করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে

ডিসেম্বর ৩, ২০২০

করোনাভাইরাসের প্রথম দফা সংক্রমণের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বিশ্বব্যাপী প্রবলভাবে ফিরে এসেছে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ। ফিরে এসেছে কানাডায়ও। টরন্টো, মন্ট্রিয়ল, ভেঙ্গুভার, আলবার্টা-সহ আরো কয়েকটি স্থানে করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যেই টরন্টো ও পিল এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জরুরী নয় এমন অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

কোভিড-১৯-এর চ্যালেঞ্জ কতটা জটিল তা ইতিমধ্যেই সবাই জেনে গেছেন। কয়েকটি ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ভ্যাাকসিন আবিষ্কারের সুখবর দিয়েছে বটে। কিন্তু তা কতটা নিরাপদ সে নিয়ে সংশয় এখনো রয়েই গেছে। তাই যেহেতু খুব দ্রুত নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন সহজলভ্য হচ্ছে না, সেহেতু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন না করা হলে করোনার ব্যাপক সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে না। ধারণা করা হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে কানাডায় দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ৬০ হাজারে গিয়ে দাড়াতে পারে যদি না সকলে মিলে আমরা সতর্ক হই। আর এই সতর্ক হওয়ার সময় এখনি।

করোনা টেস্ট সেন্টারে কানাডিয়ানদের ভীড়। ছবি: কানাডিয়ান প্রেস

গত থ্যাংস গিভিং ডে’র পর কানাডায় করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকে। কারণ ঐ সময় সামাজিক যোগাযোগের মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল হঠাৎ করে। তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যেও সামাজিক যোগাযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়েছিল।

সামনে আসছে বড়দিন। এ উপলক্ষেও লোকজনের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ থ্যাংস গিভিং ডে’র তুলনায় অনেক বেশী হতে পারে। ফলে আশংকা দেখা দিয়েছে করোনার সংক্রমণ সামনের দিনগুলোতে আরো বেড়ে যেতে পারে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণ এবং সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ অবশ্য বিরামহীনভাবেই জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন সতর্ক থাকার জন্য।

কানাডায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল মার্চ মাসে। সেই সময় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার কারণে প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল জনজীবন। আর কয়েক মাস যেতে না যেতেই ঘরবন্দি মানুষ যেন হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। তবে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ফেডারেল, প্রভিন্সিয়াল ও স্থানীয় সরকারগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় করোনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। কিন্তু এর মধ্যে আবার কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, রেস্টুরেন্ট, নাইট ক্লাব ইত্যাদি খুলে দেয়া হয়। জীবিকার প্রশ্নেও অনেকে বাধ্য হয়েছিলেন ঘর থেকে বেরোতে। পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরাও হচ্ছিল প্রচুর। বেড়েছিল ছোটখাটো অনুষ্ঠানাদি করা কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতা। বাস বা অন্যান্য যানবাহনে যাত্রী সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। এতে করে ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। অর্থাৎ করোনার সংক্রমণ আবার বেড়েছে এবং টরন্টো ও পিল এলাকায় বাধ্য হয়ে লকডাউন ঘোষণা করতে হয়েছে।

আমরা দেখেছি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে অধিকমাত্রায় শক্তিশালী হয়ে ইউরোপের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হবার পর সংক্রমণের হার প্রায় আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে কয়েকটি দেশে। তাই কানাডাকে আরো বেশী সতর্ক হতে হবে। আরো বেশী নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। সতর্ক হলে এবং আইন কঠোরহস্তে প্রয়োগ করা হলে কি হয় তা আমরা দেখেছি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে। ঐ দেশ দুটি করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যপক সাফল্য অর্জন করেছে। তাই আমাদেরকেও অনুসরণ করতে হবে যারা সফল হয়েছে তাদেরকে। আমেরিকাকে নয়।

মানসম্মত ভ্যাকসিন সহজলভ্য হতে কয়েক বছর সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। বিশ্ববাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় আশা করা যায়, দ্রুত করোনার নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন সহজলভ্য হবে। তাই মানসম্মত ভ্যাকসিন সহজলভ্য না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এই অবস্থায় শুধু ব্যক্তিগত সচেতনতাই পারে করোনা প্রতিরোধ করতে। এর মধ্যে আছে মাস্ক পরা, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং একজন থেকে আরেকজনের ন্যূনতম দূরত্ব মেনে চলা। আসুন আমরা সবাই তা মেনে চলি আমাদের সকলেরই স্বার্থে।