প্রবাসে পরহিতকর্ম -৮

ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৫

॥ রীনা গুলশান ॥

সেদিন খুউব ব্যস্ত ছিলাম। একটার পর একটা ক্লায়েন্ট আসছিল। তাই লাঞ্চে যেতে দেরী হলো। প্রায় চারটা বেজে গেল। তাই ফুট কোর্টে আর না গিয়ে দোকানের সামনেই একটা লম্বা বেঞ্চ আছে (ক্লান্ত টুরিস্টরা একটু বসে নেয়), ওখানেই বসে গেলাম খেতে। পাশেই প্রায় ২০/২৫ জনের মত কালো সম্প্রদায়ের তরুন খুউব হল্লাবাজী করছিল। হঠাৎ কয়েকজন সিকিউরিটি পুলিশকে (এরা সাধারণ সিকিউরিটি গার্ডদের চেয়ে আলাদা, এদের কাছে অস্ত্র থাকে) দেখে এরা বেশ তাড়াহুড়া করে চলে গেল। সিকিউরিটি পুলিশের চোখ ঐ তরুনদের উপর ছিল কি না জানিনা, তবে এরা মাঝে মাঝেই টহল দেয়। অন্যদিকে সাধারণ সিকিউরিটি গার্ড যারা তারা বেশ কিছু পয়েন্টে দাঁড়িয়েই থাকে। হঠাৎ দেখি ওদের শুন্য জায়গায় (আমার পাশেই) কতগুলো পাতা পড়ে আছে। সবুজ রং এর। পাতা? এখানে কেন? অনেকটা ছোট ছোট সালাদের স্পিনাসের মত। কিন্তু এগুলো খুব পুরু আর গাঢ় সবুজ আর খুব চকচকে। আমি ভাবলাম কোন মজার শাক হবে। আমি আবার শাক খেতে খুউব ভালবাসি। হাতে নিয়ে নড়াচড়া করছি। হঠাৎ দেখি আমার বান্ধবী (কলিগ, স্পেনিশ) প্রীসিলা আমার কাছে এসে বললো, এগুলো কোথায় পেলে? আমি ঘটনা সব বললাম। আমাদের কথার মধ্যেই আমার বস্ দেখি বেশ দৌড়ে আমার কাছে এলো এবং প্রীসিলার দিকে তাকালো (বসকে সবাই খুব মান্য করে), প্রীসিলা দ্রুত কেটে পড়লো। বসের মুখ খুব লাল, উত্তেজিত – আমাকে কেমন জানি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো: আরা, এগুলো কোথায় পেলে? আমিতো মনে মনে বেশ অবাক এবং এবারে একটু ভয়ও পেয়ে গেলাম। ঘটনাটি আবারো বললাম প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। বস শুনে বেশ গম্ভীর এবং চিন্তিত হয়ে পড়লো। তারপর আমাকে বললো, তুমি পাতাগুলো নিয়ে যাবে? (কারণ পাতাগুলো তখনো আমার হাতেই ছিল)।

কি জানি, খুব অল্প। রান্না করলে একটুখানি হয়ে যাবে।

হঠাৎ আমার বস্ আকাশ পাতাল ফাটিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে বেঞ্চের উপর বসে পড়লো।

তুমি কি এগুলো রান্না কারার কথা ভাবছো? বলেই আবার হাসিতে ফেটে পড়লো আমার স্বল্পভাষী বস্। তারপর একপর্যায়ে অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললো, আরা তুমি কি জান এগুলো কি? এগুলো মারিজুয়ানা!!

কি? মারিজুয়ানা? মানে গাজা!!

বস্ বললো ইয়েস, ইট ইজ গাজা!!

আমার তখন লজ্জায় অধোবদন অবস্থা। কিন্তু কি করবো? আমিতো এগুলো জীবনেও চোখে দেখিনি। আর একটু হলেই তো বাসায় নিয়ে গিয়ে রান্না করে খেয়ে ফেলতাম! হায় আল্লা, আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। আমার এই ভাবনার মাঝেই বস্ বললো, কি করবে তাহলে ঠিক করেছো?

কি করবো মানে?

