জঙ্গীবাদের শিকার কানাডা?

নভেম্বর ৮, ২০১৪

॥ খুরশিদ আলম ॥

অবশেষে সন্ত্রাসী আক্রমনের শিকার হলো কানাডা। গত ২২ অক্টোবর এই আক্রমনের ঘটনা ঘটে দেশটির রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় পার্লামেন্ট ভবনে। প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারসহ লিবারেল নেতা জাস্টিন ট্রুডো, এনডিপি নেতা থমাস মুলকেয়ার এবং আরো বহু সংখ্যক এমপি সেদিন উপস্থিত ছিলেন পার্লামেন্ট ভবনে। বন্দুকধারী সন্ত্রাসী মাইকেল জেহাফ বিবু প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য নেতাদের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন প্রায় বিনা বাধায়ই। কিন্তু সৌভাগ্য যে, পার্লামেন্ট ভবনের অভ্যন্তরে তিনি কাউকে আঘাত করতে পারেননি। তার আগেই নিরাপত্তা কর্মীদের মুহুর্মুহু গুলির আঘাতে ঝাঝড়া হয়ে যায় তার দেহ।

তবে মাইকেল জেহাফ বিবু বন্দুক হাতে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করার আগে অনতিদূরে অবস্থিত ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে কর্তব্যরত এক সেনা সদস্য কর্পোরাল নেথান কিরিলোকে পিছন দিক থেকে গুলি করে হত্যা করেন।

এর মাত্র দুইদিন আগে (২০ অক্টোবর) মন্ট্রিয়ল থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে একটি ছোট শহরে ঘটে আরেক সন্ত্রাসী ঘটনা। সন্দেহভাজন এক জঙ্গী মার্টিন কুট্যুর রুল্লো দুই সেনা সদস্যকে গাড়ি চাপা দেন। এতে প্যাট্রিক ভিনসেন্ট নামের এক সেনা সদস্য নিহত হন এবং অপরজন আহত হন। গাড়ি চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন মার্টিন কুট্যুর রুল্লো নামের ঐ সন্ত্রাসী।

পর পর দুটি সন্ত্রাসী ঘটনায় যুগপৎ আতঙ্কিত ও বিস্মিত হয়ে পড়েন কানাডার সাধারণ মানুষ। কানাডায় সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে এরকম আশংকা যে ছিল না তা নয়। কিন্তু সত্যি সত্যি তা ঘটবে এবং একেবারে কানাডার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু পার্লামেন্টেই তা ঘটবে হবে তা বোধকরি কেউ ভাবেননি। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, পার্লামেন্ট ভবনের মতো এরকম একটি সুরক্ষিত এলাকায় মাত্র একজন বন্দুকধারী কি করে এতটা তান্ডব ঘটাতে পারলো? যদি সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ ঐ হামলায় অংশ নিত তাহলে কি ঘটতে পারতো?

নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পার্লামেন্ট ভবনে ‘মধ্য মাত্রার নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ বহাল ছিল। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ঐ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলা যায়, এই মুহুর্তে কানাডার ভূখন্ডে কোন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে না। সে ক্ষেত্রে মধ্যমাত্রার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল থাকতে পারে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেই মধ্যমাত্রার নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে ত্রুটি রয়ে গেছে এবং তা খুব সহজেই প্রমান করে দিয়ে গেলেন মাত্র একজন বন্দুকধারী সন্ত্রাসী মাইকেল জেহাফ বিবু।

আমরা জানি কানাডায় জঙ্গী হামলা হতে পারে এরকম একটি আশংকা বহু দিন থেকেই করে আসা হচ্ছিল। কানাডার প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার ইতিপূর্বে সিবিসি’র সাথে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ৯/১১ এর পর এখনো কানাডায় সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকী ইসলামী জঙ্গীবাদ। তবে তিনি এও স্বীকার করেন যে, আগের তুলনায় নিরাপত্তা ঝুঁকি এখন কম। সিবিসি’র চীফ করসপন্ডেন্ট পিটার ম্যানসব্রিজের নেয়া ঐ সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার আরো বলেন, কিন্তু ঝুঁকি কম হলেও প্রধান হুমকী এখনো ঐ ইসলামী জঙ্গীবাদই।

