তিন মাসে বিভিন্ন মসজিদে ৬বার হামলা, পুলিশের সক্রিয় ভূমিকার দাবি ইসলামী সংগঠনগুলির
অক্টোবর 8, ২০২০
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ১৮ আগস্ট, ২০২০। ইসলামি সংগঠনগুলো বলছে, সম্প্রতি বিভিন্ন মসজিদে কয়েক দফা হামলার ঘটনার পর মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকদের সুরক্ষায় টরন্টো পুলিশের আরও বেশি কিছু করার প্রয়োজন আছে। ওইসব ঘটনা বিদ্বেষপ্রসূত হামলা হিসাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি এবং সেই বিবেচনা থেকে তদন্তও করা হচ্ছে না।
নগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মসজিদ টরন্টোতে গত তিন মাসে ছয় দফা হামলা চালানো হয়েছে। দুটি মসজিদে তিন বার করে হামলার ঘটনা ঘটে। খবর হাফিংটন পোস্ট এর। রিপোর্ট করেছেন শেরিনা হ্যারিস।
এসব হামলার মধ্যে আছে মসজিদের ভেতরে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারা, জানালা ভেঙ্গে ফেলা এবং জানালা ও দেয়ালে বর্ণবাদী চিত্র এঁকে রাখা। গত সোমবার কে বা কারা মসজিদের জানালা ভেঙ্গে ফেলে। জানালাগুলো সদ্যই মেরামত করা হয়েছিলো। এখন মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে এগুলো তৃতীয়বারের মত মেরামত করতে হবে। মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডা (এমএসি) তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এসব তথ্য উল্লেখ করেছে।
সংগঠনটি বলেছে, “এখন এসব ঘটনা ঘটছে ভীতিকর হারে। আমরা পুলিশি তৎপরতার জন্য অপেক্ষার বিষয়টি আর মেনে নিতে পারি না।”
এএমসি মুসলিমদেরকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিতে কর্তৃপক্ষকে এখনই “পদক্ষেপ নেওয়ার” আহবান জানিয়ে বলেছে, টরন্টোর সবচেয়ে বেশি মানুষ আসা এই মসজিদে মুসলমানদের ভীতি প্রদর্শনের জন্যই এসব হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে হয়।
টরন্টোর পুলিশের মুখপাত্র জেনিফারজিৎ সিধু নিশ্চিত করেছেন যে, জুন মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত টরন্টোর দুটি মসজিদে চার দফা হামলার যে রিপোর্ট করা হয়েছে সে সম্পর্কে পুলিশ সচেতন আছে। তবে তিনি জানান, এসব হামলার সব ক’টিরই তদন্ত হয়েছে এবং কোনওটিই ঘৃণাপ্রসূত হামলা বলে বিশ্বাস করার কারণ নেই।
মিজ. সিধু বলেন, ২৯ জুলাই একটি মসজিদের জানালা দিয়ে পাটকেল নিক্ষেপ করার ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এএমসি জানায়, তারা অতি সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেছেন। কিন্তু পুলিশ বলছে, তারা এমন কোনও রিপোর্ট পায়নি।
কানাডার মুসলমানদের জাতীয় পরিষদের সিইও মোস্তফা ফারুক হাফপোস্ট কানাডাকে বলেন, “হামলার ঘটনাগুলোর তদন্তে পুলিশ যে প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে তা “পুরোপুরি অর্থবহ নয়।”
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে যেমনটা বোঝা যাচ্ছে সেটি হলো, প্রথম সন্দেহভাজন চিহ্নিত হবার কয়েক দিন পরই পুলিশ ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ নাকচ করে দেয়। এটাই “সমস্যা।”
ফারুক বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে এবং আমাদেরকে এখন পর্যন্ত কোনওরকম ইঙ্গিতও দেওয়া হয়নি যে অব্যাহত হামলা থেকে সুরক্ষা দিতে এবং নিরাপত্তার জন্য কী করা হচ্ছে।”
সম্প্রতি পুলিশের হাতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হত্যার ঘটনা এবং পুলিশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন কিছু ঘটনায় কৃষ্ণাঙ্গ, আদিবাসী ও জাতিগত কানাডীয় বা আমেরিকানের মৃত্যুর পর সমাজে পুলিশের ভূমিকা এবং প্রান্তিক কমিউনিটিগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিষয়ে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।
ফারুক বলেন, পুলিশের অতিরিক্ত তৎপরতা, যেমন, জাতিগত সম্প্রদায়ের লোকেদের বিরুদ্ধে পুলিশের সহিংস আচরণ এবং কম তৎপরতা দুটিই “একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ।”
তিনি বলেন, বর্ণবিদ্বেষ বা গোপন পক্ষপাতিত্বে উদ্বুদ্ধ হয়ে পুলিশ যে সচরাচর কীরকম অন্যায়ভাবে সহিংসতা ও পীড়নমূলক ব্যবস্থা নেয় সে বিষয়ে জাতিগত গোষ্ঠীগুলি উদ্বেগ প্রকাশ করলে তার সঙ্গে কোনও কোনও বিষয়ে পুলিশের কম তৎপর হবার একটি এলোমেলো সম্পর্ক রয়েছে।”
“আমি বলছি না যে, টরন্টোর পুলিশ সার্ভিস মসজিদ টরন্টোর ব্যাপারে কম যত্নবান। কিন্তু আমি বলতে চাই, বর্তমানে পুলিশের ভূমিকা যথেষ্ট নয়Ñ বরং তা নাটকীয়ভাবে অপর্যাপ্ত।” তিনি বলেন, মুসলিমদের রক্ষা এবং হামলা বন্ধে তিনি পুলিশের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট পরিকল্পনা দেখতে চান।
অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডাউ ফোর্ড গত মঙ্গলবার বলেন, হামলার ঘটনায় ন্যায্য বিচার হবে। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, “এসব জঘন্য কাজ ও আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। এসব হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আমরা খুঁজে বের করবো এবং ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি ন্যায়বিচার করা হবে।”
টরন্টোর কেন্দ্রস্থলের দায়িত্বে নিয়োজিত কাউন্সিলর ক্রিস্টিন ওয়ং-ট্যাম এক বিবৃতিতে বলেন, মসজিদ টরন্টোতে সংঘটিত সর্বসাম্প্রতিক ঘটনা শুনে তিনি ক্ষুব্ধ ও দুঃখিত।
এই মহিলা কাউন্সিলর বলেন, “আমাদের জনগণ যখন বৈশ্বিক মহামারির অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে এবং পদ্ধতিগত বর্ণবাদের গভীর শিকড় প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে তখন আমাদেরকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্তি ও ন্যায়বিচারের একটি ঐক্যবদ্ধ বার্তা নিয়ে পরস্পরের পাশে দাঁড়াতে হবে।”