অন্টারিওর মালিকবান্ধব শ্রম আইনে শ্রমিক শোষণের সুযোগ তৈরী করে রাখা হয়েছে

সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৬

॥ খুরশিদ আলম ॥

অন্টারিওতে অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক তাদের কর্মীদেরকে উপযুক্ত বেতন দিচ্ছেন না, দিচ্ছেন না ভেকেশন পে এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধাও। ফলে এই সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীগণ বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের পাওনা অধিকার থেকে এবং একই সাথে বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের মৌলিক অধিকার থেকেও। অন্টারিওর এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ডস এ্যক্ট এন্ড দি লেবার রিলেশনস এ্যক্ট এর পর্যালোচনার পর দুই সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল এই অভিমত প্রকাশ করেন সম্প্রতি। গত জুলাই মাসে কানাডিয়ান প্রেস এই খবরটি প্রকাশ করে। গত শতকের নব্বুই দশকের পর এই প্রথম এই ধরনের একটি পর্যালোচনা করা হলো।

আমরা দেখেছি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক টরন্টোবাসীর জন্যই স্বল্প বেতন ও অনিশ্চিত কর্মসংস্থানের বিষয়টি দ্রুত জীবনধারার অংশ হয়ে উঠছে। এক হিসাবে দেখা গেছে টরন্টো ও তার আশপাশের ৪০ শতাংশ মানুষ তাদের চাকরির ক্ষেত্রে কোন না কোন ধরনের অনিশ্চয়তায় ভোগেন। ঝুঁকিতে থাকা সেইসব লোকেদের বেশিরভাগেরই নির্দিষ্ট পরিচিতি রয়েছে: তারা হলেন ইমিগ্রেন্ট।

২০১৩ অন্টারিওতে ন্যুনতম বেতনভোগী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে ২০০৩ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৩ সালের অক্টোবর প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় ২০০৩ সালে সর্বনিম্ন বেতনভোগী শ্রমিকের হার ছিল ৪.৩ শতাংশ। ২০১৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৯ শতাংশ।

ওয়েলেসলি ইন্সটিটিউট পরিচালিত ওই গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, প্রতি ঘণ্টায় ১০.২৫ ডলার বেতন পাওয়া শ্রমিকের মধ্যে নারী ও ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা সম্ভবত বেশি।

২০০৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত স্ট্যাটিসটিকস কানাডা’র তথ্যের উপর ভিত্তি করে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এতে দেখা যায় তরুণ শ্রমিকদের মধ্যে ন্যূনতম বেতনে কাজ করার হার সম্ভবত বেশি। কিন্তু এদের মধ্যে ৪০ শতাংশ অথবা এক লাখ ৮৩ হাজারের বয়স ২৫ অথবা তার থেকে বেশি।

আরো ১০ লাখ শ্রমিক যাদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স ২৫ অথবা বেশি তারা প্রতি ঘণ্টায় ন্যূনতম বেতনের চেয়ে সামান্য বেশি ১০.২৫ থেকে ১৪.২৫ ডলার আয় করেন।

অন্টারিওতে সর্বশেষ ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে গত বছর (২০১৫) অক্টোবর মাস থেকে। সেই হিসাবে বর্তমানে অন্টারিওতে ন্যূনতম মজুরী বর্তমানে ১১.২৫ ডলার।

তবে পূর্বের তুলনায় ঘন্টায় এই ২৫ সেন্ট মজুরী বৃদ্ধি অন্টারিও প্রভিন্সের ক্রমবৃদ্ধিমান নিন্ম আয়ের শ্রমজীবীদের দারিদ্রতা দূরীকরণে কোন ভূমিকা রাখেনি। গবেষণায় বলা হয়, দারিদ্রতা দূরীকরণের জন্য ঘন্টায় ২৫ সেন্ট বেতন বৃদ্ধি নয়, বেতন বৃদ্ধি করতে হবে এখনকার যে রেট তার চেয়ে ২৫% বেশী। কানাডিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অলটারনেটিভ এর মতে এখনকার যে ন্যূনতম মজুরী তা টরন্টোতে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় ৬১% কম।

