কানাডায় সন্তানদেরকে শাসন করা আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও তার বিপদ
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৫
॥ খুরশিদ আলম ॥
কানাডায় যখন ইমিগ্রেন্টরা নতুন আসেন তখন তাঁরা সাথে করে কিছু দুশ্চিন্তাও বয়ে নিয়ে আসেন । সে দুশ্চিন্তার মধ্যে একটি হলো – সন্তানদের ঠিকমত মানুষ করা যাবে তো? এ চিন্তাটি তাঁদের সামনে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়। তাঁদের ভাবনায় সারাক্ষণ এই বিষয়টিই কাজ করে যে, এখানকার খোলামেলা সমাজে সন্তানরা বিপথগামী হয়ে যাবে নাতো? আদপ-কায়দা ঠিক মত শিখবে তো? ধর্ম-কর্ম? এরকম আরো অনেক প্রশ্ন তখন তাঁদের মনে অনবরত ঘুরপাক খেতে থাকে।
কমিউনিটির পত্রিকার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত হওয়ার কারণে নুতন আসা অনেক ইমিগ্রেন্টদের কাছ থেকে আমি নিজেও এ ধরণের প্রশ্নের সন্মুখীন হয়েছি অনেকবার। আমি তাঁদেরকে ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, আস্থা স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছি। একথাও তাঁদেরকে জানিয়েছি যে, কানাডায় আসার পর বাংলাদেশী পরিবারের ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খুবই ভাল রেজাল্ট করছে। ড্রাগ বা অন্যসব উচ্ছৃঙ্খল কর্মকান্ডের সঙ্গে বাঙ্গালী ছেলে মেয়েরা জড়িত নয়। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদ দিলে প্রবাসে বাঙ্গালী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই। সঙ্গে অবশ্য এ কথাও জানাতে ভুলিনি যে, আমরা বাংলাদেশ থেকে প্রায় বার হাজার মাইল দূরে একটি বিজাতীয় ভাষা ও বিজাতীয় বা বহুজাতীয় সংস্কৃতির মধ্যে এসে পড়েছি। সুতরাং সেই দিকটিও আমাদেরকে বিবেচনায় রাখতে হবে। ফেলে আসা দেশে আমরা যে বিষয়টিকে ভাল মনে করতাম সে বিষয়টি এখানে ভাল নাও হতে পারে। অথবা যে বিষয়টিকে মন্দ মনে করতাম সে বিষয়টি এখানে মন্দ নাও হতে পারে।
সমস্যাটা এখানেই। এদেশের পরিবেশটা ভিন্ন। বাংলাদেশে আমাদের সন্তানদেরকে আমরা যে পরিবেশে লালন-পালন করি অথবা আমরা যে ভাবে এবং যে পরিবেশে বড় হয়েছি তার তুলনায় এখানকার পরিবেশ, পরিস্থিতি ও সংস্কৃতি অনেকটাই ভিন্ন। এদেশের আইন-কানুনও ভিন্ন। দেশে অনেক বাবা-মাই সন্তানদেরকে শাসন করতে গিয়ে তাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে থাকেন। শহরের তুলনায় গ্রামে এর মাত্রা অনেক বেশী। দারিদ্রতা, অশিক্ষা বা কুসংস্কার এর পিছনে কাজ করে। তাছাড়া সমাজের চোখে ঐ নির্যাতন এখনো তেমনটা নিন্দনীয় নয়। এসব নির্যাতন অনেক সময় সীমা ছাড়িয়ে যায়। শিশুদের শরীর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। মাথায় আঘাত করে থাকলে তার পরিনতি অনেক সময় ভয়াবহ হয়। শাস্তি হিসেবে অনেক সময় সন্তানদেরকে অভুক্ত রাখা হয়। বের করে দেওয়া হয় বাড়ি থেকে। অথবা বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকী দেওয়া হয়। কিংবা বলা হয়- “যেদিকে চোখ যায় সেদিকে চলে যা।” খাবার নিয়ে অপমানজনক কথা বলা হয়। এই সব শাস্তির কারণে সৃষ্ট শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি বা ক্ষত কখনো কখনো ছেলে-মেয়েদেরকে তাদের বাকী জীবন বয়ে বেড়াতে হয়।
