সিংহভাগ অভিবাসীর মানসিক স্বাস্থ্য ভাল নয়
জানুয়ারী ১, ২০১৫
॥ খুরশিদ আলম ॥
জীবন নিয়ে ইতিবাচক অনুভূতি রয়েছে কানাডার বেশীরভাগ নাগরিকের। কারণ তারা মনে করেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ‘বিকশিত’ হচ্ছে। তারা তাদের জীবন সম্পর্কে ভালো অনুভব করেন এবং প্রতিদিনই ভালভাবে কাজ করছেন বলে তারা মনে করেন। সম্প্রতি প্রকাশিত স্ট্যাটিসটিকস কানাডার এক রিপোর্টে এ কথাই বলা হয়েছে। ঐ রিপোর্টে বলা হয়, ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী কানাডীয়দের মধ্যে ৭৫ শতাংশই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খুশী।
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার রিপোর্টে আরো দেখা যায়, মাত্র দুই শতাংশেরও কম সংখ্যক কানাডীয় ‘‘জড়তাগ্রস্ত’’ অর্থাৎ তারা ন্যূনতম পর্যায়ের ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন এবং মন্দভাবে কাজ করছেন বলে মনে করেন। অন্যদিকে প্রায় ২২ শতাংশ রয়েছেন যাদের মানসিক স্বাস্থ্য মাঝামাঝি পর্যায়ের – বিকাশমান বা জড়তাগ্রস্ত কোনওটাই নয়।
মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কিত তথ্যের সঙ্গে সমন্বয় করার পর দেখা যায়, প্রায় ৭৩ শতাংশ অথবা প্রায় দুই কোটি কানাডীয় বলেছেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ‘‘পরিপূর্ণ’’ কারণ তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশমান এবং তারা গুরুতর মানসিক অসুস্থতা যেমন বিষন্নতা, বাইপোলার অসঙ্গতি (bipolar disorder), সচরাচর দেখা যাওয়া উদ্বেগজনিত অসঙ্গতি এবং অ্যালকোহল, গাঁজা বা অন্যান্য মাদকজনিত অপব্যবহার বা নির্ভরশীলতায় আক্রান্তদের মধ্যে পড়েন না।
এই ‘কানাডিয়ান’দের মধ্যে অভিবাসী কজন আছেন? অর্থাৎ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আসা প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী যারা ইতিমধ্যেই কানাডার নাগরিকত্ব লাভ করেছেন তারাও কি আছেন? তাদের শতকরা ৭৩ ভাগের মানসিক স্বাস্থ্যও কি ‘পরিপূর্ণ’?
উপরে উল্লেখিত রিপোর্টে স্পষ্ট করে তা বলা হয়নি। অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পরিচালিত বিভিন্ন রিপোর্টে আমরা যে চিত্র দেখতে পাই তার সঙ্গে এর তেমন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। তাছাড়া এই রিপোর্টেই আমরা দেখতে পাচ্ছি কানাডার বাকি প্রায় একচতুর্থাংশের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল নেই। রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় কানাডার মানসিক স্বাস্থ্য সমিতি বলেছে, পরিসংখ্যানে যদিও কানাডীয়দের মানসিক স্বাস্থ্যচিত্রের উজ্জ্বল দিক প্রতিফলিত হয়েছে তবু এর বিপরীত পিঠেই রয়েছে এমন তথ্য যে, প্রতি চারজন কানাডীয়র মধ্যে একজন মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় ভুগছেন। সমিতির ন্যাশনাল সিইও পিটার কোলরিজ বলেন, ৭৭ শতাংশ মানুষ বলেছে তারা মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে ‘বিকাশমান’ পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, রিপোর্টটি পুরোপুরিভাবে দেখলে এর মধ্যে উদ্বেগের বিষয়ও রয়েছে। কোলরিজ আরো বলেন, আমাদের জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের সহায়তা দরকার।
