কানাডায় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আমাদেরকে আরো সচেতন হতে হবে
11 ই অক্টোবর, 2018
শিশুদের আত্মহত্যার হারের দিক থেকে কানাডা বিশ্বে পঞ্চম শীর্ষস্থানে রয়েছে। ছবি: Canada.com
কানাডায় মানসিক স্বাস্থ্যগত কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচ থেকে ২৪ বছর বয়সী শিশুদের সংখ্যা গত এক দশকে ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। চিলড্রেন ফার্স্ট-এর প্রধান পরিচালক সারা অস্টিন ডা. অস্টিন বলেন, মানসিক সমস্যা কাটিয়ে ওঠার মত কোনও উপায় নিজের সমাজ থেকে না পাওয়ার কারণে শিশুরা ক্রমবর্ধমান হারে হাসপাতালের শরণাপন্ন হচ্ছে।
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্তদের মধ্যে যারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে তাদের সংখ্যাও বাড়ছে। অস্টিনের বক্তব্য অনুযায়ী, শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ হলো আত্মহত্যা। তিনি আরও জানান, শিশুদের আত্মহত্যার হারের দিক থেকে কানাডা বিশ্বে পঞ্চম শীর্ষস্থানে রয়েছে। কানাডিয়ান প্রেস এর এক রিপোর্টে এই তথ্য পরিবেশিত হয় সম্প্রতি।
চিলড্রেন ফার্স্ট কানাডা এবং ও’ব্রেইন ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক হেলথ-এর সংকলিত ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, শিশু মৃত্যু থেকে শুরু করে স্থূলতা এবং দারিদ্র্যের হার পর্যন্ত সব স্বাস্থ্যগত সূচকেই কানাডায় শিশুর কল্যাণের এক উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে।
সারা অস্টিন আরো বলেন, “আমরা শিশু মৃত্যুর হার, বা দুর্ঘটনা বা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যে বিষয় নিয়েই কথা বলি না কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিসংখ্যানগুলো গভীরভাবে উদ্বেগজনক।” তিনি বলেন, “কানাডা বিশ্বের পঞ্চম সমৃদ্ধিশালী দেশ কিন্তু যখন শিশুদের কল্যাণের প্রসঙ্গ আসে তখন আমরা অনেক পেছনে পড়ে যাই।”
রিপোর্টে বলা হয়, শুধু ২০১৬ সালেই অন্টারিওতে মানসিক স্বাস্থ্যগত কারণে ১৬ হাজার ২৯১ টি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় যা এক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কুইবেকের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
শিশুদের এই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টি কেবল যে কানাডীয় পরিবারের শিশুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা নয়। অনেক ইমিগ্রেন্ট পরিবারের শিশুরাও এই সমস্যায় ভুগছে। স্মরণ করা যেতে পারে যে, গত বছর টরন্টোতে দুই বাংলাদেশী তরুণের আত্মহত্যার খবরে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছিল কমিউনিটিতে। এই দুই তরুণের একজনের নাম সাবিত খন্দকার এবং অন্যজনের নাম ফাহমি।
সাম্প্রতিক অন্য এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কানাডায় বর্তমান সময়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা নজীরবিহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিষয়টি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। টরন্টো স্টার এবং রায়ারসন স্কুল অব জার্নালিজম এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে।
উদ্বিগ্নতা বলি, বিষন্নতা বলি অথবা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যাই বলিনা কেন এই বিষয়ে আমাদের অধিকাংশ মানুষেরই জ্ঞান সীমিত। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যে একটি গুরুতর ব্যাধি এই ধারণাই অধিকাংশ মানুষের নেই। যাদের কিছুটা ধারণা আছে তারা একে আমলে নিতে চান না। বা লোক লজ্জার ভয়ে আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে চাই না। বিশেষ করে কানাডায় এশীয় ইমিগ্রেন্ট পরিবারের সদস্যরা আরো বেশী অজ্ঞ এই বিষয়ে অথবা তারা এড়িয়ে চলতে চান বিষয়টি।
টরন্টোর সাইকোথেরাপিস্ট জেনি এস চেং-এর মতে, এশীয়দের পরিবারে মানসিক সমস্যা নিয়ে কেউ কথা বলেন না, এর কারণ হলো, এ নিয়ে কীভাবে কথা বলতে হবে তারা জানেন না। চেং আরও বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য কী সে সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানের অভাব ছিলো এবং অভিবাসী বাবা-মায়েদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের “সবচেয়ে চরম লক্ষণ”কেই শুধু সমস্যা বলে মনে করার প্রবণতা রয়েছে। মানসিক রোগের যে নানা প্রকরণ রয়েছে তা তারা মানেন না বরং এটিকে “খুবই সাধারণ” বিষয় বলে মনে করেন। সেই সঙ্গে এশীয়দের সমাজে মানসিক সমস্যাকে অগ্রাধিকারমূলক বিষয় হিসাবে দেখা হয় না।
আমরা মনে করি শিশু ও তরুনদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আমাদেরকে আরো সচেতন ও খোলামেলা হতে হবে। এটি লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। লুকিয়ে রাখলে পরিস্থিতি একসময় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। আমাদের মনে রাখতে হবে এরাই আমাদের ভবিষ্যত। এদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যদি সঠিকভাবে নির্নয় করা না যায় এবং সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা যদি দেয়া না যায় তবে তার পরিণতি হবে গোটা দেশের জন্যই দুর্ভাগ্যজনক।