নির্যাতন শুধু বাড়িতেই নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানোর সংস্কৃতি ছিল বাংলাদেশে কয়েক বছর আগেও। বেত্রাঘাত, চড়-থাপ্পর, কিল-ঘুষি, দুই হাটুর নীচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে কান ধরে নীলডাউন করানো, বেঞ্চে দাঁড় করিয়ে রাখাসহ কষ্টকর ও চরম অপমানজনক শাস্তি দেওয়া হতো ছাত্র-ছাত্রীদেরকে যা ছিল অমানবিক ও বর্বরতারই নামান্তর। ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারী বাংলাদেশের হাইকোর্ট সকল প্রাইমারী স্কুল, সেকেন্ডারী স্কুল, ও মাদ্রাসায় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শারীরিক শাস্তি প্রদান করা নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু তারপরও মাঝে মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্যাতনের খবর পত্রপত্রিকায় দেখা যায় এখনো।
সন্তানদের মানুষ করার নামে বাংলাদেশে এই যে সংস্কৃতি, এই যে রীতি-নীতি সেটাতো কানাডায় নেই। কিন্তু তাই বলে কানাডায় কি ছেলে-মেয়েরা মানুষ হচ্ছে না? নাকি সবাই বিপথগামী হচ্ছে? এদেশে শাসনের নামে ছেলে-মেয়েদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো নিষিদ্ধ। আর বাংলাদেশী স্টাইলে নির্যাতন? সে তো ভাবাই যায় না এদেশে। অথচ প্রবাসে আমরা মাঝে মধ্যে শুনতে পাই ওমুকের স্কুলগামী ছেলে বা মেয়েকে চিল্ড্রেন এইড সোসাইটির লোকেরা বাসা থেকে নিয়ে গেছে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। লজ্জায় তখন বাবা-মা’র মাথা হেট হয়ে যায়। কাউকে বিষয়টি বলতেও পারেন না তাঁরা। তারপরও কিছু কিছু ঘটনা কমিউনিটিতে ফাঁস হয়ে যায়।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, তাহলে কি নিজের ছেলে-মেয়েকে শাসনও করা যাবে না? ছেলে-মেয়ে যদি অবাধ্য হয়, কথা না শুনে, ঠিকমত লেখাপড়া না করে তাহলেও না?
না। অবাধ্য হলেও নিজের সন্তানকে (যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে) শাসন করা যাবে না যদি সেই শাসন হয় পিটানো বা প্রহার করা। শাসনের কারণে যদি শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হয় বা মানসিকভাবে ছেলে-মেয়েরা আহত হয় এমন শাসন এ দেশে করা যাবে না। এ দেশে ছেলে-মেয়েকে শাসন করতে হলে এখানকার শাসন পদ্ধতি জানতে হবে। জানতে হবে এখানকার আইন-কানুন। শাসন করা এখানেও আইনসম্মত বা বিধিসম্মত। কানাডার আইনে ((Section 43 of the Criminal Code) ) বলা হয়েছে অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদেরকে শাসন করতে হলে বড়জোর তাদের নিতম্বে বা পশ্চাদ্দেশে খালি হাতে চড় মারা যেতে পারে শুধুমাত্র ব্যথা অনুভব হতে পারে এতটুকু মাত্রার। এর বেশী নয়। অর্থাৎ এই আঘাতটুকু পরিমিত বা সমীচীন মাত্রার হতে হবে। কান্ডজ্ঞানহীনের মতো চড় মারা যাবে না বা অতি রাগ হয়ে বা উত্তেজিত হয়ে এ কাজটি করা যাবে না। ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে বা আহত হতে পারে এমনভাবে আঘাত করা যাবে না। এমনকি চড় মারার পর কয়েক ঘন্টা লাল দাগ হয়ে থাকবে এমন মাত্রার আঘাতও করা যাবে না। আর বেল্ট, লাঠি বা অন্য কোন কিছু ব্যবহারেরতো প্রশ্নই আসে না। অর্থাৎ শাসনটুকু রিজনএবল বা যুক্তিযুক্ত হতে হবে। যুক্তিযুক্ত শাসন কি তার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, একটি শিশু যার বয়স দুই বা তারো কম, তাকে নিতম্বে বা পশ্চাদ্দেশে খালি হাতে চড় মেরে কোন লাভ নেই। কারণ কেন চড় মারা হচ্ছে এইটুকু হৃদয়ঙ্গম করার বয়স তার হয়নি। অন্যদিকে একজন টিন এজ ছেলে বা মেয়েকে শাসন করার লক্ষ্যে আঘাত করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অর্থাৎ সেও পাল্টা আঘাত করে বসতে পারে বা কোন সামাজ বিরোধী আচরণ করে বসতে পারে। শিশুদের মাথায়ও আঘাত করা যাবে না। মর্যাদাহানিকর বা অমানবিক কোন আচরণও করা যাবে না শাসন করার নামে। শাসন করার সময় এ বিষয়গুলোর উপরও নজর রাখার কথা বলা হয়েছে আইনে।