না, বিক্রি করবে কি না তাই জিজ্ঞেস করছিলাম।

কি যন্ত্রণা, বিক্রি করবো মানে কি? আমি এক্ষুনি এগুলো নিয়ে গার্বেজে ফেলে দিয়ে আসছি।

বস বললো, না না পাগল নাকি? জান এগুলোর দাম কত?

না বাবা, আমি দাম-টাম জানতে চাই না। তুমি এগুলো নিয়ে যাও। – অতপর বস্ ওগুলো নিয়ে গিয়ে কি করেছে আমি জানতেও চাইনি।

আমি জানি ডাউনটাউনে এসব ড্রাগ ব্যবসার বিশাল চেইন আছে। আর এসবের সঙ্গে এখন টিন এজ ছেলেরাও জড়িয়ে গেছে। এমন না যে শুধু কালোরাই এর মধ্যে আছে। আমাদের দক্ষিন এশিয়ার অনেক তরুন-যুবারাও এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ইটন সেন্টারেতো প্রায়ই ডান্ডস সাইডে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মতো হয় দুই দলের মধ্যে। তারপর সিকিউরিটির লোকজন এসে ওদের যে কয়টাকে ধরতে পারে সে কয়টাকে আড়ালে নিয়ে আগে ২/৩টা বিরাশি সিক্কার গুতা মেরে পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

আমার এপার্টমেন্ট ছিল ডাউনটাউনের সিএনই’র পাশে, একমাত্র ২৬ তলার হাইরেইজ বিল্ডিং এ। আমাদের বিল্ডিং এর গায়েই কিন্ডার গার্টেন স্কুল। ঐ স্কুলের মাঠটা খুব বড়। প্রচুর গাছ দেয়ালের গা ধরে ধরে। সন্ধ্যার পরই ওখানে ১/২টা করে এইসব ছেলেদের আনাগোনা শুরু হয়। সবই ড্রাগ এডিকটেড ছেলে। আমি কর্মস্থল থেকে যখন বাসায় ফিরি তখন রাত সাড়ে নয়টা বেজে যায়। তখন দেখতাম ছেলেরা (এমনকি মেয়েদেরও দেখেছি) ঝিম মেরে বসে আছে। কি অবস্থা! একদিন দুটি দেশীও দেখলাম। আমার দিকে দৃষ্টি দেবার সময় নেই। কি ভাবে টাকা ম্যানেজ করা যায় তা নিয়ে দুজনে আলোচনা করছিল। দূর থেকে নিজের ভাষা শুনে চকিত হয়ে তাকালাম। বয়স ১৭ থেকে ১৯ এর মধ্যে হবে।

অন্য একদিন সাবওয়ে দিয়ে আসছি, দেখি আমার সামনেই একটা ছেলে কেমন যেন মরার মতো পড়ে আছে। অনেকেই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। ওমা! প্রথমেতো আমি চিনতেই পারিনি। এ তো দেখি আবির!! ইয়া আল্লা!! আমাদের একজন খুবই অন্তরঙ্গ পারিবারিক বন্ধুর ছেলে! আমিতো জানি এই আবির টরন্টো ইউনিভারসিটিতে পড়ে। সমাজ বিদ্যার ছাত্র। আমি অনেকবার ডাকলাম। আমি ভেবেছি, খুব অসুস্থ। ওর কাঁধ ধরেও নাড়া দিলাম। একটু চোখ খুললো। কথা খুবই জড়ানো। তারপর কোনমতে বিড় বিড় করে বললো, হাই আন্টি। শুধু এইটুকুই বলতে পারলো। তারপর পাশের অন্য একটি ছেলে (বয়স ২৮/৩০ হবে) আমাকে

বললো, একে চেনো?

হ্যা চিনি। ওর কি হয়েছে?

কিছুই হয়নি। ড্রাগের ডোজ একটু বেশী হয়ে গেছে।

কি বলছো তুমি- ড্রাগ! ও ড্রাগ নিয়েছে?

কেন তুমি কি তাকে দেখে বুঝতে পারছো না?

