ফিরে দেখা ২০২০

করোনায় কেড়ে নিল ১৫,৬০০ কানাডিয়ানের প্রাণ : মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫,৭৯,০০০

জানুয়ারী ৬, ২০২১

২০২০ সালের প্রায় সবটা জুরেই ছিল কভিড-১৯ এর ভয়াবহ তান্ডব। এই সময়ে কানাডায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫,৬০০ জন। ছবিতে মাস্ক পরিহিত কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে টরন্টোর রাস্তায় ছবি : ‘নাউ’

খুরশিদ আলম : মানব ইতিহাসের এক ভয়াবহতম দুর্যোগের বছর ছিল ২০২০ সাল। পৃথিবীব্যাপী করোনা নামের এক মহামারী এই বছর তার বিষাক্ত ছোবলে অচল করে দিয়েছে প্রায় সবকিছু। সামাজিক দূরত্ব তৈরী করেছে মানুষে মানুষে, ধ্বস নেমেছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ও অর্থনীতিতে, চাকরী হারিয়েছে বহু মানুষ। অনেক লোক চাকরী করছে বাড়ি বা বাসায় বসে। বাজারও করছে বাসায় বসেই।

মূলত এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে জীবন অতিক্রান্ত করছে কানাডাসহ বিশে^র অনেক দেশের মানুষ। তবে আশার কথা, বছরের শেষ দিকে এসে করোনার ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে কানাডাসহ আরো কয়েকটি দেশে। ভ্যাকসিন দেওয়াও শুরু হয়েছে। ফলে অন্ধকার সুরঙ্গ শেষে আশার আলো দেখছে অনেকেই।

২০২০ সালে মহামারীর এই মহা দুর্যোগের পাশাপাশি আমরা আরো দেখেছি ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। পুলিশের নৃশংসতার বিরুদ্ধেও আন্দোলন তীব্রতর হয়ে এই সময়। দাবী উঠে অতীতে যারা বর্ণবাদী আচরণ করেছেন তাদের নামে নামকরণ করা প্রতিষ্ঠান ও সড়কের নাম বদল করার জন্য। আরো দেখেছি মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের সঙ্গে নেতৃস্থানীয় মুসলিম দেশসমুহের নতুন কিন্তু বিতর্কিত সম্পর্ক স্থাপন এর ঘটনা। বৈরুতের ভয়াবহ বিষ্ফোরণ, আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে রক্তক্ষীয় যুদ্ধ।

২০২০ সালের প্রায় সবটা জুরেই ছিল কভিড-১৯ এর ভয়াবহ তান্ডব। এই সময়ে কানাডায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫,৬০০ জন। ছবিতে মাস্ক পরিহিত কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে টরন্টোর রাস্তায় ছবি : ‘নাউ’

আমরা আমাদের চলতি বছরের এই শেষ সংখ্যায় বিগত এক বছরের এমনি কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা সন্মানিত পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি।

করোনা

২০২০ সালের প্রায় সবটা জুরেই ছিল করোনা তথা কভিড-১৯ এর ভয়াবহ তান্ডব। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালে কানাডায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫,৬০০ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৭৯ হাজার। আর বিশ^জুড়ে ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৮ লাখের উপর। আক্রান্ত হয়েছেন ৮ কোটি ২৪ লাখের উপর। ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ সালের হিসাব এটি।

করোনার কারণে বিপুল সংখ্যক কানাডিয়ান চাকরী হারিয়েছেন। আবাসিক সংকট আরো তীব্র হয়েছে, সাধারণ শ্রমজীবীদের আয় হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। বৃদ্ধি পেয়েছে মানসিক রোগীর সংখ্যাও। গৃহবিবাদ বা পারিবারিক সহিংসতাও বৃদ্ধি পেয়েছে করোনাকালে।

কানাডায় প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয় ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারী। এবং সেটি টরন্টোতে। করোনার শুরুটা হয়েছিল চীনের উহান নামের একটি প্রভিন্স থেকে। অবশ্য এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে উৎস যেখানেই হোক, এই ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিশে^র বিভিন্ন দেশে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই।

