আশার আলো দেখাচ্ছে করোনার ভ্যাকসিন
আগস্ট ৬, ২০২০
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, করোনা মহামারি নতুন এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। আর ভ্যাকসিন ছাড়া এই ভাইরাসের সংক্রমণ থামানো সম্ভব নয় বলে শুরু থেকেই বলে আসছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ। এ পরিস্থিতিতে সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন কার্যকর একটি ভ্যাকসিনের। গবেষকেরা ইতিমধ্যে আশার আলোও দেখাচ্ছেন। তারা বলছেন, হয়তো এ বছরেই দেখা মিলতে পারে বহু প্রতীক্ষিত ভ্যাকসিনের। তরতর এগিয়ে চলেছে ভ্যাকসিনের গবেষণা। কয়েকটি ভ্যাকসিন সফলতার প্রায় দ্বারপ্রান্তে।
সর্বশেষ খবরে জানা যায়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন বা টিকা মানব শরীরের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর এবং তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে। এটি মানবদেহের জন্য নিরাপদ এবং অ্যান্টিবডি তৈরি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করে তুলতে পারে বলে দাবি করছে তারা। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই ফল প্রকাশিত হয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সবচেয়ে নামকরা সাময়িকী ল্যানসেটে।
ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদনে ল্যানসেট সাময়িকীটি জানিয়েছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের অংশ হিসেবে এক হাজার ৭৭ জন স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়। এতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে ভ্যাকসিনটি অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এটি ‘টি-সেল’ উৎপন্ন করে। প্রাথমিক ফলের ভিত্তিতে অক্সফোর্ড বলছে, তাদের ভ্যাকসিনটি করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, যাঁদের শরীরে এই টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে নিরাপত্তার পর্যায়টিও ভালোভাবে অতিক্রম করেছে। তবে পরবর্তী ধাপের ফলাফলের জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে।
বস্তুত করোনাভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে বিশ্বের দেশে দেশে বিজ্ঞানীরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকে এ ব্যাপারে সাফল্যেরও দাবি করেছেন। মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেক করোনার প্রতিষেধক নিয়ে কাজ করছে এবং তাদের পক্ষ থেকেও যার যার টিকা নিরাপদ বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে ভ্যাকসিন নিয়ে সুখবর দিয়ে চীন জানিয়েছে, তাদের তৈরি একটি ভ্যাকসিনও করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি ও টি-সেল তৈরিতে সক্ষম। রাশিয়ার বিজ্ঞানীরাও ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী মাসের মধ্যেই তাঁরা বাজারে ভ্যাকসিন আনতে পারবেন।
অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি উৎপাদন ও বাজারজাত করবে ব্রিটিশ ওষুধ কম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা। যুক্তরাজ্য সরকার এরই মধ্যে ১০ কোটি ভ্যাকসিনের জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে চুক্তি করেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তারা অন্তত দেড় কোটি ভ্যাকসিন তৈরি করবে। আরো দেড় কোটি তৈরি করবে আগামী জানুয়ারির মধ্যে।
উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে প্রায় দেড় কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বেকার হয়ে গেছে কোটি কোটি মানুষ। বেড়েছে মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ। এ প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের মানুষ অধীর অপেক্ষায় আছে করোনাভাইরাসের একটি কার্যকর প্রতিষেধকের। সেক্ষেত্রে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন অবশ্যই আমাদের আশাবাদী করে। তবে সবচেয়ে যা জরুরি তা হল, করোনার ভ্যাকসিন বাজারে আসার পর তা যেন বিশ্বের সব দেশের সব মানুষের জন্য সহজলভ্য হয় এবং তা দ্রুত সবার কাছে পৌঁছায়।