মুখোশ পরতে গিয়ে যে ভুলগুলো আমরা করি

জুন 16, 2020

এই মানুষগুলো পরস্পর এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়েছে যে, তাদের মাস্ক পরা কোনও কাজেই আসবে না। ছবি: গেটিইমেজ

মুখোশ পরায় অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লাগে। পুরো মুখ ঢেকে বাইরে যেতে আপনি হয়তো স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন না এবং কিছুটা অস্বস্তি লাগবে। কারণ আপনি কখনই এমনটা করেননি।

কিন্তু মুখোশ পরাটা সারাদেশেই এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠছে। কোনও কোনও স্টোর যেমন কস্টকো, মাস্ক পরতে চান না এমন গ্রাহককে সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে শুরু করেছে। এসব ব্যাপার অনেক কানাডীয়র কাছে নতুন এবং বিদঘুটে মনে হলেও বিশ্বের অন্যান্য অংশে এটা অশ্রুত কোনও বিষয় নয়। অন্যান্য এশীয় দেশের মত দক্ষিণ কোরিয়া কোভিড-১৯ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগেই এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য জনগণকে মুখোশ পরতে উৎসাহিত করেছে।

এখানে মুখোশ পরাটা দিন দিন এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে, সেজন্যেই এটি কীভাবে পরতে হবে তা শিখে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুখোশ পরলে তা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া বন্ধে সহায়ক হয় যদি সেটি যথাযথভাবে পরা ও খোলা হয়।

করোনাভাইরাসের সময়ে ফেসমাস্ক নিয়ে সচরাচর করা হয় এমন কিছু প্রশ্ন ও উত্তর তুলে ধরা হলো। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় হাফিংটন পোস্ট কানাডায়। আর এটি লিখেছেন মেইজা কেপলার।

এই মানুষগুলো পরস্পর এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়েছে যে, তাদের মাস্ক পরা কোনও কাজেই আসবে না। ছবি: গেটিইমেজ

কখন আমাকে মুখোশ পরতে হবে?

সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিধিগুলো মেনে চলতে যেখানে সমস্যা হয় সেরকম যে কোনও পরিস্থিতিতে মুখোশ পরাই সবচেয়ে ভালো। আপনি যখন মুদির দোকানে জিনিস কিনতে যান অথবা পাবলিক বাসে চড়েন কিংবা যদি আপনি এমন কোনও কাজে নিয়োজিত আছেন যেখানে আপনাকে নিয়মিতভাবে মানুষের সংস্পর্শে আসতে হয় সেখানে মুখোশ পরা উচিৎ।

কী ধরণের মুখোশ পরা উচিৎ?

হেল্থ কানাডা এন-৯৫ ও সার্জিক্যাল মাস্ক সংরক্ষিত রাখতে চায় যাদের এটি সবচেয়ে বেশি দরকার সেই স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য। আমাদের মত মানুষ যারা স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত নন, শুধু মুদির দোকানে যাওয়া বা বাসে চড়ার সময় মাস্ক পরবেন তারা পুনঃব্যবহারযোগ্য মাস্ক পরতে পারেন।

মাস্ক পরার যথাযথ নিয়ম কি?

মাস্ক হতে হবে এমন যেন সেটি আপনার মুখ, চিবুক এবং পুরো নাক ঢেকে রাখে। মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষ সচরাচর যেসব ভুল করে সে বিষয়ে দারুণ একটি ধারাবাহিক অলংকরণ প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। অনেক মানুষই মাস্ক পরেন শুধু মুখের ওপর, কিন্তু নাক ঢাকেন না। অনেকের মাস্কের পাশ দিয়ে অনেকটা ফাঁক থেকে যায়।

হেল্থ কানাডার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এমনভাবে মাস্ক পরতে হবে যাতে আপনার মুখ ও নাক পুরোপুরি ঢাকা থাকে এবং এর ফিতাগুলি যথাযথভাবে বাঁধা হয়। মাস্কের পাশ দিয়ে কোনও ফাঁক থাকা চলবে নাÑ যদি ফাঁক থাকে তাহলে বুঝতে হবে, আপনার মাস্ক অনেক বেশি বড় হয়ে গেছে।

মাস্ক পরার আগে আমাকে কী করতে হবে?