কানাডার বিভিন্ন প্রভিন্সে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর রোগীর সংখ্যা প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় ৫/৬ গুণ বৃদ্ধি পায়। কোন কোন প্রভিন্সে ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিটের সংকট দেখা দেওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ধারণ ক্ষমতা পূর্ণ হয়ে গেছে কয়েকটি হাসপাতালে। স্থগিত করা হয়েছে অনেক সাধারণ রোগীর অপারেশন পরিকল্পনা। অবস্থা বেগতিক দেখে গত ২৫ ডিসেম্বর মাঝ রাতের পর থেকে অন্টারিও প্রভিন্সজুরে ঘোষণা করা হয় লকডাউন।

টরন্টোতে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ৮৩% ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য অশ্বেতাঙ্গ

দেখা গেছে টরন্টোতে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৮৩ শতাংশই হলো কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর লোকজন। অথচ নগরীর মোট জনসংখ্যার মধ্যে তাদের সংখ্যা মাত্র অর্ধেক। গত বছর মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে এই তথ্য পাওয়া গেছে। খবর সিবিসি নিউজের।

আরো দেখা গেছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে অশ্বেতাঙ্গ মানুষের সংখ্যা ৭১ শতাংশ। স্বল্প আয় এবং বড় পরিবারের লোকেরাও সংক্রমিত হয়েছে বেশী মাত্রায়। উপাত্ত থেকে দেখা যায়, নগরীতে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ৫১ শতাংশই স্বল্প আয়ের পরিবারের।

কানাডিয়ানদের মর্মপীড়ার মূল কারণ ছিল অর্থসঙ্কট

কোভিড-১৯ মহামারিকালে কানাডীয়দের সবচেয়ে বড় মর্মপীড়ার কারণ হয়ে ওঠে আর্থিক টানাপোড়েন। তবে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের বিষয়টিও তাদের জন্য ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

গত মে মাসে সম্পাদিত এফপি কানাডার এক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, অর্থনৈতিক সঙ্কটের চাপে ৪৯ শতাংশ কানাডীয় রাতে ঘুমাতে পারেনি। অপেক্ষাকৃত তরুণ কানাডীয় এবং নারীদের মধ্যে এরকম উদ্বেগের হার আরও খানিকটা বেশি ছিল। খবর নাউটরন্টো.কম এর।

করোনায় কানাডিয়ানদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি

উল্লেখ্য যে, গত সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কানাডায় শুরু হয় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। তখন পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাতে থাকে। হু হু করে বাড়তে থাকে কারোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। ডিসেম্বরের শেষ দিকে অন্টারিওতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২৪০০ লোক করোনায় আক্রান্ত হতে থাকে। বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যাও। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে কানাডিয়ানদের মানসিক চাপ। মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেলে অবনতি ঘটে মানসিক স্বাস্থ্যেরও।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, করোনার কারণে কানাডিয়ানদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। সিটিভি নিউজের পক্ষে ন্যানোস রিসার্স পরিচালিত এক জরিপে অংশগ্রহণকারী কানাডিয়ানদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে দুজনই বলেছেন করোনা শুরু হওয়ার পর তাদের মানসিক স্বাস্থ্য আগের তুলনায় আরো খারাপ হয়েছে এবং মদ্যপানের পরিমাণ ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে।

কোভিড-১৯একটি ধাপ্পাবাজী ছাড়া আর কিছুই নয়!

