কানাডায় একদিকে ইসলামোফোবিয়া, নিকাবোফোবিয়ার মাতন অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ!

জানুয়ারী ১২, ২০১৬

॥ খুরশিদ আলম ॥

বিশ্বব্যাপী ইসলামী ব্যাংক এর প্রসার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে নাকি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে কানাডায় ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও। অর্থনীতির একশ্রেণীর ‘গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা’ দাবী করছেন কানাডায় ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হলে দেশটির জাতীয় অর্থনীতিতে তা বিরাট অবদান রাখবে। তারা আরো মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইসলামী ব্যাংক এর প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র হওয়া উচিৎ কানাডায়। আর এ দাবী যারা করছেন তারা হলেন, ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য সংস্থা থমসন রয়টার্স ও টরন্টো ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস এলায়েন্স । খবর হাফিংটন পোষ্টের।

সংস্থা দুটি মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কানাডায় মুসলিম জনসংখ্যা আনুপাতিকহারে বেশী। কানাডায় মুসলিম জনসংখ্যার ভৌগলিক ঘনত্ব বেশী হওয়ায় এবং কম মাত্রার জটিল নিয়ন্ত্রক পরিবেশ বিরাজ করায় এ খাতের সম্ভাবনাটি এখানে বেশ উজ্জ্বল। আরো কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, চরম ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারও নাকি কানাডায় ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। তিনি চেয়েছিলন ইসলামিক ফিনান্স সেন্টার হিসেবে কানাডাকে কেন্দ্রবিন্দু করতে। এই উদ্দেশ্যে তার সরকার ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ব্যাংকিং কনফারেন্সকে স্পন্সার করতে সাহায্যও করেছিল যেটি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল কানাডায়।

ঘটনাটি আসলে কি? যে সরকার কানাডায় ইসলামোফোবিয়া বা ইসলাম বিদ্বেষ তৈরীতে মূখ্য ভূমিকা রেখেছে, নিকাব নিয়ে যে সরকার তুলকালাম কান্ড করেছে সেই সরকারই আবার ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠাই শুধু নয়, নর্থ আমেরিকায় ইসলামী ফিনান্স সেন্টার যাতে কানাডায় প্রতিষ্ঠা পায় তার জন্য কাজও করেছে!

উল্লেখ্য যে, ইসলামী ব্যাংক বা ইসলামী ফিনান্স যে নামেই একে অভিহিত করা হোক, এটি নিয়ে নানারকম বিতর্ক রয়েছে খোদ মুলমানদের মধ্যেই। ইসলামী জঙ্গীদেরকে অর্থায়ন তার মধ্যে একটি। আর সুদ প্রসঙ্গ নিয়ে তারা যা প্রচার করে আসছে তা নিছকই ধাপ্পাবাজী এরকম কথাও বলে আসছেন অনেকে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ফেব্রুয়ারীতে পার্লামেন্টে দাড়িয়ে বলেন “ইসলামিক ব্যাংকিং শ্রেফ ফ্রড”। অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, “ইসলামিক ব্যাংকিং আমার কাছে শুরু থেকে মনে হচ্ছে এটা একটি ‘ফ্রড’ এবং সেভাবেই সব সময় এটাকে বিবেচনা করেছি। কিন্তু দূর্ভাগ্য এই যে ইসলামিক ব্যাংকিং তত্ত্ব সারা দুনিয়াতেই গৃহীত। এটি পশ্চিমা বিশ্বের ফরমূলা। ইন্টারন্যাশনাল মনিটরিং ফান্ড (আইএমএফ) পর্যন্ত তাদের অনুমোদন দিয়েছে। সুতরাং এটাকে বন্ধ করার কোন সুযোগ এখানে নেই। এটাকে বন্ধ করার সুযোগ মুসলিম উম্মার উপর। মুসলিম উম্মাহ যখন যুক্তবাদী হবে, যখন বুঝতে পারবে ইসলামের নামে একটি জঘণ্য প্রথা চালু করা হয়েছে তখন তারা এ বিরুদ্ধে হয়তো ব্যবস্থা নেবেন। তাছাড়া ইসলামে রিবাহ নিষিদ্ধ। রিবা এবং বর্তমান সুদ এক জিনিস নয়। রিবা-এর মধ্যে কোন ধরণের মানবিক চিন্তা ধারা নেই। কিন্তু সুদ মানবিক চিন্তা ধারার উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুদ হলো ‘কস্ট অব ফান্ড’ এবং ‘কস্ট অব এডমিনিস্ট্রেশন’। কিন্তু রিবা-তে সেটা ছিলো না। যারা ধর্ম নিয়ে কথা বলেন তারা সুদ ও রিবা-কে এক করে ফেলেন। এটা একান্তই ভুল। এই ভুলের উপর ভিত্তি করেই ইসলামিক ব্যাংকিং হয়েছে।”-সূত্র : ভোরের কাগজ।

