কানাডিয়ানরা অন্য যে কোনও দেশের চেয়ে অর্থনীতি নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন

নভেম্বর ৩, ২০২০

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০: কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে গত গ্রীষ্মে কানাডার অর্থনীতির ওপর আস্থার ক্ষেত্রে নাটকীয় মোড় পরিবর্তন ঘটেছেÑ বিশ্বজুড়েই আস্থায় চিড় ধরেছে কিন্তু কানাডায় সেটি অন্য যে কোনও দেশের চেয়ে গভীরতর। এক বৈশ্বিক জনমত জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর দি কানাডিয়ান প্রেস এর।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপে অংশ নেয়া ৬১ শতাংশ কানাডীয় দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে খারাপ বলেছেন। গত বছর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ বলেছিলেন ২৭ শতাংশ মানুষ। এবার সেকথা বললেন দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ।

জরিপে অন্তর্ভুক্ত ছিল ১৪টি দেশ। সব দেশেই অংশগ্রহণকারীদের একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। তার মধ্যে ১২টি দেশেই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনুভূতির পরিবর্তন ঘটেছে এমন মানুষের হার দুই অঙ্কের ঘরে। আর কানাডায় সেটি ৩৪ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে।

পিউ রিসার্চের অন্যতম সহযোগী এবং এই রিপোর্টের প্রধান লেখক মিজ. শ্যানন শুমাকার বলেন, “বিশ্বজুড়ে পরিচালিত আমাদের জরিপের আওতাধীন বেশিরভাগ দেশেই অর্থনীতি বিবর্ণ রূপ নিয়েছে। আর বেশিরভাগ জায়গাতেই জনগণ মনে করছে, সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা আসতে এখনও বাকি।”

“করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আপনার দেশ কতটা সফল এবং আপনার দেশের অর্থনীতি কেমন চলছে বলে মনে করেন এই দুটি প্রশ্নের সম্পর্কের বিষয়টিও এখানে আছে।”

শুমাকার উল্লেখ করেন যে, ২০১৯ সালে অর্থনীতি নিয়ে কানাডীয়দের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বর্তমান সময়ের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ভালো ব্যাখ্যা পাওযা যাবে নেতিবাচক অনুভূতির তীক্ষèতা থেকে।

তিনি আরও বলেন, “কানাডা হলো সেই দেশ যেখানে আমরা সর্বোচ্চ পরিমাণ নেতিবাচক মূল্যায়ন পেয়েছি। … কিন্তু ২০১৯ সালে অর্থনীতির অবস্থা খারাপ বলেছিল ২৭ শতাংশ মানুষ। এটা ছিল আমাদের জরিপের আওতাধীন দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্নÑ কেবল জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেনে গত বছর সংখ্যাটা এর চেয়ে কম ছিল।” যুক্তরাষ্ট্রে জরিপে অংশ নেয়া লোকেদের ৬৯ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে তাদের অর্থনীতি বেশ খারাপ করছে, সেই তুলনায় ৩০ শতাংশ মানুষ ভিন্নমত পোষণ করে। এই তথ্যটি মোট ১৪টি দেশের জরিপের ফলাফলে উঠে আসা তথ্যের অনুরূপ যেখানে গড়ে ৬৮ শতাংশ মন্দ বললে ৩১ শতাংশ ভিন্নমত পোষণ করে।

কোন দেশগুলো আশাবাদী?

কেবল ইউরোপের দেশগুলোতে বেশিরভাগ লোক মনে করে তাদের অর্থনীতি বেশ ভালো অবস্থায় আছে। এক্ষেত্রে ডেনমার্ক ও সুইডেন আছে শীর্ষে। সেখানে যথাক্রমে ৭৪ শতাংশ ও ৬৮ শতাংশ মানুষ দেশের অর্থনীতিকে ভালো মনে করে।

এই দুটি স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাদের নাটকীয়ভাবে ভিন্নতর মহামারি মোকাবিলার কৌশলের কারণে। সুইডেন প্রাথমিকভাবে খোলানীতি কৌশল অর্থাৎ হার্ড ইমিউনিটি বলে কথিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। অন্যদিকে ডেনমার্ক হলো ইউরোপের দ্বিতীয় দেশ যারা দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে।

“কিন্তু তার পরও”, পিউ রিসার্চের জরিপে বলা হয়, “(সুইডেনে) ২০২০ সালে প্রবৃদ্ধির হার মোটামুটি ৫ শতাংশ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আর ২০১৯ সালে দেশের অর্থনীতি খারাপ ছিল এমন মনে করা সুইডসদের সংখ্যা ১১ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।”

রিপোর্টে বিশ্বের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এক নিরস দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে যা মোটেই বিস্ময়কর নয়। আর উল্লেখ করার মত যে, এই চিত্র থেকে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রকে আলাদা রাখা হয়েছে।

কানাডায় জরিপে অংশ নেয়া লোকেদের ৪৮ শতাংশ বলেন, তারা আশা করেন যে, অর্থনীতির অবস্থা আগামী ১২ মাসের মধ্যে আরও ভালো হবে। সে তুলনায় ৩৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন বিপরীত কিছু ঘটবে। ১৭ শতাংশ মনে করে কোনওরকম পরিবর্তন আসবে না। যুক্তরাষ্ট্রে আশাবাদের চিত্র আরও জোরালো। ৫২ শতাংশ মানুষ মনে করেন তারা অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন। আর ৩২ শতাংশ মানুষ সেরকম কোনও সম্ভাবনা দেখেন না।

শুধু স্পেন, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ায় একই পর্যায়ের আশাবাদ দেখা গেছে।

মহামারি মোকাবিলায় নিজ দেশের গৃহীত ব্যবস্থার সঙ্গে যারা একমত নন, অর্থনীতির অবস্থা মন্দ বলে বর্ণনা করার সম্ভাবনাও সর্বত্র তাদেরই বেশি ছিল। কানাডায় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের ব্যবস্থাপনায় অসন্তুষ্ট লোকেদের ৮৫ শতাংশেরই অর্থনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। অন্যদিকে ৫৮ শতাংশ মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা অনুমোদন করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় অসন্তুষ্ট লোকজনের মধ্যে ৮৭ শতাংশই অর্থনীতির অবস্থা খারাপ বলে উল্লেখ করেছেন। আর ৫০ শতাংশ বলেছেন, সরকার এক্ষেত্রে ভালো কাজ করেছে।