অভিবাসীরা এক ধরনের অর্থনৈতিক উদ্দীপক এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিৎ তাদের সফল হতে সাহায্য করা

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২১

ড্যান রিস

১২ জানুয়ারি ২০২১: গত ১০ মাসের কোভিড-১৯ মহামারি কিছু গুরুতর বিষয় স্পষ্ট করে তুলেছে যা কানাডার অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাকে ব্যাহত করছে এবং কিছু কিছু কমিউনিটির মানুষকে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনের চেষ্টায় কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে কানাডাকে সমৃদ্ধি অর্জন করতে হলে দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে তার অবদান রাখার সুযোগ পায় সেটা আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে।

এই লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম উপায় হলো নবাগত কানাডীয়দেরকে সমাজে নির্বিঘ্নে একীভূত করে নেয়া এবং এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে তারা অর্থনীতিতে পরিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে সকল পর্যায়ের সরকারের ভূমিকা রাখার প্রয়োজন আছে এবং একইভাবে কানাডার অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসহ সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানেরও করণীয় আছে।

আমাদের অর্থনীতিতে নবাগতদের অবদানের গুরুত্বের বিষয়টি যখন সামনে আসে তখন বাস্তব অবস্থাটি স্পষ্ট। কানাডার নিম্ন জন্মহার এবং বয়স্ক জনসংখ্যার কারণে একমাত্র অভিবাসনের মাধ্যমেই এদেশের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। ফলে আমাদের অবস্থা জি-৭ ভুক্ত অন্য প্রতিপক্ষের দেশগুলোর মত নয়। কারণ সেসব দেশে জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী, এমনকি নেতিবাচক।

ভুল করলে চলবে না: কোনও দেশের অর্থনীতি গড়ে ওঠার মৌলিক উপকরণ হলো জনসংখ্যা। আমরা যত বেশি শিক্ষিত ও উৎপাদনশীল লোকেদের আকৃষ্ট করে আনতে পারবো ততই বেশি আমাদের জীবনমান উন্নত হবে এবং আমরা সেইসব বিষয়গুলি রক্ষা করতে পারবো যেগুলি কানাডাকে শক্তিশালী রাখে। অভিবাসন হলো এক ধরণের অর্থনৈতিক উদ্দীপক। সরকারগুলো যখন অর্থনীতি জোরদারে সর্বোচ্চ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে সে সময় মহামারিকালের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাবার জন্য আমাদেরকে প্রবৃদ্ধির প্রতিটি ইঞ্জিন সচল রাখতে হবে।

এই ক্ষেত্রে কানাডা তার সুবিধাজনক অবস্থান তুলে ধরতে পেরেছে। কানাডার বিদেশে জন্ম নেয়া জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশে জন্ম নেয়া জনসংখ্যার ৪০ শতাংশেরও কম উচ্চশিক্ষিত আর অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার দেশগুলিতে এই হার কেবল ৩৫ শতাংশ। এটা সম্ভব হয়েছে অংশত অভিবাসী গ্রহণের জন্য কানাডার পয়েন্ট সিস্টেমের কারণে। এই ব্যবস্থা নবাগতদেরকে শ্রমবাজারের শূন্যস্থানে খাপ খাইয়ে নেয় এবং তাদের ভাষাগত দক্ষতারও পরীক্ষা নেয়।

আমাদের অভিবাসন নীতির কারণে কানাডা এখন তার জনসংখ্যার হারের বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি দক্ষ নবাগতদের এদেশে আসার সুযোগ করে দিচ্ছে। কোভিড-১৯-এর আগের দুবছরে নব্য কানাডীয়দের কর্মসংস্থানের হার কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের চেয়ে বেশি ছিলো।

মহামারির আগে কানাডা ক্রমবর্ধমান শ্রমিক ঘাটতির মুখোমুখি হয় যা দেশের প্রবৃদ্ধি থমকে দেয়। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের শেষে দেশটিতে কর্মখালি ছিলো পাঁচ লাখের বেশি।

কানাডার স্বাধীন ব্যবসায় ফেডারেশনের তথ্যমতে, কোভিড-১৯-এর আগে সংস্থার ৪০ শতাংশেরও বেশি সদস্য দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতির বিষয়ে জানিয়েছে, আর ২৫ শতাংশ সদস্য অদক্ষ ও আধাদক্ষ শ্রমিকের ঘাটতির বিষয়ে রিপোর্ট করে।

কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, আগামী বছরগুলিতে আমরা প্রতিবছর যত সংখ্যক নবাগতকে স্বাগত জানাই তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হবে।

এটি একটি সময়োচিত ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত স্বীকৃতি দিচ্ছে যে, আমরা একটি উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈচিত্র্যময় দেশ এবং কানাডার ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির জন্য অভিবাসনের আবশ্যকতা আছে।

