অং সান সুচি’র অনারারী সিটিজেনশীপ বাতিল করা হোক

সেপ্টেম্বর 12, 2018

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে পুরোপুরি ব্যর্থ মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি। সংখ্যালঘু এই জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত অভিযান বন্ধে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে না পারায় তার বহু আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল বলে গত আগস্ট মাসে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বিদায়ী প্রধান রাদ আল হুসেইন। বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে রাদ আল হুসেইন রোহিঙ্গা ইস্যুতে নোবেল জয়ী এই নেত্রীর নীরব ভূমিকাকে ‘গভীর অনুশোচনাদায়ক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

এদিকে মিয়ানমারে গণহত্যা চালানোর জন্য দেশটির সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিচার হওয়া উচিত বলে একই সময়ে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।

কানাডার সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী Irwin Cotler  কয়েকদিন আগে Globe and Mail কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন সরকারের উচিৎ মায়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি’র অনারারী সিটিজেনশীপ অবশ্যই বাতিল করা। মিয়ানমারে কানাডার স্পেশাল এনভয় বব রে-ও বলেছেন রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠির উপর যে নৃশংসতা সংগঠিত হয়েছে তার দায় অং সান সুচি এড়াতে পারেন না। এর জন্য তিনিও দায়ী।

উল্লেখ্য যে, মিয়ানমারে যে পৈশাচিক ও নৃশংস গণহত্যা চালিয়ে সে দেশের সামরিক বাহিনী, তার পিছনে বিরাট ভূমিকা রয়েছে শান্তিতে নোবেল জয়ী এবং কানাডার আনারারী সিটিজেন অং সান সুচি।

গত বছর ৭ জুন কানাডা সফলকালে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মায়ানমার নেত্রী অং সান সুচি। ছবি : রয়টার্স

কানাডার দুর্ভাগ্য যে এই মহিলাকে অতীতে অনারারী সিটিজেনশীপ প্রদান করেছিল। অনেকেই এখন তার এই নাগরিকত্ব বাতিল করার দাবী জানিয়েছেন।

এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বিদায়ী প্রধান রাদ আল হুসেইন আরো বলেন, মিয়ানমারে সংখ্যালঘু নিধন অভিযান বন্ধে কোনো চেষ্টাই চালাননি সুচি। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে তিনি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।

তার মতে সুচি এমন এক অবস্থানে রয়েছেন যেখান থেকে তার অনেক কিছু করার ছিল। এমনকি তিনি সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই না গেয়ে অন্তত নীরব থাকতে পারতেন। অথবা তিনি পদত্যাগ করলেই সবচেয়ে ভালো হতো।

উল্লেখ্য যে, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু কির ছবি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে কানাডার মানবাধিকার বিষয়ক একটি জাদুঘরের প্রদর্শনী থেকে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের প্রেক্ষাপটে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে কানাডার অনারারী সিটিজেনদের ছবির গ্যালারিতে মিয়ানমার নেত্রীর একটি বড় প্রতিকৃতি থাকবে। মানবাধিকারের প্রতীক হিসাবে বিবেচিতদের ছবির সারিতে সু কি’র যে ছবি রয়েছে সেটির ওপর প্রতিফলিত আলোর বাল্বগুলো এরই মধ্যে স্তিমিত করা হয়েছে এবং মিয়ানমারের সাম্প্রতিক মানবাধিকার সঙ্কটের ব্যাখ্যা সংবলিত একটি ফলক ছবির সামনে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কানাডার রোহিঙ্গা সমিতির সভাপতি আনোয়ার আরকানি বলেন, “সু কি মানবাধিকারের প্রতীক নন। তার ছবি কেন সেখানে থাকবে? তিনি আপাদমস্তক একজন নিপীড়ক, এ ব্যাপারে কোনওরকম সন্দেহ নেই।”

আজকে সুচি যে একজন সাক্ষাৎ রক্তপিপাসু রাক্ষুসীর মূর্তি ধারণ করে বিশ্ব সভায় নিজেকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাতে কারো কোন সন্দেহ নেই। আর সে কারণে শান্তিতে তার নোবেল পুরষ্কার প্রত্যাহের দাবীও উঠেছে।

বিশ্ব ও আঞ্চলিক রাজনীতি ও সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির কুচক্রে পড়ে মায়ানমারের ক্ষুদ্র এ নৃগোষ্ঠির অস্তিত্ব আজ চরম হুমকীর মুখে। গত এক বছরে প্রায় দশ লক্ষ রোহিঙ্গা নির্যাতনের শিকার হয় বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এখন কানাডাসহ অন্যান্য মানব দরদী দেশগুলো এগিয়ে আসলে বাংলাদেশের উপর চাপ কমবে সন্দেহ নেই এবং রোহিঙ্গাদেরও একটা গতি হবে। আর একই সাথে আমরা মনে করি রক্তপিপাসু রাক্ষুসীর মূর্তি ধারণ করা মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি’র কানাডিয় সিটিজেনশীপ (অনারারী) বাতিল করে দেওয়া জরুরী। কারণ মানবাধিকার প্রশ্নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে কানাডার যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তার সঙ্গে অং সান সু কি’র রাক্ষুসী পরিচয়ের কোনই মিলই নেই। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি সু কি’র অনারারী সিটিজেনশীপ বাতিল করা হবে ততই তা কানাডার জন্য মঙ্গলজন।