Section 43 of the Criminal Code আইনটি কানাডায় শতাধিক বছরের পুরানো। শিশুদেরকে সংশোধন করা বা তাদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণ শুধরানোর জন্য এই আইনটুকু প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে সেটা কেবল বাবা-মা অথবা কোন আইনি অভিভাবক করতে পারবেন। পরিবারের অন্যকোন সদস্য যেমন দাদা-দাদী, নানা-নানী, মামা-মামী, চাচা-চাচী এরা পারবেন না। স্কুল শিক্ষক, বেবীসিটার বা অন্যসব কেয়ারটেকাররাও রয়েছেন এই তালিকায়।
এই আইনে সন্তানদেরকে শাসন করার অধিকার ততটুকুই দেওয়া হয়েছে যতটুকু করা হলে তারা শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আর শাসনের মূল উদ্দেশ্য হতে হবে ছেলে-মেয়েদেরকে এডুকেট করে তোলা বা তাদের আচরণগত সমস্যা থাকলে তা শুধরানো। আর শাসন করলে যদি কাজ হয় তবেই শাসন করা যাবে। অর্থাৎ শিশুটি যদি খুবই অল্প বয়সের হয় এবং বুঝতেই না পারে কেন তাকে শাসন করা হচ্ছে তাহলে তো শাসনের কোন অর্থই হয় না। এ ধরণের শাসন তখন নির্যাতনের পর্যায়ে চলে যায়। ডিসএবিলিটি বা শারীরিক/মানসিক অক্ষমতার কারণেও যদি কোন শিশু কোন কিছু বুঝতে অক্ষম থাকে তবে তাকে শাসন করা যাবে না।
কানাডায় ছেলে-মেয়েদেরকে শাসন করার এই আইনটি আমরা যারা অন্যদেশ বিশেষ করে সাউথ এশিয়া থেকে এসেছি তাঁদের কাছে একেবারেই হালকা মনে হতে পারে। অথবা মনে হতে পারে এ আইন থাকা বা না থাকার কোন অর্থ নেই। অর্থাৎ এটি কোন কাজের আইন নয়। কিন্তু পাঠক, শুনে আশ্চর্য হতে পারেন যে, এই আইনটিও (Section 43 of the Criminal Code) বাতিলের জন্য কানাডায় চেষ্টা-চরিত্র কম হয়নি। কানাডিয়ান ফাউন্ডেশন ফর চিলড্রেন, ইয়ুথ এন্ড দ্যা ল এর কর্মকর্তারা এই আইনটির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন অন্টারিও কোর্টে। ২০০০ সালে অন্টারিও কোর্ট এই আপত্তিকে নাকচ করে দেন। পরের বছর এই সংগঠনটি আপিল করেছিল অন্টারিও আপিল কোর্টে। এখানেও তাঁদের আপত্তি টিকেনি। আপিল কোর্ট Section 43 এর পক্ষেই রায় দেন। তবে এখানেই শেষ হয়ে যায় নি আইনটি বাতিল করার লড়াই। কানাডিয়ান ফাউন্ডেশন ফর চিলড্রেন, ইয়ুথ এন্ড দ্যা ল এর কর্মকর্তারা এরপর যান সুপ্রিম কোর্ট অব কানাডার দরবারে। এই সুপ্রিম কোর্ট কানাডার সর্বোচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট অব কানাডা ২০০৪ সালের ৯ জানুয়ারী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন। তবে সিদ্ধান্তটি দেওয়া হয় আইনটি ভাল না মন্দ সে বিষয়ে নয়। সুপ্রিম কোর্ট অব কানাডার লক্ষ্য ছিল Section 43 of the Criminal Code কানাডার চার্টার অব রাইটস এন্ড ফ্রিডমস এর section 7(d) এর পরিপন্থ’ী কি না। এই সেকশনটি কানাডার একজন নাগরিকের নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে ডিল করে। সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেন এই বলে যে, Section 43 চার্টার অব রাইটসকে লঙ্ঘন করে না।
এখন অনুধাবন করুন, কানাডায় ছেলে-মেয়েদেরকে শাসন করাটা কত কঠিন কাজ এবং এই শাসন পদ্ধতির সঙ্গে আমাদের ফেলে আসা দেশের “শাসন সংস্কৃতির” পার্থক্যটা কত বিশাল। একটি শিশুকে ছোট বেলা থেকেই যখন শাসনের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সামনে তাকে অবমাননা করা হয়, বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার হুমকী দেওয়া হয়, খাবার বন্ধ করে দেওয়ার হুমকী দেওয়া হয় কিংবা দুপুরে বা রাতে সত্যিকার অর্থেই খাবার দেওয়া হয়না তখন তার অবস্থাটা কি হতে পারে?
