মহামারির কারণে টরন্টোর ভাড়ার অ্যাপার্টমেন্ট খালি থাকার হার রেকর্ড ছুঁয়েছে
অ্যাপার্টমেন্ট খালি থাকার এই হার গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সর্বোচ্চ
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ১৮ জানুয়ারি ২০২১ : নতুন এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছরের শেষ চতুর্থাংশে টরন্টোতে দীর্ঘমেয়াদে ভাড়া দেয়ার অ্যাপার্টমেন্টগুলি খালি থাকার হার রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে।
আরবানেশন গত সোমবার বলেছে, টরন্টো নগরীতে ২০০৫ সাল থেকে নির্মিত ভাড়ার অ্যাপার্টমেন্টগুলো নিয়ে পরিচালিত তাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত বছরের শেষ চতুর্থাংশে এগুলির ৫.৭ শতাংশ খালি ছিলো। ২০১৯ সালের শেষ চতুর্থাংশে খালি থাকার হার ছিলো ১.১ শতাংশ। খবর দি কানাডিয়ান প্রেস এর। রিপোর্ট করেছেন অনীতা বালাকৃষ্ণন।
এই কনসাল্টিং ফার্ম জানায়, কানাডা মর্টগেজ ও হাউজিং করপোরেশনের ১৯৭১ সালের সমীক্ষার উপাত্ত দেখলে দেখা যায়, অ্যাপার্টমেন্ট খালি থাকার এই হার গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আরবানেশনের প্রেসিডেন্ট শন হিলডেব্রান্ড বলেন, “আমার মনে হয়, এই ফলাফল থেকে স্পষ্ট যে, [কোভিড-১৯] মহামারি টরন্টোর ভাড়ার বাজার কী মারাত্মকভাবে পাল্টে দিয়েছে।”
“ভাড়ার অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা পড়ে গেছে ক্রমবর্ধমান হারে মানুষের শহরের বাইরে চলে যাবার কারণে। আমাদের অভিবাসন কমে যায়, বেকারত্বের হার বাড়ে, মাধ্যমিক-উত্তর শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও ব্যাপকভাবে কমে যায়। আর একই সঙ্গে গত বছর ২০২০ সালে আমরা রেকর্ড সংখ্যক নতুন কনডোমিনিয়াম নির্মাণের কাজ শেষ করি।”
আরবানেশনের রিপোর্ট বলছে, ২০২০ সালের শেষ চতুর্থাংশে গ্রেটার টরন্টোতে সার্বিকভাবে অ্যাপার্টমেন্ট খালি থাকার হার ছিলো ৪.৬ শতাংশ। এক বছর আগের চেয়ে এই হার এক শতাংশ বেশি। এদিকে, গ্রেটার টরন্টো এলাকার ৯০৫ অঞ্চলে অ্যাপার্টমেন্টে খালি থাকার হার বেড়েছে দুই শতাংশ যা ২০১৯ সালের শেষ চতুর্থাংশে ছিলো ০.৮ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি চাকরি হারানোদের মধ্যে তরুণ কর্মীরা
টরন্টো এলাকায় ভাড়ার জন্য প্রস্তুত অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া কয়েক বছরের হিসাবে গত বছরের শেষ চতুর্থাংশে কমেছে ১০ শতাংশ। ৯০৫ অঞ্চলে ভাড়ার হার গড়ে কমেছে ২.২ শতাংশ।
হিলডেব্রান্ড বলেন, “এই রিপোর্টে দীর্ঘমেয়াদে ভাড়া দেয়ার মত নতুন তৈরি অ্যাপার্টমেন্ট এবং ভাড়ার কন্ডোগুলোর বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে যা আসলেই একটু ব্যয়বহুল।”
“সব উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি চাকরি হারিয়েছে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে নিয়োজিতরা। সাধারণত ভাড়ার বাজারে এদের প্রতিনিধিত্বই সবচেয়ে বেশি। আর এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, তারা স্বাভাবিকভাবেই উচ্চভাড়ার বাজার থেকে দূরে সরে যাবে।”