আমার তখন মনের ভিতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আহারে, ওর বাবা-মায়ের মুখটা আমার বার বার মনে পড়ছিল। বাংলাদেশ থেকে অন্যদেশ হয়ে (যেখানে ১৫ বছর ছিল) কানাডায় আসে তারা। ছেলে মেয়েকে ভাল শিক্ষা দিবে এই স্বপ্ন নিয়েই এদেশে আসা তাদের। এখানে এসে দিন/রাত এক করে অর্থ উপার্যন করেছে। আর এর কি না এই অবস্থা! বাসায় এসে আমার হাসবেন্ডের সঙ্গে আলাপ করে ওদের বাসায় ফোন দিলাম। (পরহিতের ভূতটা মাথা থেকে যায় না। জানি তার ছেলের এই বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে গেলে সম্পর্ক শতভাগ নষ্ট হয়ে যাবে। তবু রিক্সটা নিলাম। যদি ছেলেটা ভাল হয়ে যায় এই আশায়।) যাইহোক, আবিরের মায়ের সঙ্গে এটা সেটা আলাপের পর আসল কথায় এলাম। জানতে চাইলাম আবিরের খবর কি? ওর মায়ের গলা কিছুটা ম্রিয়মান হয়ে গেল। তবু বললো ভাল আছে।

পড়াশুনা কেমন চলছে?

জবাব দিলো : খুবই ভাল, সব বিষয়ে ৮০% এর উপরে মার্ক।

আবিরের মায়ের এই জবাবে ভাবনায় পড়ে গেলাম। কোন মা যদি নিজের ছেলে বা মেয়ের ব্যাপারে এভাবে চাপা মারতে থাকে তাহলে তাদেরকে কিভাবে সাহায্য করবো? তবু বেহায়ার মতো আবারো বলাম, আমার মনে হয় আবিরকে তোমার আরেকটু সময় দেয়া উচিৎ। (এই মহিলা একটি খাবারের দোকানে কাজ করে ৫ দিন। বিকেল ৪টার মধ্যেই ঘরে চলে আসে। কোনমতে চারটে রান্না করেই বিভিন্ন বান্ধবীদের বাসায় আড্ডা মারতে চলে যায়। অথবা বিভিন্ন মলে ঘুড়ে বেড়ায়। আমার পরামর্শ শুনে একটু কঠিন কন্ঠেই বললো, না না, তার দরকার নেই। পড়াশুনা নিয়ে আবির খুবই ব্যস্ত থাকে।

অগত্যা আমাকে পিঠটান দিতে হলো। অথচ আমি জানি কিছু দিন আগে আবিরের বাবা নিজে থেকেই আমার হাসবেন্ডের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে বলছিলেন- আবিরের রিজাল্ট খুবই খারাপ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উনি খুবই বিমর্ষ ছিলেন।

এ ঘটনার ৬/৭মাস পরেই শুনলাম আবির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ-আউট হয়ে গেছে। নেশার ঘোরে সারাক্ষণ সে রূমের দরজা বন্ধ করে বুঁদ হয়ে বসে থাকে। একপর্যায়ে আবিরের বাবা মা মিলে ওকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। এখন আবির তার কয়েকজন বন্ধুর সাথে থাকে। ওর মায়ের সঙ্গে আমার বেশ কয়েক মাস আগে আমার দেখা হয়। তার ভাবসাব দেখে মনেই হয়নি যে পরিবারে কিছু একটা হয়েছে। বরং আমি তাকে এর আগে এত উচ্ছ্বসিত অবস্থায় দেখিনি। “এই না হলে হুসানা বানু!” – দুনিয়া সত্যিই বদলে গেছে।

