রাজতন্ত্রের অবসান চান এমন কানাডীয়র সংখ্যা ‘ঐতিহাসিক স্তরে’ পৌঁছেছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, রাজতন্ত্রের অবসান চান এমন কানাডীয়র সংখ্যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর ছুঁয়েছে।

রিসার্চ কোং এই জরিপ চালায়। এতে দেখা যায়, জরিপে অংশ নেয়া কানাডীয়দের ৪৫ শতাংশই বলেছেন, দেশের সংবিধানের কথা বিবেচনা করলে তারা রাণীর পরিবর্তে একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান থাকার বিষয়টিই অগ্রাধিকার দেবেন। খবর সিটিভি নিউজ এর। রিপোর্ট করেছেন ব্রুকলিন নিওস্ট্যাটা।

গত ১ মার্চ প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রিসার্চ কোং উল্লেখ করে যে, এই অগ্রাধিকার দানকারীদের সংখ্যা “ঐতিহাসিক স্তরের” এবং তা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংস্থার পরিচালিত অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের একই ধরণের জরিপের ফলাফলের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি।

রিসার্চ কোং-এর রিপোর্টে বলা হয়, প্রতি চারজন কানডীয়র মধ্যে একজন (২৪ শতাংশ) বলেছেন, তারা চান কানাডা রাজতন্ত্র হিসাবেই থাকুক, অন্যদিকে ১৯ শতাংশ বলেছেন, “কোনও পদ্ধতিতেই তাদের আপত্তি নেই”। আর ১৩ শতাংশ এ বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতার কথা জানিয়েছেন।

জরিপে দেখা গেছে, রাজতন্ত্রের অবসান চান এমন কানাডীয়র সংখ্যা গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর ছুঁয়েছে। ছবিতে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে রাজকীয় পোষাকে দেখা যাচ্ছে। ছবি : টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া

রিসার্চ কোং-এর প্রেসিডেন্ট মারিও ক্যানসেকো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “এর আগে একই ধরনের প্রশ্ন রেখে ২০০৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে পরিচালিত চারটি জাতীয় পর্যায়ের সমীক্ষায় একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান থাকার বিষয়টি কখনই ৪০ শতাংশের বেশি মানুষের সমর্থন পায়নি।” তিনি আরও বলেন, দেশে একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান থাকার বিষয়টি সমর্থনকারীদের মধ্যে এগিয়ে আছেন, পুরুষ (৫১ শতাংশ), ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী কানাডীয় (৪৬ শতাংশ), কুইবেকবাসী (৫৭ শতাংশ) এবং ২০১৯ সালে লিবারেল দলকে ভোট দানকারীরা (৫০ শতাংশ)।

জরিপে এটাও দেখা যায় যে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ২২ শতাংশ চান, রাণীর মৃত্যু হলে বা তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দিলে সিংহাসনের প্রথম উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস রাজা হবেন। অন্যদিকে ৩৫ শতাংশের বক্তব্য হলো, তারা সিংহাসনের দ্বিতীয় উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়ামকে রাজা হিসাবে দেখতে চান।

যেসব কানাডীয় রাজতন্ত্র অব্যাহত রাখার পক্ষে বলেছেন, তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ প্রিন্স উইলিয়ামকে রাজা হিসাবে দেখতে চান, অন্যদিকে প্রিন্স চার্লসকে চান ৩৯ শতাংশ।

বর্তমানে রাণী হচ্ছেন যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ক্যারিবীয় ও প্রমান্ত মহাসাগরীয় কয়েকটি দেশসহ ১৬টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান।

বার্বাডোস সরকার গত সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে রাণীকে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে এবং এই দ্বীপ দেশটি চলতি বছরেই প্রজাতন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে। তখন থেকেই কানাঘুষা চলছে যে, কানাডাসহ কমনওয়েলথভুক্ত অন্যান্য দেশও রাজতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ করবে।

বার্বাডোস রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে রাণীকে সরিয়ে দিলে গত প্রায় তিন দশকের মধ্যে এটিই হবে প্রথম রাষ্ট্র যেটি এমন পদক্ষেপ নিলো। এর আগে ১৯৯২ সালে মরিশাস সর্বশেষ রাষ্ট্র যেটি রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে রাণীকে বর্জন করে। 

রিসার্চ কোং-এর জরিপে আরও দেখা গেছে যে, জরিপে অংশ নেয়া কানাডীয়দের অর্ধেকের সামান্য কম সংখ্যক (৪৯ শতাংশ) মানুষ মনে করেন, কানাডা “নিশ্চিতভাবে” অথবা “সম্ভবত” এখন থেকে দুই দশকের মধ্যে রাজতান্ত্রিক দেশ হবে। অবশ্য ৩১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তাদের বিশ্বাস, দেশটি ২০৪১ সালের মধ্যে নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান পাবে। জরিপের রিপোর্টে বলা হয়, অন্টারিওর (৫৩ শতাংশ) এবং আটলান্টিক কানাডার (৫১ শতাংশ) বাসিন্দা মনে করেন, কানাডা আগামী ২০ বছরের মধ্যে একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান পেতে পারে।