কুইন্স ইউনিভার্সিটি আইন স্কুল থেকে জন এ ম্যাকডোনাল্ডের নাম অপসারণ করবে

ডিসেম্বর 3, 2020

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ১৯ অক্টোবর ২০২০ : কুইন্স ইউনিভার্সিটি বলেছে, তারা তাদের আইন স্কুল স্যার জন এ ম্যাকডোনাল্ড হল-এর নতুন নামকরণ করবে। যথেষ্ট বিচার বিবেচনা ও কয়েক মাস ধরে জনগণের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খবর সিবিসি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন লরা গ্লোকাওয়াকি।

দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর স্মারক হিসাবে বিদ্যমান সব সৌধ অপসারণের জন্য সারা দেশ থেকে জোরালো দাবি ওঠার পর অন্টারিওর দ্য কিংস্টন ইউনিভার্সিটি এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী দেশের আবাসিক স্কুল পদ্ধতির প্রবর্তক হিসাবেও স্বীকৃত।

প্রতিবাদের অংশ হিসাবে গত সপ্তাহে রেজিনায় ম্যাকডোনাল্ডের একটি ভাষ্কর্য থেকে নামফলক অপসারণ এবং গত গ্রীষ্মকালে মন্ট্রিলে তার একটি ভাষ্কর্য উপড়ে ফেলা হয়।

এছাড়া কিংস্টনে, যেখানে ম্যাকডোনাল্ড বেড়ে উঠেছিলেন, স্থানীয় একটি পার্ক থেকে তার মূর্তি সরিয়ে ফেলার দাবি ওঠে যদিও শহরের মেয়র এখন পর্যন্ত সে দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।

কুইন্স ইউনিভার্সিটি স্যার জন এ ম্যাকডোনাল্ড হল-এর নতুন নামকরণ করবে (কিম্বারলি জনসন/সিটিভি নিউজ অটোয়া)

আইন স্কুলে ডিন মার্ক ওয়াল্টারস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, যদিও আধুনিক কানাডার প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে ম্যাকডোনাল্ডের নাম “যথার্থতার সঙ্গেই উদযাপন” করা হয়, কিন্তু তার পুরো ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার উপেক্ষা করা চলে না।

ওয়াল্টারস বলেন, “তিনি ও তার সরকার আদিবাসী জনগণ ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিষয়ে কেমন ক্ষতিকর দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতি অনুসরণ করেছিলেন সে বিষয়ে এখন আমাদের অনেক ভালো ও সমৃদ্ধ বোঝাপড়া রয়েছে।” ইউনিভার্সিটির প্রিন্সিপাল ও ভাইস-চ্যান্সেলর প্যাট্রিক ডিন-এর সঙ্গে মিলে মি. ওয়াল্টারস বোর্ড অব ট্রাস্টির কাছে ওই পরিবর্তনের সুপারিশ পেশ করেন। সেটি গত সোমবার অনুমোদিত হয়েছে।

“আমাদের আলাপ-আলোচনায় যেটি স্পষ্ট হয়েছে সেটি হলো, ম্যাকডোনাল্ডের নামটি এমন এক সাংঘর্ষিক বার্তা দেয় যা আইন স্কুল ও কুইন্স-এর জনসমাজের বর্তমান মূল্যবোধ ও আশা-আকাক্সক্ষার সঙ্গে বিরোধাত্মক। এই স্কুলে আদিবাসী ও জাতিগত পরিচয়ের শিক্ষার্থীদের এমন অনুভূতি দিতে হবে যাতে তারা মনে করে যে তাদেরকে স্বাগত জানিয়ে সাদরে বরণ করে নেয়া হচ্ছে।”

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত নতুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিনের নির্দেশনা অনুযায়ী আইন স্কুল গত জুলাই মাসে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে। কমিটিকে নাম পরিবর্তনের জন্য ৪,৬০০ ব্যক্তির স্বাক্ষর সংবলিত একটি অনলাইন আবেদন বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দু’মাসের বেশি সময় ধরে ৩,০০০ এরও বেশি মানুষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ৬৫ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট প্রণয়ন করা হয় এবং তাতে নাম পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়।

‘নিরাপদ ও ন্যায্যতার অবকাশ’

সত্য ও সমন্বয় কমিশন (ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন) বলেছে, আবাসিক স্কুল ব্যবস্থা একটি “সাংস্কৃতিক গণহত্যা” সংঘটিত করেছে। এই ব্যবস্থার অধীনে বলপ্রয়োগে আত্তীকরণের প্রক্রিয়ায় প্রায় দেড় লাখ আদিবাসী (ইনুই, আদি জানি ও মেতিস) শিশুকে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। এছাড়া চীনা অভিবাসীদের ওপর মাথাপিছু কর আরোপের জন্যও ম্যাকডোনাল্ড দায়ী।

কুইন্স-এর আদিবাসী উদ্যোগ বিষয়ক অ্যাসোসিয়েট ভাইস-প্রিন্সিপাল মিজ. ক্যানোনহসাইওনি (জ্যানিস হিল) বলেন, সমন্বয় সাধনের এই যুগে নাম অপসারণের এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থেই।

বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, “নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত এটাই পুনঃনিশ্চিত করছে যে, কুইন্স এমন একটি নিরাপদ ও ন্যায্যতার অবকাশ সৃষ্টির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে সমাজের প্রত্যেক সদস্যের মনে নিজের বলে মনে করার জোরালো অনুভূতি থাকবে। আমরা যতই ওইসব ঔপনিবেশিক প্রতীক নিশ্চিহ্ন করতে থাকবো ততই আমরা সবার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ অর্জনের দিকে এগিয়ে যাবো।”

ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ কীভাবে নতুন নাম নির্ধারণের সিদ্দান্ত নেবে তা পরে প্রকাশ করা হবে। অনলাইনের যে আবেদনে ম্যাকডোনাল্ডের নাম অপসারণের দাবি জানানো হয়েছিল তাতে প্যাট্রিসিয়া হল-এর নামে নতুন নামকরণের প্রস্তাবও করা হয়। প্যাট্রিসিয়া হলেন মোহক-এর একজন আইনজীবী এবং কুইন্স-এর স্নাতক। কুইন-এর নতুন আইনজীবীরা যে স্বেচ্ছামূলক শপথ গ্রহণ করেন সেটি তার লেখা।