এবিউজ প্রতিরোধে আমাদের ভূমিকা

ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬

সেলিনা সিদ্দিকী

[বাংলাদেশ সেন্টার এন্ড কমিউনিটি সার্ভিসেস (বিসিসিএস) টরন্টোতে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটি সদস্যদের মধ্যে এল্ডার এবিউজ সম্পর্কিত সচেনতা বৃদ্ধির লক্ষে একটি প্রকল্পের কাজে হাত দিয়েছে। তারই নবম অংশ আজকের এই প্রবন্ধ। বিসিসিএস এভাবে আরও একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করবে। সবাইকে পড়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।]
এবারে আলোচনা করা হবে আমাদের ভুমিকা কি হতে পারে তার-ই প্রসঙ্গে। যদি মনে করেন বা আশঙ্কা করে থাকেন যে বিপদ সন্নিকটবতী বা খুব একটা দূরে নয় তাহলে যেখানে আপনি থাকেন সেখান থেকে অতিসত্বর সরে পড়ুন। চলে যান কাছেরই কোন বন্ধু বা প্রতিবেশী বা নিকট আত্মীয়ের কাছে; তা সম্ভব না হলে যে কোন ব্যবসা কেন্দ্রে বা দোকানে। তাদের খুলে বলুন আপনার পরিস্হিতি। বলুন আপনাকে কোন সেন্টারে পাঠাতে। ওরা অবশ্যই সাহায্য করবে। যদি মনে করেন সরে পড়ার মতো অবস্হায় আপনি নেই বা আপনার পক্ষে সরে পড়াটাও অসম্ভব তাহলে ফোন করুন ৯১১ এ। এর আগেরও কিছু করনীয় রয়ে গেছে। যখন থেকে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি এবিউজড্ হচ্ছেন, ব্যপারটা নিজের মধ্যে লুকিয়ে না রেখে বিশ্বস্ত যে কোন পরিচিত কাউকে বা পাবলিক্ হেলথ্ নার্সকে বা ফ্যামিলি ডাক্তারকে বা সোস্যাল ওয়ার্কারকে সে প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখুন। প্রতিদিন কি ঘটছে তা রেকর্ড করুন। লিখে রাখুন নিজের উপর যা হচ্ছে তার বিবরণ। এটা আপনার উপর ঘটে চলা এবিউজ ডকুমেন্টাশনে কাজে লাগবে। একই সাথে যারা আপনার সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে তাদের ও করবে সাহায্য। যে কোন ধরনের এবিউজই অনৈতিক। আবার এরই মধ্যে কোন কোনটা আইন গত ভাবে অপরাধ পর্যায়ের।
তাই প্রয়োজনে আইনগত সাহায্যও নেয়া যেতে পারে। এতে করে আপনি পাবেন কোর্ট প্রটেকশন্। আর তাতে আপনার এবিউজকারী/এবিউজকারিনী আপনার ধারে কাছে আসতে পারবেনা। আর আপনিও পাবেন নিশ্চিন্ত নিরাপওা। নিজেকে কখনও দোষারোপ করবেন না। ভাগ্যের দোহাইও দেবেন না। বুঝতে শিখুন ও উপলদ্ধি করুন যে এটা আপনার কোন দোষ নয়। আর সাহায্যের ব্যবস্হা যখন রয়েছে–ই তখন ভয় পাবার-ই বা আছে কি? সাহায্য নিতেই বা আসুবিধা কি? সাহায্যের জন্য হাত বাড়ান ও নিজেকে প্রস্তুত রাখুন সাহায্য নেয়ার জন্য। কেননা অবস্হা যা-ই হোক না কেন, কোন অবস্হাতেই এবিউজড্ হওয়াটা আপনি ডিজার্ভ করেন না। শুধু বৃদ্ধ-বৃদ্ধাই নয়, এ প্রসঙ্গে আমাদের সবার অর্থাৎ কমিউনিটিতে আমরা যারা রয়েছি যারা এখনো বয়সের এই পর্যায়ে পৌছাইনি, তাদেরও কর্তব্য কম নয়। তাদেরও দায়িত্ব এ প্রসঙ্গে কম নয়। যদি তারা কোন ধরনের এবিউজ কোথাও হচ্ছে বলে লক্ষ্য করে থাকেন বা শুনে থাকেন কিংবা সন্দেহ করেন তাদেরও উচিৎ প্রাসঙ্গিক নাম্বারে যোগাযোগ করে ঘটনা সম্পর্কে পরিস্কার জানানো। আমাদের এই এতোটুকু সচেতনা বোধ খুব সহজেই ভুক্তভোগী বৃদ্ধ-বৃদ্ধার জীবনে আনতে পারে বি-রা-ট মানসিক প্রশান্তি। কে জানে তাদেরকে হয়তো অকাল মৃত্যু থেকেও পারে বাঁচাতে। একটু ভেবে দেখুন, আপনার নিজের-ই বাবা-বা মা যদি একটু আনন্দে থাকে, তা দেখলে বা জানতে পারলে আপনার-ও কি ভালো লাগবে না? ব্যাপারটা কি ও রকম কিছুই নয়? আরেক জনের বাবা মা’র জন্যে কিছু করতে পারাটা বা করাটাও একই পর্যায়ের-ই। সবচাইতে বড়ো কথা হচ্ছে কারা সরাসরি এবিউজ করছেন সেটাই একমাএ কথা নয়; যে কোন পরিস্হিতি যা কোন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা’র স্বাস্হ্য বা ভালো থাকাকে বিপন্ন বা বিপর্যস্ত করে ফেলে সে সম্পর্কে নিস্ক্রিয় থাকা কিংবা নীরব থাকাও কিন্তু এল্ডার এবিউজ-ই। সুতরাং দোষী’র ঘাড়ে দায়বদ্ধতা চাপিয়ে দিলেই নিস্তার পাওয়ার পথ নেই এই দায়িত্ব বোধ থেকে। আপনার আমার সবারই রয়ে গেছে অনেক কিছু করণীয় এ প্রসঙ্গে। বরঞ্চ অনেক ক্ষেত্রে অবস্হাভেদে আমাদের দায়িত্ব-ই মুখ্য হয়ে ওঠে যেহেতু এবিউজড্-রা বয়স এবং শারীরিক–মানসিক ভাবে এমন অবস্হাতে–ও থাকতে পারেন যে তাদের পক্ষে সামর্থ-ই থাকেনা নিজের থেকে কোন উদ্যেগ নেয়ার। সে বিষয়টা ভেবে দেখার ব্যাপার বৈকি!

