২০২১ সালে কানাডায় গ্রোসারী পণ্যের পেছনে পরিবারপিছু বাড়তি ব্যয় হবে ৬৯৫ ডলার
জানুয়ারী ৬, ২০২১
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ৮ ডিসেম্বর ২০২০: আগামী বছর কানাডার পরিবারগুলোকে খাবারের পেছনে গড়ে ৬৯৫ ডলার পর্যন্ত বাড়তি ব্যয় করতে হবে। মহামারি, দাবানল এবং ভোক্তাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে গ্রোসারী পণ্যের দাম এযাবৎকালের সর্বোচ্চে পৌঁছবে বলে খাদ্যমূল্য বিষয়ক এক রিপোর্টে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। খবর দি কানাডিয়ান প্রেস এর। রিপোর্ট করেছেন ব্রেট বানডেল।
গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ২০২১ সালে কানাডার ফুড প্রাইস রিপোর্ট অনুযায়ী, খাবারের দাম সার্বিকভাবে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ বাড়তে পারে এবং এক্ষেত্রে রুটি, মাংস ও সব্জির দাম শীর্ষে থাকতে পারে। গড়ে চারজনের একটি পরিবারের জন্য এর অর্থ হলো গ্রোসারী পণ্যের পেছনে বছরে ১৩,৯০৭ ডলার ব্যয় করতে হবে।
ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির খাদ্য বিতরণ ও নীতি বিষয়ের প্রফেসর এবং রিপোর্টের প্রধান লেখক সিলভেন শার্লিবোয়া বলেন, “আমরা গ্রোসারীগুলোতে খুব শিগগিরই কোনওরকম পরিবর্তন আশা করছি না। এটি হলো আমাদের এযাবৎকালে ধারণা করা সর্বোচ্চ দরবৃদ্ধি।”
ডালহৌসি ও গুয়েলফ ইউনিভার্সিটি প্রতিবছর ফুড প্রাইস রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। চলতি বছরে ১১তম রিপোর্ট প্রকাশিত হলো। তবে এবার এতে সাসকাচুন এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে করে এটি আরও বেশি সর্বদেশীয় হয়ে উঠেছে।
সমীক্ষায় গবেষকরা বলেন, আগামী বছরেও খাদ্যমূল্যের ওপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে মাংস শিল্পে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে সম্ভাব্য শ্রমিকের অভাব, সরঞ্জাম সরবরাহে বিঘ্ন, খাদ্য উৎপাদন প্লান্ট ও খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে মন্থর গতি এবং ভোক্তাদের চাহিদা পাল্টে যাবার কারণে।
মাংসের দাম সার্বিকভাবে সাড়ে ছয় শতাংশ বেড়ে যাবার আশঙ্কা থাকলেও সর্বোচ্চ মূল্য বৃদ্ধি ঘটতে পারে পোল্ট্রি খাতে। কারণ এটি কানাডায় সরবরাহভিত্তিক শিল্প।
শার্লেবোয়া বলেন, গত জুলাই থেকে পোল্ট্রিপণ্যের দাম সাত শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। উৎপাদন খরচ যেহেতু বাড়ছে সেহেতু খুচরা বাজারেও দামও বাড়বে।
তিনি বলেন, “আমাদের ধারণা পোল্ট্রিপণ্যের দাম একটি মুখ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে। যদি চাষীদেরকে সরঞ্জাম এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কিত পরিচ্ছন্নতার পেছনে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় তাহলে তার পরিণামে ভোক্তাদেরকেও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে।”
এছাড়া, তাপপ্রবাহ, বরফশূন্যতা, দাবানল এবং খরাসহ জলবায়ু পরিবর্তনও সামনের বছর গ্রোসারী পণ্যে আমাদের অর্থ ব্যয়কে প্রভাবিত করবে।
রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সব্জি উৎপাদন এবং এজন্যে সব্জির দাম সাড়ে ছয় শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
কানাডার ভোক্তারা যেসব পণ্য ভোগ করে তার অনেকগুলোই আসে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য থেকে যেটি স্মরণকালের সবচেয়ে মারাত্মক দাবানলে বিপর্যস্ত হয়েছে।
সাসকাচুন ইউনিভার্সিটির কৃষি ও রিসোর্স ইকোনোমিক্স-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর স্টুয়ার্ট স্মিথ বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার ফসল দাবানলের ধোঁয়ার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং চলমান কোভিড-১৯-এর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ায় সেগুলোর দাম বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, “সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে সব্জির বাজারে।” মূলজাতীয় ফসল যেমন আলু ও গাজরের দাম স্থিতিশীল থাকলেও সবুজ
শাকজাতীয় ফসল এবং অধিকতর পচনশীল পণ্য যেমন টমেটো ও শশার দাম বাড়তে পারে।
অ্যাগ্রো-ফুড ইনোভেশন অ্যান্ড সাসটেনেবেলিটি এনহান্সমেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান স্মিথ বলেন, এর পরও ফুলকপি, বাঁধা কপি ও অ্যাসপেরাগাসের মত সব্জির দাম সবচেয়ে বেশি বাড়তে পারে।
এদিকে সমীক্ষায় ভোক্তাদেরকে বেকারি পণ্যের দামও সাড়ে পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। স্মিথ বলেন, প্রায় ১৮ মাস আগে যে আটার দাম ছিল প্রতি বুশেল (শুষ্ক দ্রব্যের পরিমাণবিশেষ) চার ডলার সেটি গত নভেম্বরে ৫০ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৬ ডলারে উঠেছে।
কানাডায় উৎপাদনের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল আছে, কিন্তু চাহিদা ক্রমশই বেড়েছে এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূল বিষয়টি হলো চাহিদা ও যোগান। “আমরা যদি সরবরাহ ঠিক রাখতে পারি কিন্তু চাহিদা বেড়ে যায় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা একটু পেছনে পড়ে যাবো।”
সর্বশেষ এই রিপোর্টে বয়স ও জেন্ডারের ভিত্তিতে ব্যক্তির ভোগের পরিমাণ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভোক্তারা তাদের নিজেদের অবস্থার ভিত্তিতে কত ব্যয় হতে পারে তার প্রাক্কলন করতে পারবে।
রিপোর্টে সব সময়ই চারজনের একটি পরিবারের খাবারের পেছনে কত ব্যয় হতে পারে সেই গড় হিসাব দেওয়া হয়ে থাকে। এবার সেটার পাশাপাশি হিসাব দেওয়া হয়েছে যে, ৩১ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের সামনের বছর অতিরিক্ত ১৬৯ ডলার ব্যয় করতে হতে পারে এবং একই বয়সের একজন নারীকে ব্যয় করতে হতে পারে অতিরিক্ত ১৫২ ডলার।