গত এপ্রিল মাসে অন্টারিও পার্লামেন্ট এর সামনে একদল লোক সমবেত হয়ে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় তাদের হাতে কিছু ব্যানারও ছিল। ব্যানারে লেখা ছিল- End the lockdown, Save our children no more poison, Practice media distancing they are lying to you. পুলিশের উপস্থিতিতেই সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে তারা এই সমাবেশ করেন। তাদের দাবী, ‘কোভিড-১৯’ একটি ধাপ্পাবাজী ছাড়া আর কিছুই নয়।

করোনা নিয়ে গুজব

করোনাকালে গুজবও কম রটেনি। বিবিসি’র এক খবরে ইতিপূর্বে বলা হয়, ‘ভারতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ যত বাড়ছে, ততই নানা দিকে গোমূত্র এই ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারে – এমন প্রচার চালাচ্ছেন কিছু ব্যক্তি এবং সংগঠন। আর এই গুজবে কান দিয়ে অনেকেই গোমূত্র পান করে অসুস্থ্য হয়েছেন। অন্যদিকে আমরা দেখেছি করোনা শুরু হওয়ার প্রথম দিকে একদল অতি ধার্মীক মুসলমান মনে করতেন এই রোগ তাদের স্পর্শ করবে না। এই করোনা নাকি কাফেরদের তৈরী। তাই মুসলমানদের ধারে কাছে আসবে না এটি। কেউ কেউ আবার এমনো ভিডিও শেয়ার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেখানে দেখানো হচ্ছে বিধর্মীরা ভয়ে নামাজ পড়ছেন!

করোনার টিকা- আশার আলো:

বছরের শুরুতে অচেনা করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বে যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল, তার দাপট চলেছে সারা বছর ধরে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা বছর ধরে হিমশিম খেয়েছে বিশ^।

কিন্তু নভেম্বরের ৯ তারিখে আমেরিকান কোম্পানি ফাইজার ও জার্মানির বায়োনটেক যৌথভাবে টিকা উদ্ভাবনে তাদের সাফল্য ঘোষণা করে জানায় তাদের টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়ালে প্রমাণ হয়েছে করোনার আক্রমণ থেকে লোকজনকে রক্ষা করতে তাদের টিকা ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর। তারা বলে ‘বিজ্ঞান ও মানবতার জন্যে এটি অনেক বড় একটি দিন।’

ডিসেম্বরের গোড়ায় বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে ফাইজার/বায়োনটেকের করোনাভাইরাস টিকার অনুমোদন দেয় ব্রিটেন এবং শুরু হয় তাদের টিকাদান কার্যক্রম। এরপর কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র-সহ আরো অনেক দেশই অনুমোদন দেয় এই ভ্যাকসিনের। অনুমোদান পায় মর্ডার্নার ভ্যাকসিনও।

টিকা তৈরির যেসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এক দশকের বেশি সময় লেগে যায়, সেখানে মাত্র ১০ মাসে এই টিকা আবিস্কারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটা নজিরবিহীন অর্জন।

এছাড়া রাশিয়া গত অগাস্ট মাসে স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের জন্য স্পুটনিক ভি নামের তাদের টিকাকে লাইসেন্স দিয়েছে এবং এখন সেটির ব্যবহারও শুরু হয়েছে। এই টিকা ৯২% নিরাপদ বলে বলা হচ্ছে। এবং তাদের ট্রায়ালের ফলাফলও অল্প দিনের মধ্যেই প্রকাশ করার কথা।

করোনা মোকাবেলায় ট্রুডোকে সেরা নেতা মনে করে কানাডিয়ানরা

করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বের প্রতি কানাডিয়ানদের আস্থা আরো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, মাহামারীর এই সময়ে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে জাস্টিন ট্রুডো বেশ ভালো অবস্থানে থাকবেন। কারণ করোনাকালে কানাডীয়দের সেবায় এবং অর্থনীতিকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে তাকে সেরা নেতা হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। খবর কানাডিয়ান প্রেস এর।

অন্যদিকে ‘লেগার এ্যান্ড দি এসোসিয়েশন’ এর এক জরিপে দেখা গেছে, এই মুহূর্তে যদি নির্বাচন হয় তাহলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা ভোটারদের ৩৮ শতাংশই তার লিবারেল দলকে সমর্থন করবেন বলে জানিয়েছেন যেখানে রক্ষণশীল দলকে ৩০ শতাংশ, এনডিপিকে ১৮ শতাংশ এবং গ্রিন পার্টিকে ৬ শতাংশ ভোটার সমর্থন দেবেন বলে জানান।