আরবানেশনের রিপোর্ট কোভিড-১৯ মহামারির আঘাতের আগে টরন্টোর অ্যাপার্টমেন্ট খালি থাকার হারের বিপরীত চিত্রই তুলে ধরে।
সিএমএইচসির রিপোর্টে বলা হয় যে, গত বছরের এই সময়ে টরন্টোতে বাড়ি খালি থাকার হার ছিলো, এখন যেসব ভাড়াটে আছেন তাদের নিয়েই ২০১১ সাল যাবৎ দুই শতাংশের কম। এর কারণ সম্ভবত এই যে, সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া এখনকার ভাড়াটেদের চেয়ে ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে চাওয়া হচ্ছে।
সিএমএইচসির হিসাবে মহামারির আগে ভ্যাঙ্কুভার ও মন্ট্রিলেও খালি থাকার হার ছিলো দুই শতাংশের কম।
টরন্টোর বাজারের হিলডেব্রান্ড বলেন, “আমার মনে হয়, আমরা দৃশ্যপট পাল্টে দিতে যাচ্ছি।”
“টিকাদান জোরদার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আশা করছি যে, শেষ পর্যন্ত আমরা দেখবো, অভিবাসনও বাড়ছে। আমরা টরন্টো সিটিতে জনসংখ্যার বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি দেখতে পারবো। বেকারত্বের হার কমে আসবে। কর্মীরা অফিসে ফিরে যাবে, শিক্ষার্থীরা তাদের স্কুলের শিক্ষাজীবনে ফিরে যাবে।”
মহামারি জনগণের শহর ছেড়ে যাওয়া ‘ত্বরান্বিত’ করেছে
আরবানেশন দেশের অন্যান্য এলাকার ওপর একই ধরণের রিপোর্ট করেনি। তবে রেন্টালস.সিএ-র আলাদা এক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, কানাডাজুড়ে ভাড়ার হার কমেছে, অবশ্য এক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রমও আছে।
রেন্টালস.সিএ বলছে, তাদের ওয়েবসাইটে যে তালিকা আছে সেই সব কানাডীয় সম্পদের ভাড়া গত বছরের শেষ চতুর্থাংশে ছিলো মাসে ১,৭৫০ ডলার যা ছিলো ২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে আট শতাংশ কম। সারা বছরে হিসাবেও, রেন্টালস.সিএ জানায়, দেশজুড়ে ভাড়ার হার ৫.৭ শতাংশ কমে দাঁড়ায় মাসে ১,৭৯৪ ডলারে।
রেন্টালস.সিএ-র রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ভাঙ্কুভারে গত বছর ভাড়ার হার ৬.৭ শতাংশ হ্রাস পায়। কিন্তু মন্ট্রিলে ৫.২ শতাংশ বাড়ে। কিন্তু কিছু শহর যেমন, গাটিনিউ, কিচেনার ও হ্যামিল্টন শহরে ২০২০ সালে ভাড়ার হার ১৫ থেকে ২২ শতাংশ বেড়ে যায়।
হিলডেব্রান্ড স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার এক সাম্প্রতিক উপাত্তের বিষয় উল্লেখ করেন যাতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের পয়লা জুলাই থেকে ২০২০ সালের পয়লা জুলাই পর্যন্ত সময়ের মধ্যে টরন্টো, মন্ট্রিল ও ভ্যাঙ্কুভার শহরের প্রবৃদ্ধি হয়েছে অধিকতর মন্থর গতিতে। লোকেরা দ্রুত বর্ধনশীল উপকণ্ঠ যেমন, অন্টারিওর অশোওয়া, কুইবেকের ফার্নহ্যাম এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ওয়েস্টমিনিস্টার ইত্যাদিতে চলে যাওয়ার কারণে উল্লেখিত শহরগুলোর প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর ছিলো।
হিলডেব্রান্ড বলেন, “নিশ্চিতভাবেই জনগণের শহর ছেড়ে বাইরে চলে যাবার এই ঢল সৃষ্টি করেছে মহামারি। লোকেরা সাধ্যের মধ্যে ভাড়ার বাড়ি পাওয়ায় ঘরে বসে কাজ করেছে।”