মজুরী বৃদ্ধি পক্ষে যারা আন্দোলন করছেন তাদের মতে অন্টারিওর ন্যূনতম মজুরী বর্তমান বাজারের পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে করা উচিৎ ঘন্টায় ১৫ ডলার করে।

কিন্তু ১৫ ডলার করে ন্যূনতম বেতন পাওয়ার আশা অন্টারিওর শ্রমজীবী মানুষের কাছে কেবলই দিবা স্বপ্ন। তার উপর অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক সামর্থ্য থাকা সত্বেও কর্মীদেরকে ভেকেশন পে এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকেও বঞ্চিত করছেন। আর এই সকল সুযোগসুবিধা যাতে দিতে না হয় সে জন্য আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে নেন তারা। আর দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো যে, অন্টারিও শ্রম আইনের মধ্যেই সেই ফাঁকফোকর রয়ে গেছে অথবা বলা ভাল যে অসাধু নিয়োগকর্তাদের জন্য শ্রমিক শোষণের সুযোগ তৈরী করে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগদান প্রক্রিয়া।

ইতিপূর্বে টরস্টার নিউজ সার্ভিসের এক খবরে বলা হয়, “অন্টারিও’র দীর্ঘ দিনের পুরানো গুণে ধরা এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ড এ্যাক্ট এ (যেটি বর্তমানে রিভিও করা হচ্ছে) বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই যে একজন নিয়োগকর্তা এমপ্লয়মেন্ট এসেন্সির মাধ্যমে কতদিন ধরে একজন অস্থায়ী কর্মীকে অস্থায়ীভাবেই রাখতে পারবেন। অর্থাৎ চাইলে একজন নিয়োগকর্তা অনির্দিষ্ট কালের জন্য একজন অস্থায়ী কর্মীকে অস্থায়ী হিসেবেই রাখতে পারেন। বর্তমান আইনে নিয়োগকর্তা বাধ্য নন একজন অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী কর্মীর সমান বেতন দিতে যদিও তারা একই পরিমান বা একই মাত্রার কাজ করে থাকেন। এমনকি সমমানের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হলেও। অন্টারিওতে নিয়োগকর্তাদের এতই ক্ষমতা বা এতই তাদের সৌভাগ্য যে তারা ইচ্ছে করলে তাদের গোটা প্লান্টের সব কর্মীদেরকেই অস্থায়ী হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন।”

অন্টারিওতে অস্থায়ী কর্মীরা বেতন পান বলতে গেয়ে প্রায় অর্ধেক। টরস্টার নিউজ এজেন্সির ঐ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, “অন্টারিও এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ড এ্যাক্ট অনুযায়ী এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিগুলো বাধ্য নয় এ তথ্য প্রকাশ করতে যে, তারা প্রতিটি কর্মী বাবদ নিয়োগদাতা মূল প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে কি পরিমাণ অর্থ নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মূল প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিটি কর্মীর বেতন বাবদ যে অর্থ নেওয়া হচ্ছে, তার অর্ধেকের চেয়েও কম বেতন দেওয়া হচ্ছে ঐ কর্মীদেরকে।”

স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার এক হিসেবে দেখা যায় এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে টরন্টোতে মধ্য পর্যায়ের আয় করেন এমন একজন অস্থায়ী কর্মীর বেতন ঘন্টায় ১৫ ডলারের মত। অন্যদিকে সমান অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা নিয়ে একজন স্থায়ী কর্মী বেতন পাচ্ছেন ঘন্টায় ২২.৫০ ডলার। এই হিসেবে স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীর মধ্যে বেতন বৈষম্য দাড়ায় ৩৩%। নন-ইউনিজানইজড কর্মপরিবেশে বেতনের এই বৈষম্য আরো বেশী।