জরিপে অংশ নেওয়া ভোটাররা ট্রুডোকে বেশ বড় ব্যবধানে অন্যতম দৃঢ়সংকল্প, বুদ্ধিদীপ্ত ও ক্যারিশম্যাটিক নেতা এবং সবচেয়ে সেরা যোগাযোগকারী ব্যক্তিত্ব হিসাবে বর্ণনা করেন। তাকে দেখা হয় অন্যতম যত্নশীল এবং দরদী মানুষ হিসাবে যদিও এক্ষেত্রে এনডিপি নেতা জগমিৎ সিং অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন।

এদিকে সিবিসি নিউজের এক খবরে বলা হয়, লিবারেল দলের জনসমর্থন বৃদ্ধির পরিমাণ গত ৬০ বছরে কোনও সংখ্যালঘু সরকারের বেলায় সর্বোচ্চ। পুরো কানাডাতেই কোভিড-১৯ মহামারির মোকাবিলা করার সময় ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর জনসমর্থনের উত্থান ঘটেছে। জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টিও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু সংখ্যালঘু সরকারের নেতৃত্ব দানকারী একটি দলের জন্য এ ধরণের অবস্থান বিরল।

করোনায় বদলে যাওয়া ড্যাগ ফোর্ড

গত প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনে ড্যাগ ফোর্ড সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। বিপুল ভোট পেয়ে তিনি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন এবং ক্ষমতার মসনদে আসন গ্রহণ করেন সগর্বে।

কিন্তু ড্যাগ ফোর্ডের জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামতে বেশী সময় লাগেনি। এক বছরেই একেবারে তলানীতে নেমে এসেছিল তার জনপ্রিয়তা।

কিন্তু সেই প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ড আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন! আবার তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। ড্যাগ ফোর্ড এখন অন্য এক মানুষ। সেই অহমিকা ও দাম্ভিক আচরণ আর নেই তার মধ্যে। তিনি এখন সত্যিই জনগণের নেতা হয়ে সামনের কাতারে দাঁড়িয়েছেন।

কিন্তু অন্টারিওতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আর তার পরিনতিতে ড্যাগ ফোর্ডের জনপ্রিয়তায় আবার আঘাত লাগে। কমতে থাকে জনসমর্থন। এঙ্গুস রেইড ইন্সটিটিউটের জরিপে এই তথ্য প্রকাশিত হয়। অবশ্য ফোর্ডের প্রতি জনসমর্থন এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠতার স্তরেই আছে, তবে তা গত তিন মাসে ১১ পয়েন্ট কমে গেছে। এঙ্গুস রেইডের জরিপ অনুযায়ী তার প্রতি জনসমর্থন এখন ৫৫ শতাংশ।

কানাডায় ২২ জনকে গুলি করে হত্যা

কানাডায় যখন করোনা মহামারী নিয়ে সকলেই আতঙ্ক আর উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ঠিক তখনই ঘটে আরেক ভয়াবহ ঘটনা। কানাডার নোভাস্কশিয়া প্রভিন্সে এক ব্যক্তি একে একে ২২ জনকে হত্যা করেছে ঠান্ডা মাথায়। কয়েকটা বাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেয়। ঐ সময় যারা ঘর থেকে বের হচিছলেন প্রাণ ভয়ে তখন তাদের কয়েকজনকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। গত ২০ এপ্রিল করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেই ভয়াবহ হামলা চালায় গ্যাব্রিয়েল ওর্টম্যান নামের এক ব্যক্তি।

হামলার ঘটনাটি ঘটে প্রায় ১৩ ঘন্টা ধরে। এই সময় ওর্টম্যান আরসিএমপি পুলিশের পোষাক পরিহিত অবস্থায় ছিল। তার গাড়িটিও সে আরসিএমপি পুলিশের মত করে রং করে নিয়েছিল। ফলে অনেকেই বিভ্রান্ত ছিল।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক পুলিশ অফিসারও। পুলিশের পাল্টা গুলিতে নিহত হন সেই খুনিও। এই ঘটনাকে দেশের অন্যতম ভয়াবহ হামলার ঘটনা বলে চিহ্নিত করছে জাস্টিন ট্রুডো প্রশাসন।

