কানাডায় প্রতি দশজনের একজন আত্মহত্যার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন করোনার কারণে

জানুয়ারী ৬, ২০২১

মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর কানাডায় প্রতি দশজনের একজন আত্মহত্যার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন। ছবি: গেটিইমেজ

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ডিসম্বের ৫, ২০২০ : গত সেপ্টেম্বরে করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর কানাডায় প্রতি দশজনের একজন আত্মহত্যার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন। বিশেজ্ঞরা বলছেন, স্তম্ভিত করার মত এই অভূতপূর্ব চিত্র বলে দিচ্ছে দীর্ঘ সময়ব্যাপী মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কভিড-১৯ এর প্রভাব কতটা গভীর চাপ সৃষ্টি করেছে। এই তথ্যটি প্রকাশিত হয়েছে কানাডিয়ান মেন্টাল হেলথ এ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক পরিচালিত সর্বশেষ জরিপে। জরিপ কার্যটি পরিচালিত হয় গত ১৪ থেকে ২১ সেপ্টেম্বররের মধ্যে। খবর waterloochronicle.ca এর।

কানাডিয়ান মেন্টাল হেলথ এ্যাসোসিয়েশন এই একই বিষয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিল গত মে মাসে। দেখা গেছে, সেই সময়ের তুলনায় সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর কানাডিয়ানদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে ব্যাপকভাবে। বিশেষ করে যারা আদিবাসী, lesbian, gay, bisexual, বা transgender (LGBTQ) এবং আগে থেকেই যাদের বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে তারা বেশী মাত্রায় প্রভাবিত হয়েছেন অন্যদের তুলনায়।

করোনা মহামারীর শুরুর দিকে ধারণা করা হয়েছিল যে, করোনার কারণে সৃষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা একটি সাময়িক ব্যাপার এবং করোনা দূরীভূত হলে এই মানসিক সমস্যাও চলে যাবে। এ কথা বলেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার এসোসিয়েট প্রফেসর ও গবেষক ড. এমিলি জেনকিনস। কিন্তু নয় মাস অতিক্রান্ত হলেও করোনা দূরীভূত হওয়ার কোন লক্ষণ নেই এবং কানাডিয়ানরা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর কানাডায় প্রতি দশজনের একজন আত্মহত্যার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন। ছবি: গেটিইমেজ

কানাডিয়ান মেন্টাল হেলথ এ্যাসোসিয়েশন এর জরিপে দেখা গেছে যারা আত্মহত্যার বিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন তাদের সংখ্যা গত মে মাসের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। মে মাসে এর হার ছিল ৬ শতাংশ। আর মহামারী শুরু হওয়ার আগে এই হার ছিল ২.৬ শতাংশ।

এদিকে সেপ্টেম্বর এর পর থেকে কানাডায় করোনা পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অন্টারিও, মন্ট্রিয়ল, আলবার্টা, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, মেনিটোবা সহ আরো কয়েকটি প্রভিন্সে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে গেছে। ইতিমধ্যে অন্টারিওর টরন্টো, পিল, ইয়র্ক রিজিয়নে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনের রেকর্ড ভাঙ্গছে আগের দিনের রেকর্ড। অন্টারিও’র চিকিৎসকগণ ক্রমাগত আহ্বান জানিয়ে আসছেন লোকজনকে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যেতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। সেই সাথে মাস্ক পরারও আহ্বান জানিয়ে আসেছন তারা। এই আহ্বান জানাচ্ছেন প্রিমিয়ার এবং বিভিন্ন সিটির মেয়রগনও।

জরিপে যারা অংশ নেন তাদের শতকরা ৪০ জন বলেন, মহামারী শুরু হওয়ার পর তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যে পরিস্থিতি ছিল তা থেকে গত সেপ্টেম্বর মাসের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। আর যাদের মানসিক স্বাস্থ্য আগে থেকেই খারাপ ছিল তাদের বেলায় এই পরিস্থিতি আরো বেশী খারাপ হয়েছে। এদের সংখ্যা শতকরা ৬১ ভাগ।

১৮ বছরের কম বয়সী সন্তানদের নিয়ে যে সকল বাবা-মা বাড়িতে বসে কাজ করছেন এবং পাশাপাশি তাদের শিক্ষা কার্যক্রম তদারকী করছেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যও খারাপের দিকে যাচ্ছে।

জরিপে ৪৮ শতাংশ বাবা-মা বলেছেন তারা তাদের আর্থিক দিক নিয়ে বেশ চিন্তিত। আর ৩৬ শতাংশ বলেছেন তারা চাকরী হারানোর ভয়ে আছেন। অন্যদিকে ২০ শতাংশ বলেছেন তারা বাড়িতে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশংকা করছেন।

আশংকার আরেকটি বিষয় হলো, যারা মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুগছেন তারা চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন না। জরিপে এই তথ্যটিও উঠে এসেছে। প্রফেসর ও গবেষক ড. এমিলি জেনকিনস বলেন, লোকজনের ধারণা তারা এই পরিস্থিতি সামলে উঠতে পারবেন এবং অবস্থার উন্নতি ঘটবে। তার মতে, লোকজন যত শীঘ্র চিকিৎসা সেবা নিবেন ততই তা তাদের জন্য মঙ্গলজনক।

জরিপে কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন তারা জানেন না কোথায় গেলে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে। সে কারণে তারা চুপচাপ রয়েছেন। ড. এমিলি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার জন্য কানাডাব্যাপী ভার্চ্যুয়াল রিসোর্স সহজলভ্য। এর মধ্যে আছে ইড়ঁহপব ইধপশ যেটা কানাডিয়ান মেন্টাল হেলথ এ্যাসোসিয়েশন এর সহায়তা নিয়ে সেবা প্রদান করে থাকে। ফেডারেল সরকারেরও আছে Wellness Together program।

কারোর মধ্যে যদি মানসিক কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে বা কেউ যদি জানেন তার কোন আত্মীয় বা বন্ধু এই সমস্যায় ভুগছেন তবে তিনি বিদ্যমান সেবা কার্যক্রমগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এর মধ্যে আরো আছে অনলাইনভিত্তিক সেবা কর্যক্রম crisisservicescanada.ca। আরো আছে ন্যাশনাল সুইসাইড প্রিভেনশন হেলপলাইন যার ফোন নম্বর হলো: ১-৮৩৩-৪৫৬-৪৫৬৬. শিশুদের জন্য ১-৮০০-৬৬৮-৬৮৬৮.