অস্থায়ী কর্মীরা যে শুধু জব এজেন্সি বা এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির মাধ্যমেই কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তা কিন্তু নয়। সরাসরি কোম্পানীর মালিকেরাও অস্থায়ী কর্মীদেরকে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তবে শর্ত ঐ একই থাকে। অর্থাৎ কোন বেনিফিট, পেনশন বা স্থায়ী কর্মীদের সমান বেতন ইত্যাদি কোনটাই দেওয়া হবে না।

এভাবেই “অন্টারিও’র দীর্ঘ দিনের পুরানো গুণে ধরা এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ড এ্যাক্ট এর ফাঁকফোকর গলিয়ে অসাধু মালিকেরা শ্রমজীবী মানুষকে ঠকিয়ে যাচ্ছেন অনেক বছর ধরেই। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে অন্টারিওতে যেখানে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়। ফলে ঐ শ্রমিকরা যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে বা প্রতিবাদ করবে তারও কোন উপায় নেই।

গত প্রায় এক দশকে টরন্টোতে অস্থায়ী কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৩%। স্ট্যাটিসটিক্স কানাডার হিসেবে দেখা যায় ২০০৪ সালে টরন্টোতে অস্থায়ী কর্মী ছিল ২৫৬,০০০ জন। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা এসে দাড়ায় ৩৪০,০০০ জনে। ম্যানুফেকচারিং, ট্রান্সপোর্টেশন ও হেলথ সেক্টরে অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশী। অন্যদিকে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা টরন্টোতে বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ১২%।

অন্টারিওতে অসাধু মালিক কর্তৃক শ্রমিক শোষণের আরো একটি প্রক্রিয়া হলো কাজ করিয়ে ক্যাশে মজুরী পেমেন্ট করা। এ ক্ষেত্রেও শ্রমিককে কোন বেনিফিট দিতে হয় না। আর বেতন দেওয়া হয় অন্টারিও আইনে নির্ধারিত ন্যূনতম বেতনেরও অনেক কম। সাধারণত রিফিউজি বা ইমিগ্রেশনের বৈধ কাগজপত্রহীন শ্রমিকরাই এরকম পরিস্থিতির শিকার হন বেশী। নতুন আসা ইমিগ্রেন্টরাও এরকম পরিস্থিতির শিকার হন প্রায়শই। এতে করে সরকারও বঞ্চিত হয় টেক্স থেকে। অর্থাৎ অসাধু মলিকরা শুধু যে শ্রম আইনের অবব্যবহার করে বা শ্রম আইন ফাঁকি দিয়ে শ্রমিকদেরই শোষণ করছেন তা নয়, সরকারকেও তার প্রাপ্য টেক্স থেকে বঞ্চিত করছেন তারা।

অন্টারিওর কোন কোন প্রতিষ্ঠানে কোন শ্রমিক কর্মকালিন কোন দুর্ঘটনার শিকার হলে তাকে ইন্সুরেন্স কোম্পানীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করতে দেওয়া হয় না নানান অজুহাত দেখিয়ে। নানারকম বাধার সৃষ্টি করা হয় কিংবা চাকরি থেকে বাদ দেয়ার হুমকীও দেওয়া হয় অনেক ক্ষেত্রেই যাতে করে সেই আহত শ্রমিক ক্লেইম করা থেকে পিছিয়ে আসেন। কারণ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর কাছে ক্লেইম করতে গেলেই কর্মস্থলে কোম্পানীর অব্যবস্থাপনা প্রকাশ পেয়ে যাবে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো প্রকাশ পাবে। এভাবেও শ্রমিকদেরকে বঞ্চিত করা হয় তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে। শুধু তাই নয়, কোন কোন মালিক শ্রমিককে বাধ্য করেন আহত অবস্থায়ই কাজ করার জন্য।

