সন্তান জন্ম দেবার জন্য নারীরা যেভাবে কানাডায় আসছে তাতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা চাপে পড়তে পারে
প্রসব সংক্রান্ত পর্যটনের কারণে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার হাসপাতালগুলোতে স্থানীয়দেরসেবা দানের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে
ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক ,০৪ জানুয়ারি ২০২০ : কানাডায় সন্তানের জন্ম দেয়ার জন্য নারীরা এদেশে আসছেন যাতে তাদের সন্তান আপনাআপনিই কানাডার নাগরিক হতে পারে। এর ফলে কানাডার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি হতে পারে বলে উদ্বেগ বাড়ছে। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন অ্যানি বার্নস-পিপার ও লিসা মেয়র।
রিপোর্টে বলা হয়, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একটি হাসপাতালে এধরণের মায়েদের বেশি সংখ্যায় আসার কারণে সেখানে অভিযোগ উঠেছে যে, স্থানীয় হবু মায়েদের সেবাদানের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হচ্ছে এবং নার্সদের বাড়তি ধকল পোহাতে হচ্ছে।
এধরণের রোগীদের অনেকে হাসপাতাল ও চিকিৎসকের বিল দিতেও সমর্থ হয় না ফলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সেবাদানকারী এবং সরকারি তহবিলের ওপর দায় চাপে।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একজন শিশুরোগ ও প্রসূতিসেবা বিশেষজ্ঞ ড. মুদাফফর আল-মুদাফফর বলেন, “তাদের বেশিরভাগই কানাডার পাসপোর্ট পাবার পর এদেশ ছেড়ে যান। এতে করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সুষ্ঠুতা ও সততার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।”
বিশেষ করে সন্তান জন্ম দেয়া এবং এদেশের পাসপোর্ট পাবার উদ্দেশ্যে কত সংখ্যক মানুষ কানাডায় আসে তার কোনও পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে কানাডার স্বাস্থ্যতথ্য ইন্সটিটিউট এবং কুইবেকের কিছু হাসপাতালের পরিসংখ্যান থেকে আভাস পাওয়া যায় যে, ২০১৮ সালে সারা দেশে প্রায় ৫,০০০ অনাবাসিক লোকের সন্তানের জন্ম হয়েছে কানাডায়। আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি।
মুষ্ঠিমেয় হাসপাতাল জড়িত
উল্লেখ্য, সন্তান জন্মানোর জন্য এদেশে আসার ঘটনা কুইবেক, অন্টারিও ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার মুষ্ঠিমেয় কিছু হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি। ভ্যাঙ্কুভারের দক্ষিণের রিচমন্ড হাসপাতালে মোট শিশুজন্মের প্রায় এক-চতুর্থাংশই ছিলো অনাবাসিক লোকেদের। ওই হাসপাতাল পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ ভ্যাঙ্কুভার কোস্টাল হেলথ-এর নথিপত্র থেকে ওই তথ্য জানা যায়।
২০১৩/১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ওই হাসপাতালে অনাবাসিক লোকদের সন্তান জন্ম দেওয়ার পরিমাণ তিনগুণ বেড়েছে। এসব রোগীদের অনেকেই চীনা। কানাডার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের কোনও জানাশোনা নেই এবং তারা ইংরেজি বলতে পারে না। তবে তারা সেবা পাওয়ার জন্য গোপনে এবং অনেক সময় নগদ অর্থে বিল পরিশোধ করে। সিবিসি’র সঙ্গে কথা বলা নার্সরা জানান, অনাবাসিক লোকদের বিপুল সংখ্যায় আসার কারণে তাদের বাড়তি কাজের চাপ নিতে হচ্ছে এবং সেবাদানের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হচ্ছে।
একজন নার্স বলেন, “এমনও সময় আসে যখন স্থানীয় লোকেরা প্রয়োজনীয় সেবা পান না।”
টরন্টোর সানিব্রুক হেলথ সায়েন্স সেন্টারের মত কিছু হাসপাতাল নিজ কমিউনিটির লোকেদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য অনাবাসিক লোকেদের সন্তান জন্মদানের সংখ্যা সীমিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। হাসপাতালটি বলছে, তারা অন্টারিওর স্বাস্থ্যবীমা পরিকল্পনার আওতাধীন না হলে অনাবাসিক রোগীদের সেবা দেবে না।
অপরিশোধিত বিল
এসব অনাবাসিক লোকেদের সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে অর্থ সমাগম হলেও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের পাওনা এবং ডাক্তারের ব্যক্তিগত বিলের অর্থ সব সময় পরিশোধ হয় না। ভ্যাঙ্কুভার কোস্টাল হেলথ-এর প্রকাশিত নথি অনুযায়ী, কেবল রিচমন্ড হাসপাতালেই ২০১৭ সাল থেকে অনাবাসিক রোগীদের সেবাদানের বিল বকেয়া আছে ২০ লাখ ডলারের বেশি। এই বকেয়া বিলে মওকুফ করে দেওয়া কোনও ঋণের অর্থ ধরা হয়নি।
সারাদেশে অনাবাসিকদের হাসপাতালের বিল বকেয়া থাকা সম্পর্কিত কোনও জাতীয় আর্থিক উপাত্ত কোথাও নেই। তবে কেউ কেউ বলেন, এই পরিস্থিতির কারণে কানাডার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ড. আল-মুদাফফর বলেন, প্রসূতি বিভাগের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে একটি বীমাহীন শিশুর মাত্র একদিনের সেবাদানের জন্য ডাক্তারের ফি ছাড়াই বিল আসতে পারে ১০ হাজার ডলার। তিনি বলেন, অনেক সময় একটি শিশুকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে কয়েকদিন এমনকি কয়েক সপ্তাহও রাখতে হয়।
আল-মুদাফফর বলেন, “স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বিলের পরিমাণ প্রায়শ খুব সহজেই ১ লাখ ডলার হতে পারে আর সেজন্যেই তারা এত টাকা পরিশোধ করতে পারে না। ফলে বিল পরিশোধ না করেই তারা কানাডা ছেড়ে চলে যায়।”
তিনি বলেন, তিনি যে রয়্যাল কলাম্বিয়ান হাসপাতালে কাজ করেছেন সেখানে তিনি হাজার হাজার ডলারের বিল অপরিশোধিত থাকতে দেখেছেন। তবে হাসপাতাল পরিচালনাকারী সংস্থা ফ্রেসার হেলথ অপরিশোধিত বিলের অর্থের পরিমাণ নিশ্চিত করতে পারেনি।
ড. মুদাফফর একাই নন। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ডক্টরদের সমিতির প্রেসিডেন্ট ড. ক্যাথলিন রস নিজে বিল অপরিশোধিত থাকায় ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেছেন।
তিনি বলেন, “এদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া এবং স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা নেবার জন্য যারা কানাডায় আসে তাদের নিরুৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি উপায় বের করা উচিৎ।”