আপনার হাত ধুয়ে নিন!

এক মুহূর্তের জন্য মাস্ক সরিয়ে নিয়ে আবার পরা যাবে কি?

একদম না। এতে সমস্যা হলো এই যে, মাস্কের সামনের দিকে কোনও ভাইরাস লেগে থাকলে সেগুলি আপনার হাতের সংস্পর্শে আসবে এবং মাস্ক পরার মূল উদ্দেশ্যটিই পণ্ড হয়ে যাবে। তাই নিরাপদে ঘরে এসে হাত না ধোয়া পর্যন্ত মাস্ক খোলা থেকে বিরত থাকুন।

মাস্ক পরে থাকার সময় কোন বিষয়গুলি মনে রাখা জরুরী?

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে যথেষ্ট কথা বলেছেন, কিন্তু তবু সেসব কথা মনে রাখা দরকার। মাস্ক পরলে বহু মানুষের মনে একটি ভুয়া নিরাপত্তার বোধ তৈরি হতে পারে। মাস্ক পরার অর্থ এটা নয় যে, আপনার আর সামাজিক সঙ্গনিরোধ সম্পর্কিত বিধিগুলো মেনে চলার দরকার নেই। মাস্ক পরলেও আপনাকে অবশ্যই অন্যদের থেকে দূরত্ব রক্ষা করতে হবে।

মনে রাখুন, যখন মাস্ক পরে আছেন তখন এর সামনের অংশ এবং আপনার মুখমণ্ডল হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন না। তাহলে মাস্ক পরার উদ্দেশ্য পুরোই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।

নিরাপদে মাস্ক খোলার নিয়ম কি?

প্রথমে হাত ধুয়ে নিন। মনে রাখবেন আপনি যদি জীবাণুর সংস্পর্শে এসে থাকেন তাহলে সেগুলি প্রধানত থাকবে আপনার মুখ ও নাকের ওপর সেটে থাকা মাস্কের সামনের অংশে। তাই চেষ্টা করুন যেন মাস্কের সামনের অংশে  হাত না লাগে। মাথার পেছনের বন্ধন বা কানে আটকানোর ফাঁস (লুপ) খুলে নিন।

একবার ব্যবহার করা মাস্ক কিভাবে ফেলে দেবো?

মনে রাখবেন, যারা চিকিৎসা পেশায় জড়িত নন তাদের জন্য সার্জিক্যাল মাস্ক পরার সুপারিশ করা হয়নি। কিন্তু যদি ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেটি একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে সেটি বর্জ্যরে সাথে ফেলে দিন। মাস্ক কোনওভাবেই মাঠেঘাটে ফেলে দেওয়া উচিৎ নয়। কারণ, তা অন্য লোকেদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

কাপড়ের মাস্ক কিভাবে ধুবো?

কিছু মাস্ক আছে যেগুলো ধোবার নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া থাকে। তবে অন্য সব মাস্কের ক্ষেত্রে ওয়েবএমডির পরামর্শ হলো, সেগুলো ওয়াশিং মেশিনে গরম পানি ও ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নেবেন এবং হাতে অর্থাৎ রোদে শুকাবেন।

মাস্ক ওয়াশিং মেশিনে দেয়া কি নিরাপদ?

হ্যাঁ। আর প্রকৃতপক্ষে হেল্থ কানাডা সেটিকেই অগ্রাধিকার দেয়। সংস্থার সুপারিশ হলো, মাস্ক যথাযথভাবে জীবাণুমুক্ত করতে ওয়াশিং মেশিনটি গরম পানির অপশনে রাখবেন।

মাস্ক হাতে ধুলে কাজ হবে কি?

