ইমিগ্রেশন কানাডা ১৭০০টি ভুয়া বিয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২১

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ইমিগ্রেশন কানাডা গত বছর ১৭০০টি বিয়ের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। এদেশে ঢুকতে সুবিধা হবে বলেই এসব আবেদন করা হয়েছে বলে মনে হওয়ায় সেগুলি নাকচ করা হয়। নতুন এক রিপোর্টে এই তথ্য জানা গেছে। খবর কানাডিয়ানইমিগ্রেন্ট.সিএ এর। রিপোর্ট করেছেন ফেবিয়ান ডাউসন।

ভ্যাঙ্কুভারের আইনজীবী রিচার্ড কুরল্যান্ডের অভিবাসন বিষয়ক নিউজলেটার Lexbase-এর পাওয়া উপাত্তে দেখা যায়, কানাডার ইমিগ্রেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ (IRCC) দফতর বলেছে, ইমিগ্রেশন পাওয়ার ব্যাপারেসুবিধা লাভ করা যাবে এমন বিয়ের আবেদনের সংখ্যা এখনও ২০১৭ সালের সমানই রয়ে গেছে।

সংস্থার অভ্যন্তরীণ ওই নথিতে বলা হয়, “আইআরসিসির কাছে দম্পতি হিসাবে স্পন্সর করার আবেদনের সংখ্যা গত ১০ বছরে ৩২ শতাংশ বাড়লেও, ২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রবেশনারির শর্ত তুলে দেওয়ার সময় থেকে সুবিধা লাভের বিয়ের আবেদনের ওপর তদন্তের সংখ্যা কমেছে।”

কানাডা সরকার পারমানেন্ট রেসিডেন্সি পাবার জন্য প্রত্যেক দম্পতিকে দুই বছর একসঙ্গে থাকতে হবে বলে যে অন্তর্বর্তীকালীণ শর্ত ছিলো তা তুলে নিয়েছে। ২০১৯ সালে আইআরসিসি এ ধরণের ২০০টি তদন্ত সম্পন্ন করে যেখানে ২০১৭ সালে তদন্ত করা হয়েছিলো প্রায় ৮০০টি। তবে সুবিধা লাভের বিয়ের আবেদন নাকচ হওয়ার সংখ্যা ২০১৭ সাল থেকে একই রয়ে গেছে। উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালেও এধরণের ১৭০০টি আবেদন নাকচ করা হয়।

সুবিধা লাভের বিয়ের ঘটনা শনাক্তকরণ

আইআরসিসি বলছে, সুবিধা লাভের বিয়ের ঘটনা উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে তাদের প্রাথমিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হলো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অফিসাররা। তারা সংশ্লিষ্ট দম্পতির সরবরাহ করা নথিপত্র বিবেচনা করে তাদের সম্পর্কের যথার্থতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে পারেন।

সংস্থাটি বলছে, “কোভিড-১৯জনিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বদেশে ফেরা, দফতর বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং সম্পদের ওপর অন্যান্য চাপের কারণে তারা এই মুহূর্তে আর বাড়তি বিশ্লেষণ তথা তদন্ত করার মত অবস্থায় নেই।”

আইআরসিসি কীভাবে দম্পতিদের স্পন্সরের আবেদন মূল্যায়ন করে তার কিছু সূত্র তুলে ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালে প্রকাশ হয়ে যাওয়া “সম্পর্কের প্রমাণপত্র” (Evidence of Relationship) শিরোনামের একটি নথিতে। এটি ছিলো বিয়ের নামে প্রতারণা চিহ্নিত করার জন্য অভিবাসন কর্মকর্তাদের সহায়ক একটি নির্দেশিকা।

একজন আইনজীবী অনলাইনে প্রশিক্ষণ নির্দেশিকাটি পোস্ট করেছিলেন। তবে সেটি তখনই সরিয়ে ফেলা হয়। তিন পৃষ্ঠার ওই নির্দেশিকায় অফিসারদের বলা হয়, যেসব বিষয় লজ্জাজনক (প্রতারণামূলক) বিয়ের সতর্কচিহ্ন হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে, দম্পতির এমন ছবি যেখানে বিয়ের সময় স্বামী স্ত্রী পরস্পরের ঠোঁটে চুম্বন করেনি; বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা চীনা নাগরিক যে

অচৈনিক কাউকে বিয়ে করছে; বিয়ের ছোটখাট অনুষ্ঠান; একজন কানাডীয় স্পন্সর যিনি অপেক্ষাকৃত অশিক্ষিত, স্বল্প বেতনে চাকরি করেন কিংবা সামাজিক কল্যাণ ভাতা নিয়ে চলেন।

এছাড়াও যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে তা হলো, সংশ্লিষ্ট দম্পতির মধুচন্দ্রিমার প্রামাণ্য নথি না থাকা, হীরার আংটি না থাকা, এবং নায়াগ্রা জলপ্রপাত ও টরোন্টো এলাকায় একসঙ্গে নানা কাজে জড়িত থাকার মানসম্মত ছবি না থাকা।

কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সির এনফোর্সমেন্ট ও ইন্টেলিজেন্স অপারেশনস দফতরের আগেকার এক রিপোর্টে কিছু উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ চিহ্নিত করা হয়েছিলো যেসব দেশ থেকে ভুয়া দম্পতিকে স্পন্সর করে নিয়ে আসে কানাডার পারমানেন্ট রেসিডেন্টরা।

এসব দেশের মধ্যে ছিলো চীন, কম্বোডিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ঘানা, ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়া, হাইতি, ইথিওপিয়া এবং গায়ানা। এর মধ্যে একমাত্র ভারত থেকেই প্রতারণামূলক “দম্পতির ঘটনা” ঘটে প্রায় ৩৬ শতাংশ।