লক্ষ্যনীয় যে, কোলরিজের বক্তব্যেও অভিবাসীদের ব্যাপারে আলাদা করে কিছু বলা হয়নি। অর্থাৎ পুরো বিষয়টির মধ্যে আমরা যে চিত্রটি দেখতে পাচ্ছি তা কানাডার একটি সাধারণ চিত্র। আর ঐ চিত্রে অভিবাসীদের মানসিক দুরাবস্থার কথা আলাদাভাবে তুলে না ধরার কারণে অনেকের হয়তো ধারণা হতে পারে যে সিংহভাগ অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যও ভালই আছে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো তার ঠিক উল্টোটি। সার্বিকভাবে সিংহভাগ কানাডিয়ানদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল হলেও আলাদাভাবে বিচার বিশ্লেষন করতে গেলে দেখা যায় সিংহভাগ অভিবাসীর মানসিক স্বাস্থ্য ভাল নয়। বিশেষত পেশাজীবী অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য অবনতির দিকে ধাবিত হতে থাকে কানাডায় আসার কিছুদিন পর থেকেই। আর এর মূল কারণ নিজ নিজ পেশায় চাকরী না পাওয়া।
দেশ থেকে আসার সময় তারা মোটামুটি ছয় মাস থেকে এক বছর চলার মতো অর্থ সাথে করে নিয়ে আসেন। তবে সে অর্থ ফুরাতে বেশী সময় লাগে না। কারণ, কানাডায় বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্রে দাম গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গাড়ি, ইন্সুরেন্স, গ্যাস এসবের দামও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আর যখন আসার তিন বা চার মাসের মাথায়ও নিজ নিজ পেশার চাকরী জোগার করা সম্ভব হয়ে উঠেনা তখন উপায়ন্তর না দেখে নতুন আসা এই অভিবাসীরা যোগ দেন এমনসব কাজে যেগুলোর জন্য তারা ভীষণরকমের ওভারকোয়ালিফাইড।
কোনরকম স্কুলের গন্ডি পার হলেই যে সব চাকরী করা যায়, সেসব চাকরীর জন্য লাইন ধরতে হয় ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার অথবা বিজ্ঞানীদেরকে। এবং এই সকল ওভারকোয়ালিফাইড অভিবাসীদেরকে স্কুলপাশ কর্মীদের তত্বাবধানে কাজ করতে হয়। এখানেই শেষ নয়। সপ্তাহ শেষে বা পনের দিন পর পর যে অংকের পে চেক পান তারা, তার দিকে তাকালে যে কারোর মানসিক স্বাস্থ্যই সুস্থ্য থাকার কথা নয়।
কানাডার ইনস্টিটিউট অব ওয়ার্ক এন্ড হেল্থ এর সাম্প্রতিক এক রিপোর্টেও একই কথা বলা হয়েছে। ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে কানাডায় আসার কিছুদিন পর থেকেই পেশাজীবী অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। আর এর কারণ নিজ নিজ পেশায় চাকরী না পাওয়া এবং তাদের কোয়ালিফিকেশনের তুলনায় অনেক নিন্মআয়ের চাকরী করতে বাধ্য হওয়া। ইনস্টিটিউট অব ওয়ার্ক এন্ড হেল্থ এর গবেষণা সহকারী সিনথিয়া চেন বলেন, আমরা জানি এবং দেখেছি যে কানাডায় আসার পর অনেক ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার পিজ্জা ডেলিভারী অথবা ক্যাব চালাতে বাধ্য হন। অথবা ফ্যাক্টরীতে দিনমজুরের কাজ করেন।
সিনথিয়া এবং তার গবেষণা সহকর্মীরা স্যাটিসটিকস কানাডার অধীনে পরিচালিত Longitudinal Survey of Immigrants to Canada (LSIC) জরীপ রিপোর্টের ডাটা ও তথ্য বিশ্লেষন করে দেখেছেন। ঐ জরীপ রিপোর্টে এমনসব অভিবাসীদেরকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল যারা কানাডায় আসার আগে দেশে চাকরী করেছেন এবং কানাডায় আসার সময় ভাল স্বাস্থ্যে অধিকারী ছিলেন। কানাডায় আসার পর পরবর্তী চার বছরে তাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে তিনবার। এক বছর পর পর নেয়া হয়েছিল ঐ সাক্ষাৎকারগুলো। প্রতিবার সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য এক বছরে কোন পর্যায়ে নেমেছে। সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন প্রশ্নের মধ্যে বিশেষ যে প্রশ্নটি করা হতো তা হলো- বিগত এক বছরে তারা কোন ক্রমাগত বিষন্নতা, মনমরা ভাব বা একাকিত্বে ভুগেছিলেন কি না। জরীপে মোট ২,৬৮৫ জন পেশাজীবী অভিবাসীকে অন্তভূক্ত করা হয়েছিল। জরীপে দেখা গেছে এই অভিবাসীদের মধ্যে শতকরা ৫২জন ছিলেন ওভারকোয়ালিফাইড তাদের একাডেমিক লেভেল এর বিচারে এবং শতকরা ৪৪ ভাগ ছিলেন ওভারকোয়ালিফাইড তাদের চাকরীর অভিজ্ঞতার বিচারে। আর এই বিরূপ পরিস্থিতির কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে সেই চার বছরের মধ্যে। তবে শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক ছিল।