এই ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক আরো রয়েছে। যুগান্তর পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক নামেই ইসলামী কিন্তু এর সিংহভাগ মালিকানা ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের হাতে। গত ২০১৩ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদন বলা হয়, “মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে সচল রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এ ব্যাংক ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক বলে দাবি করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শরিয়াহ নিয়ম অনুসরণ করছে না। বরং মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামকে বাণিজ্যিকরণ করছে। জানা গেছে, ব্যাংকটির প্রায় ৭০ শতাংশ মালিকানা বিদেশীদের হাতে। আর ওইসব বিদেশীর অধিকাংশই ইহুদি ও অমুসলিম। এ ছাড়া ব্যাংকটির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে শতশত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইসলামী ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং মন্ত্রণালয়ের নাম পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকটির বিরুদ্ধে গুরুতর ঋণ অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছে।”

তবে এও সত্যি যে, এই ইসলামী ব্যাংক নিয়ে বিতর্ক বা অভিযোগ যাই থাকুক, এটি কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি পাশ্চাত্যেও। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। থমসন রয়টার্স ও টরন্টো ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস এলায়েন্স এর নতুন রিপোর্টে বলা হয় বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার অধীনে ১.৮ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলারের সম্পদ রয়েছে। অন্যদিকে কানাডার বৃহৎ ৫ টি ব্যাংকের সম্মিলিত সম্পদের পরিমান ৩.৩ ট্রিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার। সূত্র – হাফিংটন পোস্ট।

পাশ্চাত্য দেশসমূহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা বৃটেনেও বিশেষভাবে পরিচিত হয়ে উঠছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়, বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন নিজেই লন্ডনে অনুষ্ঠিত নবম বার্ষিক বিশ্ব ইসলামিক ইকনমিক ফোরামের সম্মেলনে বলেছেন, “লন্ডনকে আমি বিশ্বের সেরা ইসলামিক ফিনান্স সেন্টার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই”। ঐ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন যাদের মধ্যে ছিলেন জর্ডানের কিং আব্দুল্লাহ ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলখিয়া।

বৃটেনে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইসলামী ব্যাংক অব বৃটেন। বর্তমানে এর শাখা রয়েছে লন্ডন, বার্মিংহাম ও ম্যানচেষ্টারে। এই ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষের দাবী – তারাই বৃটেনে প্রথম ব্যাংক যারা পুর্ণাঙ্গভাবে ইসলামের মূলনীতি অনুসারে ব্যাংকটি পরিচালনা করে আসছেন।

জার্মানীর মানহাইম শহরেও খোলা হয়েছে ইসলামী ব্যাংক। ‘কুভেত তুর্ক ব্যাংক’ নামের এই ব্যাংকটি জার্মানীতে প্রথম। তবে এর কার্যক্রম কিছুটা সীমিত আকারে করা হচ্ছে। -সূত্র – ডয়েচ ভেলে।

বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিকুলতার মধ্যেও বিস্তার লাভ করছে। যায়যায় দিনের এক রিপোর্টে বলা হয় “ প্রতারণা ও জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ উঠলেও জমজমাট ব্যবসা করছে বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো। প্রতিকূল অবস্থা এবং বিনিয়োগ মন্থরতায় ও ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে। কমেছে তাদের অলস টাকার পরিমাণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সেপ্টেম্বরভিত্তিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের ১৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ দেয় ইসলামী ব্যাংকগুলো। আর পুরোপুরি ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনাকারী ৮টি ব্যাংকের এক বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ বেড়েছে ১৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এই মুহূর্তে পুরো ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ২১ দশমিক ৯১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে এ ব্যাংকগুলো। দেশের মোট প্রবাসী আয়ের ৩৩ দশমিক ৬১ শতাংশের অধিক এসব ব্যাংকের মাধ্যমে আসে। অবশ্য এর মধ্যে কেবল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মাধ্যমেই আসে ৮০ শতাংশ প্রবাসী আয়। এ কয়টি ব্যাংক দেশের ২১ শতাংশ আমদানি ও ২৪ শতাংশ রপ্তানি বাণিজ্যের লেনদেনে হয়ে থাকে।”

