কানাডায় যখন ২০% স্বল্পআয়ের চাকরিজীবী বেকার হয়ে পড়েছে তখন সবচেয়ে ধনী মাত্র ৪৪ ব্যক্তি ৫,৩৬০ কোটি ডলারের সম্পদ গড়েছেন

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ২৬ জানুয়ারী, ২০২১: কানাডা “ইতিহাসের বৃহত্তম অসাম্য বিস্তারের রাহুর মুখোমুখি” হচ্ছে। দেশটির লাখ লাখ মানুষ যখন বেকারের কাতারে সামিল হয়েছে ঠিক সেই সময় বিনিয়োগকারীদের সম্পদের মূল্য কেবলই ফুলে ফেঁপে উঠছে। দারিদ্র্য-বিরোধী গ্রুপ অক্সফাম কানাডার নতুন এক রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে।

অক্সফাম জানায়, ফোরবেস সাময়িকী কানাডার যে ৪৪ কোটিপতির তালিকা করেছে তারা সম্মিলিতভাবে তাদের সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়েছেন ৬,৩৫০ কোটি ডলার। এই সম্পদ তারা অর্জন করেন ২০২০ সালের মার্চে স্টক ও বন্ড মার্কেট পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে।

অক্সফাম বলছে, বিশ্বজুড়েই অতি ধনী ব্যক্তিরা মহামারির অভিঘাত কাটিয়ে উঠেছেন কিন্তু বিশ্বের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এই আঘাত কাটিয়ে উঠতে এক দশক সময় লাগবে। 

অর্থনীতির সর্বনিম্ন ধাপে অবস্থানরত কানাডীয়রা তাদের সম্পদের ক্ষেত্রে বৃহত্তম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। কারণ মহামারি শুরুর পর থেকে কানাডায় চাকরির সংখ্যা কমে গেছে ছয় লাখ ৬৩ হাজার। আরও চার লাখ ৮৮ হাজার মানুষ তাদের কর্মঘণ্টার চেয়ে অর্ধেকেরও কম সময় কাজ করছেন। এটি হলো স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার হিসাব। খবর হাফিংটন পোস্ট এর।

সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে সিআইবিসির অর্থনীতিবিদরা দেখান যে, গত এক বছরে কানাডায় স্বল্পআয়ের চাকরিজীবীদের এক-পঞ্চমাংশই কর্মহীন হয়েছে। অথচ ওই একই সময়ের মধ্যে দেশটিতে উচ্চবেতনের চাকরি বেড়েছে সাড়ে তিন লাখ।

অক্সফাম কানাডার নীতি ও প্রচারণা বিষয়ক পরিচালক ডায়ানা সারোসি বলেন, “নারী ও প্রান্তবর্তী জাতিগত ও বর্ণগোষ্ঠীর লোকেরা সঙ্কটের আগুনে জ্বলছে।”

“তাদের দারিদ্র্য ও ক্ষুধার মধ্যে নিমজ্জিত হবার এবং স্বাস্থ্যসেবার বাইরে থেকে যাবার আশঙ্কা অন্যদের চেয়ে বেশি। তার ওপর তাদেরই সেইসব সামনের কাতারের কাজে নিয়োজিত হবার সম্ভাবনা বেশি যেগুলি তাদেরকে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকিতে ফেলে।”

অক্সফাম বিশ্বের সব দেশের প্রতি এক শতাংশ হারে “অতিরিক্ত মুনাফা” কর আরোপের আহবান জানিয়েছে। এই ধারণাটি সামনে এনেছে কানাডার নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি।