সিনথিয়া তার গবেষণা পত্রে আরো বলেন, কানাডার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের পলিসি অনুসারে বিদেশ থেকে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন ও ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী পেশাজীবী লোকদের নিয়ে আসেন অভিবাসী হিসেবে। কিন্তু কানাডায় আসার পর তাদের অধিকাংশেরই স্ব স্ব দেশের অভিজ্ঞতা ও সার্টিফিকেটের যথাযথ মূল্যায়ন হয়না বলে পেশাভিত্তিক চাকরীর বাজারে প্রবেশের সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হন। সিনথিয়ার পরামর্শ হলো, কানাডায় ইমিগ্রেশনের জন্য আবেদন করার আগে প্রার্থীদেরকে ভাল করে চাকরীর বাজার যাচাই করে দেখা উচিৎ। কারণ, দেখা গেছে ইপ্সিত চাকরী না পেয়ে অভিবাসীদের অনেকেরই মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে কানাডায় আসার অল্পকিছুদিনের মধ্যেই।
এরকম মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে অনেক বাংলাদেশীদের মধ্যেও। এদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। মানসিক চাপ, দুঃশ্চিন্তা, হতাশা, বিষন্নতা ইত্যাদি অনেক সমস্যা নিয়েই বাংলাদেশীরা ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হন। প্রধান কারণ ঐ একটাই। নিজ পেশায় চাকরী না পাওয়া। নিজ পেশায় চাকরী না পেয়ে অন্য চাকরী করতে যান যেখান থেকে পর্যাপ্ত অর্থ আসে না। ফলে সংসারও চলে না ঠিকমত। এর পর অধিকাংশেরই আবার রয়েছে দেশের প্রতি পিছুটান। প্রতি মাসে না হোক, দুই তিন মাস পর পরই দেশে টাকা পাঠাতে হয়। এসব মিলিয়ে তারা কি করবেন তা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। আর তার অবস্বম্ভাবী পরিনতি মানসিক সমস্যা। টরন্টো প্রবাসী বাংলাদেশী ডাক্তার আবু আরিফের মতে বাংলাদেশী অভিবাসীদের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ লোক মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
ইউনিভারসিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে ক্রস কালচারাল সাইকোলজিতে পিএইচ ডি করা মনোবিজ্ঞানী সুনাইনা আসানান্দ তার এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, এখানে সমস্যা হলো, অভিবাসীদের মধ্যে যারা মানসিক সমস্যায় ভুগেন তাদের অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে চান না। বিষয়টির সঙ্গে দেশজ সংস্কৃতি সম্পর্কিত। মানসিক সমস্যা হলে অনেকেই লজ্জায় ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। তারা মনে করেন, আত্মীয় – বন্ধুরা যদি জেনে যায় তবে লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাড়াবে।
মনোবিজ্ঞানী সুনাইনা আরো উল্লেখ করেন, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মূলধারার কানাডিয়ানদের চেয়ে অভিবাসীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা বেশী দেখা দেয়। অথচ এরাই সবচেয়ে কম যান ডাক্তারের কাছে সাহায্য নিতে। পরিবারের অন্যান্য সদস্য, আত্মীয় – বন্ধু এদের কাছে লজ্জা পেতে হবে বা একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে এই ভয়েই তারা ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। ফলে সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তা বড় রকমের সমস্যা হয়ে দাড়ায়।
