জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অশ্বেতাঙ্গ কানাডীয়দের টিকাদানে অগ্রাধিকার দেয়া উচিৎ
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : টরন্টোর দুজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, কোভিড-১৯ এর টিকা দানের সময় সরকারগুলোকে অবশ্যই কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য অশ্বেতাঙ্গ কানাডীয়দের অগ্রাধিকার দিতে হবে কারণ, তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে তাদেরই সংক্রমিত হবার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছন ক্রিস হল।
আকবাতু খেন্তি ও অনন্যা টিনা ব্যানার্জি সিবিসি রেডিওর দি হাউস অনুষ্ঠানে বলেন, ওইসব কমিউনিটির লোকেদের টিকা দিতে ব্যর্থ হলে সেটি কেবল যে তাদেরকেই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হবার বৃহত্তর ঝুঁকির মুখে ফেলবে তা-ই নয় বরং ভাইরাসটির আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডালা লানা জনস্বাস্থ্য স্কুলের শিক্ষক এবং টিকাদানে ন্যায্যতা বিষয়ক কৃষ্ণাঙ্গ বিজ্ঞানীদের টাস্কফোর্সের চেয়ারপারসন খেন্তি বলেন, “কৃষ্ণাঙ্গ জনগণের সংক্রমণের উচ্চ হার বা তাদের হাসপাতালে ভর্তির উচ্চ হারের কারণ হলো সামাজিক অসাম্য, পদ্ধতিগত বর্ণবাদ এবং মহল্লার নাজুক অবস্থা।”
তিনি বলেন, “আমরা যদি নাজুকতা বিষয়ক কোনও ধরণের সূচক ব্যবহার করি তাহলেও আমরা সেই উপসংহারেই পৌঁছবো যে, যারা সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে তাদেরই সবার আগে টিকা দিতে হবে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে অশ্বেতাঙ্গ স্বাস্থ্যকর্মী ও অশ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষ।”
ব্যানার্জি হলেন দক্ষিণ এশীয় স্বাস্থ্য গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনিও খেন্তির মত ডালা লানা জনস্বাস্থ্য স্কুলের শিক্ষক। তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী শুধু যে এই ভাইরাসে সবচেয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা-ই নয়, বরং এই সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ বিভিন্ন প্রস্তুতকারক, বিতরণ, সেবাধর্মী শিল্পে কাজ করেন এবং তারা গণপরিবহনে করে তাদের কর্মস্থলে যাতায়াত করেন।
দি হাউস অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সুতরাং এসব তথ্য জানার পর আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিৎ এই যে, সবচেয়ে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মহল্লাগুলোতে সবার আগে টিকা দিতে হবে তা না হলে সামাজিকভাবে সংক্রমণ ত্বরান্বিত হবেই।”
পরবর্তী অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত গ্রুপের খোঁজে উপদেষ্টা কমিটি
বিশেষজ্ঞদের ওই উদ্বেগের বিষয়গুলি সিবিসি নিউজ সম্প্রতি কানাডার জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. থেরেসা তাম-এর কাছে উপস্থাপন করে।
মিজ. তাম বলেন, টিকা দানের ক্ষেত্রে এর পর কোন গ্রুপকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে সে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখছে গত বছর গঠিত টিকাদান সম্পর্কিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি। আগামী কয়েক সপ্তাহে টিকার সরবরাহ বাড়বে বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, “যেমন, টরন্টো বা অন্টারিওর বাসিন্দারা এরই মধ্যে নিজেদের সম্পর্কের কারণে জেনে গেছেন, অধিকতর ঝুঁকির মধ্যে থাকা জনগোষ্ঠী কোনগুলি এবং টিকাদানের সময় এদেরই অগ্রাধিকার দেয়া হবে।”
অন্টারিওর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিবিসি নিউজকে জানায়, প্রাদেশিক সরকার এরই মধ্যে স্বেচ্ছামূলকভাবে টিকা গ্রহণকারী জনগণের বয়স ও লৈঙ্গিক তথ্যসহ জনসংখ্যা বিষয়ক কিছু তথ্য সংগ্রহ করছে; আর “যেসব কমিউনিটির মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং কোভিড-১৯ এ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের মধ্যে দক্ষতা ও ন্যায্যতার সঙ্গে এবং কার্যকরভাবে টিকাদান নিশ্চিত করতে ওইসব তথ্য কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেই উপায় খতিয়ে দেখছে।”
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি স্বীকার করে যে, কৃষ্ণাঙ্গ ও অশ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষ কোভিড-১৯ মহামারিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেভাবেই টিকাদানের যথাযথ নির্দেশনা তৈরির জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “মন্ত্রণালয় তার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শরীকদের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে কোভিড-১৯ এর টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নিরূপণের জন্য প্রদত্ত নির্দেশনা ও তথ্য-উপাত্ত প্রত্যেক শরিক স্পষ্টভাবে বুঝে নিতে পারে।”