২০১৩ সালে টরন্টোর ‘ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার্ক এন্ড হেলথ’ এক জরীপ চালায় স্বল্প বেতনের স্থানীয় অস্থায়ী কর্মীদের উপর যারা বিভিন্ন এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। জরীপের ফলাফলে যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হলো, অস্থায়ী কর্মীদের ব্যাপারে অসাবধানতার কারণে কর্মস্থলে অস্থায়ী কর্মীদের নিরাপত্তা স্থায়ী কর্মীদের তুলনায় বিঘিœত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশী। অস্থায়ী কর্মীদের অনেকেই জানান, তারা তাদের কর্মস্থলের মন্দ কর্ম পরিবেশ সম্পর্কে অভিযোগ তুলতেও ভয় পান। কারণ, কর্মস্থলে তাদের অবস্থান অস্থায়ী বিধায় সবসময়ে তা নড়বড়ে। কোনা বিষয়ে অভিযোগ তুললে তারা চাকরী হারাতে পারেন যে কোন মুহূর্তে।

অন্টারিওতে অস্থায়ী কর্মীগণের বঞ্চনার যেন শেষ নেই। দেখা গেছে ‘ওয়ার্কপ্লেস সেফটি এন্ড ইন্সুরেন্স এ্যাক্ট’ এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিকেই অস্থায়ী কর্মীদের একমাত্র নিয়োগদাতা হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে মূল নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান নিজেদেরকে সবসময় যে কোন দায়-দায়িত্ব থেকে নিজেদেরকে মুুক্ত রাখার সুযোগ পায় যদি কর্মস্থলে কোন দুর্ঘটনা ঘটে এবং সেই দুর্ঘটনায় কোন অস্থায়ী কর্মী আহত হন।

অন্টারিওর শ্রম আইন মূলত মালিকবান্ধব হিসাবেই বিবেচিত হয়ে আসছে। সে কারণেই টরন্টোর ওয়ার্কার্স একশন সেন্টারের প্রধান ডিনা লেডকে বলতে শুনা যায় “অন্টারিওর অস্থায়ী কর্মীদের ভাল-মন্দ দেখার কেউ নেই। অস্থায়ী কর্মীদের জন্য এখানে রয়েছে একটি ‘নিখুঁত’ কর্মপরিবেশ যেখানে তারা তাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটাবে, নিরাপত্তাহীনাতায় ভুগবে এবং কম বেতন পাবে।”

অন্টারিওতে অস্থায়ী কর্মীরা যেমন নিরাপত্তাহীনাতায় ভুগেন এবং কম বেতন পান তেমনি অবস্থা অনেক স্থায়ী কর্মীদরেও। আমরা জানি কানাডা পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা ধনী দেশগুলোর একটি। আর এই দেশটিতে রয়েছে অনেক সেরা ধনীদেরও বসবাস। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় প্রথম সারির ১০০ জন ধনী কানাডিয়ানের মোট সম্পত্তির পরিমান ২০০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গড়ে একেকজন ধনীর কাছে ২ বিলিয়ন ডলার করে সম্পদ রয়েছে। কিন্তু এই দেশটিতেই আবার প্রতিদিন প্রায় এক মিলিয়ন লোককে ফুড ব্যাংকের স্মরনাপন্ন হতে হয় অভাবের তারনায়। আর এদের প্রায় অর্ধেকই শিশু ও নতুন ইমিগ্রেন্ট।

ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর সোস্যাল ওয়ার্ক ফেকাল্টির অধ্যাপক লিওনার্ড এডওয়ার্ডের মতে কানাডায় প্রতি তিনজন দরিদ্র লোকের মধ্যে একজন হলেন ইমিগ্রেন্ট। কানাডিয়ান লেবার মার্কেট এর এক তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় যে সকল ইমিগ্রেন্ট এখানে এসেছেন গত পাঁচ বছর বা তারো কম সময়ে, তাদরে মধ্যে শতকরা ৩৬ ভাগই দরীদ্রসীমার নিচে বাস করেন। অথচ এরা প্রায় সকলেই উচ্চশিক্ষিত এবং কানাডায় এসেছেন স্কিল্ড ক্যাটাগরীর পয়েন্ট সিস্টেমে উত্তীর্ণ হয়েই। কিন্তু কর্মস্থলে তারা অবহেলিত। শ্রম আইন মালিকবান্ধব হওয়ার কারণে এরা কর্মস্থলে  হন বঞ্চিত। বেতন কম পান। অন্যান্য বেনিফিটও পান না।

