্টা হুমকী দিল, ইস্রায়েল যেন ভুলে না যায় পাকিস্তানেরও নিউক্লিয়ার বম্ব আছে। ”

জালাল অবাক হয়ে বলল, “বল কি? এটা তো দেখি নি। ভুয়া খবর দিয়ে যুদ্ধ বাধিয়েও দেয়া যায় তো!”

রনি বলল, “আপনি যদি শাফল করা বন্ধ করে বাট শুরু না করেন তাহলে এখানে কিন্তু যুদ্ধ বেঁধে যাবে।”

“করছি, করছি, এতো রেগে যাচ্ছেন কেন? ভালো করে শাফল না করলে কার্ড ভালো আসে না।” জালাল ধীরে সুস্থে কার্ড বাট করতে শুরু করল।

সাইদ বলল, “যতই দিন যাবে এই সমস্যা ততই বাড়বে। এই জন্যেই যথাযথ প্রমাণ থাকাটা খুবই জরুরী।”

তাস বাটা হতে এক পশলা কল হল। শেষ পর্যন্ত ডাক নিল জিত। ফাইভ হার্টস। সাইদ হা হুতাশ করল। “এতো ভালো কার্ড নিয়ে ছেড়ে দিতে হল। পাঁচ স্পেডে মনে হয় শর্ট হয়ে যেত।”

জিত স্বাচ্ছন্দ্যে খেলল। কয়েক হাত ঘুরবার পরেই হাত দেখিয়ে দিল সে। মাত্র একটা ট্রিক পেল সাইদ আর রনি। সাইদ মাথা চেপে ধরে বলল, “ইস! আমি ডাকলে তো ওরাও একটাই পেত। ইন্টারস্টিং কার্ড!”

জালাল সাইদের হাতে কার্ড ধরিয়ে দিল। “এবার আপনার বাট। তাড়াতাড়ি বাটেন নাহলে আবার যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে।”

লাল ভাই চুপচাপ বসে একটা ম্যাগাজিন পড়ছিল এতক্ষন। এবার মুখ খুল্ল সে। “আচ্ছা, একটা খুব ইন্টারেস্টিং খবর, মাস খানেক আগে পড়েছিলাম। পাকিস্তান, ব্যাপারটা ভালো করে বুঝেন, পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছে ৯ বিলিয়ন রুপি চেয়েছে। স্বাধীনতার সময় তাদের জায়গা, জমি, গাড়ী-ফাড়ি, সরকারী সেকিউরিটি – এইসব হাবি জাবি মিলিয়ে নাকি এখন সুদে আসলে এতো টাকা হয়েছে। কত বড় বেয়াদপ চিন্তা করেছেন?”

সাইদ হাসতে হাসতে বলল, “স্টেট ব্যঙ্ক অব পাকিস্তান ভারত আর বাংলাদেশ দুই দেশের কাছেই চেয়েছে। ভারতের কাছে চেয়েছে ১৫ বিলিয়ন। আরে, এইসব ফাজলামী করে লাভ আছে? বাংলাদেশ ওদেরকে কেন টাকা দিতে যাবে? টাকা তো আমরা চাব।”

রনি ক্ষ্যাপা গলায় বলল, “লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ মেরেছে, কত মেয়েদেরকে ধর্ষন করেছে তার কোন হিসাব আছে! বাংলাদেশে মাত্র নয় মাসে যে পরিমাণ ধর্ষণ হয়েছে পৃথিবীতে এই হারে নাকি ইদানিংকালে হয় নি। জানোয়ারের দল! টাকা চায়! গিলায়ে দেব ব্যাটাদের।”

জালাল হাসতে হাসতে বলল, “আরে, আপনি এতো ক্ষেপে যান কেন? ওরা চাইলেই কি আমরা দেব নাকি?”

জিত বলল, “আমাদের উল্টো চাওয়া উচিৎ। মানুষের জীবন অমূল্য কিন্তু তারপরও ক্ষতিপূরণ দাবী করা উচিৎ।”

সাইদ বাট করতে করতে বলল , “হয়ত একদিন চাওয়া হবে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের খেসারত জার্মানী এখনও দিচ্ছে। পাকিস্তানও একদিন দেবে। যুদ্ধে সৈন্য মারা এক কথা আর সাধারণ মানুষ মারা, মেয়েদেরকে ধর্ষণ করা আরেক কথা।”

লাল ভাই বলল, “কিন্তু ব্যাটাদের কি টাকা পয়সা আছে? কোত্থেকে দিবে? নিউক্লিয়ার বম্ব বানিয়ে তো ফকির হয়ে গেছে।”

কবির জালালের হাত দেখে বিড়বিড়িয়ে বলল, “আপনার কপালে আজকে কুফা লেগেছে।”

জালাল চাঁপা গলায় বলল, “জোরে বল না, কবির মিয়া। এই কার্ড নিয়াই দেখ না কি করি।”

লাল ভাই রনির হাত দেখে খুশী মুখে বলল, “বাহ, আপনি তো তিনটা টেক্কাই পেয়ে গেছেন।”

রনি চোখ পাকাল। “বলে দেন, হাতে আর কি কি আছে। টেক্কাতেই থেমে গেলেন কেন?”