অক্সফাম বলছে, মহামারিকালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুনাফা অর্জনকারী মাত্র ৩২টি করপোরেশনের ওপর যদি এই কর আরোপ করা হতো তাহলে ২০২০ সালে ১০,৪০০ কোটি মার্কিন ডলার (১৩,২০০ কানাডীয় ডলার) সংগ্রহ করা যেতো। এই পরিমাণ অর্থ সারা বিশ্বের নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশগুলোতে মহামারির কারণে বেকার হয়ে পড়া লোকেদের ভাতাদান এবং শিশুপ্রযত্নের জন্য যথেষ্ট কিংবা বেকারদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে পরিমাণ সহায়তা দিয়েছে তার প্রায় কাছাকছি হতো।

গত শরৎকালে কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার অসুস্থদের জন্য সুবিধাদানের কর্মসূচি (ঈঝজই) চালু করেছে। এই কর্মসূচিতে অসুস্থদেরকে দুই সপ্তাহের জন্য প্রতি সপ্তাহে ৫০০ ডলার করে ভাতা দেয়া হয়। তবে কিছু স্বাস্থ্য সংস্তা বলছে, কেবল ওই অর্থ কোনওরকম প্রভাব ফেলার জন্য যথেষ্ট নয় কারণ এখানে যে অর্থ দেওয়া হচ্ছে তা পূর্ণকালীন কোনও কাজের ন্যূনতম মজুরির চেয়েও কম। আর এতে অসুস্থতাজনিত ছুটি গ্রহণকারীদের শ্রমিকদের চাকরির নিশ্চয়তা দেয়ারও কোনও ব্যবস্থা নেই।

ক্রমবর্ধমান জেন্ডার বৈষম্য

সারোসি মহামারিকালে ক্রমবর্ধমান লৈঙ্গিক বৈষম্যের বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্নÑ তিনি উল্লেখ করেন যে, নারীরা এবং বিশেষ করে অশ্বেতাঙ্গ নারী ও প্রতিবন্ধী নারীরা অসমানুপাতিক হারে মহামারীর অর্থনৈতিক আঘাতে দগ্ধ হচ্ছে। তিনি জানান, মহামারির সময় চাকরি হারানো লোকেদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী। বহুলাংশে এর কারণ হলো, তাদের বেশিরভাগই স্বল্পবেতনের চাকরিতে নিয়োজিত ছিলো যেগুলির ওপর কঠিনতম আঘাত এসেছে।

তিনি বলেন, সংস্কার কর্মসূচির বৃহদাংশ হওয়া দরকার কানাডার শিশুপ্রযত্ন শিল্পের ক্ষেত্রে। তার মতে, সুনির্দিষ্টভাবে নারীরাই মহামারিকালে শিশুপ্রযত্নের কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি হাফপোস্ট কানাডাকে বলেন, “সঙ্কট শুরুর আগে পরিবারগুলোর জন্য শিশুপ্রযত্ন ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে এবং এখন সেটি আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে।”

“ইউরোপের দেশগুলিতে নারীরা সাধ্যের মধ্যে শিশুসেবা গ্রহণের সুযোগ পান কিন্তু এখানে সেটি পুরোপুরি বাজার ব্যবস্থাপনার হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

সারোসি বলেন, শিশুপ্রযত্নের ক্ষেত্রে কুইবেকে যেমন ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে কানাডার জন্য সেটি হতে পারে অনুসরণযোগ নমুনা। কুইবেকে শিশুপ্রযত্নের জন্য বাবা-মাকে দিনে ব্যয় করতে হয় ৭.৩০ ডলার থেকে ২০ ডলার পর্যন্ত। এই ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞদের প্রশংসা পেয়েছে। তারা বলছেন, কুইবেকে কর্মীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা অন্য প্রদেশগুলোর চেয়ে বেশি হবার এটিই কারণ। সারোসি বলেন, “এটি হলো সত্যিকারের বিনিয়োগ। এই ব্যবস্থায় যে অর্থ দেওয়া হচ্ছে তা বর্ধিত কর রাজস্বের মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে, ফলে এই ব্যবস্থা আসলে নিজের ব্যয় নিজেই নির্বাহ করছে।”