সশ্রদ্ধ অভিনন্দন অধ্যাপক অমিত চাকমাকে

নভেম্বর 4, 2018

কানাডার অন্টারিওতে অবস্থিত খ্যতনামা ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির নতুন নামকরণ করা হয়েছে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত অধ্যাপক ড. অমিত চাকমার নামে। আগে এই ভবনটির নাম ছিল Three C+ Building. অধ্যাপক ড. অমিত চাকমা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর এবং প্রেসিডেন্ট।

ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০০৯ সালে অধ্যাপক অমিত চাকমা ভাইস চ্যান্সেলর হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রথম বর্ষে আন্তর্জাতিক স্টুডেন্টদের ফুল-টাইম এনরোলমেন্ট নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ।

ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর জ্যাক কোইন বলেন, অমিত চাকমা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ইনোভেটিভ কারিকুলাম ডেভলাপ করেন এবং বিভিন্ন গবেষণা কর্মের উদ্যোগ নেন যার মাধ্যমে এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদেরকে বিশ্ব নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলছেন।

আমরা জানি অমিত চাকমা একটি অমিত সাফল্যের নাম। অমিত চাকমার মূল নাম অমিতাভ চাকমা। কিন্তু কানাডার লোকজন তাঁর নাম ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারেন না। তাই নিজেই বদলে দিয়েছেন নিজের নাম, হয়ে গেছেন অমিত চাকমা। জন্মের পর যে শিশু সন্তানটির নাম রাখা হয়েছিল অমিতাভ সে শিশুটি যে একদিন বড় হয়ে সত্যি সত্যি অমিতাভ (অমিত আভা বা জ্যোতি যাঁর) হয়ে যাবেন তা কে জানতো? অমিতাভ থেকে অমিত নাম ধারণ করেও তিনি অসীম বা অপরিমেয়ই রয়ে গেলেন সাফল্যের মাপকাঠিতে। অমিত শব্দের অর্থ অপরিমেয়। যাকে মাপা যায় না।

অধ্যাপক ড. অমিত চাকমা। ছবি : অনলাইন

অমিত চাকমাকে আসলেই মাপা যায় না। এত যার সাফল্য, এত যার জ্যোতি সেই অমিত চাকমা কিন্তু একেবারেই মাটির মানুষ। অহংকার নামের শব্দটি তাঁর অভিধানে নেই। অত্যন্ত মিশুক প্রকৃতির দীর্ঘদেহী সুদর্শন এই মানুষটির মুখে সর্বদাই হাঁসি লেগে থাকে।

ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ও ভিসি নির্বাচিত হওয়ার পর তার অনুভূতিটা কি ছিল, প্রবাসী কণ্ঠ ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, “তেমন কোন অনুভূতি ছিল না। তবে প্রথমেই আমার মনে পড়েছিল আমার বাবার কথা। তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন আমার পিএইচডি শেষ করার অল্প কিছু দিন আগে। আমার বাবা আমার জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে নিশ্চই খুব খুশী হতেন।”

এবার তার নামে ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির নতুন নামকরণ করা হলে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে কাজ করতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি এবং এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা যে অর্জনটুকু করছে তা ভেবে আমি খুবই গর্ব অনুভব করছি। ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির নাম আমার নামে কারায় আমি গভীরভাবে আনন্দিত।

উল্ল্লেখ্য যে, অমিত চাকমা কানাডায় এসেছিলেন উচ্চতর ডিগ্রি নিতে। তার আগে আলজেরিয়ার বিখ্যাত আলজেরিয়ান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট থেকে ‘রাসায়নিক প্রকৌশল’ বিষয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৮২ সালে। এরপরই কানাডায় চলে আসেন মাস্টার্স ও পিএইচডি করার জন্য। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে রাসায়নিক প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা শেষে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

শিক্ষা খাতে ও তাঁর নিজের গবেষণা ক্ষেত্রে নানা অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন একাধিক পুরষ্কার। ৪০ বছরের কম বয়সী যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তাঁদের বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয় কানাডায়। ১৯৯৮ সালে সেই পুরস্কারটি পেয়েছিলেন অমিত চাকমা। কানাডা সরকার তাঁকে ৪০-এর নিচে সেরা ৪০ বা ‘টপ ৪০ আন্ডার ৪০ অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি কানাডার সর্ববৃহৎ ব্যাংক রয়েল ব্যাংক অব কানাডার ‘টপ ২৫ কানাডিয়ান ইমিগ্রেন্ট’পুরষ্কারে ভূষিত হন ইতিপূর্বে।

অমিত চাকমার এই অমিত সাফল্যে আমরা প্রবাসের প্রতিটি বাংলাদেশীই গর্বিত। তাকে জানাই আমাদের আন্তরিক সশ্রদ্ধ অভিনন্দন।