তারা এদেশে এলে আমাদেরকে অবশ্যই তাদের ভাষার বাধা, পেশাগত প্রত্যয়নপত্র পাওয়া, সামাজিক ও পেশাগত যোগাযোগের অভাব এবং আর্থিক বিষয়ে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়ে সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের জীবনের এই রদবদল যেন নির্বিঘ্ন হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

এক্ষেত্রে অনেক উপায় আছে যেগুলোর মাধ্যমে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় অবদান রাখতে পারে:

আর্থিক স্বাক্ষরতা: আর্থিক স্বাক্ষরতার অভাব সব কানাডিয়ানের জীবনেই প্রভাব রাখে, তবে একটি নতুন দেশে আসার পর নবাগতদেরকে অনেক ধরণের জটিল আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়Ñ যেমন, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, ঋণ পাওয়া, বাড়ি কেনা ইত্যাদি। বিশেষ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই নবাগতদের জন্য অর্থের যোগান নিশ্চিত করতে হবে যাতে করে তারা দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হতে এবং দেশের জন্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়।

চাকরিতে নিয়োগ: কোম্পানিগুলোকে তাদের কর্মীবাহিনীতে বৈচিত্র্য আনার এবং নবাগতদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সহজতর করার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেক সমীক্ষাতেই দেখা গেছে, সমাজের সব অংশের প্রতিনিধিত্ব করে এমন বৈচিত্রময় দৃষ্টিভঙ্গি ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর সফল ও লাভজনক করে তোলে। তার পরও, অশ্বেতাঙ্গদের কর্মসংস্থানের হার শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে কম এবং তারা বেতনও কম পায়।

পেশাগত আত্তীকরণ: অভিবাসী পেশাজীবীদের পেশাগত প্রত্যয়নপত্র না পেয়ে গাড়ি চালানোর কাহিনী এদেশে খুবই বাস্তব। পেশাগত লাইসেন্স অনুমোদনকারী সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতেই হয়। তাই সরকারগুলোর এক্ষেত্রে কিছু করণীয় আছে যাতে করে নবাগতরা এদেশে আসার আগেই ওইসব মানের বিষয়গুলি বুঝতে পারে এবং এদেশে এসে সেগুলো পূরণ করতে পারে। তাদের সার্টিফিকেট পাওয়া, প্রশিক্ষণ লাভ, পরীক্ষা দেয়া, ইন্টার্নশিপ ও শিক্ষানবিশি এবং ভাষা শিক্ষার কর্মসূচিতে সহায়তার জন্য বাড়তি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলে উচ্চতর যোগ্যতাসম্পন্ন নবাগতরা আরও দ্রুত তাদের নিজস্ব পেশার কর্মক্ষেত্রে ঢুকতে পারবে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু করার ক্ষেত্রে সহায়তা দিতে পারে।

সামাজিক ও পেশাগত নেটওয়ার্ক: আমাদের কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনে সহায়তার ক্ষেত্রে যাদের সঙ্গে আমাদের বিকাশমান ব্যক্তিগত ও পেশাগত যোগাযোগ তাদের ওপর আমরা কতটা আস্থাশীল? এক্ষেত্রে কানাডীয়দেরকে নিশ্চিতভাবেই আস্থাভাজন বলে ধরে নেওয়া হয়। আমাদেরকে অবশ্যই নবাগতদেরকে যোগাযোগ বাড়ানো ও ভালো পরামর্শক পাবার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে হবে যাতে তারা সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে যা তাদের সাফল্যের জন্য সহায়ক হবে।

স্কশিয়া ব্যাংক যেসব বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোকপাত করতে চায় এসব তারই অন্তর্ভুক্ত। স্কশিয়ারাইজ নামে আমাদের ১০ বছর মেয়াদী যে নতুন ৫০ কোটি অঙ্গীকার তার অংশ হিসাবে আমরা কমিউনিটি ও শিক্ষাবিষয়ক অংশীদারদেরকে অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা উন্নয়নে সহায়তা দেবো। নবাগতদের সমাজে একাত্ম করে নেওয়া, হাইস্কুলের শিক্ষা সম্পন্নকারী এবং মাধ্যমিক-উত্তর শিক্ষা অর্জকারীর সংখ্যা বাড়ানো এবং কর্মজীবনে এগিয়ে যাবার বাধা দূর করার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা হবে।

মহামারীর শেষ পর্যন্ত অবসান ঘটবেই। কিন্তু অর্থনৈতিক, জনবল ও সাংস্কৃতিকভাবে কানাডাকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা কখনই ফুরোবে না। আসুন আমরা এটা নিশ্চিত করি যাতে কানাডার স্বার্থে অভিবাসন অব্যাহত থাকে। – দি গ্লোব এ্যান্ড মেইল থেকে ভাষান্তর। লেখক ড্যান রিস স্কশিয়াব্যাংকে কানাডিয়ান ব্যাংকিং-এর গ্রুপ প্রধান।