কিন্তু বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থার প্রসার ঘটলেও এর বিরুদ্ধে রয়েছে জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগ। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এর গভর্ণর ড. আতিউর রহমান বলেন, “অভিযোগ আছে যে, ইসলামী ব্যাংকগুলোর জঙ্গীবাদে অর্থায়ন এবং মানিলন্ডারিংয়ের মতো অনভিপ্রেত কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকগুলোকে কোনভাবেই এসব কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে দেয়া যাবে না।” বাংলাদেশ ব্যাংকের কনফারেন্স হলে ‘ইসলামী ব্যাংকিং’ সংক্রান্ত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ইতিপূর্বে যুগান্তরে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যেসব ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংক বলে কার্যক্রম চালাচ্ছে সেগুলো কোনোভাবেই সুদমুক্ত নয়। কাজেই ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ‘ইসলাম’ শব্দটি বাদ দেয়া উচিত। ঐ সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, ইহুদিদের পরিচালিত কয়েকটি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং চালু করেছে, এটাকে ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে? প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি যারা ইসলামী ব্যাংকিং করছে তারা মানুষের সঙ্গে মারাত্মক প্রতারণা করছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দেশের দরিদ্র মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামকে বাণিজ্যিকরণ করছে দেশের ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা।

এদিকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীকে সহায়তা করে আসছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে পেশ করা একটি প্রতিবেদনে।

দৈনিক প্রথম আলো জানায়, “সিনেটের পার্মানেন্ট সাব-কমিটি অন ইনভেস্টিগেশনসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বজুড়ে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে।

অর্থ পাচার, মাদক ব্যবসা ও জঙ্গি তৎপরতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কতটা হুমকির এবং অপরাধগুলোকে এইচএসবিসি ব্যাংক যেভাবে উৎসাহিত করেছে, তা নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবের অন্যতম প্রধান ব্যাংক আল রাজি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের জঙ্গি তৎপরতায় ভূমিকা রেখে আসছে। আল রাজি ব্যাংক বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের এক-তৃতীয়াংশ শেয়ারের মালিক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এইচএসবিসি গ্রুপের মার্কিন ব্যাংক এইচবিইউএসে আল রাজি ব্যাংকের কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ছিল। এসব অ্যাকাউন্টের জন্য আল রাজি এইচবিইউএসের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা পেয়ে আসছিল। এর বদৌলতেই আল রাজি বিপুল পরিমাণ নগদ ডলার বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে পাঠিয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর ৭৫ হাজার থেকে এক লাখ ডলার জমা রাখবে, এমন আশ্বাস দিয়ে ব্যাংক দুটি এইচবিইউএসে হিসাব খোলে এবং একসময় মার্কিন অর্থ-ব্যবস্থার অংশ হয়ে যায়।

প্রতিবেদনের আরেক অংশে বলা হয়, আল রাজি ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এই ব্যাংকটি অর্থ পাচারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ একটি দেশে কাজ করে। ইসলামী ব্যাংক এমন একজন ব্যক্তিকে হিসাব খোলার অনুমতি দিয়েছিল, যিনি বোমা হামলার মতো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত। অর্থ পাচারবিরোধী নীতি ভঙ্গ করে জঙ্গিদের সহায়তা করার দায়ে ব্যাংকটিকে এর আগে তিনবার জরিমানা দিতে হয়েছিল।”

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ ও অঙ্গুলীনির্দেশ এখানেই শেষ নয়। টরন্টো সানের কলামিস্ট তারেক ফাত্তা তার এক কলামে লিখেছেন, “গত শতকের গোড়ার দিকে (১৯২০ এর দশকে) ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার চিন্তা ভাবনা শুরু হলেও এর একটি আনুষ্ঠানিক রূপ পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরো কয়েক দশক। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় ১৯৭০ এর দশকে তৎকালীন পাকিস্তানের জামায়াত ই ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মউদুদী এবং মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড এর নেতা হাসান আল বান্না আধুনিক ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার পিছনে ছিলেন প্রাণপুরুষ। আর এরা দুজনেই চরম গোড়াপন্থী মুসলমান।”