বাংলাদেশে সন্তানদেরকে শাসন করার নামে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের প্রতি যে ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে অনেক ত্রুটি আছে। সেখানে আমরা আমাদের পিতা-মাতাকে যেভাবে শাসন করতে দেখেছি সেভাবে আমরাও আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে শাসন করার চেষ্টা করি। এ ক্ষেত্রে একেবারেই অন্ধ অনুকরণ করা হয়। এক প্রজন্মের পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে পরবর্তী প্রজন্মের পরিবেশ ও পরিস্থিতির মিল থাকে না অনেক ক্ষেত্রেই। শাসন করার সময় সেই বিষয়গুলো আমরা বিবেচনায় আনি না। শাসনটি যুক্তিসঙ্গত হলো কি না, এটি একটি শিশুর জন্য কতটা পীড়াদায়ক হতে পারে অথবা কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে তা ভেবে দেখার প্রয়োজনই বোধ করেন না অনেক পিতা-মাতা।
বাংলাদেশ থেকে যখন আমরা কানাডায় আসি, তখন আমাদের অনেকেই সেই মনমানসিকতা নিয়ে আসি। প্রথম দিকে এখানকার আইন ও সংস্কৃতি বুঝে উঠার আগেই আমরা অনেকে শিশুদেরকে দেশী কায়দায় শাসন করা শুরু করি। কিন্তু শিশুরা যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করে তখন তারা ক্রমেই তাদের অধিকার সম্পর্কে জানতে শুরু করে এবং সচেতন হয়ে উঠে। যে সকল শিশু শাসনের নামে ঘরে নির্যাতিত হয় তারা একপর্যায়ে বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে আনে। তখন ফলাফল যা হবার তাই হয়। অর্থাৎ বিষয়টি পুলিশ ও চিল্ড্রেন এইড সোসাইটি পর্যন্ত গড়ায়।
বাংলাদেশ থেকে আমরা যাঁরা ইমিগ্রেন্ট হয়ে বিদেশে আসি তাঁদের প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই একটি বিষয় মিল আছে। সেটি হলো, আমরা সবাই আমাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে চাই। তাদেরকে গড়ে তুলতে চাই সুনাগরিক হিসেবে। তবে এর জন্য চাই তাদের সুশিক্ষা। আমরা জানি একটি মানব শিশুর শিক্ষা প্রথমেই শুরু হয় তার নিজের ঘর থেকে। বাবা-মা’ই শিশুর প্রথম শিক্ষক।
আমাদের সন্তান আমাদের ভবিষ্যৎ, জাতিরও ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতের সেই স্বপ্নকে সুন্দর করে গড়ে তোলার প্রাথমিক দায়িত্ব আমাদেরই। আর সেই দায়িত্ব শুরু হয় আমাদের ঘর থেকেই। আমরা আমাদের সন্তানদের ভালবাসি। কিন্তু ঘরের পরিবেশ যদি সুন্দর না হয়, ঘর যদি নিরাপদ না হয়, সন্তান যদি ঘরে অপমানিত হয়, যদি নির্যাতনের শিকার হয় তবে আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন অংকুরেই নষ্ট হয়ে যাবে। তাই শাসনের নামে সন্তানদের মারধোর না করে ভাল করে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করা উচিৎ আমাদের। মনে রাখা উচিৎ, পিতা-মাতার যেমন অপমানবোধ আছে তেমনি অপমানবোধ আছে সন্তানদেরও। সন্তানেরা অপমানিত হতে পারে এমন কোন আচরণ তাদের সাথে করা উচিৎ নয়। এর প্রভাব খুব সুদূরপ্রসারী হয়। পরিশেষে বলা যায়, কানাডায় সন্তানদের শাসন করতে মানা নেই। কিন্তু সেই শাসন যেন সন্তানদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ না হয়ে দাড়ায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক, প্রবাসী কন্ঠ
(The Supreme Court of Canada’s decision on spanking is available online at Canadian Foundation for Children, Youth and the Law v. Canada (Attorney General).