কানাডার ভাবমূর্তি উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের অবদান
10 ফেব্রুয়ারী, 2018
কানাডায় একশ্রেণীর রক্ষণশীল জনগোষ্ঠির মধ্যে ইমিগ্রেন্ট বিরোধী একটি মনোভাব এখনো কাজ করে। তারা মনে করেন এই ইমিগ্রেন্টরা কানাডার জন্য কোন মঙ্গল বলে আনছে না। জেনোফোবিয়া (xenophobia) বা বিদেশীদের সম্বন্ধে অহেতুক ভয়ের একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে এই জনগোষ্ঠির মধ্যে। তারা মনে করেন এই ইমিগ্রেন্টরা তাদের সবকিছু ক্রমশ দখল করে নিচ্ছেন।
মূলত ব্যাপারটি ঘটছে এই কারণে যে কানাডায় জন্ম নেয়া বয়স্ক লোকেরা ক্রমশ কাজ থেকে অবসরে যাচ্ছেন এবং সেই স্থানগুলো দখল করছেন তরুন ইমিগ্রেন্টরা। অন্যদিকে কানাডায় জন্ম নেয়া বয়স্ক নাগরিকের মধ্যে অবসরে যাওয়ার সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে হারে নতুন কর্মজীবীর সংখ্যা তাদের উত্তরসূরীর মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
তবে আশার কথা এই যে, কানাডায় ৭৫% অধিবাসী মনে করেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইমিগ্রেন্টদের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। আর সর্বশেষ এক তথ্যে জানা গেল কানাডা বর্তমান বিশ্বে একটি অন্যতম শিক্ষিত দেশ। আর এর কৃতিত্ব প্রধানত ইমিগ্রেন্টদের প্রাপ্য। ঐ অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে ইমিগ্রেন্ট পরিবারের ৩৬% ছেলে-মেয়ের (যাদের বয়স ২৫-৩৫ এর মধ্যে) ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি রয়েছে। আর এই একই বয়সের মূলধারার কানাডিয়ান ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি রয়েছে ২৪% জনের। সম্প্রতি সরকারের এক অভ্যন্তরীন অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটির স্যোসলজি এ্যান্ড পাবলিক এ্যাফেয়ার্স এর অধ্যাপক জ্যাক জ্যাকব বলেন, বিশ্বে সবচেয়ে বেশী ইউনিভার্সিটি ডিগ্রিধারী রয়েছে কানাডায়। দৃশ্যত এর পিছনে অবদান রয়েছে ইমিগ্রেন্টদের বিশেষ করে যারা ২১ শতকের গোড়া থেকে কানাডায় এসেছেন তাদের।
আমরা জানি কানাডায় ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা গত প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত বছর ২৫ অক্টোবর প্রকাশিত স্ট্যাটিসটিকস কানাডার সর্বশেষ হিসাব (২০১৬) অনুযায়ী দেখা যায় বর্তমানে কানাডার মোট জনসংখ্যার ২১.৯%-ই ইমিগ্রেন্ট।
কিন্তু কানাডায় ইমিগ্রেন্ট সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সেটা কানাডার জন্য সার্বিক দিক দিয়ে মঙ্গলই বয়ে আনছে। Environics Institute এবং Canadian Race Relations Foundation এর এক যৌথ জরীপে দেখা গেছে কানাডায় অধিকাংশ নাগরিক মনে করেন এখানে ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে না। জরীপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯০% ই মনে করেন কানাডায় জন্ম নেয়া একজন ব্যক্তি যতটা ভাল নাগরিক হতে পারবেন, কানাডার বাইরে জন্ম নেয়া একজন ব্যক্তিও এই দেশে এসে ততটা ভাল নাগরিক হতে পারবেন।
উল্লেখ্য যে, গত ২৯ জানুয়ারী কুইবেকে এক জনসভায় প্রিমিয়ার ফিলিপ কুইয়ার্ড বলেন, “কয়েক জেনারেশন ধরে বসবাসরত কুইবেকের কিছু অধিবাসী কেন নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠতর মানুষ মনে করেন সাম্প্রতিক সময়ে আসা ইমিগ্রেন্টদের তুলনায়? আমরা সবাই কানাডায় এসেছি এখানকার আদিবাসীদের সঙ্গে যোগ দিতে। কেউ আগে এসেছি, কেউ পরে এসেছি। এটাই শুধু পার্থক্য।” তিনি আরো বলেন, “আমরা দশ জেনারেশন আগে এসেছি বলে যারা ৫ বছর আগে কানাডায় এসেছেন তাদের তুলনায় শ্রেয় হয়ে যাইনি।”
এই কথাগুলো কানাডার ঐ রক্ষণশীল জনগোষ্ঠির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ইমিগ্রেন্টদের জন্যও। রক্ষণশীলদের যেমন নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ ভাবার কোন কারণ নেই, তেমনি ইমগ্রেন্টদেরকেও হীনমন্যতায় ভোগার কোন কারণ নেই এদেশে। শত বাধা বিপত্তির মধ্যেও তারা কানাডার অর্থনীতি উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখে আসছেন, শিক্ষায় কানাডার ভাবমূর্তি উন্নয়নে যে ভূমিকা রেখে আসছেন তা আজ দিনের আলোর মতই জাজ্বল্যমান। এই ধারা অব্যাহত থাকুন এটাই আমাদের কামনা।