মহামারির সময় কানাডায় স্বল্প আয়ের এক-পঞ্চমাংশ চাকরি বন্ধ হয়ে গেছে, উচ্চ আয়ের মানুষ আরও বেশি মজুরি পেয়েছে

সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত

নভেম্বর ৩, ২০২০

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, অক্টোবর ৬, ২০২০ : মহামারির মধ্যে কানাডার অর্থনৈতিক অসাম্য বেড়েছে। সিআইবিসির এক নতুন বিশ্লেষণে এই তথ্য উঠে এসেছে।

গত ৫ অক্টোবর অর্থনীতিবিদ বেঞ্জামিন তাল ও ক্যাথারিন জাজ-এর প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, মহামারির সময় যত চাকরি হারিয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে কানাডার ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। খবর হাফিংটন পোস্টের। রিপোর্ট করেছেন ডেনিয়েল টেনসার।

তাল ও জাজ কানাডার শ্রমবাজারকে ‘অপ্রতিসম’ বলে বর্ণনা করেন Ñ যার কিছু অংশ খুবই ভালো করছে কিন্তু বাকি অংশ খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে।

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার সেপ্টেম্বরের চাকরির উপাত্ত প্রকাশের আগে এই রিপোর্ট প্রকাশ পায়। অর্থনীতিবিদরা ব্যাপকভাবে একমত হয়েছেন যে, গত গ্রীষ্মে খুব দ্রুতগতিতে নিয়োগদান প্রক্রিয়ার বিপরীতে স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার উপাত্তে চাকরির বাজারে ধীরগতির প্রতিফলন ঘটবে।

সার্ভিস কানাডার অফিসে করোনার কারণে চাকরীচ্যুতদের লাইন। ছবি: দি কানাডিয়ান প্রেস

প্রকৃতপক্ষে, সিআইবিসি ধারণা করছে, চাকরির বাজারের মন্থর প্রবৃদ্ধির হার হতে পারে মাসে ৫০ হাজার চাকরিÑ যা অর্থনীতির স্বাভাবিক সময়ের জন্য দৃঢ় গতিই বলা যায়, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এটিকে বলতে হবে খুব বেশি মন্থর গতি। কারণ বিবেচনায় রাখতে হবে যে, কানাডাকে এক কোটি ১০ লাখ কর্মসংস্থান করতে হবে। তাল ও জাজ-এর ভবিষ্যদ্বাণী হলো, চাকরির বাজার মহামারিকালের আগের পর্যায়ে আসতে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।

তারা দেখেছেন, উচ্চ আয়ের মানুষেরা মহামারি শুরুর পরও বেশ ভালো করছেন। আসলে তারা এত ভালো করছে যে, অনেক চাকরিতে সঙ্কট শুরুর আগের চেয়ে প্রতি ঘণ্টায় ৪০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি অর্থ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রতিঘণ্টায় ১৬ ডলার বা তার চেয়ে কম অর্থ দেয়া হতো এমন চাকরির প্রতি পাঁচটির মধ্যে একটি বন্ধ হয়ে গেছে।

খরচ করার মত সুযোগ বেশি ছিলো না বলে মহামারির সময় দেখা গেছে উচ্চ আয়ের মানুষের সঞ্চয় বেড়েছে। এখন বাড়ি বিক্রির পরিমাণ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছা এবং বাড়ির দাম দ্রুত বাড়ার ব্যাখ্যা পেতে ওই তথ্য সহায়ক।

সিআইবিসির অর্থনীতিবিদরা উল্লেখ করেন যে, “প্রকৃতপক্ষে, গত এপ্রিলে ঘোরতর সঙ্কটকালে পরিচালিত সিআইবিসির এক সমীক্ষায় বাড়ির মালিকদের ২৫ শতাংশ জানিয়েছিলেন যে, তারা স্থায়ী আয়ের উৎস হবে এবং সুদের হার সর্বকালের সর্বনিম্ন থাকবে এমন ধরণের বাড়িতে অর্থ বিনিয়োগ করতে চান।”