প্রাসঙ্গিকভাবে এ-ও জানাতে চাই যে, ঋতুরাজ বসন্তের রাজত্ব যেমন প্রকৃতিতে স্থায়ী রূপ নিতে পারে না তেমনি মানুষের জীবনেও যৌবনের রাজত্ব চিরস্থায়ী হয় না। জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে যে শিশুটি পৃথিবীর বুকে জানান দেয় তার আগমন বার্তা, তার অধিকার এর পর ধীরে ধীরে জীবন চক্রের আবর্তে ও প্রতিটি স্তর অতিক্রম করে- কিশোর, তরুণ, যুবক, পৌড়ত্ব পেরিয়ে এক সময় তাঁকে বার্ধক্যে পৌছাতেই হয়।
যতক্ষণ শরীরে শক্তি থাকে- একা চলার ক্ষমতা থাকে, মনে জোড় থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন সমস্যার সূত্রপাত হয়না। কিন্ত যখন থেকে মনের এবং শরীরের বিভিন্ন কারণে পরনির্ভরশীলতার প্রয়োজন হয় তখন থেকেই শুরু হয় বৃদ্ধদের প্রতি নানা ধরনের এবিউজ।
এই এবিউস গুলো নানা ধরনের হতে পারে। যেমন :
– অর্থনৈতিক
– মানসিক
– শারীরিক
– অবহেলা জনিত এবং আরো বহুবিধ।
বৃদ্ধ মানুষ গুলোর অধিকার আছে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের কাছে সঠিক ব্যবহারটি পাবার। কারণ তাদের যৌবন বয়েসে তাঁরা তাদের পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য তাদের মূল্যবান সময় ব্যায় করেছেন। ভালবাসা, মায়া-মমতার মোড়কে জড়িয়ে রেখে আমরা বাংলাদেশের বৃদ্ধরা প্রতি নিয়ত এবিউজ-এর স্বীকার হচ্ছি| আমরা প্রকাশ করতে লজ্জা পাচ্ছি, ভয় পাচ্ছি, পাছে লোকে কিছু বলে এই ভেবে| অন্যের দায় কে আমরা নিজের দায়, নিজের লজ্জা বলে চুপ করে থাকছি| আমাদের অনেক বেশি অধিকার সচেতন হতে হবে|
কানাডা একটি উন্নত দেশ, এখানে বসবাসকারী বৃদ্ধদের রয়েছে নানা ধরনের সুবিধা। কেউ যদি তার পরিবারে অথবা অন্য কোথাও এবিউজের স্বীকার হন তাৎক্ষণিক ভাবে তাকে সহায্য করার জন্য কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে রয়েছে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংঘঠন। আমাদের বৃদ্ধদের উচিত যদি কোন ধরনের বৈষম্যের শিকার হই, এবিউজের মুখোমুখি হই তবে সব লজ্জা, দ্বিধা দ্বন্দ ত্যাগ করে নিম্নে বর্ণিত এ সব সংগঠনের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করা । এবিউজ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় নম্বর সমূহ ঃ
– স্কারবোরো এল্ডার এবিউজ নেটওয়ার্ক- ফোনঃ ৪১৬ ৭৫০ ৯৮৮৫
– এডভোকেসি সেন্টার ফর দি এল্ডারলি (এ সি ই )- ফোনঃ ৪১৬ ৫৯৮ ২৬৫৬
– কমিউনিটি লিগাল এডুকেশন অন্টারিও (সি এল ই ও )- ফোনঃ ৪১৬ ৪০৮ ৪৪২০
– অন্টারিও নেটওয়ার্ক ফর দি প্রিভেনশন অব এল্ডার এবিউজ-ফোনঃ ১-৮৬৬-২৯৯১০১১
– টরন্টো পুলিশ সারভিস এল্ডার এবিউজ-ফোনঃ ৪১৬ ৮০৮ ৮৮০০ (৯১১)
শুধু মাত্র একটি টেলিফোনের দূরত্বে তাদের অবস্থান।
এছাড়াও স্থানীয়ভাবে বৃদ্ধদের নিয়ে বিশেষ ভাবে কাজ করছে যেমন হারমনি হল সেন্টার ফর সিনিওরস এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ফোনঃ ৪১৬ ৬৯৩ ৫৩৩০
# বাংলাদেশ কমিউনিটি সার্ভিসেস (বি.সি.সি.এস) ফোন: ৪১৬ ৯০১ ২১২১
পরিবারে, সমাজে এবং রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাসের জন্য নবীন,প্রবীন আমাদের সবার প্রয়োজন মায়া, মমতা, ভালবাসা,সহযোগিতা, সহিষ্ণুতা নিয়ে সবার সাথে ব্যবহার করা। তাহলেই আমরা সবাই সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে জীবন যাপন করতে পারবো।
সেলিনা সিদ্দিকী
লেখিকা
টরন্টো