উল্লেখ্য যে, টরন্টোতে টেক্স প্রদানের পর একজন কর্মজীবী মানুষের বাৎসরিক আয় ১৮,৫০০ ডলারের কম হলে তাকে দরিদ্র বলা হয়। আর স্বামী-স্ত্রীসহ চার সদস্যের একটি পরিবারের বাৎসরিক আয় ২৭,৫০০ ডলারের নিচে হলে সেই পরিবারকে দরিদ্র পরিবার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

অন্টারিওর শ্রম মন্ত্রী কেভিন ফ্লেন শ্রম আইন সম্পর্কিত প্যানেল কমিটির রিপোর্ট পড়ে বলেন, তরুন কর্মী ও নতুন ইমিগ্রেন্টরা চাকরী ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। তাদেরকে উপযুক্ত বেতন দেওয়া হয় না, ভেকেশন পে দেওয়া হয় না, দেওয়া হয় না অন্যান্য বেনিফিটসও। এই অনিয়মটি ঘটছে প্রধানত রিটেইল, হসপিটালিটি এবং কনস্ট্রাকশন সাইটে। এক শ্রেণীর অসাধু চাকুরীদাতাদের কারণে এ জাতীয় ঘটনা ঘটছে।

অন্টারিও চেম্বার অব কামার্স এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কার্ল বেলডাফ বলেন, কর্মস্থলের এই সমস্যাগুলো জিইয়ে রয়েছে শুধুমাত্র বর্তমানের বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ নেই বলে। নতুন নতুন গুরুভার ও পীড়নকর আইন প্রণয়ন না করে আমাদের উচিত হবে বিদ্যমান আইন প্রয়োগের ব্যাপারে কঠোর হওয়া।

অন্যদিকে প্রাইভেট সেক্টরে কানাডার বৃহত্তম শ্রমিক ইউনিয়ন ‘ইউনিফর’ পক্ষ থেকে বলা হয়, প্যানেল রিপোর্টটি প্রকাশিত হওয়ায় এটি প্রমানিত হয়েছে যে, অন্টারিও প্রভিন্সে চাকুরীদাতাগণ সুযোগ বুঝে চাকরী প্রার্থীদেরকে নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত চাকরী দিচ্ছে, বেতন দিচেছ কম এবং পার্ট টাইম জব অথবা কনট্রাক্ট জব অফার করছে যাতে বেনিফিট দিতে না হয়। এতে করে সৃষ্টি হচ্ছে আয়ের ক্ষেত্রে অসমতা।

সুতরাং এটি এখন দিনের আলোর মতই ষ্পষ্ট যে, অন্টারিওর শ্রম আইন অর্থাৎ ‘অন্টারিওর এমপ্লয়মেন্ট স্ট্যান্ডার্ডস এ্যক্ট এন্ড দি লেবার রিলেশনস এ্যক্ট’ এ বিদ্যমান সমস্যাগুলো এই প্রভিন্সের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করছে এখানকারই কিছু মানুষকে তাদের প্রাপ্য আধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে, তাদের মানবাধিকার লংঘন করে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে নিশ্চিতভাইে তা হবে দুঃখজনক এবং কানাডার জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এটি হয়ে দাড়াবে একটি প্রধান অন্তরায় বা প্রতিবন্ধকতা।

শ্রম মন্ত্রী কেভিন ফ্লেন অবশ্য বলেছেন, যারা শ্রম আইন মানেন না বা যাদের ধারণা আইন অমান্য করেও ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। প্যানেল কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্টে যে সুুপারিশ করা হবে তা অনুসরণ করা হবে অসাধু চাকুরীদাতাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।

আমরা সেই দিনেরই অপেক্ষায় রইলাম।

খুরশিদ আলম

সম্পাদক ও প্রকাশক প্রবাসী কন্ঠ