কিন্তু যারা দীর্ঘমেয়াদি লাভের আশায় বাড়ি কেনায় বিনিয়োগ করতে চান তারা ভাড়ার বাজারে কী ঘটছে সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে পারেন। ভাড়ার বাজার নিম্নমুখি। কারণ তরুণ ও স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে ভাড়া বাড়ির চাহিদা কম। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভার হচ্ছে দুটি নগরী যেখানে ভাড়ার হার দ্রুততম গতিতে কমছে। এ দুটি নগরীতে বছর শুরুর দিকে যে ভাড়া ছিলো এখন তার চেয়ে শত শত ডলার কমে বাড়ি ভাড়া দিতে হচ্ছে।

ডিগ্রিধারী ও মায়েরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত

তাল ও জাজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। মহামারির আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদের প্রতি পাঁচজনে একজন বেকার ছিল। এখন লকডাউনের পর সেটা দ্বিগুণ হয়েছে।

সিআইবিসির অর্থনীতিবিদরা লিখেছেন, “এটি হলো কোভিড সঙ্কটের আগে শ্রমবাজারে কাজের দক্ষতার ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসামঞ্জস্যের দৃষ্টান্ত। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীরা অসমানুপাতিক হারে নিম্ন যোগ্যতার চাকরিতে ঢুকতে বাধ্য হয়েছে। আর মহামারির সময় সেই পরিস্থিতির আরও দ্রুত অবনতি ঘটেছে।”

তারা দেখেছেন, শ্রমবাজারে নারীদের, বিশেষ করে সন্তান আছে এমন নারীদের বেশ কিছু অর্জন মহামারির সময় নস্যাৎ হয়ে গেছে।

মহামারির সময় পুরুষের চেয়ে নারীদের চাকরি যাবার সম্ভাবনা ছিল ১৪ গুণ বেশি। সিআইবিসির অর্থনীতিবিদরা এই বিষয়টিকে এমন বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করছেন যে, নারীদের প্রধান ভূমিকা ছিল অনেক পরিবারের প্রাথমিক সেবাদানকারী হিসাবে। শিশু সন্তান আছে এমন নারীদের কাজের সময় অন্য যে কোন গ্রুপের লোকেদের চেয়ে বেশি পরিমাণে সঙ্কুচিত হয়ে যায়।

কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় তরঙ্গ বড় আঘাত হানতে পারে

আগামী দিনগুলিতে চাকরির প্রবৃদ্ধির হার মন্থর হলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার শুক্রবারের রিপোর্টে বেকারত্বের হার কিছুটা হলেও কম থাকবে। এর কারণ হলো, মাধ্যমিক-উত্তর অনেক শিক্ষার্থী সেপ্টেম্বর মাসে তাদের স্কুলে ফিরে গেছে।

রয়্যাল ব্যাংক অব কানাডার অর্থনীতিবিদ নাথান জানজেন গত শুক্রবার এক ক্লায়েন্ট নোটে লিখেছেন, “সেপ্টেম্বরে শিক্ষার্থীরা যখন স্কুলে ফিরে গেছে এবং তারে একটা অংশ চাকরি খোঁজা বাদ দিয়েছে তখন বেকার শ্রমিকদের তালিকা স্বাভাবিকভাবেই অনেকটা ছোট হয়ে আসবে।”

জানজেন লিখেছেন, কিন্তু এর পরও কিছু অপ্রীতিকর বিস্ময় ঘটার ঝুঁকি রয়েই গেছে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় তরঙ্গের কারণে। কানাডায় এখন কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ চলমান।

“কয়েকটি প্রদেশে কোভিড-১৯ এর সাম্প্রতিক পুনরুত্থানের কারণে আবারও লকডাউনের মত ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে (এরইমধ্যে কুইবেকের কিছু শহরে এ ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে)। এর ফলে ২০২০ সালের শেষ তিন মাসে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় থাকা শিল্পগুলি বড় ধরণের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।”