কানাডার মুসলমানরা দেশীয় চরমপন্থার মোকাবিলায় সক্ষম

নভেম্বর ৮, ২০১৪

মাইকেল জেহাফ-বাইবিউ

কামরান বোখারি
বস্তারিত তথ্য এখনও অসম্পূর্ণ, কিন্তু যেটা স্পষ্ট সেটা হলো মাইকেল জেহাফ-বাইবিউ ও মার্টিন কটিউর-রাউলিউ যারা গত সপ্তাহে আমাদের দু’জন সৈনিক করপোরাল নাথান সিরিল্লো এবং ওয়ারেন্ট অফিসার প্যাট্রিস ভিনসেন্টকে হত্যা করেছে তারা এই কাজটি করেছে ইসলামী চরমপন্থায় উদ্বুদ্ধ হয়েই।
দেশের সহিংস চরমপন্থীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করতে জাতীয় শক্তির বেশ অনেকটাই নিয়োজিত করতে হবে। অবশ্য সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় খোদ চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে Ñ এজন্য প্রয়োজন কেবল কানাডীয় মুসলমানদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে এমন বক্তব্য উপস্থাপন করা।
টরন্টো ১৮ ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটনের দু’মাস আগে ২০০৬ সালের শুরুর দিকে নিছক কাকতালীয়ভাবে আমি মুসলিম পাবলিক অ্যাফেয়ার্স জার্নালে ‘‘পাল্টা সন্ত্রাসবাদের দর্শন গড়ে তোলা’’ শিরোনামে নিবন্ধ প্রকাশ করি। এতে আমি যুক্তি প্রদর্শন করি যে,  ‘‘ধর্মের নামে সন্ত্রাসবাদী কর্মকা- যারা চালায় তাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করার পরও বেশিরভাগ মুসলিম তাদের মধ্যে অবস্থানরত এধরণের জঙ্গীদের বিরুদ্ধ সক্রিয় তৎপরতায় অংশ নিতে অনিচ্ছুক।’’
এর আট বছর পর এখন পরিস্থিতি আরও জটিল। তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর পক্ষে যুদ্ধ করতে অন্ততপক্ষে ১৪৫ জন কানাডীয় মুসলমান সিরিয়া ও ইরাকে গিয়েছে বলে জানা গেছে এবং কানাডীয় পুলিশ (জঈগচ) ৬৩টি ঘটনার তদন্ত করছে যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সন্দেহভাজন ৯০ জন সন্ত্রাসীর।
এ ধরণের আরও কত মুসলিম বিপথগামী তরুণ আইএস-এ যোগ দেয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে এবং আরও কতজন আমাদের নিজ ভূমিতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তাই ভেবে জাতি বিস্মিত। যাই হোক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের থামাতে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে অনেক কিছুই করা যেতে পারে।  কিন্তু আইন প্রয়োগকারীদের যত ক্ষমতাই দেয়া হোক না কেন তাতে চরমপন্থার সমস্যা সমাধান করা যাবে না।
কার্যত একটি বৃদ্ধিবৃত্তিক লড়াই চালানোর মত করে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে গড়ে তোলা হয় না। কিছু পন্ডিত যেমনটা উল্লেখ করেছেন সেভাবে কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীর যুক্তিসঙ্গত কর্মকান্ডের ওপর নজরদারি করা রাষ্ট্রের কাজ নয় বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের। নিজেদের কমিউনিটির ওপর আদর্শিক নরজদারির দায়িত্ব কানাডার মুসলমানদেরই।
দেশের মুসলিম নেতৃবৃন্দকে পাশ্চাত্যের অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘিষ্ঠ জনসংখ্যার দেশগুলোর মুসলিম নেতাদের সঙ্গে মিলে এমন একটি বক্তব্য তুলে ধরতে হবে যা তরুণদের চিতনাকে বিষিয়ে তোলা মৌলবাদী ব্যখ্যার বিরুদ্ধে কার্যকর পাল্টা বক্তব্য হিসাবে কাজ করবে।
আমরা কানাডার মুসলিম কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে যারা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে চর্চা করেন তাদের তরফ থেকে এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি মুসাবিদার জন্য অপেক্ষা করছি যাতে সাহস ও সৃজনশীলতার ছাপ থাকবে। ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ এধরণের প্রতিক্রিয়াশীল বিবৃতি এবং নিন্দাবাদ যথেষ্ট নয়।
যা দরকার তা হলো সম্প্রদায়গতভাবে চরমপন্থার বিরুদ্ধে একটি নীতিবোধ সৃষ্টি করা যা মুসলমনদেরকে তাদের ধর্মকে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণিত করতে সক্ষমতা দেবে। চরমপন্থীদের ব্যখ্যার বিরুদ্ধে কার্যকর পাল্টা বক্তব্য উপস্থাপন করা কানাডীয় মুসিলমানদের বৃহত্তর স্বার্থের জন্যই জরুরী। কারণ তারা যদি চরমপন্থার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন তাহলে তারা সরকারের পক্ষ থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হবেন যা পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দেবে।
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিক্রিয়াশীল সহযোগিতা দু’টি বিপজ্জনক ভ্রান্ত ধারণার দিকে ঠেলে দেবে। প্রথমত, এটি চরমপন্থীদের এমন দাবিকে জোরদার করবে যে, মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি পাল্টে ফেলার জন্য পাশ্চাত্যের পক্ষ থেকে রীতিমত জিম্মি হয়ে আছে। দ্বিতীয়ত, এটি পাশ্চাত্যে মুসলমানদের এমন ভাবমূর্তি আরও জোরালো করে তুলবে যে, মুসলমানরা ততক্ষণ পর্যন্ত মৌলবাদকে সহ্য করতে প্রস্তুত যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদেরকে অন্য কিছু করতে বাধ্য করা হয়।
এই যুগপৎ বিপদের বিরুদ্ধে কার্যকর অবস্থান গ্রহণের মাধ্যমে মুসলিম নেতৃবৃন্দ বাইরে থেকে চাপিয়ে দেয়া চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদবিরোধিতার উদ্যোগ এবং ইসলাম ও মুসলিমদের অবমাননার কাজে নিয়োজিতদের সহযোগী হিসাবে তাদের সম্পর্কে ধারণার মধ্যে বিদ্যমান উভয়সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে কাজ করতে পারেন। চরমপন্থার বিরুদ্ধে সময়ে সময়ে অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে নিজেরাই পাল্টা তত্ত্ব গ্রহণ করার মাধ্যমেই কেবল মুসলমানরা চরমপন্থার কারণে তাদের বিশ্বাস ও জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষয়িষ্ণু করে তোলার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হতে পারে।

কামরান বোখারি যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটফর-এর মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি সম্প্রতি প্রকাশিত গণতন্ত্রায়নের যুগে রাজনৈতিক ইসলাম নামে একটি গ্রন্থের লেখক। তার  প্রকাশিত মতামত সম্পূর্ণ তার নিজস্ব।
-সৌজন্যে :   টরন্টো স্টার