ইতিমধ্যে অবশ্য বিশ্বরাজনীতির পরিস্থিতি অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। জঙ্গীদের কৌশলেরও পরিবর্তন হয়েছে। রাজনীতিতে এসেছে নতুন আরেক জঙ্গী গোষ্ঠি ‘ইসলামিক স্টেট’। তারা কানাডিয়ানদের উপর হামলা চালানোরও আহ্বান জানান জঙ্গীদের কাছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারও কানাডার জঙ্গী বিরোধী আইন আরো কঠিন করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু এর মধ্যেই ঘটে গেলো জঙ্গী হামলা। তবে এর সাথে অন্য যে ঘটনাটি যোগ করা যায় তা হলো, অক্টোবর মাসে ইসলামীক স্টেট এর জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বিমান যুদ্ধে অংশ নেয়া। বিরোধী দল লিবারেল পার্টি ও এনডিপি’র বিরোধীতাকে উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্তটি নেন। কানাডার প্রখ্যাত সাংবাদিক ব্রায়ান স্টুয়ার্ড বলেন, ইসলামী স্টেট এর বিরুদ্ধে বিমান যুদ্ধে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তটি এমন এক সময় নেয়া হয় যখন কয়েক ডজন জঙ্গী কানাডায় অবস্থান করছেন।

আমরা জানি ২০০৬ সালে কানাডার অন্টারিওতে ১৮ জন মুসলমান যুবককে আটক করা হয়েছিল জঙ্গী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করার জন্য। তাদের মধ্যে কয়েকজনের সাজাও হয়েছে বিভিন্ন মেয়াদে। পরবর্তীতে কানাডার রাজধানী অটোয়াসহ অন্যান্য এলাকা থেকে আরো ৪ জনকে আটক করা হয়েছিল বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে। এর পর থেকেই মূলত উদ্বেগ শুরু হয় কানাডার অভ্যন্তরে জঙ্গী তৎপরতা নিয়ে।

২২ অক্টোবর পার্লামেন্ট ভবনে জঙ্গী হামলার পর ঐদিনই প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার অজ্ঞাত এক স্থান থেকে টিভি সম্প্রচারের মাধ্যমে বলেন, সন্ত্রাসী জঙ্গীদের ঘৃণ্য হামলায় দুইজন সেনা সদস্য নিহত হলেও কানাডা ভীত নয়। তিনি আরো বলেন, জঙ্গী হামলা প্রতিহত করতে কানাডা সরকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করবে। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য স্থানে জঙ্গীবাদীদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দমন করার জন্য জঙ্গীবাদ বিরোধী দেশগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ে যাবে কানাডা। বিশ্বে জঙ্গীবাদীদের জন্য কোন ‘নিরাপদ স্বর্গ’ সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।

এখানে লক্ষ্যনীয় যে, ইতিপূর্বে কানাডায় জঙ্গী হামলার জন্য যারা চেষ্টা চালিয়েছিলেন তারা ছিল বিপথগামী কিছু মুসলিম তরুন বা যুবক। তাদের সেই চেষ্টা বিফলে গিয়েছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর যৌথ তৎপরতার কারণে। কিন্তু এবার যারা সন্ত্রাসী আক্রমন চলালেন তারা দুজনেই ধর্মান্তরিত ‘নব্য মুসলিম’। এদের মধ্যে পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালিয়েছিলেন যে ব্যক্তিটি তার অতীত মোটেও সুবিধাজনক ছিল না। ব্রোকেন ফ্যামিলির এই যুবকটি ড্রাগ, ডাকাতিসহ নানান অপকর্মের সঙ্গে লিপ্ত ছিলেন। অর্থাৎ চুড়ান্তভাবে একজন বিভ্রান্ত, হতাশাগ্রস্ত ও মানসিভাবে বিপর্যস্ত এক ব্যক্তি ছিলেন তিনি। এখন এরকম একজন ব্যক্তি শান্তি খোঁজার আশায় বা সুস্থ্য জীবন লাভের আশায় ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শান্তি বা সুস্থ্য জীবন লাভের আশা করে থাকলে তিনি জঙ্গীবাদের পথ বেছে নিতেন না। বিকারগ্রস্ত মানসিকতাই তাকে জঙ্গীপনার দিকে টেনে নিয়ে গেছে। এখানে ধর্ম কোন ভূমিকাই পালন করনি। কারণ, প্রকৃত ধর্ম কখনোই জঙ্গীপনা শিক্ষা দেয় না। এটি সব ধর্মের বেলায়ই প্রযোজ্য। কানাডার বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদরাও তাই বলে আসছেন। তারা সুষ্পষ্টভাবেই বলে আসছেন, জঙ্গীবাদীদের স্থান ইসলাম ধর্মে নেই।

