টরন্টোর পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরার নতুন আইন : মেনে চলা উচিত সকলের

জুলাই ১৩, ২০২০

টরন্টোতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন থেকে কোন পাবলিক প্লেসে যেতে হলে সবাইকে মুখে মাস্ক পরতে হবে। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নতুন এই আইন কার্যকর করা হয়েছে। টরন্টোর মেয়র জন টরি এবং চীফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. আইলিন ডি ভিলা এতে সমর্থন দিয়েছেন।

টিটিসি বাস, সাবওয়ে, ট্রেন, ফেরী, গ্রোসারী, মল এ সমস্ত জায়গায় যেতে হলে নতুন এই আইন মানতে হবে। এই আইন সবার স্বার্থে করা হয়েছে। এবং তা মেনে চলা সকলেরই দায়িত্ব। তবে বাড়িতে বা রেস্টুরেন্টের পাটিওতে বসে খাবার সময় এবং যে সকল কর্মস্থলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব সেখানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক নয়। চাইল্ড-কেয়ার সেন্টারেও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। আর যাদের মাস্ক পরা নিয়ে মেডিক্যাল সমস্যা রয়েছে তারা এই আইনের মধ্যে পড়বেন না। দুই বছরের কম বয়সী শিশুরাও এই আইন থেকে মুক্ত থাকবে। তবে বাড়িতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কাউকে সেবা দিতে হলে মাস্ক পরা জরুরী।

উল্লেখ্য যে, মাস্ক পরা নিয়ে নিজেদের উপদেশ সম্প্রতি পরিবর্তন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখন তারা বলছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ থামাতে পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা উচিত। সংস্থাটি বলছে মাস্ক পরলে জীবাণু বহনকারী ড্রপলেট থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে নতুন গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের বেশ কিছু দেশ প্রকাশ্য স্থানে মাস্ক পরার উপদেশ দিয়েছে। কিছু দেশে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলকও করা হয়েছে।

পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা সবার জন্যই উপকারী ও জরুরী। ছবি : এল এ টাইমস

এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল যে সুস্থ মানুষের মাস্ক পরার প্রয়োজন আছে, এ সম্পর্কে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কোভিড-১৯ এর টেকনিক্যাল বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মারিয়া ভ্যান কেরখোভ রয়টার্সকে বলেন যেসব জায়গায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে সেসব জায়গায় মানুষকে ‘কাপড়ের মাস্ক – যেটি মেডিক্যাল মাস্ক নয়’ পরার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাটি বলছে গত কয়েক সপ্তাহে চালানো গবেষণার ওপর ভিত্তি করে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডা ভ্যান কেরখোভ বলেন, ‘আমরা সব দেশের সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছি যেন তারা জনসাধারণকে মাস্ক পরতে উৎসাহিত করে।’

পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিও বলছে যে অনেক রকম সুরক্ষা উপকরণের মধ্যে মাস্ক একটি। তবে মানুষ যেন মনে না করে যে মাস্ক পরলে তিনি ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিশ্চিতভাবে সুরক্ষিত থাকবেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক টেড্রোস ঘেব্রেয়েসাস বলেন, ‘শুধু মাস্ক কখনো আপনাকে কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত রাখবে না।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে – উপসর্গ প্রকাশের আগের কয়েকদিন মানুষ ব্যাপক আকারে সংক্রমণ করতে পারে, আবার অনেকে ভাইরাস আক্রান্ত হলেও কোনো উপসর্গই দেখা যায় না। কাজেই যেসব জায়গায় দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব নয়  যেমন- গণপরিবহন, শরণার্থী শিবির, জনবহুল দোকানপাট – সেখানে ঘরে তৈরি করা মাস্ক পরলে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে। যাদের বয়স ষাটের ওপর এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তারা আরো উন্নত মেডিকেল গ্রেড মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।

পরিবর্তিত গাইডলাইনে আরো বলা হয়েছে, সকলেরই জনসমক্ষে নন-মেডিক্যাল কাপড়ের মাস্ক পরা উচিত। এই মাস্কে অন্তত তিনটি বিভিন্ন ধরনের বস্তুর স্তর থাকা প্রয়োজন।  যদি কোনও ব্যক্তির কোভিড উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তিনি মেডিক্যাল মাস্ক পরবেন এবং সেলফ আইসোলেশনে যাবেন ও যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। তবে আমাদেরকে বুঝতে হবে কেবল সাধারণ একটি মাস্ক কাউকে ভাইরাস থেকে বাঁচাতে খুব বেশী কার্যকর হবে না। কিন্তু একজনের কাছ থেকে অন্যদের মধ্যে ছড়ানোর সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে। তাই পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা সবার জন্যই উপকারী ও জরুরী।