“পুলিশ কৃর্তক কৃষ্ণাঙ্গদের গ্রেফতার, বলপ্রয়োগ, গুলি করা বা হত্যা করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।”
কৃষ্ণাঙ্গরা নগরীর মোট জনসংখ্যার ৮.৮ শতাংশ, অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অভিযোগ তাদেরই বিরুদ্ধে
সেপ্টেম্বর 12, 2020
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : টরন্টোর পুলিশ আমেরিকান পুলিশের চেয়ে কম সাম্প্রদায়িক এমন একটি ধারণা মানুষের মধ্যে রয়েছে যা অন্টারিও মানবাধিকার কমিশনের (OHRC) প্রধানের মতে নিছক ‘জনশ্রুতি’। খবর কানাডিয়ান প্রেস এর।
OHRC’র দুটি রিপোর্ট প্রকাশ করে সংস্থার অন্তর্বর্তী প্রধান কমিশনার এনা চাধা বক্তব্য রাখছিলেন। রিপোর্টে দেখা গেছে, টরন্টোর কৃষ্ণাঙ্গ লোকেদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাহিনী “অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে” গ্রেফতার, অভিযোগ দায়ের এবং বলপ্রয়োগ করে থাকে।
গত ১০ আগস্ট ওই অনুষ্ঠানে চাধা বলেন, “টরন্টোতে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে পুলিশ কর্তৃক গুলি করার সম্ভাবনা গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনও শহরে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর সম্ভাবনার মতই অত্যধিক।” তিনি বলেন, “কানাডায় পদ্ধতিগত বর্ণবাদ বা কৃষ্ণাঙ্গ-বিরোধী বর্ণবাদ আছে কি নেই সেই বিতর্কের সময় আর থাকলো না।”
কমিশনের রিপোর্টে দেখা গেছে, “টরন্টোতে কৃষ্ণাঙ্গদের গ্রেফতার, অভিযুক্ত করা, বলপ্রয়োগ, আঘাত করা, গুলি করা বা হত্যা করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।”
এতে বলা হয়, কৃষ্ণাঙ্গরা নগরীর জনসংখ্যার মাত্র ৮.৮ শতাংশ হলেও মোট অভিযোগের তালিকার এক-তৃতীয়াংশই তাদের বিরুদ্ধে।
কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে টরন্টো পুলিশ সার্ভিসের বর্ণবাদী আচরণ ও বৈষম্য সম্পর্কিত মানবাধিকার কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্টের অংশ হিসাবেই এসব তথ্য উঠে এসেছে। “A Disparate Impact” বা “বিসদৃশ প্রভাব” শিরোনামের ওই রিপোর্ট প্রণয়নে টরন্টো পুলিশের ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজির অধ্যাপক স্কট ওয়ার্টলি (Scot Wortley) এই বিশ্লেষণে নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন, যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা “উল্লেখযোগ্য সংস্কার” এর তাগিদ দেয়। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, পুলিশের বলপ্রয়োগ ও গ্রেফতারের ঘটনায় সার্বিকভাবে কৃষ্ণাঙ্গদের “সংশ্লিষ্টতা অনেক বেশি”।
কমিশন ২০১৭ সালে অনুসন্ধান শুরু করে এবং পরের বছর প্রথম অন্তর্বর্তী রিপোর্ট প্রকাশ করে।
প্রথম অন্তর্বর্তী রিপোর্টে উদ্ঘাটিত হয় যে, ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যবর্তী সময়কালে টরন্টোতে পুলিশের হাতে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ হওয়া বা নিহত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো একজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির চেয়ে ২০ গুণ বেশি।
পুলিশের কার্যক্রম পরিদর্শনকারী প্রাদেশিক সংস্থা স্পেশাল ইনভেস্টিগেশনস ইউনিট ওই রিপোর্ট পরীক্ষাকালে তদন্তে আরও দেখতে পায় যে, পুলিশ অফিসার অনেক সময়ই কোনওরকম আইনগত ভিত্তি ছাড়াই কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে রাস্তায় থামায় বা আটক করে, অযৌক্তিকভাবে তাদের তল্লাশি করে, অপ্রয়োজনে গ্রেফতার করে এবং অনর্থক অভিযোগ দায়ের করে।
আইনজীবী এবং টরন্টো নগরীর কনফ্রনটিং এন্টি-ব্ল্যাক রেসিজম ইউনিটের ব্যবস্থাপক এন্থনি মরগান বলেন, “নগরীতে পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের তথ্যের কোনও সমস্যা নেই। আমাদের সমস্যা হলো জবাবদিহির।”
পুলিশ বাহিনী ও নগরীর পুলিশ সার্ভিসেস বোর্ড সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, তারা রিপোর্টের সুপারিশগুলো গ্রহণ করছে এবং পরে কমিশনের অনুরোধে জাতি-ভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে শুরু করেছে।
গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও বিশ্বের আরও অনেক স্থানে পুলিশ সার্ভিসের জন্য অর্থ বরাদ্দ বন্ধের দাবি ওঠে। একজন পুলিশ অফিসার ফ্লয়েডের গলায় প্রায় নয় মিনিট ধরে হাঁটু চাপা দিয়ে রাখলে তার মৃত্যু ঘটে।
টরন্টোতে প্রতিবাদকারীরা রেজিস করচিনস্কি-প্যাকুয়েট নামে ২৯ বছরের এক কৃষ্ণাঙ্গ নারীর মৃত্যুর ঘটনার উল্লেখ করে। তার অ্যাপার্টমেন্টে পুলিশের উপস্থিতির সময় রেজিস ব্যালকনি থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান। সমালোচনাকারীরা নগরীতে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ঘটনায় পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি জানায়।
করচিনস্কি-প্যাকুয়েট-এর পরিবার বলেছে, তারা তাকে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়ার জন্য পুলিশ ডেকেছিলেন। অন্যদিকে পুলিশ অফিসাররা বলেন, তারা সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে কল পেয়ে সেখানে যান।
স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন ইউনিট বলেছে, করচিনস্কি-প্যাকুয়েট-এর মৃত্যুর সময়কার পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা তদন্ত করছেন এবং এ মাসেই রিপোর্ট প্রকাশ করা হতে পারে।