শিশুরা এমনকি অনুরাগে জড়ানোরও আগে নগ্ন ছবি শেয়ার করছে

জুনিয়র স্কুলপড়ুয়া শিশুরা ছবি পাঠানোর ব্যাপারে চাপে থাকে, কিন্তু এর পরিণতি বোঝার মত বয়স তাদের হয়নি

জানুয়ারী ১৩, ২০২০

কানাডায় জুনিয়র হাইস্কুল লেভেলে এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে গ্রেড-সিক্সে পড়া ছেলেমেয়ের মধ্যেও নগ্ন ছবি লেনদেনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ছবি : Shutterstock

টরন্টো , ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ : প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডের একজন প্রবক্তার তথ্য অনুযায়ী, টিনএজারদের মধ্যে নগ্ন ছবি শেয়ার করার প্রবণতা এতটাই সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এমনকি জুনিয়র হাইস্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও এটি এখন তাদের সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে উঠেছে। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন শেন রস।
শার্লটিটাউন পুলিশ সার্ভিসের ইয়থ জাস্টিস সার্ভিসে কর্মরত জেন উড বলেন, কিছু ছেলেমেয়ে এটা করছে এমনকি পরস্পরের প্রতি ভালোলাগার বোধে জড়িয়ে পড়ারও আগে।
উড বলেন, “তারা কারও সঙ্গে ডেট করারও আগে নগ্ন ছবি শেয়ার করছে। আমি বলতে চাই যে, তারা কারো প্রতি অনুরাগের বোধে জড়িয়ে পড়ারও আগে এসব ছবি পাঠাচ্ছে। ব্যাপারটা এমন যেন এটাই আগে করতে হবে।”
মিজ. উড এবং শার্লটিটাউনের কর্নেল গ্রে হাই স্কুলের রিসোর্স অফিসার টিম কাইজার একটি টিমের অংশ যারা প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপের স্কুলগুলোতে অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করে থাকে। তারা অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন যারা তাদের টেলিফোনের মাধ্যমে নগ্ন ছবি পাঠিয়েছে এবং পেয়েছে।
কাইজার বলেন, “জুনিয়র হাইস্কুল লেভেলে এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে গ্রেড-সিক্সে পড়া ছেলেমেয়ের মধ্যেও এই ছবি লেনদেনের যে প্রবণতা, সিনিয়র হাইস্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেটা ওই হারে নেই। আমাদের তরুণ প্রজন্মের শিশুরা অনেক খোলামেলা হয়ে পড়ছে এবং তাদেরকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, ছবি পাঠাতে বলা হয়। আমরা আগে যেমনটা ভাবতাম তারও চেয়ে অনেক কম বয়সে এটা ঘটছে।”

কানাডায় জুনিয়র হাইস্কুল লেভেলে এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে গ্রেড-সিক্সে পড়া ছেলেমেয়ের মধ্যেও নগ্ন ছবি লেনদেনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ছবি : Shutterstock

মেয়েরা হয়তো ছেলেদের কাছে ছবি চায়

উড বলেন, গ্রেড-৯এ পৌঁছার মধ্যেই বেশিরভাগ বাচ্চা খোলামেলা ছবি দেখে, পাঠায় অথবা এমন কাউকে চেনে যে নগ্ন ছবি দেখেছে বা পাঠিয়েছে। আর ছেলে ও মেয়ে উভয়েই পরস্পরের কাছে নগ্ন ছবি চাইছে এবং পাঠাচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমি সেখানে এমন একটি প্রবণতাও দেখতে পাচ্ছি যেখানে মেয়েরা ছেলেদের কাছে ছবি চাচ্ছে। তারা ছেলেদের কাছে ছবি পাঠাচ্ছে এবং বিনিময়ে কিছু চাইছে।”
উড বলেন, অনেক বাচ্চা তাকে বলেছে যে, অনেক সময় তাদেরকে ছবি পাঠানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়। তবে অনেকেই এটা স্বেচ্ছায় করে যাতে তাকে পছন্দ করার মত কোন ছেলে বা মেয়ে সে পেতে পারে।
তিনি বলেন, “বাচ্চারা নিজের ছবিই পাঠাচ্ছে মেয়ে বা ছেলেদের কাছে। মেয়েরা তাদের বুক খোলা ছবি দিচ্ছে। অনেক সময় নিজের চেহারাসহ, অনেকসময় চেহারা আড়াল করে। ছেলেমেয়েরা নিজেদের গোপনাঙ্গের ভিডিও ছবিও শেয়ার করছে। নগ্ন হয়ে কিছু করছে এমন ভিডিও ছবিও তারা পরস্পরকে পাঠাচ্ছে। আসলে অনেক সময় তারা পুরোপুরি নগ্ন ছবিও পাঠায়।”
মিজ. উড বলেন, তাদের ছবি পাঠানোর কারণ যাই হোক না কেন, আসলে অনেকেই এর পরিণতিটা ভালোভাবে বুঝতে পারছে না।
এজনের পাঠানো ছবি আরও কাউকে দেখানো হবে এমন সম্ভাবনা শতকরা ১১০ শতাংশ।
ক্রাউন অ্যাটর্নি (পুলিশ বিভাগের আইনজীবী) লিসা গৌলডেন বলেন, সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো এসব ছবি কোনও পর্নো সাইটে চলে যাবার আশঙ্কা থাকে, এসব ছবি দিয়ে তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করা হতে পারে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে শিশু পর্নোগ্রাফির অভিযোগ উঠতে পারে।
তিনি বলেন, এখন এমন একটি “বিতর্ক চলছে” যে, কোন ছবিকে অশালীন এবং কোনটিকে শিশু পর্নোগ্রাফি বলা হবে।