জানিনা আবিরের মা’র ঐ হাসি, ঐ উচ্ছ্বাস মেকি ছিল না খাঁটি ছিল। আমি শুধু এই টুকু জানি, শুধু মাত্র নিজেকে নিয়েই দিন যাপন করা যায় না। আমরা কাউকে না কাউকে নিয়েই এই দুনিয়াতে বেঁচে থাকি। এটা সত্যি ‘বিবাহিত’ জীবনটা অনেকটা লটারির মতো। ভাগ্য ভাল থাকলে এক টিকেট কিনেই কেউ মিলিয়নার হয়ে যেতে পারে। আবার অনেকে সারা জীবন লটারী খেলেও ভাগ্যের দেখা পায় না। তবু লাটারী খেলেই যায়। বাচ্চা-কাচ্চাও অনেকটা সেই রকম। কারো কারো ৬/৭টা বাচ্চার প্রত্যেকটাই এক একেকটা রত্ম। সরকার এই মায়েদেরকে রতœগর্ভা হিসেবে পুরস্কৃত করে। কিন্তু তাই বলে অন্য মায়েদেরকে তো আর হাত ধুয়ে বসে থাকলে চলবে না। সরকারের পক্ষ থেকে বা জনগনের পক্ষ থেকে কোন খেতাব নাই বা জুটলো। কথায় বলে, ভাল করে ঘষলে পিতলও সোনার মতো দেখায়। আর না ঘষলে সোনাও তামার মতো দেখায়। তাই মায়েদের অভিধানে কখনো ‘উড়হব’ অথবা ‘এরাব-ঁঢ়’ শব্দসমূহ রাখা উচিত নয় ছেলে মেয়েদের ব্যাপারে। বরং বাবা-মা দুজনই সমানভাবে প্রফেশনের ক্ষেত্রে ব্যস্ত হয়ে উঠা ঠিক নয়। অন্তত একজনকে প্রফেশনের ব্যাপারে একটু কম মনোযোগী হয়ে ছেলে-মেয়েদের প্রতি প্রচন্ডভাবে মনোযোগী হওয়া উচিৎ। উচ্চাকাংখী হওয়া ভাল। কিন্তু যখনি সীমা অতিক্রম করবেন, তখনি অন্য কোন বিষয়ে আপনার হাত ধুতে হবে। তখন হাজার কাঁদলেও আর সেটা ফেরত পাবেন না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, জীবনকে আপনি যখন যে ভাবে , যে রকম দিবেন; জীবন আপনাকে ঠিক সেই ভাবেই ফেতর দিবে। এটা অন্তত শতভাগ সত্য। বিশ্বাস করুন আর নাই বা করুন, কিন্তু কথাটা সত্য। জীবনে কোন কিছুই বৃথা যায় না।

সন্তানের ব্যাপারে খুব সাকসেস পরিবারে দিকে একটা গড় নির্নয় করে দেখুন (যুগে যুগে), বাবা অথবা মায়ের মধ্যে একজন খুবই নিবেদিত ছিলেন তাদের সন্তানদের সাকসেসের ব্যাপারে। আমার কাছে এরকম বহু প্রমাণ আছে। আবার এর বিপরিতও আছে। বাবা-মা তাদের কর্মক্ষেত্রে আত্ম উতসর্গীকৃত। আর সন্তান পুরোপুরি বখে গেছে (আমার নিজের চোখে দেখা)। তবে এটা সত্যি যে, এই উত্তর আমেরিকায় অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না একার আয়ে সংসার চালানো। তবু অনেক পরিবারকে দেখেছি, তারা কিছুটা কষ্ট বরণ করে নেয় ভবিষ্যতের আনন্দের কথা ভেবে। আর একটি পরিবারকে জানি, বাবা-বা তাদের কর্মক্ষেত্রে স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। এবং তারা অত্যন্ত ক্যারিয়ারিস্ট। নিজেদের প্রফেশন ছাড়া তারা অন্য কিছু ভাবতেই পারে না। কর্মক্ষেত্রের উচ্চ শিখরে তাদেরকে পৌঁছাতেই হবে, যেভাবেই হোক। অতএব, তারা স্বমহিমায় নিমজ্জিত। ইত্যবসরে, সংসারের চোরা স্রোত দিয়ে কখন জানি হতাশার পাখীরা প্রবেশ করেছে। প্রথম সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল দোড়গোড়ায় প্রবেশ করেছিল। সে তখন ড্রাগের চক্রে নিমজ্জিত। অতএব যা হবার তাই হলো। প্রথম সন্তান প্রথম সেমিস্টারেই বেহাল হলো। এবং সে তখন আরো কঠিন হতাশায় ড্রাগকে আকড়ে ধরলো। তখব বাবা মাকে এবং মা বাবাকে দোষারোপ করে চললো। কিন্তু তবু তারা তাদের প্রফেশনের ক্ষেত্র থেকে এতটুকু বিচ্যুত হলো না। মায়ের (আমাদের পারিবারিক বন্ধু) বক্তব্য সোজা সাপ্টা Ñ ‘যার যার জীবন তার তার। কেউ কাউকে টেনে নিয়ে যেতে পারে না শেষ পর্যন্ত যদি সে নিজেই যেতে না চায় (এটা সত্যি)! আমাদের বাবা/মায়েরা কখনো আঙ্গুল ধরে চালায়নি আমাদেরকে। আমরা সব ভাই বোনইতো বিশ্ববিদ্যালয় অতিক্রম করেছি!? (এটাও সত্যি!!) তাহলে মিথ্যাটা কি? মিথ্যাটা হলো ফাঁকি। জামানা এতটাই বদলে গিয়েছে যে, এখনকার ছেলে মেয়েরা এটাই বোঝে না যে, ‘তোরা যে ফাঁকি দিচ্ছিস কাকে দিচ্ছিস? নিজেদের জীবনটাকে নিয়েই ছিনিমিনি খেলছিস!! এখন, ছেলেটা একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে ‘আরাম’ করে (!!)। অর্থাৎ কাজ করছে। হয়তো বা খুব শীঘ্রই সকালের নতুন সূর্যালোকের মত তার বোধদয় হবে। আবার নিজেই নতুন নিজেকে নিয়ে কলেজের দোড়গোড়ায় উপস্থিত হবে।

বাবা মাকে ভাবতে হবে প্রথম থেকেই। মূলতঃ আমরা কি চাই? নিজের ক্যারিয়ার না সন্তানের? এটাতো সত্যিই; এই ছোট্র একটি জীবনে, মানুষ একসাথে সব কিছু পায় না। পেতেই পারে না। তাই বাবা মাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি চান? অনেক টাকা পয়সা নাকি বড় বড় ডিগ্রী। আর সেভাবেই প্রথম থেকেই বাচ্চাকে পরিচালিত করতে হবে। আমি একজন বৌদিকে জানি, উনি নিজে একজন প্রকৌশলী। স্বামীও। দুই ছেলে। টরন্টোতে থাকেন। দুজনেই উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বড় ছেলে গ্রেড নাইনে, ছোটটি গ্রেড সেভেনে। বৌদি চাকরী ছেড়ে দিলেন। আমরাতো অবাক। ২৪ ঘন্টা বৌদি দুই ছেলের পিছু পিছু ঘোরেন। ওদের পড়ানো, প্রতি সপ্তাহে একবার স্কুলে গিয়ে খোঁজখবর নেয়া এ সবই করছেন রুটিন করে। বাইরে কিছু খেতে দেন না। আজ হাতে হাতে ফলও পেয়েছেন তিনি। ২ ছেলেই মাশাল্লাহ উচ্চতর ডিগ্রীধারী এবং উচ্চপদে অধিষ্ঠিত। তার সাথে বাবা মায়ের আকর্ন বিস্তৃত হাসি। এত আনন্দ লাগে ওদের দেখলে। এরকম ডিভোটেড মা কয়জন পাওয়া যায়? আমি খুব কম দেখেছি এই বৌদিকে বিভিন্ন পার্টিতে। যদিও বা কখনো আসতেন, সবার আগে খেয়ে ভাগোয়াট হতেন। আমি ঐ মাকে এবং তার একাগ্রতাকে শতসহস্রবার নমস্কার জানাই।

এই প্রবাসে যারা আসেন, সবার আগেই আমাদেরকে ভাবতে হবে আমরা কি চাই। জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে শুরু থেকেই পরিকল্পনা করে এগুতে হবে। এবং একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমরা যতই প্রবাসে থাকি না কেন, আমাদের যার যার ধর্ম, সংস্কৃতি এবং নিজস্ব ভাষা কোনক্রমেই ত্যাগ করা যাবে না। এটি ধরে রাখতে পারলে আমাদের ছেলেমেয়েরা বিপথগামী হবার আগে দু’বার ভাববে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ। এই যে একটা অসম্ভব সুন্দর চিন্তা; এটিই ছেলেমেয়েদেরকে দিকভ্রান্ত করবে না। আমাদের ধর্ম, ঐতিয্য ও সংস্কৃতির বীজ অবশ্যই ওদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে বপন করা উচিৎ।

আর ঐ সব বিপথগামী ছেলেমেয়েদের জন্য আমাদের সকলকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিৎ। সমালোচনা নয়। বরং ওদের জন্য সত্যিকারের প্রার্থনা করুন।

রীনা গুলাশান

aragulshan@hotmail.ca

বি. দ্র. এই লেখায় পাত্র-পাত্রীদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।