মাইকেল জেহাফ বিবুর মা-ও পোস্টমিডিয়াতে লেখা এক চিঠিতে বলেছেন সাম্প্রতিক সময়টাতে তার ছেলে ছিল অসুখী এবং মানসিক ভারসাম্যহীন একজন যুবক। তিনি আরো বলেন, তার ছেলে সৌদী আরবে যেতে চেয়েছিল কোরআন এর শিক্ষা লাভ করার জন্য। মাইকেল জেহাফ বিবুর ধারণা ছিল কোন ইসলামিক দেশে গেলে সে সুখী থাকবে। যুদ্ধে যাওয়া বা কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্য তার ছিল না। সে যা করেছে তা হতাশা থেকে করেছে।

মাইকেলের মা’র এই বক্তব্য অবশ্য কর্তৃপক্ষ আমলে নেয়নি। তাদের বক্তব্য হলো, মাইকেল যা করেছে সেটি একেবারেই সন্ত্রাসী আক্রমন। আরসিএমপি’র কমিশনার বব পলসন বলেন, একজন কানাডিয়ান সৈন্যকে হত্যা করা ও পরে পার্লামেন্ট ভবনে বন্দুক নিয়ে প্রবেশ করার পিছনে কাজ করেছে তার মতাদর্শ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।

অন্যদিকে মার্টিন কুট্যুর রুল্লো’র সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পিছনেও কাজ করেছে জঙ্গী মতাদর্শ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। পুলিশের তদন্তে প্রমানিত হয়েছে, জঙ্গী মতাদর্শ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই মার্টিন কুট্যুর মন্ট্রিয়লের অদূরে দুই কানাডীয় সৈন্যকে হত্যা করার উদ্দেশে তাদের উপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছিলেন। ব্যক্তিজীবনে ব্যর্থ হয়ে এই যুবকও জঙ্গীপনার দিকে ঝুঁকে পড়েন।

জঙ্গীপনার দিকে ঝুঁকে আছেন এরকম আরো বহু তরুন ও যুবক রয়েছেন কানাডায়। সরকারী লিস্টেই আছে ৯০ জনের বেশী। তাদের উপর রয়েছে কড়া নজরদারী। তারা যাতে দেশের বাইরে গিয়ে ইসলামীক স্টেটের সঙ্গে যুক্ত না হতে পারেন তার জন্য অনেকের পাসপোর্টও আটক করা হয়েছে। মার্টিনের পাসপোর্টও আটক করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও তাকে জঙ্গীপনা থেকে থামানো যায়নি। তিনি দেশের ভিতরই সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছেন। মাইকেলের পাসপোর্ট করা ছিল না। তিনি পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও তিনি দমেনি। তিনিও স্বদেশের মাটিতেই জঙ্গী হামলা চালিয়েছিলেন।

কানাডার মাটিতে এই জঙ্গী হামলা দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা হলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব কিন্তু উপেক্ষা করার মত নয়। বিশেষ করে কানাডা প্রবাসী মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর এর নেতিবাচক প্রভাবটা আগের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে স্বাভাবিক কারণেই।

