বৈচিত্র্য বাড়ানোর প্রয়াস সত্ত্বেও অর্ডার অব কানাডা পুরষ্কার প্রাপ্তদের বেশিরভাগই শ্বেতাঙ্গ

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২১

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ১০ জানুয়ারি ২০২১ : ২০২০ সালে অর্ডার অব কানাডা পদক প্রাপ্তদের বেশিরভাগই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ যদিও এই অভিজাত গ্রুপে বৈচিত্র্য বাড়ানোর প্রয়াসেও কিছুটা অগ্রগতি হয়।

গত বছর এই বেসামরিক সম্মান দেয়া হয় ১৭৫ জনকে। তাদের মধ্যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি সংখ্যক নারী। অশ্বেতাঙ্গ আছেন প্রায় ৭.৪ শতাংশের মত। অশ্বেতাঙ্গদের হার আগের বছরের চেয়ে দুই শতাংশ বেশি। আর আদিবাসীদের সংখ্যা ৫.১ শতাংশ। সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং অভিবাসন ও বৈচিত্র্য বিষয়ক গবেষক এন্ড্রু গ্রিফিথ-এর বিশ্লেষণে এই চিত্র উঠে এসেছে। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন ক্যাথলিন হ্যারিস।

Black Vote Canada’র চেয়ারপারসন ভেলমা মরগান ওই পরিসংখ্যানকে “চরম সমস্যাজনক” বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, “কানাডিয়ান হিসাবে আমরা বৈচিত্র্যকে আমাদের শক্তি হিসাবে বর্ণনা করি। এই বিষয়টিকে আমরা সারা বিশ্বের কাছে বিজ্ঞাপিত করি। কিন্তু আমরা যখন কানাডার জন্য অবদান রাখা লোকেদের স্বীকৃতি দেয়ার চেষ্টা করি তখন সেখানে এই বিষয়টির প্রতিফলন ঘটে না।”

গভর্নর জেনারেল জুলি পায়েত্তি (সদ্য পদত্যাগকারী) ২০১৮ সালের ১০ মে অটোয়ার রিডিউ হলে এক অনুষ্ঠানে ফেডেরিক সাসাকামুজকে অর্ডার অব কানাডা পদকে ভূষিত করেন। সাসাকামুজ ছিলেন জাতীয় হকি লিগের প্রথম আদিবাসী খেলোয়াড়দের অন্যতম এবং আদিবাসী নেতা। তিনি ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর মারা যান। ছবি : ডেভিড কাওয়াই/দি কানাডিয়ান প্রেস

মরগান বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো যখন জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ হয় তখন তারা বৃহত্তর জনগণের শ্রদ্ধার ওপর নিয়ন্ত্রণের আশা করতে পারে না। তিনি বলেন, “কৃষ্ণাঙ্গরা এখানে আছে শত শত বছর ধরে। সুতরাং যখন আমরা দেশের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিনিধিত্ব দেখতে পাই না তখন এমন কিছুই বুঝে নেয়া যায় যে, আমরা যে অবদান রেখেছি বা যা এখনও রেখে চলেছি তার জন্যে আমাদেরকে স্বীকৃতি দেয়া হবে না।”

মরগান বলেন, যেসব গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব কম তাদের কাছে যাওয়ার জোরালো প্রয়াস নেয়া এবং এই কর্মসূচি সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো হলে দীর্ঘদিনের এই ভারসাম্যহীনতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতে পারে। পদকের জন্য মনোনয়ন দানকারী কাঠামোতেও আরও ভালোভাবে জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।

দি টরন্টো স্টার পত্রিকা গত মাসে প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে, দি ব্ল্যাকনর্থ ইনিশিয়েটিভ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গভর্নর জেনারেল জুলি পায়েত্তির (সদ্য পদত্যাগকারী) কাছে চিঠি লিখে অর্ডার অব কানাডা পদক প্রাপ্তদের তালিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের সংখ্যাল্পতার বিষয়ে অভিযোগ করেছে। চিঠিতে সম্মাননা পাবার যোগ্য কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের নামের একটি তালিকাও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্ল্যাকনর্থ প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন করপোরেশনের পরিচালনা বোর্ড ও নির্বাহী পদগুলোতে বৈচিত্র্য আরও উন্নীত করার পক্ষে কথা বলে।

অর্ডার অব কানাডা কর্মসূচিটি কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষ থেকে পাওয়া মনোনয়নের ওপর নির্ভর করে। তবে একটি স্বতন্ত্র উপদেষ্টা কাউন্সিল ওই তালিকা পর্যালোচনা করে। এরপর কাউন্সিলের পক্ষ থেকে মনোনীতদের পদক দেবার জন্য গভর্নর জেনারেলের কাছে সুপারিশ করা হয় এবং তিনি প্রথাগতভাবেই তা গ্রহণ করেন।

