ফ্রন্টলাইনের করোনা যোদ্ধাদের প্রতি স্যালুট

মে ১৮, ২০২০

বিশ্বব্যাপী করোনা (কভিড-১৯) প্রতিরোধে আজ যারা সম্মুখ কাতারে থেকে মানব সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন তাদের জানাই আমাদের অন্তরের অন্তস্থল থেকে অভিবাদন ও কৃতজ্ঞতা। নিজেদের জীবন বাজি রেখে যারা এই বিপদসংকুল যুদ্ধে নেমেছেন সেই অকুতভয় সেনানীদের মধ্যে আছেন ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিকস, হাসপাতালের অন্যান্য কর্মী, ফার্মাসিস্ট, পুলিশ, সেনাবাহিনী, গ্রোসারীর কর্মী, সাংবাদিক, পরিবহন কর্মী সহ আরো কিছু জরুরী খাতের কর্মী।

আমরা জানি, কিছু পেশা বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্যোগের সময় কর্তব্য পালনে একনিষ্ঠ অবিচল ও অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকাটাই এই পেশাজীবীদের কাজের ধরণ। আবার কোন পেশার ধর্মই হচ্ছে বিপদের সঙ্গে বসবাস। আমরা দেখছি করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট এই দুর্যোগমুহূর্তে যখন সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে, তখন কিছু জরুরী বিভাগের কর্মী মৃত্যুঝুঁকি মাথায় নিয়ে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য দিনরাত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

আমরা এও জানি সংগ্রামী যোদ্ধার প্রয়োজন দুঃসময়েই। শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজন আন্তরিক অঙ্গীকারবদ্ধ যোদ্ধা তার দেশের মানুষের প্রয়োজন ও স্বার্থটিকেই সর্বোচ্চ মর্যাদা দেন। সেখানে নিজের সুবিধাপ্রাপ্তির বিষয়টি নগণ্য হয়ে যায়। গোটা বিশে^ই এখন এই যোদ্ধারা সংগ্রাম করে যাচ্ছেন অদৃশ্য শত্রæ করোনাভাইরাসের সঙ্গে। এই যুদ্ধে সন্মুখ সমরে যারা আছেন তারা রাইফেল-বন্দুক হাতে নয়, দস্তানা পরা দুটি হাত প্রসারিত করেছেন মানবসেবায়। তারাই প্রধানত এই সময়ের প্রাগ্রসর মানবিক দায়িত্বনিষ্ঠ শ্রেণী।

জরুরী বিভাগের কর্মীরা মৃত্যুঝুঁকি মাথায় নিয়ে মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য দিনরাত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ছবি : গ্লোবাল নিউজ

এই যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ইতিমধ্যে যারা মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করেছেন আমরা সকৃতজ্ঞচিত্তে গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি তাদেরকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক তথ্যমতে ইতোমধ্যে বিশ্বের ৫২টি দেশে ২২ হাজারেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। কানাডায়ও কিছু সংখ্যক ডাক্তার-নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। তাই আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

এ অবস্থায় করোনা মহামারি মোকাবিলার জন্য ডাক্তার, নার্সসহ সকল ফ্রন্টলাইন কর্মী এবং আক্রান্ত রোগীদের প্রাণ রক্ষার জন্য চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকদের অভিযোগ, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের ঘাটতি রয়ে গেছে। চীন থেকে যেসব পিপিই আমদানী করা হয়েছে, সেগুলোর কিছু অংশ মানসম্মত নয়। এন-৯৫ মাস্ক ছাড়া করোনা রোগীর সামনে যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ-এটা চিকিৎসকেরা বরাবরই বলে আসছেন। তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের পিপিই ও এন-৯৫ মাস্ক পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে। স্বাস্থ্য কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা হলে তাঁদের মনোবল আরো বাড়বে।

চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিকস, মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ হাসপাতালের সব কর্মী এই ভয়াবহ মহামারির বিরুদ্ধে টানা প্রায় তিন মাস যুদ্ধ করতে গিয়ে অনেকেই আজ পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অবস্থা আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এই সময়ে দরকার তাঁদের পাশে থাকা। আমাদের একটুখানি সহমর্মিতা তাদেঁর মনোবল বহুলাংশে চাঙা করতে পারে। সেটা কানাডার কোন কোন সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে করাও হচ্ছে সাধ্যমত। তাদেরকে অভিবাদন জানানোর জন্য এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য হাসপাতালসমূহের সামনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে জড়ো হয়ে লোকজন করতালি দিচ্ছেন। ব্যানার ফেস্টুন উচিয়ে ধরছেন বিভিন্ন স্লোগান লিখে।

আমরা প্রতিদিনই দেখছি চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে এবং তাঁদের পরিবারকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়ে কানাডিয়ানদের সেবা করে যাচ্ছেন। তাঁদের এমন মহান আত্মত্যাগকে আমরা যদি যথাসময়ে স্বীকৃতি না দিই এবং পাশে না থাকি, তাহলে সেটা হবে চরম অকৃতজ্ঞতা। তাই এই পরিস্থিতিতে করোনা মহামারি মোকাবিলা করার জন্য যাঁরা অসামান্য অবদান রাখছেন, তাঁদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া যেতে পারে।