টরন্টোতে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ৮৩% ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য অশ্বেতাঙ্গ

আক্রান্তদের মধ্যে ২১% ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ, অথচ তারা নগরীর মোট জনসংখ্যার মাত্র নয় শতাংশ

সেপ্টেম্বর 12, 2020

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ৩০ জুলাই ২০২০ : টরন্টোতে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৮৩ শতাংশই হলো কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর লোকজন। অথচ নগরীর মোট জনসংখ্যার মধ্যে তাদের সংখ্যা মাত্র অর্ধেক। সর্বশেষ এক পরিসংখ্যানে এই তথ্য পাওয়া গেছে। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন জেসিকা চিউং।

টরন্টোর মেয়র জন টোরি এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে ড. এইলিন ডি ভিলা সম্প্রতি নতুন তথ্য-উপাত্ত ও কোভিড-১৯এর সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এতে দেখা যায়, নগরীর বিশেষ বিশেষ জনগোষ্ঠীর এবং স্বল্পআয়ের মানুষেরা নোবেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে অসমানুপাতিক হারে।

ডি ভিলা বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের নগরীতে যারা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে বৃহত্তর অসাম্যের শিকার তাদের ওপরেই কোভিড-১৯-এর বড় ধরণের প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, নগরীতে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের ২১ শতাংশই কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মানুষ। যদিও তারা নগরীর মোট জনসংখ্যার মাত্র নয় শতাংশ।

একইভাবে, নগরীতে আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম এশীয় জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশ মানুষ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে। অথচ এদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র চার শতাংশ।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে এমন অশ্বেতাঙ্গ মানুষের সংখ্যা ৭১ শতাংশ।

ডি ভিলা অবশ্য বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া খুব কম সংখ্যক রোগীর তথ্য থেকেই এই সংখ্যাটি পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, তবে, নগরীতে সমাজ-জনগোষ্ঠীভিত্তিক উপাত্ত সংরক্ষণ করতে শুরু করার পর থেকে বহু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

টরন্টোতে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৮৩ শতাংশই হলো কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর লোকজন। অথচ নগরীর মোট জনসংখ্যার মধ্যে তাদের সংখ্যা মাত্র অর্ধেক।। ছবি: টরন্টো স্টার

স্বল্প আয় এবং বড় পরিবারের লোকেরাও সংক্রমিত হয়েছে

উপাত্ত থেকে দেখা যায়, স্বল্প আয় ও অনেক বেশি সদস্যের পরিবারগুলোও অসমানুপাতিক হারে আক্রান্ত হয়েছে।

নগরীতে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ৫১ শতাংশই স্বল্প আয়ের পরিবারের। যদিও নগরীর মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষকে স্বল্প আয়ের বলে মনে করা হয়।

পাঁচজন বা তারও বেশি সংখ্যক সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের যেসব লোক আক্রান্ত হয়েছে তাদের সংখ্যা  মোট আক্রান্তের ২৭ শতাংশ। যদিও মোট জনসংখ্যার মাত্র ২০ শতাংশ ওই ধরণের বড় পরিবারের সদস্য।

কোভিড-১৯ মোটেও সাম্যবিধানকারী নয় বরং বৈষম্যমূলক

ওয়েলেসলি ইন্সটিটিউটের সিইও এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্বের অধ্যাপক কেওয়ামে ম্যাকেঞ্জি (কধিসব গপকবহুরব) বলেন, মহামারি প্রান্তিক মানুষের বিদ্যমান সঙ্কট আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সিবিসি টরন্টোকে তিনি বলেন, “কিছু মানুষ মনে করে, কোভিড হবে এক মহা সমতা বিধানকারী। কিন্তু আসলে এটি তা নয়। কোভিড-১৯ বৈষম্য সৃষ্টি করে।”

তিনি বলেন, টরন্টোতে অশ্বেতাঙ্গ মানুষদের দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসের, মানসম্মত নয় এমন আবাসনে বসবাসের সম্ভাবনা বেশি। তাদের অপরাধ ও বৈষম্যের শিকার হবার এবং অনিশ্চিত কাজে নিয়োজিত থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। যথেষ্ট পুষ্টিসম্পন্ন খাবার পেতেও তাদেরই বেশি সমস্যা হয়।

তিনি বলেন, “এই সবগুলো বিষয়ই চরম স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়।”

ম্যাকেঞ্জি মহামারির শুরুর দিকে জাতি-ভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ না করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা-মুখর ছিলেন। তিনি বলেন, “উদ্ঘাটিত তথ্য পীড়াদায়ক হলেও তিনি এতে বিস্মিত হননি।”