ছবিগুলো পরে আবারও দৃশ্যমান হয়

“এটা প্রলুব্ধকর হতে পারে। এগুলো হতে পারে স্পষ্টত যৌনতা বিষয়ক সামগ্রী যা যৌন অপরাধ ঘটানোর কাজে ব্যবহারের জন্য সুলভ হয়ে পড়ে। এটা হতে পারে অশ্লীল ছবি ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যম।”
গৌলডেন বলেন, একজন ক্রাউন অ্যাটর্নি হিসাবে তিনি যে বিষয়ে উদ্বিগ্ন সেটা হলো, যদিও এসব ছবি প্রথমে একটি যুগলের সম্মতিতেই পাঠানো হয়েছিলো কিন্তু একবার সেগুলি কোনও কমপিউটারে সংরক্ষিত হলে তা যে কোনও সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, “এসব ছবি সম্পর্ক ভাঙার কারণ হতে পারে, পরস্পরের মধ্যে অবিশ্বাস ও বিরোধের কারণ হতে পারে এবং এসব ঠিকই ঘটছে- এমন ছবি ছড়িয়ে দেয়া যায়, মানুষকে অসম্মান করা যায়, প্রতিশোধ গ্রহণের কাজে ব্যবহার করা যায় এবং সবচেয়ে যেটা ভীতিকর, এসব ছবি কারা দেখছে? অসংখ্য মানুষ আছে যারা শিশুদের এসব যৌনাবেদনময় নগ্ন ছবি দেখছে, স্ক্যান করছে, ছড়িয়ে দিচ্ছে।”

এই ইস্যু নিয়ে স্কুলে

“এই ইস্যুটি যখনই আমাদের শিক্ষার পরিবেশে আসছে, তখন সেটা আমাদের ইস্যু হয়ে যাচ্ছে। হতে পারে সেটা ঘটেছে রবিবার রাতে, কোনও কমপিউটারে অথবা তাদের ঘরে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে।”
উড বলেন, অভিভাবকদের জন্য স্ন্যাপচ্যাট বা ইন্সটাগ্রামের মত অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কে জানা জরুরী। তাদের উচিৎ, ব্যাপারটা যতই বিব্রতকর হোক না কেন, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যৌন ছবি পাঠানো বা গ্রহণ করার বিপদ সম্পর্কে আলোচনা করা।
তিনি বলেন, বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানের বয়সে নিজেদের শরীর নিয়ে যতটা লাজুক ছিলেন আজকালকার ছেলেমেয়েরা ততটা নয়। আর আপনি যদি তাদের সঙ্গে অনলাইনে আলোচনা করেন তাহলে সেটা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
তার ভাষায়, “মনে হয়, আমাদের পুরো সমাজটাই অনেক বেশি যৌনতা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আর শিশুরাও সেটা বুঝতে শুরু করেছে। অর্থাৎ আমার প্রয়োজনীয় কাউকে পাবার জন্য বিষয়টিকে যৌনতার রূপ দিতে হবে। আপনি যখন ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তখন আপনি ওপাশের লোকটিকে দেখতে পান না, তখন তার কাছে ছবি চাওয়াটা সহজ হয়ে যায়।”
তিনি উল্লেখ করেন যে, সব বাচ্চাই নগ্ন ছবি বিনিময় করে না। তবে এক ধরণের শিশু অবশ্যই তা করছে।
“মাদক বা কৃত্রিম ধুমপানের যন্ত্র দিয়ে ধূমপানের স্বাদ নেয়ার কাজটা কেবল যে শিশুরাই করছে এমন নয়। খুব মেধাবি বাচ্চারা এবং সব স্পোর্টস টিমের সদস্যরাও এতে সামিল, তারাও নগ্ন ছবি বিনিময় করে।”