সম্মাননা কর্মসূচির আধুনিকায়ন একটি ‘অগ্রাধিকার’

গভর্নর জেনারেল-এর মুখপাত্র রব ম্যাককিনন বলেন, সব সম্মাননা কর্মসূচির আধুনিকায়ন জুলি পায়েত্তির “প্রধান অগ্রাধিকার।”

তিনি বলেন, গভর্নর জেনারেলের দপ্তর বৈচিত্র্য বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে যেমন, আত্মপরিচয়মূলক একটি প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে লৈঙ্গিক পরিচয়, প্রতিবন্ধিতা এবং আদিবাসী ও অশ্বেতাঙ্গ মর্যাদার ভিত্তিতে উপাত্ত সংগ্রহ করা। তিনি বলেন, বেসামরিক সম্মাননার জন্য মনোনীত ব্যক্তির সংখ্যা যাতে বাড়ানো যায় সেজন্যে ওই দপ্তর যোগাযোগের কৌশল এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণাও শুরু করেছে।

ই-মেল বার্তায় ম্যাককিনন বলেন, “অর্ডার অব কানাডার মত মেধাভিত্তিক সরকারি কর্মসূচিতে জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এই কর্মসূচিতে নাগরিকদের অধিক সংখ্যায় অংশগ্রহণ, যাতে করে মনোনয়নে বড় ধরণের বৈচিত্র্যের অবকাশ তৈরি হতে পারে।”

“এই চেতনা থেকেই গভর্ণর জেনারেল জুলি পায়েত্তি পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং সম্মাননা দানের সব কর্মসূচিতে জনগণের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত বাড়ানোর উপায় খুঁজে বের করার জন্য তার দপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তিনি সম্মাননা দানের মনোনয়ন প্রক্রিয়া ব্যবহারকারীদের জন্য যতটা সম্ভব সহজসাধ্য এবং সুলভ করারও নির্দেশ দিয়েছেন। এসব পদক্ষেপের ফলে সম্মাননার যোগ্য ব্যক্তিদের স্বীকৃতির বিষয়টিতে আরও বেশি বৈচিত্র্যের প্রতিফলন ঘটবে।”

ম্যাককিনন স্বীকার করেন যে, এক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জিত হলেও তার গতি বেশ মন্থর। তিনি উল্লেখ করেন যে, অর্ডার অব কানাডা সম্মাননার জন্য নারীদের মনোনয়নের হারÑ ২০০০ সাল থেকে প্রায় ২০০ জনে স্থির রয়েছে যা বেছে নেয়া হয় ৫০০ থেকে ৮০০ জনের একটি তালিকা থেকে। আর এতে নারীদের সাফল্যের হার প্রায় ৭২ শতাংশ যেখানে পুরুষদের সাফল্যের হার ৫৮শতাংশ।

কানাডা গঠনে অবদানের স্বীকৃতিদান

বৈচিত্র্য বিষয়ক পরামর্শক মিজ. চি নগুয়েন বলেন, অর্ডার অব কানাডা কর্মসূচি একটি অভিজাত গোষ্ঠীর দ্বারা মনোনীত “উচ্চ শ্রেণীর” লোকেদের প্রতিষ্ঠা করার ঐতিহ্যের মধ্যে আটকে গেছে এবং তা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, “প্রায়শ এমন লোকদেরই বেছে নেয়া হচ্ছে যারা দেখতে তাদেরই মত, যারা তাদের মত একই শ্রেণীতে চলাফেরা করে।”

সেজন্যেই আমার মনে হয় ওইসব লোকেদের সংখ্যা বাড়ছে এবং আগের চেয়ে তাদের আরও ভালো দেখাচ্ছে… কিন্তু এটি এখনও ভিন্ন কোনও উপায়ের স্বীকৃতি দেয় না যেখানে বহু নবাগত ও আদিবাসী মানুষ আমাদের দেশ গঠনে অবদান রেখে চলেছেন।”

২০১৩ সাল থেকে অর্ডার অব কানাডা পুরষ্কারের বিষয়টি অনুসরণ করে চলেছেন সেই গ্রিফিথ বলেন, বর্তমানের প্রবণতা সঠিক পথে এগুচ্ছে বলে মনে হলেও এখনও এক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করার আছে।

২০১৬ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী যাদেরকে অশ্বেতাঙ্গ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের মধ্য থেকে পুরষ্কারের জন্য মনোনয়নদান তাদের সংখ্যার অনুপাত ২২.৩ শতাংশ থেকে এখনও অনেক কম। ওই শুমারিতে আদিবাসী জনসংখ্যার হার ছিল ৪.৯ শতাংশ এবং তাদের মধ্য থেকে মনোনয়ন দানের হার জনসংখ্যার হারের খুব কাছাকাছিই আছে।