মনোবিজ্ঞানী সুনাইনার মতে, অভিবাসীদের অনেকেরই ধারণা- এখানকার ডাক্তাররা অভিবাসীদের মানসিক সমস্যাটা সঠিকভাবে ধরতে পারবেন না। কালচারাল গ্যাপের কারণে এরকম হতে পারে বলে তারা মনে করেন। বৈষম্যমূলক আচরণ পেতে পারেন এই ভয়েও মূলধারার ডাক্তারের কাছে যেতে ভয় পান অনেকে। এ বিষয়ে তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন কমিউনিটিতে বেশ কিছু ডাক্তার যোগ হয়েছেন যারা নিজেরাও ঐ কমিউনিটিরই সদস্য বা একই কালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা। সুতরাং তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে কোনরকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়াই।
আমরা জানি, কানাডায় যখন কেউ অভিবাসী হয়ে আসেন তখন তাকে একসাথে অনেকগুলো সেটেলমেন্ট ইস্যু নিয়ে কাজ করতে হয়। এর মধ্যে আছে হাউজিং, নিজ পেশায় চাকরী খোঁজা, নতুন দেশের নতুন পরিবেশ ও আইন সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার চেষ্টা করা, নিজ দেশ থেকে নিয়ে আসা সংস্কার ও সংস্কৃতির সঙ্গে কানাডার সংস্কার আর সংস্কৃতির বিরোধ থাকলে তার সমন্বয় ঘটানো বা এড়িয়ে চলতে শেখা, ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজের লেখাপড়ার দিকে নজর দেয়া, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক গড়ে তোলা এ সবকিছু মিলিয়ে একটা প্রচন্ড চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে
হয় নতুন আসা অভিবাসীদেরকে। আর এই পরিস্থিতি অনেক সময়ই প্রচন্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। তার সঙ্গে যোগ হয় আরো ওজনদার চাপ যদি নিজ পেশায় কোন অভিবাসী চাকরী না পান। আর এই মানসিক চাপই ক্রমান্বয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায় এবং চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন না হলে একপর্যায়ে তা রোগের কারণ হয়ে দাড়ায়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডায় আসা অধিকাংশ পেশাজীবী অভিবাসীদের দুর্ভাগ্য যে কর্মক্ষেত্রে অর্জিত তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও একাডেমিক সার্টিফিকেটের যথাযথ মূল্যায়ন এ দেশে হয় না। তার সাথে আছে ‘কানাডিয়ান অভিজ্ঞতা’ নামের এক বৈষম্যমূলক আচরণ। অন্টারিও হিউম্যান রাইটস কমিশনও এই ‘কানাডিয়ান অভিজ্ঞতা’কে বর্ণবাদী আচরণ বলে নিন্দা জানিয়েছে। এই সব মিলিয়ে আমরা যা দেখছি তা হলো, দক্ষ অভিবাসীদেরকে তাদের নিজ নিজ পেশার কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে ঠেলে রাখার প্র্যাকটিস এখনো চলছে। আমরা জরিপেও দেখেছি, ৩০ শতাংশ কানাডীয় জবাবদাতা একটি বিষয়ে একদম অথবা জোরালোভাবে একমত যে, ‘‘অভিবাসীরা কানাডীয়দের কাছ থেকে চাকরী ছিনিয়ে নিচ্ছে।’’ অর্থাৎ কানাডার সাধারণ মানুষের মধ্যেও অভিবাসীদের বিষয়ে এক ধরণের ভীতি কাজ করছে যার কোন যৌক্তিকতা নেই। সিবিসির এই জরীপ রিপোর্টটি প্রকাশিত হয় গত ১০ নভেম্বর, ২০১৪। আর এভাবেই চাকরীদাতা সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের বৈষম্য ও সন্দেহের জাতাকলে পড়ে অনেক অভিবাসীর মানসিক স্বাস্থ্য অবনতির দিকে যায়।
জীবন নিয়ে ইতিবাচক অনুভূতি কানাডার বেশীরভাগ নাগরিকের। কারণ তারা মনে করেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ‘বিকশিত’ হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি সুখবর, অন্যদিকে জীবন নিয়ে অধিকাংশ অভিবাসীর অনুভূতি যে নেতিবাচক সে খবরটিকেও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। কারণ এটি নিঃসন্দেহে একটি দুঃসংবাদ।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক, প্রবাসী কন্ঠ