কোভিড-১৯-এর কারণে কানাডার অভিবাসী গ্রহণের হার অর্ধেকে নেমে যেতে পারে

জুলাই 13, 2020

করোনা মহামারির কারণে কানাডার বার্ষিক অভিবাসী গ্রহণের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। এর ফলে অর্থনীতির ওপর যে প্রভাব পড়বে তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ছবি: গ্লোবাল নিউজ

বৈশ্বিক মহামারির কারণে কানাডার বার্ষিক অভিবাসী গ্রহণের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। এর ফলে অর্থনীতির ওপর যে প্রভাব পড়বে তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ নবাগতরাই এখন অর্থনীতির জ্বালানি শক্তির মতো।

২০১৯ সালে কানাডা পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হিসাবে তিন লাখ ৪১ হাজার অভিবাসীকে গ্রহণ করেছে এবং চলতি ২০২০ সালে আরও তিন লাখ ৭০ হাজার অভিবাসী গ্রহণের কথা ছিলো। কিন্তু এই সংখ্যা এক লাখ ৭০ হাজার কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত রয়েল ব্যাংক অব কানাডা’র (আরবিসি) এক রিপোর্টে একথা বলা হয়েছে। খবর দি স্টার.কম এর। রিপোর্ট করেছেন নিকোলাস কেউং।

বছরের প্রথম তিন মাসে কানাডায় আসা নবাগতদের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পারমানেন্ট রেসিডেন্ট, অভিবাসী কর্মী এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

করোনা মহামারির কারণে কানাডার বার্ষিক অভিবাসী গ্রহণের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। এর ফলে অর্থনীতির ওপর যে প্রভাব পড়বে তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ছবি: গ্লোবাল নিউজ

আরবিসি’র জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ এন্ড্রু এগোপসুইজ-এর বিশ্লেষণে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে, “অভিবাসীদের আগমন ব্যাহত হওয়ার প্রভাব সারাদেশের অর্থনীতিতেই পড়বে। কারণ দেশের বয়স্ক জনসংখ্যার বিপরীতে ভারসাম্য রক্ষা ও শ্রমশক্তির প্রবৃদ্ধির জন্য আমরা অভিবাসীদের ওপরই নির্ভরশীল।”

রিপোর্টে বলা হয়, “ক্ষতির মুখোমুখি হবে এমন সম্ভাব্য খাতগুলির মধ্যে রয়েছে: শিল্পে শ্রমিক ঘাটতি, শহর-নগরের বাড়িভাড়া ও আবাসন ব্যবসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেট ঘাটতি। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা এবং বর্তমান সঙ্কটকালে আর্থিক খাতে যে নজীরবিহীন ঘাটতি দেখা দিয়েছে তার প্রেক্ষিতে কানাডার দরকার একটি তরুণতর ও বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যা।”

অটোয়া চলতি বছর পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হিসাবে তিন লাখ ৭০ হাজার অভিবাসীকে দেশে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে গত মার্চে। ২০১৯ সালের তিন লাখ ৪১ হাজারের চেয়ে নতুন বছরের লক্ষ্যমাত্রা বেশি ছিলো। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার ঘটার ভয়ে কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত ভ্রমণের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে।

যদিও স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক এসব ব্যবস্থা কানাডায় শুরু হয়েছে মার্চের মাঝামাঝিতে কিন্তু সেই সময়েই বিশ্বের অনেক স্থানে অভিবাসনের ওপর এই মহামারির প্রভাব দেখা যাচ্ছিলো। এর ফলে তখন থেকেই ভিসা সার্ভিস এবং ভ্রমণ বাধাগ্রস্ত হয়।

বৈশ্বিক এই মহামারি খুব বেশি না হলেও অন্তত সামনের শরৎ পর্যন্ত যদি অব্যাহত থাকে তাহলে কী পরিণতি হতে পারে তারই একটি সূচক হতে পারে প্রথম তিন মাসের এই অভিবাসন সংখ্যা:

–  এক বছর আগের তুলনায় মার্চে পারমানেন্ট রেসিডেন্টের কোটায় আগতের সংখ্যা কমেছে ৩০ শতাংশ।

–  অস্থায়ী বিদেশি শ্রমিক কোটায় আগতদের সংখ্যা এক বছর আগের চেয়ে মার্চে কমেছে ৪৫ শতাংশ।

–  শিক্ষা ভিসা নিয়ে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা মার্চে কমেছে এক বছর আগের চেয়ে ৪৫ শতাংশ।

রিপোর্টে বলা হয়, “এই নিষেধাজ্ঞা যদি পুরো গ্রীষ্মকাল ধরে বহাল থাকে তাহলে আশা করছি, ২০২০ সালে কানাডা যে সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসীকে স্বাগত জানানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলো তার মধ্যে পারমানেন্ট রেসিডেন্ট কোটার এক লাখ ৭০ হাজার অভিবাসী কম আসতে পারে।”

“অস্থায়ী বিদেশি শ্রমিক কোটায় আসার ওপর কোনও বিধিনিষেধ না থাকলেও খুব কম সংখ্যক অভিবাসীই আসছে। গত মার্চে এই কোটায় আসা অভিবাসীর সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ছিলো ৩৫ শতাংশ কম। কৃষি খাতে, যেখানে অভিবাসন হচ্ছে শ্রমিক পাবার প্রধান উৎস, সেই কোটায় অভিবাসী আসা কমেছে আরও বেশি ৪৫%।

এন্ড্রু এগোপসুইজ সতর্ক করেন যে, কানাডার আন্তর্জাতিক শিক্ষা খাতও বিরাট ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে শিক্ষার্থী ভর্তির পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যেতে এবং সম্ভবত তারা ব্যাপকভাবে এবং স্থায়ীভাবেই দূরশিক্ষণের দিকে সরে যেতে পারে।

শুধু ২০১৮ সালেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কানাডার স্কুল, কমিউনিটি ও বৃহত্তর অর্থনীতিতে দুই হাজার ১৬০ কোটি ডলার যোগ করে।

যেমন, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০১০ সালের চেয়ে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। রিপোর্টে বলা হয়, কানাডায় এই মুহূর্তে যত সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আছে তাদের মধ্যে যদি মাত্র এক-পঞ্চমাংশও চলতি বছর কানাডায় শিক্ষা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট তিন ’শ কোটি ডলারের বাজেটের মধ্যে ২০ কোটি ডলারের ঘাটতি দেখা দেবে।

এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক-পঞ্চমাংশ কমে গেলে তাদের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং বাড়ির মালিকরাও রাজস্ব হারাতে পারে। শুধু তা-ই নয়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কমে গেলে তা পারমানেন্ট রেসিডেন্ট পাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।”

কানাডার অভিবাসী নির্বাচন ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি ক্রমবর্ধমান হারে অনুকূল হয়ে এসেছে বিশেষ করে যাদের কানাডীয় শিক্ষা সনদ ও কাজের অভিজ্ঞতা আছে। ২০১৯ সালে যারা কানাডায় পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হয়েছেন তাদের মধ্যে ১১ হাজার জন এদেশেই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসাবে পড়ালেখা করেছেন।

গত বছর কানাডার জনসংখ্যা বেড়েছে ১.৬ শতাংশ, যা সংখ্যায় পাঁচ লাখ ৮০ হাজার। রিপোর্টে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৮০ শতাংশেরও বেশি ছিলো অভিবাসী। এদিকে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশেরই বয়স অন্তত ৫৫ বছর। যেখানে অভিবাসীদের মধ্যে ৫৫ বছর বয়সীর সংখ্যা মাত্র আট শতাংশ।

রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, “মহামারির আগেও দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর কারণে অর্থনীতি যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তাতে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কানাডা অভিবাসনের ওপর নির্ভর করেছে। কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ফলে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার ছুঁতে যাচ্ছে। ফলে কানাডার শ্রমশক্তি বাড়ানো অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি জরুরী।”