মউদুদীর পরিচয় তো বাংলাদেশীদের কাছে নতুন করে দেওয়ার কিছুই নেই। তার উত্তরসূরীরাই আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী এবং জঙ্গীবাদের হোতা ও পৃষ্ঠপোষক। মিশরের ইসলামিক ব্রাদারহুডও বিশ্বে জঙ্গীবাদ প্রচার ও প্রসারের আরেক পৃষ্ঠপোষক। ইসলামী ব্রাদারহুড প্রকাশ্যে শান্তি ও অহিংস মতবাদ প্রচার করে থাকে। কিন্তু গোপনে এটি জঙ্গীবাদ ও গুপ্তহত্যার  সঙ্গে জড়িত। আর তাদের সৃষ্ট ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেই আজ অনেক মুসলমান মনে করছেন পবিত্র ও মহান একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া।

তারেক ফাত্তা আরো লিখেন, মউদুদী আর বান্না দুজনেই চরমপন্থী বিশ্ব ইসলামি আন্দোলনের নেতা ছিলেন এবং তারা মনে করতেন ইসলামী ব্যাংক বা ইসলামী অর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বে তাদের রাজনৈতকি আদর্শ প্রচার ও প্রসারে বিশেষ  সুবিধা এনে দিতে পারে।

তবে এদের তাত্ত্বিক ব্যবস্থা বাস্তবে রূপ নেয় যখন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট  জেনারেল জিয়াউল হক জুলফিকার আলী ভূট্রোকে ক্ষমতাচ্যুত করে পাকিস্তানের রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা দখল করে নেন। ক্ষমতায় এসে তিনি দেশের পাবলিক সেক্টরের সব ব্যাংককে ইসলামী আইনের মধ্যে নিয়ে আসেন।

কিন্তু সত্যিই কি সুদ হারাম ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায়? এই প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট ব্যাংকার ও লেখক সেলিম মনসুর। তিনি এর কঠোর সমালোচানা করে বলেন, “ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।”

সেলিম মনসুর নিউয়র্কের পার্ক এ্যাভিনিউ ব্যাংক এর প্রধান নির্বাহী ছিলেন। তিনি বাহারাইনে একটি নামকরা ইসলামী ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি তার রচিত Islamic Banking — A $300 Billion Deception (প্রতারনা) বইতে উল্লেখ করেন, “যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইসলামী ব্যাংক বা শরীয়া ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তারা রক্ষা করেনি। তারা যা বলে সেটা তারা রক্ষা করে না। সব ইসলামী ব্যাংকই সুদ চার্জ করে কৌশলে এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটি ইসলামিক লেবাস পড়িয়ে তারা মূলত এই কাজটি করে। এভাবেই তারা অনৈতিক ও প্রতারণার কাজটি করে থাকে।”

সেলিম মনসুর আরো লিখেন, “ইসলামী ব্যাংক এর প্রবক্তরা বলে থাকেন তারা সকল প্রকার সুদকে নিষিদ্ধ করেছেন। কিন্তু কুরআন যেটি নিষিদ্ধ করেছে সেটি হলো usury যা মহাজনী বা চড়া সুদের ব্যবসা। সাধারণ সুদকে নয়। আইনত বা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় এরকম চড়া সুদকে usury বলা যেতে পারে যা আরেক অর্থে শোষণ করা বা গলাকাটা সুদ।”

সেলিম মনসুর আরো লিখেন, সুদ এবং ঋণ বিষয়ে কোরআনের বিভিন্ন আয়াত পড়ে যা জানা যায় তা হলো, ধনী ঋণদাতাতের প্রতি দরিদ্র ঋণগ্রহীতাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার কথা বলা হয়েছে। দরিদ্র ঋণগ্রহীতাগণ সময়মত ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে তাদেরকে বর্ধিত সময় দিতে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কোরআনে এমনো বলা আছে, “যদি দরিদ্র কেউ ঋণ পরিশোধ করতে না পারেন তবে তা পুরোপুরি মউকুফ করে দেয়া আরো ভাল । ”