অন্যান্য দেশে যেমন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রেও একই রকম পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা প্রায়শ মনে করি যে, এখানে, কানাডায় আমরা একেবারেই আলাদা এবং এখানে কৃষ্ণাঙ্গ-বিরোধী পদ্ধতিগত বর্ণবাদের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে মনে হয়, সম্ভবত আমাদের এখানেও বর্ণবাদ আছে।”

উপাত্তের সীমাবদ্ধতা

প্রকাশিত উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী, যারা স্বেচ্ছায় সামাজিক-জনতাত্ত্বিক প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়েছেন তাদের কাছ থেকে।

নগরীর স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, “টরন্টোর অধিবাসীরা করোনাভাইরাসে অসমানুপাতিক হারে আক্রান্ত হচ্ছে কিনা তা জানার জন্যই তারা জাতি-বর্ণগত পরিচয়, পরিবারের আয় ও আকার সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে।”

এই নগরীতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঘটনা শণাক্ত হবার তিন মাস পর ২০ মে থেকে এসব উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু করা হয়। প্রাপ্ত ফলাফলে ১৬ জুলাই পর্যন্ত সময়ের উপাত্ত সন্নিবেশিত হয়েছে।

এই সময়কালের মধ্যে নিশ্চিতভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত বা সম্ভাব্য রোগীদের আনুমানিক ২৭ শতাংশের সামাজিক-জনতাত্ত্বিক উপাত্ত নেই বিভিন্ন কারণে।

ডি ভিলা বলেন, এই উপাত্তে দীর্ঘকাল ধরে চিকিৎসা সেবার আওতাধীন এবং অবসর নিয়ে ঘরে থাকা বাসিন্দাদের তথ্যও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

তিনি জানান, সংস্থাটি আদিবাসী জনগণের ওপর মহামারির প্রভাব সম্পর্কিত উপাত্তও প্রকাশ করেনি কারণ, আদিবাসী সমাজের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে।

প্রয়োজন মেটানো

ডি ভিলা বলেন, কোভিড-১৯-এ অসমানুপাতিক হারে সংক্রমিত কমিউনিটিগুলোর চাহিদা পূরণের কাজ চলছে।

তিনি বলেন, এই চাহিদা পূরণের কাজে স্বল্পমেয়াদের ভিত্তিতে নির্দিষ্টকরণের মাধ্যমে করোনা টেস্ট করানো, বাড়তি যোগাযোগ রক্ষা করা এবং সামাজিক সহায়তাপ্রাপ্তি বাড়ানো, যেমন যথাযথভাবে কোয়ারেন্টিনের সুবিধা নেই এমন লোকেদের জন্য স্বেচ্ছামূলক আইসোলেশন সুবিধা দেওয়ার মত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থার মধ্যে নগর কর্তৃপক্ষ সাধ্যের মধ্যে আবাসন সুবিধা সৃষ্টি, কর্মসংস্থানের সুযোগলাভ এবং শিক্ষার সুযোগ পাওয়ার মত বিষয়গুলো থাকছে। তিনি আরও যোগ করেন, “পদ্ধতিগত বর্ণবাদ দূরীকরণের বিষয়েও আমাদের ব্যবস্থা নেয়ার দরকার আছে।”

ম্যাকেঞ্জি বলেন, নগর কর্তৃপক্ষ সামাজিক-জনতাত্ত্বিক উপাত্ত সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়ায় তিনি খুশি। তিনি বলেন, “আমরা অন্ধের মত চলছিলাম। আমাদের এ বিষয়ক কোনও উপাত্তই ছিলো না।”

তিনি বলেন, এখন যেটা দরকার সেটা হলো, স্বাস্থ্যপ্রযত্ন বিষয়ক যে কোনও ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের এই উপাত্ত কাজে লাগানো।

তিনি বলেন, “আমাদেরকে একটি সত্যিকারের নতুন স্বাভাবিক সময় ফিরিয়ে আনার সুযোগ হিসাবে বর্তমান ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে হবে।”

“আর নতুন স্বাভাবিক সময়টা এমন হতে হবে যেখানে আমাদের হাতে সামাজিক-জনতাত্ত্বিক উপাত্ত থাকবে এবং সব কিছু যাতে ন্যায়সঙ্গত হয় সেটা নিশ্চিত করতে আমাদের স্বাস্থ্যগত যে কোনও কর্মকাণ্ড যেন জ্ঞানভিত্তিক হতে পারে।”