আধুনিক কানাডার ইতিহাসে এতবড় গণহত্যার ঘটনা আগে ঘটেনি। ১৯৮৯ সালে মন্ট্রিয়লে এক পলিটেকনি স্কুলে নারী বিদ্বেষী এক ব্যক্তি গণহত্যার ঘটনা ঘটিয়েছিল। ঐ ঘটনায় ১৫ জন নিহত হয়েছিলেন।

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার

গত ২৫ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক আফ্রিকান-আমেরিকানকে গ্রেপ্তারের পর তাকে প্রকাশ্যে রাজপথে শ^াসরোধ করে হত্যা করেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক চাওভিন। হত্যাকান্ডের বিষয়টি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা। এর পরই শুরু হয় বিক্ষোভ। আর সেই বিক্ষোভ মিনেসোটা থেকে ছড়িয়ে পরে গোটা আমেরিকায়। তার ঢেউ এসে লাগে কানাডা ও ইউরোপের বিভিন্ন শহরেও। করোনার মহামারীকালেও বর্ণবাদ বিরোধী এই বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ যাদের মধ্যে ছিলেন সাদা-কালো ও বাদামী সবাই। এমনকি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো-ও নিহত জর্জ ফ্লয়েডের স্মরণে মাটিতে হাঁটু গেড়ে ৮:৪৬ মিনিট নিরবতা পালন করেন অটোয়ার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে।

উল্লেখ্য যে, জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড়ের উপর হাটু চেপে ৮:৪৬ মিনিট বসে ছিলেন শে^তাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক চাওভিন। এই সময় জর্জ বার বার আকুতি জানাচ্ছিলেন তার ঘাড়ের উপর থেকে হাটু সরিয়ে নিতে। কারণ তিনি শ্বাস নিতে পারছিলেন না। বার বার ‘I can’t breath’ বলার পরও পুলিশ জর্জ এর ঘাড়ের উপর থেকে হাটু সরাননি।

লক্ষণীয় যে, মহামারীর এই চরম বিপদকালেও এই আন্দোলন শুধু ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ ‘আই কান্ট ব্রিদ’ লেখা প্ল্যাকার্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই আন্দোলন রূপ নিয়েছে বর্ণবাদবিরোধী কঠিন আন্দোলনে। বিভিন্ন শহরে বর্ণবাদের সঙ্গে জড়িত মানুষের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হচ্ছে, সড়কের নাম বদলে দেওয়া হচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনকারীদের রোষানলে পড়েন কলম্বাস। তার বেশ কয়েকটি ভাষ্কর্য ভাঙচুরের শিকার হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মিনেসোটার সেইন্ট পলে গত ১১ জুন বিক্ষোভকারীরা ইতালিয়ান অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাসের ১০ ফুট ব্রোঞ্জের মূর্তি দড়ি দিয়ে টেনে এর ভিত্তি থেকে ফেলে দেন। বর্ণবাদ ও পুলিশের নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছিল এটি।

 ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ এর আন্দোলনের মুখে বর্ণবাদীদের ভাস্কর্য ভাংচুর বা সরিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটছে কানাডাতেও। আন্দোলন ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠেছে এই দাবীতে যে, অতীতে যারা বর্ণবাদী ছিলেন অথবা বর্ণবাদকে প্রশ্রয় দিয়েছেন সেই সকল ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের ভাস্কর্য কানাডার বিভিন্ন স্থান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এর মধ্যে প্রথমেই যার নাম আসে তিনি হলেন কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড। আর ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলকারীরা শুধু ম্যাকডোনাল্ড এর ভাস্কর্য সরানো দাবীতেই সীমাবদ্ধ নন। তারা চিহ্নিত আরেক বর্ণবাদী রায়ারসন এর ভাস্কর্য সরানোর দাবীও করছেন। টরন্টোর ডাউনটাউনে অবস্থিত রায়ারসন ইউনিভার্সিটি তার নামেই নামকরণ করা হয়েছে। আর এই ইউনিভার্সিটির চত্ত্বরে রয়েছে তার একটি ভাস্কর্য।