ইসলামে দরিদ্র জনগোষ্ঠির প্রতি সুবিচার ও ন্যায়পরায়নতা দেখানোর কথা বলা আছে। কিন্তু আধুনিককালে এই ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থার প্রণেতারা এমনসব ব্যবস্থা করে রেখেছেন যাতে করে দরিদ্র জনগোষ্ঠি সহজে ঋণ পেতে না পারেন। সেলিম মনসুর লিখেছেন, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থার মালিকগণ বিলিওনার। পৃথীবির সর্বাপেক্ষা ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় এই ইসলামী ব্যাংক বা শরীয়া ব্যাংক ব্যবস্থার মালিকদের নাম রয়েছে। অথচ অন্যদিকে ব্যাপক সংখ্যক সাধারণ মুসলমান আজ চরম দারিদ্রতা নিয়ে বসবাস করছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।

এখন এরকম একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা কি করে কানাডার মতো দেশে অনুমোদন পেতে পারে? আর কারাই বা এর পিছনে কলকাঠি নাড়ছেন?

তাদের উদ্দেশই বা কি? কানাডার সাধারণ মানুষের কাছে এই প্রশ্নই দেখা দিয়েছে এখন।

উল্লেখ্য যে, কানাডার প্রথম সারির কয়েকটি ব্যাংক ইতিমধ্যেই ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থার কিছু বিষয় নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে। কানাডার বড় বড় ব্যাংকগুলোতে কর্মরত কিছু উর্ধতন মুসলিম কর্মকর্তার উদ্যোগ ও প্রয়াশের কারণে ব্যাংকগুলো এ খাতে মনোযোগ দেয় প্রাথমিকভাবে। এর মধ্যে আছে ইসলামী কায়দার মর্টগেজ, ইন্সুরেন্স, টেক্সি লাইসেন্সিং এবং ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড। কানাডায় দ্রুত বিকাশমান মুসলিম জনগোষ্ঠিকে টার্গেট করে তারা এগুলো করেছে। গ্লোব এন্ড মেইল পত্রিকার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

বেশীর ভাগ বড় মাপের ব্যাংকগুলো খুব সতর্কভাবে এ খাতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। তবে এদের কেউই সহসা ঝাঁপ দিতে যায়নি আপাতদৃষ্টিতে লাভজনক এই খাতে। গ্লোব এন্ড মেইল জানায়, কানাডার রয়েল ব্যাংক কয়েকবছর আগে শান্তপদার্পনে ইসলামী কায়দার কয়েকটি ব্যাংকিং প্রডাক্ট নিয়ে নিরীক্ষা চালিয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত সাড়া না পেয়ে পিছিয়ে আসে। তবে অন্যান্য কয়েকটি ব্যাংক লাভের গন্ধ পেয়ে ইসলামী কায়দার ব্যাংকিং এ আগ্রাহান্বিত হয়ে উঠছে। এদের মধ্যে আছে স্কশিয়া ব্যাংক। সিআইবিসি ব্যাংকের একটি প্রগ্রাম রয়েছে ‘হালাল ইনভেস্টিং’ নামে।

কানাডায় ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা বা ইসলামী ফিনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পথ যে একেবার মসৃন তাও কিন্তু নয়। ২০১১ সালে সেই সময়কার সর্ববৃহৎ ইসলামী ফিনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান ‘ইউএম ফিনান্সিয়াল’ অবস্থা ‘বেগতিক’ দেখে নিজেদেরকে দেওলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেওলিয়া ঘোষণার পিছনে ছিল বিশাল অংকের অর্থ চুরি। শরীয়া আইন মেনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঐ ইউএম ফিনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানটি। এদের মাধ্যমে যারা মর্টগেজ এর জন্য আবেদন করবেন তাদেরকে কোন প্রকার সুদ দিতে হবে না যেটি ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরকম আরো কিছু ধর্মীয় আইন-কানুন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চালু করা ইউএম ফিনান্সিয়াল এর কর্ণধার ওমর কালাইয়ার নিজেই এখন বিচারের মুখমুখি কয়েক মিলিয়ন ডলার নানান কলা-কৌশলের মাধ্যমে চুরি করে নিজের পকেটে ঢুকানোর জন্য। আর তার এই অপকর্মের জন্য বিপদে পড়েছেন ১৭২ জন বাড়ির মালিক যারা সবাই মুসলমান।

