করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিকল্প নেই

এপ্রিল 9, 2020

কানাডায় প্রতিদিনই বাড়ছে কারোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তের সংখ্যা। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। করোনা ভাইরাস অতীতের যে কোনো সংক্রামক ব্যাধি থেকে অধিক আক্রমণাত্মক। এর দ্রুত ভৌগোলিক বিস্তৃতি, আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর হার এর সত্যতা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করে।

এ পর্যন্ত অভিজ্ঞতায় আমরা যা দেখেছি তাতে কোনো অবস্থাতেই কোনো ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ অথবা বিশ্ব পরিমন্ডলে একে কম গুরুত্ব দেয়া যাবে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে অতীতের যে কোনো রোগ থেকে একে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, কারণ রোগ তৈরির ক্ষেত্রে এর চরিত্র একেবারেই আলাদা। বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে গোটা বিশ্বের মানুষকে কোভিড-১৯ থেকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং বিভিন্ন প্রভিন্সের প্রিমিয়ারগণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী করোনা ভাইরাসকে প্রতিহত করার জন্য নানান পদক্ষেপ নিচ্ছেন। জনগণকে ঘরের বাইরে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যেতে নিষেধ করছেন। ডাক্তারগণও ক্রমাগত পরামর্শ দিয়ে চলছেন ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য। টরন্টোসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে লোক সমাগমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসকল স্থানে এক পরিবারের সদস্য না হলে নিজেদের মধ্যে অন্তত ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হচ্ছে। এই আদেশ না মানলে গুনতে হবে বড় মাপের জরিমানা।

কানাডার ফেডারেল সরকার করোনার এই ভয়াবহ সংকট মুহুর্তে নানারকম আর্থিক সহায়তার কথাও ঘোষণা করেছে জনগনের জন্য।

আজকে করোনা সংকটে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিলম্ব হলে আমাদের চরম মূল্য দিতে হবে। কারণ প্রতিরোধই মূল কর্তব্য- রোগ হওয়ার সুযোগ দেয়া যাবে না।

ইতিমধ্যেই আমরা শিখেছি, হাঁচি-কাশি, সংস্পর্শ, ব্যবহার্য রুমাল, কাপড়চোপড়সহ অনেক সামগ্রীর মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায়। সুতরাং সবাইকে সচেতনভাবে এটি প্রতিরোধের চর্চা করতে হবে। রোগী বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখতে হবে এবং তার সেবার ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করে রোগ ছড়ানোর সম্ভাব্য পথ বন্ধ করতে হবে।

দ্রুত  সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে পরীক্ষা করে রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। তিনি রোগী হলে আইসোলেশনে রেখে তার চিকিৎসা করাতে হবে এবং যার পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি তিনি আক্রান্ত এলাকা থেকে এলে বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে তাকে ১৪ দিন হোম অথবা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখতে হবে।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুবই জরুরি। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সঙ্গে অথবা চিকিৎসকের সঙ্গে অনলাইনে বা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নিতে হবে। কোনো মিথ্যা গুজব বা অপচিকিৎসা অথবা অবৈজ্ঞানিক বিষয়ের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। কানাডার স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলো রোগীর ব্যবস্থাপনার জন্য সাধ্যমতো প্রস্তুত রয়েছে। ভীত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতন কর্মের মাধ্যমে নিজে বাঁচুন এবং অন্যকে বাঁচাতে সহযোগিতা করুন। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও অন্যান্য সহযোগিতার মাধ্যমে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সহযোগিতা করুন। যদিও করোনার চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই, তবু সঠিক চিকিৎসা পরিচর্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। সমন্বিত প্রচেষ্টা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সঠিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে করোনাভাইরাস কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব। আর আশার কথা এই যে, কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রভিন্স ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় এই রোগের প্রকোপ কমে আসছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে এই উন্নতি ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই সবাই সতর্ক থাকুন। ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।