এদিকে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন চলা কালে টরন্টোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নাম বদল করার দাবীও উঠেছে। সড়কটির নাম ‘ডান্ডাজ স্ট্রিট’।

ডান্ডাজ এর পুরো নাম হ্যানরি ডান্ডাজ। তিনি ছিলেন একজন বৃটিশ রাজনীতিবিদ। তার ভূমিকার কারণে বৃটেনে দাস ব্যবসা বন্ধ হতে অতিরিক্ত আরো ১৫ বছর সময় লাগে। তিনি সে সময় দাসদের বিরুদ্ধে হয়ে

উঠেছিলেন মহা অত্যাচারী এক ব্যক্তি।

দাবী উঠে বৃটেনের এককালের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টোন চার্চিল এর ভাস্কর্য অপসারনেরও। টরন্টো-সহ কানাডার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে চার্চিলের ভাস্কর্য। বর্ণবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে কানাডায় আরো যাদের ভাস্কর্য অপসারণের দাবী উঠেছে তাদের মধ্যে আছেন ক্যাপ্টেন জর্জ ভেঙ্গুভার, স্যামুয়েল ডি চ্যাপলেইন, জেমস ম্যাকগিল ও কুইন ইসাবেলা।

করোনাকালেও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের অপতৎপরতা

করোনার মহামারীকালেও থেমে নেই কানাডার হোয়াইট সুপ্রেমেসি বা শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী দলের সদস্যদের অপতৎপরতা। গত ১০ অক্টোবর টরন্টোর ডাউনটাউনে অবস্থিত একটি মসজিদে এই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা নানরকম হিংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক হুমকি দিয়ে একাধিক ইমেইল পাঠিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ এর ঘটনা উল্লেখ করে তারা সকল মুসলমানকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছেন। CP24 এর এক খবরে এ কথা বলা হয়।

উল্লেখ্য যে, ইমেইলের মাধ্যমে টরন্টোর ডাউনটাউনে অবস্থিত মসজিদে হামলার যে হুমকি দেওয়া হয় তার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ইটবিকোকে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল মুসলিম অর্গানাইজেশন অব টরন্টো’র মসজিদের সামনে ঘটে এক নৃশংস হত্যার ঘটনা। ঐ মসজিদের স্বেচ্ছাসেবক এক মুসল্লিকে নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করেন শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের সমর্থক Guilherme `William’ Von Neutegem নামের এক ব্যক্তি। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আসলিম জাফিস।

বিতর্কে কানাডার গভর্নর জেনারেল

করোনাকালে বিতর্কে ছিলেন কানাডার গভর্নর জেনারেল জুলি পেয়াট। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তাঁর অফিসে এক বিষাক্ত কর্ম পরিবেশ তৈরী করে রেখেছেন কর্মীদের মৌখিকভাবে উৎপীড়ন ও হয়রানি করে। প্রতিনিয়ত বুলিং এবং হেনস্থার শিকার হচ্ছেন এখানকার কর্মীদের অনেকেই। জুলি পেয়াট প্রায়শই অফিসে তার অধীনস্থ কর্মীদের সাথে চিৎকার-চেচামেচি করে কথা বলেন, তাদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন এবং জনসমক্ষে তাদেরকে অপদস্থ করতেও ছাড়েন না। কাগজপত্র ছুড়ে ফেলা এবং অশোভন শব্দ ব্যবহার করার অভিযোগও করেন তারা।

কানাডার প্রথম সারির টিভি চ্যানেল সিবিসি গত ২১ জুলাই এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকার এসব তথ্য তুলে ধরে। গভর্নর জেনারেল এর এহেন কর্মকান্ডের রিপোর্টটি প্রকাশ হবার পর সর্বত্রই আলোচনার ঝড় উঠে।