বিশেষজ্ঞরা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন যে, মাস্ক যদি সিঙ্কে হাতে ধোয়া হয় তাতেও কাজ হবে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এমিলি দ্য গোলিয়ান হাফিংটন পোস্টকে বলেছেন, মাস্ক হাতে ধুলে সেটিতে অবশ্যই ২০ সেকেন্ড ধরে ফেনা তুলতে ও কাঁচতে হবে।

সব সময় ব্যবহারের সাবানই কি ব্যবহার করতে পারি?

নিয়মিত ব্যবহারের কাপড় কাঁচার সাবান বা ডিটারজেন্ট হলেই চলবে। তবে অতিরিক্ত সতর্ক কেউ হয়তো জীবাণুনাশক উপাদান ব্যবহার করতে চাইবেন। সিডিসির একজন সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা রবার্ট এলমার হাফিংটন পোস্টকে এ পরামর্শ দেন।

আপনি যে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করেন তার উপাদানগুলো খতিয়ে দেখতে পারেন হেল্থ কানাডার অনুমোদিত সংক্রমণরোধকের তালিকা থেকে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থার ভাইরাস-বিরোধী পণ্যের তালিকাও দেখে নিতে পারেন।

করোনাভাইরাস মরার জন্য পানি কতটুকু গরম হতে হবে?

এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট জবাব দেওয়ার মত যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত নেই। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যে, ৫৬ ডিগ্রির মত উচ্চমাত্রার তাপ ১৫মিনিট ধরে প্রয়োগ করা হলে কোভিড-১৯-এর একই পরিবারভুক্ত ভাইরাসগুলো বেঁচে থাকতে পারে না। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ দিমিটার ম্যারিনোভ হাফপোস্টকে বলেন, মাস্কগুলো ইস্ত্রি করা যেতে পারে বা কোনও ওভেনে ১৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ২০ মিনিট ধরে রেখে দেয়া যেতে পারে।

মাস্ক কতক্ষণ পর ধোয়া উচিৎ?

প্রত্যেকবার ব্যবহারের পর মাস্ক ধুয়ে নিতে হবে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. ডেনিয়েল গ্রিফিন বলেন, আমরা যেভাবে আন্ডারওয়্যার ব্যবহার করি হাতে তৈরি মুখোশও ঠিক সেভাবেই ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ আন্ডারওয়্যার এবং মাস্ক যতবার ব্যবহার করবেন ততবারই ধুয়ে ফেলতে হবে।

শিশুদের কি মাস্ক পরতে হবে?

হেল্থ কানাডা বলেছে, দুই বছরের কম বয়সী শিশুকে মাস্ক পরানোর দরকার নেই। ছোট শিশুদের নাকের ফুটো সংকীর্ণ থাকে। সেজন্যে মাস্ক পরে শ্বাস নেওয়া তাদের জন্য কঠিন হতে পারে। তবে দুই বছর বা তার বেশি বয়সের বাচ্চাদেরও প্রাপ্তবয়স্কদের মতো পরিস্থিতিতে মাস্ক পরতে হবে।

দুই বছরের কম বয়সী শিশু ছাড়া আর কাদের মাস্ক পরা এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ?

হেলথ কানাডার মতে, শ্বাসকষ্ট আছে এমন যে কোনও ব্যক্তি এবং নিজে নিজে মাস্ক খুলতে সমস্যা হয় এমন লোকেদের মাস্ক পরা উচিৎ নয়। আর ঘুমন্ত ও অচেতন কোনও মানুষের মুখে মাস্ক পরিয়ে দেওয়াও উচিৎ নয়।

নিজের মাস্ক অন্যকে পরতে দেওয়া যাবে কি?

না, হেলথ কানাডা বলছে, একটি মাস্ক শুধু একজনকেই ব্যবহার করতে হবে। তবে ব্যবহারের পর সেটি  খুব ভালো করে ধোয়া হলে অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারে।