বর্ণবাদীদের আগ্রাসী আচরণ
জানুয়ারী 7, 2019
এডমন্টনে অভিবাসন বিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে আসা লোকদের উপর শারীরিক হামলা চালানো হয়। ছবি : সিবিসি
এডমন্টনে সম্প্রতি অভিবাসন বিরোধী এক প্রতিবাদের ঘটনা ঘটেছে এবং সেটা প্রকাশ্য এক সমাবেশের মাধ্যমে। পোস্টারে অভিবাসন বিরোধী নানা বক্তব্য লিখে উক্ত সমাবেশে এই প্রতিবাদ প্রদর্শন করা হয়। তারা জাতিসংঘের দেশান্তর গমন চুক্তিতে (United Nations’ migration pact.) কানাডা কর্তৃক স্বাক্ষর করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। তাদের ভাষ্য হলো, “ট্রুডো আর কানাডিয়ানদের সমর্থন করছেন না, তিনি অভিবাসনকেই অতিরিক্ত সমর্থন করেন।”
অভিবাসন বিরোধীরা রঙ্গীন পোস্টারে ‘Keep Canada Canadian’, ‘No Migration’ এই জাতীয় বুলি লিখে সমাবেশ করেন। সমাবেশে তাদের আচরণ ছিল অত্যন্ত আগ্রাসী। যারা তাদের এই অভিবাসন বিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে আসেন তাদের উপর তারা শারীরিক হামলা চালান। শুরুতে উপস্থিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে পরে আরো অধিক সংখ্যক পুলিশ ডাকতে হয়েছে ঘটনাস্থলে।
অভিবাসন বিরোধীদের কার্যকলাপের প্রতিবাদ করতে আসা এক অভিবাসী এদেবায়ো কাটিটি বলেন, “তারা আমাদের কাহিনী জানে না। তারা হলো সেইসব লোকেদের মতো যারা বলে, ‘ওহ, যেখান থেকে এসেছো সেখানে ফিরে যাও’। তিনি বলেন, “বর্ণবাদ ভয়ংকর একটা বিষয়। আর তারা সেই বর্ণবাদেরই প্রতিনিধিত্ব করছে।”
উল্ল্লেখ্য যে, অতীতে কানাডায় বর্ণবাদ সদর্পেই বিদ্যমান ছিল। প্রকাশ্যেই শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের লোকজন আদিবাসী থেকে শুরু করে কৃষ্ণাঙ্গ, বাদামী সবার বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণ করতো। কোন বিচার ছিল না এর বিরুদ্ধে। কিন্তু আমরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করছি, অতীতের সেই আচরণ এখন আবারো প্রকাশ্যেই করা হচ্ছে সংখ্যালঘু অভিবাসীদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে কানাডায় রক্ষণশীলদের কয়েকটি গ্র“প সাম্প্রতিক সময়ে অধিকমাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে অভিবাসী বিরোধী একটি অনুভূতি বা চেতনা জাগ্রত করতে। এই রক্ষণশীলদের মধ্যে নব্য জাতিয়তাবাদের একটি চেতনা নতুনভাবে জাগ্রত হয়ে উঠেছে এখন। কানাডার মাল্টিকালচারালইম নীতিতে তারা বিশ্বাসী নন। এই গ্রুপের মধ্য আছে La Meute এবং Soldiers of Odin. এদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী বিদ্বেষ ছড়ানো ও বিশৃংখলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। এই দুই গ্র“পের সদস্যরা প্রায়শই রাস্তায় বেরিয়ে আসছে প্রকাশ্যে। অনলাইনেও চলছে এদের বিদ্বেষ ছড়ানোর কার্যক্রম।
লক্ষ্য করা গেছে যে, ব্যক্তি পর্যায়েও কেউ কেউ প্রকাশ্যেই বর্ণবাদী আচরণ করছে কানাডার বিভিন্ন অঞ্চলে। ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে কুইবেকে একটি মসজিদে আলেকজান্ডার বিসোনেট নামের এক যুবক অতর্কিতে বন্দুক হামলা চালিয়ে ৬ জন মুসল্লিমকে হত্যা করেন। ঐ ঘটনায় স্তম্বিত হয়ে গিয়েছিলেন সবাই।
গত জুন মাসে আলবার্টায় কেলি পোচা নামক এক শ্বেতাঙ্গ মহিলা এক রেস্টুরেন্টে কয়েকজন অভিবাসী পুরুষের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বারবার বলেছেন তারা যে নোংরা (মহিলার ভাষায়) দেশ থেকে এসেছেন সে দেশে যেন ফিরে যান। ঐ পুরুষদের প্রতি তিনি দফায় দফায় এফ-ওয়ার্ড ব্যবহার করেছেন এবং এ সবই তিনি করেছেন বিনা উস্কানীতেই। তিনি ঐ অভিবাসী পুরুষদের উপর শারীরিক হামলা চালানোরও হুমকী প্রদান করেন।
গত আগষ্টে টরন্টোর পাশ্ববর্তী শহর মিসিসাগায় দুই সন্তানের জনক মোহাম্মদ আবু মাসজুকে দুই শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি বিনা উস্কানীতে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেন। আক্রমণের সময় তাদের ভাষা ছিল, “f–king এরাবিয়ান! সন্ত্রাসী!”
আক্রমণের শিকার আবু মাসজুকের মুখের আশেপাশে বেশ কয়েকটি হাড় ভেঙ্গে যায় এবং মস্তিস্কে রক্তক্ষরণও হয়। ডাক্তাররা মারজুকের মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য তার “মাথার খুলির একটি অংশ খুলে ফেলতে বাধ্য হন। ঐ সময় তাকে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র লাগিয়ে দেওয়া হয়।
বিচ্ছিন্নভাবে এরকম আরো কিছু বর্ণবাদী ঘটনা ঘটছে কানাডার বিভিন্ন শহরে। আর এ সকল ঘটনায় প্রমাণিত হচ্ছে বর্ণবাদীরা কানাডায় এখনো সক্রিয়। এডমন্টনের ঘটনা তা আবার নতুন কর স্বরণ করিয়ে দিয়ে গেল। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।