লাল ভাই লজ্জিত মুখে হাসতে লাগল। “রাগ করেন কেন? আচ্ছা, ট্রুডো মিয়া এই কাজটা ঠিক করেছে? এই যে আগা খানের দ্বীপে গিয়ে ছুটি কাটায়ে আসল। সে একটা প্রাইম মিনিস্টার। আমার তো মনে হয় না এটা ঠিক হয়েছে। তারে ভোট দিয়ে আনলাম। এখন এইসব ফাজলামী করলে মনটা তো খারাপ হয়ে যায়।”

জালাল বলল, “এটা এমন কি বড় ব্যাপার হল আমি বুঝলাম না। আগা খান তাদের পারিবারিক বন্ধু। সে প্রধান মন্ত্রী হয়েছে বলে একটা বন্ধুর বাসায় যেতে পারবে না? সে তো বউ বাচ্চা নিয়ে ছুটি কাটাতে গেছে। তার একটা প্রাইভেট জীবন থাকতে পারে না।”

রনি বলল, “জালাল ভাই, সব কিছু কি আর এতো সাদা কালো। প্যাচ আছে বলেই না কনজারভেটিভরা এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে।”

জালাল বলল, “আপনি তো ভাই তাদের দলে। আপনি তো মন্দ কথা বলবেনই।”

“মন্দ কথা তো এখনও কিছু বলিই নাই,” রনি প্রতিবাদ করল। “তাকে তো আমি এক রকম পছন্দই করি। তার বদৌলতে পৃথিবীর মানুষ এখন কানাডার নেতাদের একটু চিনছে। এতোকাল তারা তো বোধহয় জানতই না আমাদের প্রধান মন্ত্রী কে।”

জিত হাসতে হাসতে বলল, “হ্যাঁ, একেবারে মুভি স্টার! যেখানে যায় সেখানেই নাকি তরুণী মেয়েরা সব দল বেঁধে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। এমন না হলে নেতা হয়ে লাভ কি?”

সবাই হাসল। জালাল হাসি থামিয়ে বলল, “খুব ঠাট্টা করছেন আমাদের জাস্টিনকে নিয়ে! আপনাদের বরফ শীতল হারপারকে দেখলেইতো আমার শরীর হিম হয়ে যেত।”

আরেক পশলা হাসি হল। সাইদ এবার একটু সিরিয়াস কন্ঠে বলল, “আবার আগা খান প্রসঙ্গে ফিরে যাওয়া যাক।  জাস্টিনের সমস্যা কিছু আছে সেখানে। শেষ পর্যন্ত এটা নিয়ে পানি কতদূর গড়াবে জানি না, কিন্তু পানি একটু ঘোলা আছে। দুইটা সমস্যা এখানে। এক নম্বর, আগা খানের প্রাইভেট হেলিকপ্টারে চড়াটা তার ঠিক হয় নাই। এথিক্স কমিশনারের কাছে অনুমতি নেয়া উচিৎ ছিল। এটা ফেডারেল নিয়ম। দুই নম্বরটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আগা খান ট্রুডো পরিবারের ব্যাক্তিগত বন্ধু হতে পারে, কিন্তু তিনি আগা খান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং ডিরেক্টর। এই ফাউন্ডেশন   কানাডিয়ান গভর্নমেন্টের সাথে এক জোট হয়ে পৃথিবীর নানা দেশে জনহিতকর কাজকর্ম করে থাকে। আমাদের সরকার প্রায় তিন শ’ মিলিয়নের মত অর্থ তাদেরকে দিয়েছে। বাংলাদেশেও তারা কাজকর্ম করে। এই ফাউন্ডেশন রেজিস্টার্ড হচ্ছে ফেডারেল লবিয়িস্ট হিসাবে। আর ফেডারেল নিয়ম হচ্ছে বন্ধু বান্ধব্দের কাছ থেকে উপহার সে নিতে পারে, কিন্তু লবিয়িস্টদের কাছ থেকে না।”

কবির বলল , “দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কি হয়। এথিক্স কমিশনারের অফিস তো বলছে তারা অনুসন্ধান শুরু করেছে। কিছু হবে মনে হয়?”

