কানাডায় এশীয়দের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ কোভিড-১৯ এর পরও শেষ হবে না

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২১

কানাডার এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের বার্ষিক মতামত জরিপে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কানাডীয় বলেছেন, কানাডায় এশীয়বিরোধী বর্ণবাদ মহামারির আগে থেকেই বিদ্যমান। আর তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মনে করেন, কোভিড-১৯ ভাইরাস পরাস্ত হবার পরও এর অবসান হবে না।

কানাডা-এশিয়া সম্পর্কের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিষয়ে ধারণা ব্যক্ত করতে গিয়ে ৩,৫১৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক কানাডীয়র মধ্যে পরিচালিত জরিপে আরও দেখা যায়, বর্ণবাদকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে দেখা হয় এমন নীতির প্রতি কানাডীয়দের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন আছে। খবর নিউকানাডিয়ানমিডিয়া.কম এর। রিপোর্ট করেছেন ফেবিয়ান ডাউসন।

সমসাময়িক বিষয়, বিশেষ করে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত বিষয়ে উদ্ভূত নতুন সব প্রশ্নের ক্ষেত্রে এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশন (এপিএফ), কানাডার এ বছরের জাতীয় মতামত জরিপে এশিয়ার প্রতি উষ্ণ অনুভূতি বিষয়ে গত ১৬ বছরের উত্তরাধিকারের প্রশ্নও উঠে আসে যেটি কানাডার ভবিষ্যতের জন্য এশিয়ার অর্থনৈতিক গুরুত্বের ধারণা, শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং এশীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে অধিকতর ভালো সম্পর্ক লালনের প্রাদেশিক নীতি গ্রহণের প্রতি সমর্থনের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়।

এপিএফ কানাডার প্রেসিডেন্ট ও সিইও স্টুয়ার্ট বেক বলেন, “বিশ্বের বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ এবং মহামারির বিপর্যয়কর প্রভাবের প্রেক্ষিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কানাডীয়দের ধারণা সর্বকালের সর্বনিম্নে নেমে যাওয়ার মধ্যে সম্ভবত বিস্ময়ের কিছু নেই।”

২০১৬ সালে ভেঙ্গুভারে ইমিগ্রেশন বিরোধী এক প্রচারপত্র ছড়ানোর প্রতিবাদে সমাবেশ। ছবি : টিনা লভারগ্রীন/সিবিসি

বেক বলেন, “কিন্তু যেটি উৎসাহব্যঞ্জক সেটি হলো, কানাডীয়রা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সাফল্যের জন্য এশিয়ার ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব স্বীকার করছে। তারা তাদের সরকারগুলোর পক্ষ থেকে নতুন অংশীদারিত্ব খুঁজে নেয়া, বহুপক্ষীয় নীতি এবং পারস্পরিক সুবিধার বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন, জনস্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও সাইবার নিরাপত্তার মত বিষয়ে আরও জোরালোভাবে আত্মনিয়োগ করা এবং এদেশের জন্য লাভজনক হবে এমন খাতে এশীয় বিনিয়োগ উৎসাহিত করার ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী।”

তিনি বলেন, “কানাডীয়রা স্পষ্টতই এমন ধারণা পোষণ করে যে, কানাডাকে অবশ্যই এশিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে হবে, তবে তা হতে হবে এমনভাবে যাতে আমাদের মৌলিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও স্থায়িত্বের ধারণা প্রতি শ্রদ্ধা সমুন্নত থাকে এবং সকল কানাডীয়র জন্য অর্থনৈতিক সুফল নিয়ে আসে।”

এপিএফ-এর জরিপ এমন সময় প্রকাশ পেলো যখন কেন্দ্রীয় সরকার আগামী তিন বছরের জন্য অভিবাসন কোটা নাটকীয়ভাবে বাড়িয়েছে, যাতে করে ১০ লাখেরও বেশি নবাগত কানাডায় আসতে পারে।

এপিএফ-এর জরিপে এশিয়া সম্পর্কে কানাডীয়দের দৃষ্টিভঙ্গির উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে রয়েছে:

– ৭৮ শতাংশ বলেছেন, কোভিড-১৯ এর কারণে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তাদের ধারণার অবনতি ঘটেছে। চীন সম্পর্কে এমনটা বলেছেন ৫৫ শতাংশ কানাডীয়।

– ৩৫ শতাংশ জবাবদাতা একমত যে, চীনের বিকাশমান অর্থনৈতিক শক্তি হুমকি নয় বরং সুযোগ হিসাবে দেখা দেবার সম্ভাবনাই বেশি। এই সংখ্যা ২০১৮ সালের ৬০ শতাংশের চেয়ে কমেছে।

– ৫৬ শতাংশ কানাডীয় মনে করেন, কানাডার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিৎ নিজেকে সমমনা গণতান্ত্রিক দেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইইউ ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে অধিকতর ঘনিষ্ঠভাবে মিলে থাকা; ৫৩ শতাংশ কানাডীয় সেদেশের সরকারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকার বিষয়টিকে চতুর্থ এবং সর্বশেষ অগ্রাধিকারের তালিকায় স্থান দেন।

– ৭৮ শতাংশ মনে করেন, এশিয়া থেকে আসা অভিবাসীরা কানাডার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব রাখছে। আর ৬৪ শতাংশ মনে করেন, এশীয় অভিবাসীরা কানাডার সমাজে ভালোভাবে একাত্ম হতে পারে।

– ৭২ শতাংশ কানাডীয় বিশ্বাস করেন, অভিবাসীদেরকে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি লালনে নিরুৎসাহিত করা ঠিক নয় তবে নবাগতদেরকে কানাডার মৌলিক মূল্যবোধ যেমন, সমতা, গণতন্ত্র বরণ করে নিতে এবং সংখ্যালঘুর অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

– ৫৩ শতাংশ কানাডীয় মনে করেন কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময় পূর্ব এশীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয়দের প্রতি নেতিবাচক আচরণ করা হয়েছে। আর ৮৪ শতাংশ মনে করেন, কানাডায় মহামারির আগে থেকেই এশীয়বিরোধী বর্ণবাদ বিদ্যমান।

– ৭৮ শতাংশ কানাডীয় মনে করেন, কর্তৃপক্ষের উচিৎ এমন নীতি বাস্তবায়ন করা যা বর্ণবাদী অপরাধকে শাস্তিযোগ্য কর্মকাণ্ড হিসাবে গণ্য করে।

– ৫২ শতাংশ কানাডীয় তাদের প্রদেশে এশিয়ার দেশগুলো থেকে আরও বেশি বিনিয়োগ আনার বিষয়টি সমর্থন করেন যদিও ৩৯ শতাংশ কানাডীয় এর বিপক্ষে।