নাইন এলিভেনের পর এমনিতেই মুসলমান সম্প্রদায় নাজুক অবস্থায় ছিল। চাকরী, ব্যবসাসহ আরো নানা খাতে মুসলিম সম্প্রদায় বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছিলেন। এখন সেই বৈষম্যের মাত্রা যদি আরো বৃদ্ধি পায় তবে আশ্চার্য হওয়ার কিছু নেই।

আমরা লক্ষ্য করেছি, আগে কানাডার মুসলিম নেতৃবৃন্দ বা মুসলিম আলেমগণের মধ্যে দুইএকজন ছাড়া বাকিদের কেউ এই জঙ্গীদের বিরুদ্ধে তেমন কোন উচ্চবাচ্য করতেন না। তারা জঙ্গীদের সমর্থন দিতেন না, কিন্তু বিরোধীতাও করতেন না। যেন একধরণের নিরব সমর্থন দিয়ে আসছিলেন। এমনি একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন চলতে হয়েছে আমাদেরকে। তবে গত দুই তিন বছর যাবত তাদেরকে ক্রমশ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। এই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে তারা যদি আরো আগে থেকেই কঠোর ভাবে প্রতিবাদী হয়ে উঠতেন তবে বিষয়টি হয়তো আজকের পর্যায়ে এসে ঠেকতো না।

সম্প্রতি যে দুটি জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটে গেছে তার বিরুদ্ধে কানাডার মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও আলেমগণ সোচ্চার কন্ঠে প্রতিবাদ করেছেন। এই প্রতিবাদকারীদের মধ্যে আছেন অটোয়াস্থ ‘কানাডা মুসলিম এসোসিয়েশন’ এর ইমাম এবং ‘কানাডা কাউন্সিল অব ইমামস’ এর মুখপাত্র শিকান্দার হাসেমী। তিনি অটোয়ার ঐ ট্র্যাজিক ঘটনার পর ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে হাজির হয়ে নিহত সেনা সদস্য কর্পোরাল নেথান কিরিলোর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। ইমাম শিকান্দার হাসেমী এই সন্ত্রাসী ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন এবং বলেন, আমরা নিহত সৈন্য নিথান এর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। তিনি আরো বলেন, কানাডা আমাদেরও দেশ। আমরা সকল কানাডিয়ানের পাশে আছি। এটি খুবই দুঃখজন যে একজন ব্যক্তি যিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ অথবা অন্যকোন কারণে মৌলবাদে দীক্ষিত হয়েছেন তিনি একটি ইতিবাচক ও শান্তির ধর্মকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে চরমপন্থা তথা জঙ্গীপনার আশ্রয় নিয়েছিলেন। শিকান্দার হাসমী বলেন, ধর্মীয় শিক্ষক ও ইমামদেরও একটি দায়িত্ব রয়েছে তরুন ও যুককেরা যাতে বিপথগাগী না হন, জঙ্গীপনার দিকে না ঝুঁকেন তার প্রতি নজর রাখা।

অটোয়াতে জঙ্গী হামলার পর ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিম’ এর নির্বাহী পরিচালক এহসান গার্দি এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, এই হামলা অত্যন্ত বিভৎস এবং আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি জানাচ্ছি আমাদের গভীর সমবেদনা। তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের সাথী কানাডিয়ানদের সঙ্গেই আছি এবং তাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কানাডার নিরাপত্তা রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

কানাডায় জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আরো বক্তব্য দিয়েছেন ইমাম সৈয়দ সোহরাওয়ার্দী যিনি কানাডায় ‘মুসলিম এ্যাগেইন্স্ট টেররিজম’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল অব কানাডার’ও প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেন, নব্য ধর্মান্তরিতদের প্রতি নজরদারী কঠোরভাবে বৃদ্ধি করতে হবে এবং যারা ধর্মান্তরিত হতে আসে তাদের অতীত রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বিশেষ করে দেখতে হবে মাদকদ্রব্যের প্রতি তাদের কোন আসক্তি আছে কিনা বা কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে কিনা। ইমাম সৈয়দ সোহরাওয়ার্দী বলেন, ইমামদের আরো দেখতে হবে নব্য ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা যথাযথভাবে ইসলাম ধর্মের নিয়মকানুন মেনে চলছে কিনা। তিনি বলেন, মুসলিম ধর্মের অনুসারীদের অনেকেরই মগজ ধোলাই করেছে ইসলামিক স্টেট এর জঙ্গীরা। আজকে মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এমন এক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, সাধারণ মুসলিম জনতাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করছেন জঙ্গীরা তাদের জঙ্গীপনাকে সমর্থন না করায় অপর দিকে কানাডার সাধারণ জনতা মনে করছেন সব মুসলমানই বুঝি এরকম জঙ্গী বা জঙ্গীবাদের সমর্থক।