ইসলামী কায়দায় ঋণ প্রদানের নাম করে এই ওমর যে সকল অপকর্ম করেছেন তার একটি নমুনা এরকম – ইউসুফ পানচায়া নামের এক ধর্মীয় গুরু এবং তার আরো চার সহযোগী মিলে ইউএম ফিনান্সিয়াল এর কাছে ২.৭ মিলিয়ন ডলার দাবী করেন এই যুক্তি দেখিয়ে যে তারা কয়েক বছর ধরে ইউএম ফিনান্সিয়ালকে শরীয়া বিষয়ক পরামর্শ দিয়েছেন। এই ইউসুফ একসময় ইউএম ফিনান্সিয়াল এর চেয়ারম্যানও ছিলেন। তারা বলেন, “গত কয়েক বছর তারা প্রতিষ্ঠানটিকে শরীয়া বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন ফ্রি।” পরে তারা বললেন ঐ ‘ফ্রি’ সার্ভিসের জন্য তারা অর্থ প্রাপ্য! এবং সেই অর্থের পরিমান ২.৭ মিলিয়ন! অথচ এ বিষয়ে ইউসুফ পানচায়া ও ওমর কালাইয়ার মধ্যে কোন লিখিত চুক্তি ছিল না। আর সার্ভিস যদি ফ্রি হয়ে থাকে তবে তার জন্য অর্থের দাবী কেন উঠে? তাছাড়া ঐ পরামর্শ প্রদানের জন্য তারা ফুলটাইমারও ছিলেন না। ২০১১ সালে ইউএম ফিনান্সিয়াল নিজেকে দেওলিয়া ঘোষনার পর ইউএম ফিনান্সিয়াল বর্তমানে রিসিভারশীপ এর ব্যবস্থাপনায় আছে। এই রিসিভার কর্তৃপক্ষ ইউসুফ ও তার চার সহযোগীর আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু আবেদন প্রত্যাখ্যান সত্বেও ওমর ঐ দিনই ইউসুফের সঙ্গে যোগসাজস করে ২.৭ মিলিয়ন ডলারের একটি ইনভয়েজ ড্রাফট করে। ঐ ইনভয়েসে ইউএম ফিনান্সিয়ালকে ইউসুফ ও তার সহযোগিদের পক্ষ থেকে ২.৭ মিলিয়ন ডলার চার্জ করা হয় শরীয়া পরামর্শ দেয়ার জন্য।

প্রাপ্ত তথ্য থেকে আরো জানা যায়, ওমর কোম্পানীর ফান্ড থেকে ২.২ মিলিয়ন ডলার নিয়ে স্বর্ন ও রূপার বার ক্রয় করেন। এই স্বর্ণের বার (যার মূল্য ২ মিলিয়ন ডলার) তিনি ইউসুফের মনোনিত এক ব্যক্তির হাতে তুলে দেন টরন্টোর রেক্সডেল মলের পার্কিং লটে যার নাম যোশেফ এডাম। ঐ ব্যক্তিকে ইউসুফ তার ফাইনান্সিয়াল ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। যোশেফ ঐ স্বর্ণের বার পাচার করে দেন মিশরের এক ধর্মীয় গুরুর কাছে। ইউএম ফিনান্সিয়াল এর প্রতি মিশরের ঐ ধর্মীয় গুরুর কোন কন্ট্রিবিউশনই নেই। তারপরও এই বিপুল পরিমান অর্থ কি কারণে তাকে প্রদান করা হলো?

২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ইউএম ফিনান্সিয়ালকে সেন্ট্রাল ১ ক্রেডিট ইউনিয়ন ৪৯ মিলিয়ন ডলার প্রদান করে মর্টগেজ ব্যবসায় পার্টনার হওয়ার জন্য। পরে ইউএম ফিনান্সিয়াল যখন নিজেদেরকে দেওয়ালিয়া ঘোষণা করে এবং ক্রেডিট ইউনিয়ন যখন দেখে ধর্মের নাম করে ইউএম ফিনান্সিয়াল নানান চুরিচামারী করে আসছে তখন ২০১১ সালের মার্চ মাসে এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ৩১ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপুরণ মামলা করে তারা।

আরসিএমপি পরবর্তীতে এই ইউএম ফিনান্সিয়াল এর প্রতিষ্ঠাতা ওমরের বিরুদ্ধে ৪.৩ মিলিয়ন ডলার প্রতারণার অভিযোগ আনে। কোম্পানীর ফান্ড থেকে ঐ পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

