মহামারিকালে স্বাস্থ্যখাতে কাজ করেছেন এমন কিছু আশ্রয়প্রার্থীকে পারমানেন্ট রেসিডেন্সি দিচ্ছে কানাডা

অক্টোবর 8, 2020

মন্ট্রিলে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নির্বাচনী এলাকার অফিসের সামনে শনিবার প্রতিবাদী জনতা সব অভিবাসী শ্রমিক ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসিকের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানায়। ছবি: গ্রাহাম হুফস/ দ্য কানাডিয়ান প্রেস

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ২৫ আগস্ট ২০২০:   ম্যাগডালা জিন পিয়েরে মিশেল দুবছর আগে কানাডায় আসেন। তিনি বলেন, এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা হুমকি দেয়ার পর তিনি হাইতি ত্যাগ করেন।

প্রথমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া খুব কঠিন হবে বলে তার মনে হয়। সেজন্যে অন্য অনেকের মত তিনিও পায়ে হেঁটে সীমান্ত পেরিয়ে কানাডায় চলে আসেন। কানাডা সরকার যখন তার আশ্রয় প্রার্থনার বিষয়টি পর্যালোচনা করছে তখন তিনি কুইবেকের একটি নার্সিং হোমে সহকারী হিসাবে কাজ করেন।

গত জুনে মন্ট্রিলের একটি বাড়িতে কাজ শেষে তিনি বলেন, “আমি আমার কাজ পছন্দ করি। তাদের সঙ্গে কথা বলি, এই পৃথিবী এবং এর বাইরেও তারা যে সময়টুকু কাটিয়ে যাচ্ছেন তার মধ্যে আমিই হলাম সেতুবন্ধন।”

মন্ট্রিলে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর নির্বাচনী এলাকার অফিসের সামনে শনিবার প্রতিবাদী জনতা সব অভিবাসী শ্রমিক ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসিকের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানায়। ছবি: গ্রাহাম হুফস/ দ্য কানাডিয়ান প্রেস

ব্যতিক্রমী অবদান

চলতি মাসের শুরুর দিকে কানাডার অভিবাসন মন্ত্রী ম্যাক্রো মেনডিসিনো ঘোষণা করেন যে, তার দেশ কিছু সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীকে পারমানেন্ট রেসিডেন্সি দেবে, যারা মিশেলের মত কোভিড-১৯ মহামারিতে গুরুতরভাবে সংক্রমিত হাসপাতাল বা দীর্ঘ সময়ের সেবাকেন্দ্রের মত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।

শ্রমিক হিসাবে যারা তাদের কাজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবে তাদের আশ্রয়প্রার্থনার আবেদন গ্রহণ করা হোক বা না হোক তারা কানাডায় থাকার অনুমতি পাবে।

মেনডিসিনো বলেন, “আমরা আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যতিক্রমী অবদানের বিষয়ে সত্যিই গুরুত্বারোপ করতে চাই যারা নিজেদের জীবন বিরাট ঝুঁকির মধ্যে নিপতিত করেছিল।” তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, এই প্রোগ্রাম কেবল সেইসব আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য যারা তাদের কাজের অংশ হিসাবে সরাসরি রোগীর সেবা করেছে।”

মিশেল বলেন, “আমার দেশে একটি প্রচলিত কথা আছে, আপনার জন্য যেটা ভালো নয় সেটা আমার জন্য ভালো হতে পারে। যা বলতে চাই সেটা হলো, মহামারি একটি ট্রাজেডি, কিন্তু তা কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে অগ্রগতির সূচনা করে দিয়েছে।”

সামনের কাতারে থাকা অভিবাসীরা

২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা হাজার হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে কানাডায় মিশ্র স্বাগত জানানো হয়েছে। কুইবেকে এখনকার মুখ্যমন্ত্রী ২০১৭ সালে বলেছিলেন, তাদের প্রদেশ “বিশ্বের সব দুঃখ যন্ত্রণা বহন করতে পারবে না।”

যাই হোক, কুইবেকের দীর্ঘমেয়াদের সেবা কেন্দ্রগুলোতে কর্মচারীর মারাত্মক ঘাটতি ছিলো এবং আশ্রয়প্রার্থনার আবেদন অনেক সময় বছরকাল ধরে বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় হাজারও আশ্রয়প্রার্থী সেখানে আর্দালী হিসাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে।

গত বসন্তে কুইবেকের বিশেষ করে মন্ট্রিলে ও আশেপাশের এলাকায় শত শত সেবাকেন্দ্রে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়লে অনেক অভিবাসীই ছিলেন ট্রাজেডির একেবারে কেন্দ্রস্থলে।

মিশেল বলেন, “ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এটা ছিলো দাবানলের মত।”

কানাডায় কোভিড সংক্রান্ত মৃত্যুর ৬০% শতাংশই ঘটেছে কুইবেকে- আর মৃতদের ৮০% শতাংশই সেইসব মানুষ যারা সেবাকেন্দ্রে থাকতেন বা কাজ করতেন। কিছু আবাসনে অসংখ্য মানুষ মারা গেছে।

মঙ্গলময় দেবদূত

লেগল্ট ২০১৭ সালের সেই বিরূপ মন্তব্যের পর এখন প্রাদেশিক সরকারের প্রধান। তিনি এবারের বসন্তে তার প্রতিদিনের করোনাভাইরাস নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সেবাকেন্দ্রের কর্মীদেরকে “মঙ্গলময় দেবদূত” বলে উল্লেখ করতে শুরু করেন।

এত কিছুর পরও তিনি প্রাথমিকভাবে সেবাকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলোতে কর্মরত আশ্রয়প্রার্থীদেরকে কানাডায় থাকতে দেয়ার জন্য অভিবাসী অধিকার ও অন্যান্য গ্রুপের পক্ষ থেকে যে আহবান এবং  দাবি তোলা হয় তা প্রতিহত করে আসছিলেন। গত মে মাসে লেগল্ট বলেন, “আমি দরোজা খুলে দিয়ে বলতে পারবো না যে, তুমি যদি অবৈধভাবে এসে থাকো এবং কাজ পেয়ে থাকো তাহলে এটা ঠিক আছে, আমি তোমাকে একজন অভিবাসী হিসাবে গ্রহণ করবো।”

মন্ট্রিলে বিক্ষোভকারীরা “সামনের সারির সেনানীদের প্রতি সমর্থন,” “অভিবাসী মঙ্গলময় দেবদূতদের প্রতি ধন্যবাদ” এবং “মঙ্গলময় দেবদূতদের মানবাধিকার দিতে হবে” এমন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে।

পরে লেগল্টের সুর ক্রমে নরম হয়েছে, আর এখন স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত আশ্রয়প্রার্থীদেরকে পারমানেন্ট রেসিডেন্সি দেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা সমর্থন করছে কুইবেকের সরকার।

আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর মিশেল মিশ্র অনুভূতি নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। তার অনুভূতিতে ছিলো স্বস্তির প্রকাশ কারণ তিনি শেষ পর্যন্ত কানাডায় তার অবস্থান সংহত করতে পারছেন। অবশ্য তিনি হতাশাও প্রকাশ করেন এজন্যে যে, তার অনেক সহকর্মী যারা সরাসরি রোগীদের সেবা করেননি তাদেরকে পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

তিনি বলেন, “যে নিরাপত্তা প্রহরী আমাদের জন্য দরোজা খুলে দিয়েছেন… পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণের যেসব কর্মী যারা আমাদেরকে একই সেবাকেন্দ্রে সুরক্ষিত থাকতে সহায়তা করেছেন তাদের কথা সরকার ভুলে গেছে।”