কানাডায় পরপর দুটি জঙ্গী হামলার পর সৈয়দ সোহরাওয়র্দীর এই বক্তব্য বিশেষভাবে প্রনিধানযোগ্য। কারণ, কানাডার সাধারণ মুসলিম জনতার বিপদ এখন দেখা যাচ্ছে দুদিক থেকেই। তবে আশার কথা এই যে, গত কয়েক বছরে কানাডায় জঙ্গী বিরোধী প্রচারণায় মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও ইমামগণ এগিয়ে আসাতে এবং সোচ্চার ভূমিকা পালন করায় কানাডিয়ানদের মধ্যে মুসলিমদের সর্ম্পকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। আগে যারা জঙ্গীপনায় বিশ্বাসী ছিল তাদেরও অনেকে এখন তাদের ভুল বুঝতে পেরে সঠিক পথে ফিরে এসেছে। আমরা আরো দেখেছি কুইবেক ও অটোয়ায় জঙ্গী হামলার পর ইসলামোফোবিয়ায় বিশ্বাসী কানাডিয়ানদের কাছ থেকে একদিকে যেমন সাধারণ মুসলিমদের প্রতি সন্দেহ, আবিশ্বাস আর ঘৃণা প্রকাশ পেয়েছে তেমিন আবার সহানুভূতিও প্রকাশ পেয়েছে কানাডিয়ান মূলশ্রোতের মানুষদের কাছ থেকে। এর চাক্ষুষ প্রমাণ মেলে অটোয়ায় জঙ্গী হামলার পর আলবার্টার কোল্ড লেকে অবস্থিত একটি মসজিদ ভাংচূড় এর ঘটনার মধ্য দিয়ে। ইসলামোফোবিয়ায় বিশ্বাসীরা রাতের অন্ধকারে মসজিদটির জানালা ভাংচূড় করে এবং দেয়ালে নানান আপত্তিকর ও বর্ণবাদী মন্তব্য লিখে রাখে। পরে স্থানীয় সর্বসম্প্রদায়ের জনতা এগিয়ে এসে মসজিদটির সংস্কার কাজে হাত দেয় এবং আপত্তিকর মন্তব্যগুলো মুছে ফেলতে সাহায্য করে। ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডার নির্বাহী পরিচালক এহসান গার্দি বলেন, মসজিদ ভাংচুড়ের ঘটনাটি গুটিকতক মানুষের কাজ যার সাথে সিংহভাগ কানাডিয়ানদের কোন সম্পর্ক নেই।

পরিশেষে বলা যায়, কানাডায় এই জঙ্গী হামলার সঙ্গে এখানকার সাধারণ মুসলিম জনতার যেমন কোন সম্পর্ক বা সম্প্রিক্ততা নেই তেমনি নেই তাদের সমর্থনও। কারণ কানাডা তাদেরও দেশ। তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এদেশেই বড় হবে, এদেশেই তারা তাদের ভবিষ্যৎ গড়বে। গুটিকতক নব্য ‘মুসলিম’ বা হোমগ্রোন অন্যান্য জঙ্গী সন্ত্রাসীদের কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকান্ডের দায়ভার সাধারণ মুসলিমদের ঘাড়ে চাপানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। যদি কেউ সেই দায়ভার চাপানোর চেষ্টা করেন তবে বলবো নিশ্চিতভাবেই তা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত এবং এ থেকে তারা রাজনৈতিক ফয়দা লুষ্ঠনের চেষ্টা করছেন।

খুরশিদ আলম

সম্পাদক ও প্রকাশক

প্রবাসী কন্ঠ