ছেলে জেলে আছে, এই বলে মায়ের কাছ থেকে ৩২ হাজার ডলার নিয়ে গেলো প্রতারক
এপ্রিল ৯, ২০২০
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ১১ মার্চ ২০২০: অন্টারিওর একজন নারী জানিয়েছেন, তার কাছ থেকে প্রতারণা করে ৩২ হাজার ডলার নিয়ে গেছে প্রতারকরা। ছেলের আইনজীবী বলে পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ওই মহিলাকে ফোন করেন এবং তার ছেলেকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য অর্থ দিতে বলেন।
সু নামের ওই মহিলা বলেন, “কেউ একজন টেলিফোনে চিৎকার করছিলো এবং ভীতিকর কণ্ঠে বলছিলো, আই লাভ ইউ মম, কিন্তু আমি দুঃখিত, আমি জেলে আছি।” মহিলাটি নিজের নামের শুধু প্রথম অংশটাই প্রকাশ করতে চান। খবর সিটিভি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন প্যাট ফোরান।
সু বলেন, টেলিফোনকারী তার ছেলের নাম বলে এবং জানায় যে তার ছেলের গলা ভিন্নরকম শোনাচ্ছে কারণ সে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছিলো।
এর মুহূর্তকাল পড়েই এক ব্যক্তি টেলিফোন নিয়ে নিজেকে তার ছেলের আইনজীবী হিসাবে পরিচয় দেয়। লোকটি জানায়, তার ছেলে কিংস্টন জেলের সেলে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অন্য একটি গাড়িতে ধাক্কা দেয়া এবং একটি শিশুকে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। সুকে বলা হয় ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য।
সু বলেন, “আমাকে বলা হয়, এধরণের ঘটনা প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে, সেজন্যে আমি কোনও বন্ধু, স্বজন বা প্রতিবেশির সঙ্গে কথা বলতে পারবো না। যদি বলি তাহলে আমার ছেলের জামিন বাতিল হয়ে যেতে পারে।”
এরপর পাঁচ দিন ধরে কিস্তিতে টাকা দেয়ার জন্য বলে প্রতারক। সে জানায়, ওই টাকা তার ছেলের জামিন, সুরাসক্ত গাড়িচালকের মায়েদের একটি প্রতিষ্ঠানে অনুদান দেয়া এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি ট্রাফিক ক্যামেরার মেরামতে ব্যবহার করা হবে।
সু মোট ৩২ হাজার ডলার পাঠান।
সু সেই ধরণের প্রতারণার শিকার হয়েছেন, যেটিকে বলা হয়, বাবা-মা অথবা দাদাদের প্রতারণা। এতে প্রতারকরা কারো সন্তান হিসাবে ভান ধরে জরুরী ভিত্তিতে টাকার প্রয়োজনের কথা বলে। প্রতারকরা একইভাবে সবার কাছে ওই কথা বলে যে, দুর্ঘটনায় পড়ার কারণে তার কণ্ঠ ভিন্ন মনে হচ্ছে। এরপর দ্বিতীয় আরেক ব্যক্তি আইনজীবী বা পুলিশ অফিসারের ভূমিকা নেয় এবং জামিন পাওয়া ও আইনী বিভিন্ন ব্যয়ের জন্য অর্থ দাবি করে। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিকে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে বিষয়টি গোপন রাখতে বলা হয়।
সেই ঘটনার কথা মনে করে সু বলেন, তিনি ঘটনার ভেতর গলদ টের পাচ্ছিলেন, কিন্তু সেই মুহূর্তে তিনি কেবল নিজের ছেলেকে সাহায্য করা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছিলেন না। সু বলেন, “মনে হচ্ছিলো যেন আমি অটোপাইলটে চালিত বিমানের মত চলছিলাম। আমি ভাবছিলাম, এটা আমাকে করতেই হবে। তাকে নিরাপদে বের করে আনতে হবে। সে তো আমার ছেলে।”
শেষে সু যখন তার পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করেন তখন জানতে পারেন তার ছেলে ওই পুরো সময় ধরেই পুরোপুরি ভালো ছিলো। তিনি বলেন, ছেলে ভালো ছিলো জেনে তিনি স্বস্তি বোধ করেন। তবে এটা স্বীকার করতে হবে যে তিনি প্রতারকদের ৩২ হাজার ডলার দিয়েছেন। এই টাকাটা তিনি আলাদা করে সঞ্চয় করেছিলেন তার বাড়ি মেরামত এবং মৃত স্বামীর কবরে স্মৃতিফলক স্থাপনের জন্য।
সু বলেন, “আমার ছেলের নিরাপত্তার জন্য ওই অর্থ কোনও ব্যাপারই না। এখন আমাকে আবার নতুন করে সঞ্চয় শুরু করতে হবে।”
সু কুইবেকের একটি ঠিকানায় কুরিয়ারের মাধ্যমে বেশিরভাগ অর্থ নগদে পাঠিয়েছেন। সে ঠিকানা পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি।
আপনি যদি এধরণের কোনও ফোনকল পান যেখানে আপনার স্বজনদের কেউ বিপদে পড়েছে বলে জানানো হবে তাহলে সরাসরি তার কাছে যান এবং পরিবারের কারও কাছে সেটা গোপন করবেন না। ঠিকানা নিশ্চিত না হয়ে এবং পরে ঝামেলা হলে চিহ্ণিত করা যাবে এটা নিশ্চিত না হয়ে কাউকে কোনও টাকাকড়ি পাঠাবেন না।