লাল ভাই বলল, “কি আর হবে? এটা তো তেমন বড় কিছু না। ওদিকে ট্রাম্প তো ইতিমধ্যেই ঝড় বইয়ে দিচ্ছে।”

রনি বিরক্ত কন্ঠে বলল, “রাখেন ওর কথা। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছে কিন্তু ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের কোন ডিক্টেটর। যাক গিয়ে, ওদেরটা ওরা বুঝুক।”

জিত বলল, “আমাদেরও বুঝতে হচ্ছে। ডিয়ন বাদ পড়ে গেল। পাগলা রাজাকে খুশী করার জন্য আমাদের এদিকেও ইতিমধ্যেই পরিবর্তনের হাওয়া লেগে গেছে।”

কিছুক্ষনের জন্য খেলা বন্ধ ছিল। রনির বাট। সে দ্রুত শাফল করে বাট করল। “শুধু কথা হচ্ছে, খেলা হচ্ছে না। জিত দা, তাড়াতাড়ি ডাকেন।”

চুপচাপ দুই হাত খেলা হল। দুটাতেই জালালেরা গেম দিয়ে রাফ করল। রনির মুখে মেঘের ঘনঘটা দেখা দিল। জালাল খোঁচা দেবার জন্য বলল, “আরে, এতো কান্নাকাটি করছেন কেন? হয়ত পরেরবার ভালো কার্ড পাবেন।”

রনি বিড়বিড়িয়ে বলল, “শালা কুফার নাম নেয়াটাই ঠিক হয় নি।”

সবাই সশব্দে হাসল।  হাসি থামতে জিত প্রসঙ্গ পালটে বলল, “এনার্জি প্রাইসতো আকাশচুম্বী হয়ে যাচ্ছে।  এভাবে চললে ওন্টারিওর কি হবে বলেন তো? ডেলিভারি চার্জ বলে তো মানুষের মাথায় কাঠাল ভাংছে হাইড্রো কম্পানীগুলো। অনেক বিজনেসই ইতিমধ্যেই বলছে এভাবে চললে তাদেরকে হয়ত এই প্রভিন্স ছেড়ে চলে যাবার কথা ভাবতে হবে। এটা তো ভালো কথা না। ক্যাথলিনের কাজ কর্ম আমার মোটেই পছন্দ হচ্ছে না। দাম বাড়িয়ে ক’ দিনের জন্য রিবেট দিলেই হল?”

রনি বলল, “এখন আবার শুরু করেছে কার্বন ট্যাক্স। মড়ার উপর খাড়ার ঘা। এই ক্যপ অ্যান্ড ট্রেড ভালোর চেয়ে খারাপই করবে বেশী।”

কবির বলল, “কিছু তো করতে হবে, নাকি? এমিশন, পলিউশন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আমাদের নিজেদেরইতো ক্ষতি।”

রনি বলল, “নিয়ন্ত্রণ করতে হবে না, তাতো বলছি না। কিন্তু এই ক্যাপ এন্ড ট্রেড আমাদের জন্য ভালো হবে না। কারণ আমাদের কম্পানীগুলো দেখা যাবে অন্য মার্কেটে গিয়ে পয়সা দিয়ে এমিশন এলাউন্স কিনবে। যার অর্থ হচ্ছে, আমাদের টাকা দিয়ে অন্য কোন প্রভিন্স বা স্টেট উপকৃত হবে। ক্যাথলিন সরকারের ধারনা হচ্ছে, এই ট্যাক্স চালু করলে কম্পানীগুলো ধীরে ধীরে তাদের গ্যাসের ব্যাবহার কমিয়ে দেবে। অনেকেই বলছে তেমনটা হবার সম্ভাবনা কম। দেখা যাবে কম্পানীগুলো এমিশোন এলাউন্স কিনে সেটা  কাস্টোমারদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।”

সাইদ বলল, “হয়ত আরও ধীরে সুস্থে করার দরকার ছিল”।

রনির ফোনটা বেজে উঠল। রনি ধরছে না। জালাল বলল, “ফোন বাজছে তো। ধরেন।”

“ধরতে চাই না,” রনি ব্যাজার গলায় বলল।

জালাল ফোনটা তুলে নামটা দেখল। “এতো আপনার বাসা থেকে করছে। ধরছেন না কেন?”