অন্টারিওতে লাউডস্পীকারে আজানের অনুমতি

গত রমজান মাসে মসজিদে এক সাথে বেশী লোকের নামাজ আদায় বন্ধ থাকার কারণে অন্টারিও প্রদেশের বেশ কয়েকটি শহরে লাউডস্পীকারের মাধ্যমে মাগরেব এর আজান প্রচার করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। অটোয়াসহ টরন্টো, মিসিসাগা, ব্র্যাম্পটন, হ্যামিলটন এবং আরো কয়েকটি শহরে তখন মাগরেব এর আজান প্রচার করা হয়েছে। তবে এই অনুমতি শুধু রমজান মাসের জন্য।

উল্লেখ্য যে, কানাডার ইতিহাসে এই প্রথম মসজিদ থেকে লাউডস্পীকারের মাধ্যমে আজান এর অনুমতি দেয়া হলো। এই অনুমতি পাওয়ায় মুসলিম কমিউনিটিতে খুশির বণ্যা বয়ে যায়। অবশ্য অন্টারিও ছাড়া অন্য কোন প্রভিন্সে এই অনুমতি মিলেনি এখনো।

সারা বছরই বিতর্কে শীর্ষে ছিলেন ট্রাম্প

২০২০ সালে বিশ^ নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি অত্যন্ত উগ্র স্বভাবের একজন মানুষ। চরম বর্ণবাদী, মিথ্যাবাদী ও মানুষকে অসম্মানকারী হিসাবে তিনি পরিচিত! নারী কেলেঙ্কারী, অর্থ কেলেঙ্কারী, পরের নিন্দা করা তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নির্বাচনে হেরেও তিনি নির্লজ্জের মতো এখনো বলে বেড়াচ্ছেন তিনিই জয়ী হয়েছেন। সম্প্রতি তার দাবি অমূলক অভিহিত করে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্টও।

কমলা হ্যারিস

উল্লেখ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হয়েছেন কমলা দেবী হ্যারিস। আগামী ২০ জানুয়ারী তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিবেন আর এর মাধ্যমে তিনি হতে চলেছেন দেশটির ২০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট।

কমলা হ্যারিস নির্বাচনে জয়ী হয়ে সৃষ্টি করেছেন আরো কয়েকটি ইতিহাস। সেই ইতিহাস নারীর অগ্রযাত্রার ইতিহাস, ইমিগ্রেন্টদের অগ্রযাত্রার ইতিহাস, বর্ণবাদীদের পরাজিত করে জয়ী হওয়ার ইতিহাস।

ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আরব বিশে^র বিশ্বাসঘাতকতা

করোনা মহামারীর পাশাপাশি ২০২০ সালটি ছিল ফিলিস্তিনিদের জন্য বেদনাদায়ক একটি বছর। তারা দেখেছে বন্ধুপ্রতিম আরব রাষ্ট্রগুলো কিভাবে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।

ইসরাইলের সঙ্গে গত ১৩ আগস্ট সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয় আমিরাত। দুই দেশের মধ্যে টেলিফোন সংযোগ ও নিয়মিত বিমান চলাচল চালুরও ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে এগিয়ে আসে বাহরাইন, মরক্কো, ওমান, জর্ডান ও সুদান। ইসরাইলের সঙ্গে পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে সম্মত হয় এ মুসলিম দেশগুলো।

উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য বিভিন্ন দেশকে চাপ, লোভ ও টোপ দিতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ সেপ্টেম্বর আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।

ইরানের গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যক্তি কাসেম সোলাইমানি ও ফাখরিজাদেহ-কে হত্যা

বছরের শুরুতেই ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কৌশলী কুদস বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে জেনারেল সোলাইমানিকে বহনকারী গাড়ির ওপর ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যা করে মার্কিন সেনারা। এই হত্যাকাণ্ড বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি করে। নিন্দার ঝড় উঠে সর্বত্র।

