কানাডায় মুসলিম বিদ্বেষ দূরীকরণে ‘ইসলামোফোবিয়া পিটিশন’ কোন কার্যকরি ভূমিকা রাখবে না
অক্টোবর ৮, ২০১৬
ফয়সল কুট্টি
গত কয়েক সপ্তাহে আমি অন্তত তিন ডজন ইমেইল পেয়েছি ইসলামোফোবিয়া পিটিশনটি প্রমোট করার জন্য। ইমেইলের পাশাপাশি ফেসবুকেও ম্যাসেজ পেয়েছি, পেয়েছি ফোন কল। এমনকি কয়েকজন আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখাও করেছেন এই বিষয়টি প্রমোট করার জন্য।
পিটিশনটিতে যা বলা আছে তা হলো:
“আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারী কানাডার নাগরিক ও ইমিগ্রেন্টরা হাউস অব কমন্সকে আহ্বান জানাচ্ছি আমাদের সঙ্গে এই বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য যে, চরমপন্থীরা ইসলাম ধর্মকে প্রতিনিধিত্ব করে না। আমরা আরো আহ্বান জানাচ্ছি কানাডায় সব ধরণের ইসলামোফোবিয়াকে নিন্দা জানানোর জন্য।”
সন্দেহ নেই আজকের দিনের এই উন্মত্ত ইসলামোফোবিয়ার যুগে এটি একটি উত্তম ধারণা এবং মহান প্রতীকমূলক এমনকি প্রয়োগিক বিচারেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কুইবেকের পেইরিফন্ডস-ডলার্ড এর বাসিন্দা সমর মজউব অভিনন্দন পাবার যোগ্য এই পিটিশনটির উদ্যোগ নেয়ার জন্য। একই সঙ্গে অভিনন্দন পাবার যোগ্য পেইরিফন্ডস-ডলার্ড রাইডিং থেকে নির্বাচিত এমপি ফ্রাংক বাইলিসও যিনি এই উদ্যোগের স্পন্সরার। আমি সবাইকে এই পিটিশনটিতে স্বাক্ষর করার আহ্বান জানাচ্ছি।
যারা আমাকে ইমেইল পাঠিয়েছেন বা অন্যভাবে যোগাযোগ করেছেন এই পিটিশনটির ব্যাপারে তাদের অনেকেই ধারণা প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর গ্রহণ করা গেলে ‘ইসলামোফোবিয়া’ এদেশে হেট ক্রাইম হিসাবে বিবেচিত হবে। কিন্তু লক্ষ্যনীয় যে, পিটিশনটি প্রমোট করার জন্য কিছু অনুপযুক্ত ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন :
“আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতউল্লা!
সাম্প্রতিক পুলিশ রিপোর্ট অনুয়ায়ী দেখা যাচ্ছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ, কুসংস্কারমূলক অভিব্যক্তি এবং হিংস্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হ্যা, এই প্রথমবারের মত কানাডার সরকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে যে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণ ও ঘৃণা প্রকাশ করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু তার আগে আমাদেরকে একটি পিটিশন দাখিল করতে হবে এবং ঐ পিটিশনে অন্তত এক লক্ষ লোকের স্বাক্ষর যোগার করতে হবে। তাহলে বিষয়টি কানাডার হাউস অব কমন্সে উত্থাপিত হবে।”
এখানে এই পিটিশনের ব্যাপারে ৫ বিষয় জানা প্রয়োজন।
১. প্রথমত এই পিটিশনের কারণে কানাডায় ইসলামোফোবিয়া হেট ক্রাইম হিসাবে বিবেচিত হবে না। কারণ, ইসলামোফোবিয়া জাতীয় কিছু অপরাধের বিচারের জন্য আগে থেকেই কানাডার ক্রিমিনাল কোড প্রভিশন বিশেষ করে সেকশন ৩১৮ (হেট প্রপাগান্ডা), ৩১৯ (পাবলিক ইনসাইটমেন্ট টু হেট্রেড), ৪৩০.৪.১ (মিসচিফ রিলেটিং টু রিলিজিয়াস প্রপারটি) রয়েছে। আরো রয়েছে সেকশন ৭১৮.২ যা একজন বিচারককে ক্ষমতা দিয়েছে কাউকে দন্ডাদেশ দেয়ার যদি তিনি দেখেন যে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির বর্ণ, জাতীয়তা অথবা এথনিক অরিজিন, ভাষা, ধর্ম, লিঙ্গ, বয়স, শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা, সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন ইত্যাদি অথবা এজাতীয় অন্যকোন বিষয়কে ব্যবহার করা হয়েছে।
২. যে কোন ধরণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য ফেডারেল এবং বিভিন্ন প্রভিন্সে মানবাধিকার আইন রয়েছে। মানবাধিকার আইনে ইসলামোফোবিয়াকেও বৈষম্যে হিসাবে বিবেচনা করা হতে পারে।
৩. পার্লামেন্টে পিটিশন দাখিলের ব্যাপারে কোন ফোর্স অব ল এর বিধান নেই। ফলে পার্লামেন্টের এমনকি স্পন্সরিং এমপি’রও কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে পিটিশন দাখিল করার পর তা যাচাই-বাছাই করে যদি পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হয় তবেই তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। পার্লামেন্টে উত্থাপনের পর ৪৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সাড়া দেয়ার নিয়ম রয়েছে।
৪. পার্লামেন্টে পিটিশিন দাখিল করার জন্য এক লক্ষ স্বাক্ষর সংগ্রহের প্রয়োজন নেই। পাঁচ শত স্বাক্ষর গ্রহণ করতে পারলেই তা কোন এমপি’র মাধ্যমে পার্লামেন্টে দাখিল করা যায়। তবে এটি সত্য যে যত বেশী স্বাক্ষর গ্রহণ করা যায় তত বেশী তার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
৫. পার্লামেন্টে কোন বিষয়ে পিটিশন দাখিলের বিষয়টি একটি সিম্বলিক ভ্যালিউ বহন করে এবং এর মাধ্যমে হয়তো আইন প্রণেতাদেরকে প্রভাবান্বিত করা যেতে পারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য। তবে এর মাধ্যমে সরকারের উপর কোন বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যায় না।
পরিশেষে বলা যায়, পার্লামেন্টারিয়ানদের কাছে এই পিটিশন এক ধরণের অস্ত্র যার মাধ্যমে তারা যাচাই করতে পারেন জনগনের কাছে কোন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বা জরুরী। অন্যভাবে বলা যায়, এটি জনগনের কাছেও একটি অস্ত্র যার মাধ্যমে তারা আইনপ্রণেতাদের কাছে তাদের ইচ্ছা বা দাবীর বিষয়টি সরাসরি উত্থাপন করতে পারেন।
এখন এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন এবং পিটিশনে স্বাক্ষরের বিষয়টি বিবেচনা করুন।
সৈজন্যে : হাফিংটন পোস্ট