রনি কলটা মিউট করে দিল। “আরে, ধরলেই বলবে বাসায় ফিরতে। কোথায় কে দাওয়াত দিয়েছে। চিনিও না ভালো করে। যেতে বলছে। আমি বলে দিয়েছি, বাচ্চাদেরকে নিয়ে নিজে যাক।”

কবির বলল, “রনি ভাই, এটা কিন্তু ভালো না। বেলা ভাবী হয়ত আপনার জন্য চিন্তা করছে। ধরে অন্তত বলেন যে বহাল তবিয়তে আছেন।”

ফোনটা আবার বাজছে। রনি ফোন ধরল। “যেতে পারবো না। মনটা ভালো নেই। হারতে হারতে ভুত হয়ে যাচ্ছি।”

বেলা ধমক দিল। “ফাজলামী করছ আমার সাথে? সবাইকে বলেছি তুমি যাবে।”

“আমি তো বলিনি যাব। তুমি বলেছ তুমি যাও। আমি এখানেই ভালো আছি।”

বেলা রাগ করে বলল, “রুমা ভাবী আসুক এবার। এই তাসের আড্ডা আমি বন্ধ করে দেব।”

রনি নির্বিকার মুখে বলল, “আরে, ফোনটা আবার সমস্যা করছে। বেলা, তোমার কথা কিছু শুনতে পাচ্ছি না। হ্যালো?”

রনি লাইন কেটে দিল। “হল? সবাই খুশী। এবার কেউ বাট করেন। একটা গেম দেই নাই আজকে। বসে বসে রাজা বাদশাহ মারছি।”

লাল ভাই হঠাত উত্তেজিত কন্ঠে বলল, “একটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি। বাংলাদেশের সাইক্লিস্টরা যে গিনিজ বুকের একটা ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ভেঙেছে এটা জানেন তো? ১১৮৬ জন সাইক্লিস্ট এক লাইনে সাইকেল চালিয়ে আগের বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছে। আগের রেকর্ড ছিল বসনিয়ার, ৯৮৪ জন।  খারাপ কি, তাই না?”

জালাল বলল, “যে কোন বিশ্ব রেকর্ডইতো ভালো। দেশের পরিচিতি বাড়ে।”

জিত রনিকে লক্ষ্য করে বলল, “দাদা, সত্যিই যাচ্ছেন না? বৌদি তো পরে যখন আমাদের সাথে দেখা হবে তখন আমাদের উপর ঝাল ঝাড়বেন। দাওয়াত-টাওয়াত ও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বরং এক কাজ করা যাক। আমি একটা তুখোড় জোক বলি। সেটা শুনে আজকের মত বাড়ী চলে যান। পার্টিতে গিয়ে পেট পুরে খাবেন। সব কুল রক্ষা হবে।”

রনি ব্যাজার মুখে বলল, “আমাকে না তাড়াতে পারলে আপনাদের ভালো লাগছে না। যা বলার তাড়াতাড়ি বলেন। যদি যেতেই হয় তাড়াতাড়ি যাওয়াই ভালো। একবার বাস ছেড়ে দিলে গিয়ে লাভ নেই।”

এক চোট হাসি হল। জিত বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে। শোনেন। ট্রাম্প এক দিন নিউয়র্কের রাস্তায় হাটছে। হঠাত দেখে বিশাল এক লাইন। কৌতূহলী হয়ে সে লাইনের পেছনে গিয়ে দাড়াতেই  তার আগের ব্যাক্তিটা তকে দেখেই ‘ও তুমি! অনেক ধন্যবাদ। আমার জায়গায় এসে দাড়াও’ বলে লাইন ছেড়ে দ্রুত কেটে পড়ল। এভাবে একের পর এক মানুষ লাইন থেকে সরে পড়ে ট্রাম্পকে এগিয়ে দেবার সুযোগ করে দেয়ায় ট্রাম্প খুব আশ্চর্য হয়ে গেল। একেবারে লাইনের সামনে যে ছিল সেও যখন তাকে দেখে হাসি মুখে সটকে পড়ার চেষ্টা করছিল, তাকে চেপে ধরল ট্রাম্প। ‘আচ্ছা, ব্যাপার কি বলত? কিসের লাইন ছিল এটা? সবাই আমাকে দেখেই লাইন ছেড়ে চলে গেল কেন?’ লোকটা হাসি মুখে বলল, ‘আরে স্যার, এটা তো কানাডার ইমিগ্রেশনের লাইন। কিন্তু আপনি নিজেই যখন কানাডা চলে যাচ্ছেন, তাহলে আমাদেরতো আর যাওয়ার দরকার নেই। থ্যাংক ইউ স্যার!’ ”

শুজা রশীদ, টরন্টো