এরপর শীর্ষ এক পরমাণুবিজ্ঞানীকে হারিয়েছে ইরান। ২৭ নভেম্বর দেশটির শীর্ষ এই পরমাণুবিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ-কে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছেনে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। পশ্চিমাদের চোখে ইরানে ‘গোপনে পারমাণবিক বোমা কর্মসূচির’ মূল কারিগর ফাখরিজাদেহকে দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করে আসছিল মোসাদ।

বৈরুত বিস্ফোরণ:

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দরে ৪ অগাস্ট রাসায়নিক পদার্থের এক গুদামে বিস্ফোরণ ছিল এ শতাব্দীর ভয়াবহতম ‘অ-পারমাণবিক’ বিস্ফোরণ। বৈরুতের বন্দর এলাকায় বহু বছর ধরে মজুত রাখা প্রায় ২,৭৫০ টন এ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের বিস্ফোরণে নিহত হন দুশয়ের বেশি মানুষ, আহত হন ৬ হাজারেরও বেশি লোক।

যুদ্ধের দামামা:

পূর্ব ইউরোপে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে বিরোধপূর্ণ একটি এলাকাকে কেন্দ্র করে ২৭শে সেপ্টেম্বর আবার যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুটো দেশের মধ্যে এর আগেও সংঘর্ষ হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে এই এলাকাটি আজারবাইজানের অংশ বলে স্বীকৃত হলেও, আর্মেনিয়ার সরকারের সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয়রা এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দুটো দেশই এলাকাটিকে তাদের নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। ছয় সপ্তাহের বেশি চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দু পক্ষের ৫ হাজারের বেশি সৈন্য প্রাণ হারিয়েছে।

বাংলাদেশ

করোনাভাইরাস

বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ করোনা ভাইরাসের প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনায় মোট ৭ হাজার ৫৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট শনাক্তের সংখ্যা ৫ লাখ ১৩ হাজার ৫১০ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৫৯ জন।

মুজিব জন্মশতবার্ষিকী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ছিল ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। এ উপলক্ষে ২০২১ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত এক বছরকে মুজিববর্ষ হিসেবে পালন করার ঘোষণা করে সরকার। জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা ওঠে বছরব্যাপী এ আয়োজনের। তবে মুজিববর্ষ পালনে এক বছরব্যাপী নানা ধরণের কর্মসূচি নেয়া হলেও পরবর্তীতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কাটছাঁট করা হয় মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান সূচিতে।

মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে গত ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত। টেকনাফ থানার প্রত্যাহারকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশেই খুন হয়েছেন সিনহা মো. রাশেদ খান। প্রদীপ কুমারের বিভিন্ন অপকর্ম জেনে গিয়েছিলেন সিনহা।

পুলিশি নির্যাতনে রায়হান হত্যা

গত ১১ অক্টোবর সিলেটের একটি থানার অভ্যন্তরে পুলিশের নির্মম নির্যাতনে রায়হান নামের এক নিরাপরাধ যুবকের মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় দেশব্যাপী। রায়হান হত্যাকাণ্ডে বন্দর বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ৯ নভেম্বর দুপুরে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে মামলার প্রধান আসামি এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান

২০২০ সালে বাংলাদেশে ধর্ষণের বেশ কিছু ঘটনা ঘটে যার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলন গড়ে উঠে। তারই প্রেক্ষিতে গত ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশে সই করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।

খালেদা জিয়ার কারামুক্তি

২৫ মাস পর বয়স ও মানবিক বিবেচনায় শর্ত সাপেক্ষে গত ২৫ মার্চ বিভিন্ন শর্তে মুক্তি পেলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা রয়েছে। বিএনপি’র দাবী, এ সব মামলাই খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করার জন্য।

পদ্মা সেতু

অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে ২০২০ সালে পূর্ণ অবয়ব পেয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এই সেতুই রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলাকে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত করবে। দক্ষিণ জনপদের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর

গত ৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। পরে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উল্লেখ্য যে, দেশে হঠাৎ করেই ভাস্কর্য বিরোধী প্রচারণা শুরু করে মৌলবাদী গোষ্ঠিগুলো।