এ তো গেল ধর্মের নামে কতিপয় লোকের সুদমুক্ত ব্যাংকিং বা মর্টগেজ ব্যবসার প্রতারণা। ধর্মের নামে পরিচালিত চ্যারিটি বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানেও কিছু কিছু লোক আছেন যারা জালিয়াতী করে আসছেন। কানাডার সর্বাপেক্ষা বৃহৎ মুসলিম অরগানাইজেশন ‘ইসলামিক সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা কানাডা (ISNA Canada) ’র সাবেক মহাসচিব জালিয়াতির মাধ্যমে এই চ্যারিটিবল অরগানাইজেশনের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এমন রিপোর্ট কানাডার জাতীয় দৈনিক টরন্টো স্টারে প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ সালের জানুয়ারী মাসে। ঐ রিপোর্টে বলা হয়, অর্গানাইজেশনের অডিটে ধরা পড়ে ISNA Canada ’র তৎকালীন মহাসচিব মোহাম্মদ আশরাফ বেআইনী ভাবে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তিনি তার স্ত্রী ও মেয়েদের নামে বিল তৈরী করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তারা ISNA Canada ’র কর্মী না হলেও তাদের জন্য হেলথ বেনিফিটের নাম করে অর্থ নিয়েছেন। চ্যারিটির অর্থ তিনি তার ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ট্রান্সফার করেছেন বেআইনী ভাবে।

৩০ বছরের বেশী সময় ধরে এই আশরাফ ISNA Canada’র একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে কাজ করেছেন। বছরে এই সংগঠনটি প্রায় মিলিয়ন ডলার চাঁদা ও সাহায্য পেয়ে থাকে মুসলিম কমিউনিটি থেকে। এই অর্থ গরীবদের সাহায্য করার জন্য ব্যয় করার কথা। কিন্তু অডিটে দেখা গেছে মাত্র একচতুর্থাংশ অর্থ ব্যয় হচ্ছে গরীবদের সাহায্যে। বাকি অর্থ ব্যয় হচ্ছে অরগানাইজেশনের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে।

সুতরাং এটি আর ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না যে, ইসলাম ধর্মের নাম করে কোন কিছু করা হলেই সেটি বিনা বাক্যব্যয়ে বিশ্বাস করা বা নিজের জাজমেন্ট এপ্লাই না করে অন্ধের মতো বিশ্বাস করার কোন যৌক্তিকতা নেই। ইসলামের নাম করে কোন কিছু করা হলেই যে তা শতভাগ বিশুদ্ধ হবে তাও নয়। মনে রাখতে হবে এর পিছনে স্বার্থান্বেষী মানুষের কারসাজি থাকতে পারে। এই স্বার্থান্বেষী মানুষেরা তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করতে পারেন। মানব ইতিহাসে এরকম ভুড়ি ভুড়ি প্রমাণ রয়েছে।

আজকে একশ্রেণীর স্বার্থন্বেষী মানুষ কানাডায় ইসলামী ব্যাংক বা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে ওকালতি করছেন। তারা নানান তথ্য উপস্থাপন করে বলার চেষ্টা করছেন এটি হলে তা কানাডার অর্থনীতির জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে। আবার এরাই কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে আসছেন সময়ে সময়ে। কিন্তু যখন আবার ডলারের গন্ধ পান তখন এই ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠেন তারা। আমরা উপরে দেখেছি বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক নামেই ইসলামী কিন্তু এর সিংহভাগ মালিকানা ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের হাতে। ইসলামী ব্যাংকগুলো ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক বলে দাবি করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শরিয়াহ নিয়ম অনুসরণ করছে না। বরং মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামকে বাণিজ্যিকরণ করছে। ইসলামিক ব্যাংক বলে কার্যক্রম চালালেও সেগুলো কোনোভাবেই সুদমুক্ত নয়। মার্কিন সিনেটের পার্মানেন্ট সাব-কমিটি অন ইনভেস্টিগেশনসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বজুড়ে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। সৌদি আরবের অন্যতম প্রধান ব্যাংক আল রাজি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের জঙ্গি তৎপরতায় ভূমিকা রেখে আসছে। আল রাজি ব্যাংক বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের এক-তৃতীয়াংশ শেয়ারের মালিক। ব্যাংক বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এই যখন পরিস্থিতি তখন কানাডায় যারা ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উৎসাহিত হয়ে উঠেছেন তাদের মনের গহীনে নিশ্চিতভাবেই কোন না কোন আর্থিক ও রাজনৈতিক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে সে কথা ভাবার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। সুতরাং কানাডায় মুসলমান সম্প্রাদয়কে এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিৎ।