কানাডিয়ানদের মানসিক স্বাস্থ্যের অভিজ্ঞতায় ‘দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন’ এসেছে

অক্টোবর 8, ২০২০

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ : কোভিড-১৯ কানাডীয়দের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এখনও বেশ তালগোল পাকাচ্ছে। গত জুলাইতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ফের শুরুর পর দেশে যে অপেক্ষাকৃত আশাবাদের সঞ্চার হয়েছিলো তা থিতিয়ে গেছে। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত মরনিউ শিপিল-এর সর্বশেষ মাসিক ইনডেক্স রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। খবর নাউটরন্টো.কম এর। রিপোর্ট করেছেন এনজো দিমাত্তিও।

রিপোর্টে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় তরঙ্গের আশঙ্কা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে উদ্বেগ তা ব্যক্তিগত কল্যাণ ও স্কুলে ফিরে যাওয়ার বিপরীতে জায়গা করে দিয়েছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে। আর এটি কানাডীয়দের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

রিপোর্টে যেটিকে বলা হয়েছে এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির “মন্থর কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন উন্নতি” আগস্টে এসে তাতে “দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন” এসেছে।

মরনিউ শিপিল ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এই ইনডেক্স প্রকাশ করে আসছে। সর্বশেষ ফলাফল হলো অনলাইনে তিন হাজার মানুষের ওপর চালানো সমীক্ষার ফলাফল। বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী বলেছেন তারা আবার কাজে যোগ দিয়েছেন। ২০ শতাংশ বলেছেন, তাদের কর্মঘণ্টা কমে গেছে। আট শতাংশ জানান, তারা বেকার।

রিপোর্টে দেখা যায়, বিভিন্ন স্তরের কানাডীয়দের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এতে দেখা যায়, উদ্বেগ, অবসাদগ্রস্ততা এবং বিচ্ছিন্নতা বোধ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে যদিও শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা অপরিবর্তিত রয়েছে।

শিক্ষা খাতে কর্মরত ব্যক্তি এবং মাধ্যমিক-উত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব পড়েছে। মাধ্যমিক-উত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব স্তরের কানাডীয়দের চেয়ে সমীক্ষায় সর্বনিম্ন অবস্থান পেয়েছে।

কোভিড-১৯ কানাডিয়ানদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এখনও বেশ তালগোল পাকাচ্ছে। ছবি : নাউটরন্টো.কম

“নতুন স্বাভাবিকতা”

রিপোর্টের লেখকেরা সতর্ক করেছেন যে, অনেক কানাডীয় কোভিড পরিস্থিতিতে সচ্ছন্দ থাকতে না পারার কারণে দেশে “নতুন স্বাভাবিকতা” বলে কিছু নেই।

মরনিউ শিপিল-এর গবেষণা বিষয়ক ভাইস-প্রেসিডেন্ট পলা অ্যালেন বলেন, “জনসমক্ষে মাস্ক পরার চেয়ে সম্মিলিত দায়িত্বশীলতা অনেক পিছিয়ে পড়েছে। আমাদের প্রত্যেকেরই পরিবার ও বন্ধুদের জীবনে পরিবর্তন আনার বিষয়ে মনোযোগী হওয়া এবং পেশাদারি সহায়তার দরকার আছে এমন লোকদের সহায়তায় এগিয়ে আসা উচিৎ।”

তিনি বলেন, অনেক কানাডীয়র জন্য সেপ্টেম্বর মাসটি বিশেষভাবে সঙ্কটজনক হতে পারে কারণ এ মাসে স্কুলে স্বাভাবিক শিক্ষাবর্ষ শুরু হলে তারা দৈনন্দিন জীবনের রুটিনে আরেকটি বড় ধরণের পরিবর্তনের মুখোমুখি হবে।

রিপোর্টের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দিক:

–   মানসিক স্বাস্থ্যে পুরুষের চেয়ে নারীদের অবস্থান নিচে

–    শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিরা সর্বোচ্চ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে ভালো আছে। লাতিন, দক্ষিণ বা মধ্য আমেরিকান এবং পূর্ব এশীয়দের অবস্থানও নিচুতে।

–    কুইবেক, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং মেরিটাইম অঞ্চলের মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বড় অবনতি ঘটেছে।

–    সন্তান নেই এমন কানাডীয়দের চেয়ে যাদের সন্তান আছে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা অপেক্ষাকৃত খারাপ।

–    মোটর গাড়ি শিল্প, রিয়েল এস্টেট এবং খনি ও তেল-গ্যাস খাতে কর্মরতদের মানসিক স্বাস্থ্যের স্কোর বেশ উঁচু।

–    সমীক্ষায় অংশ নেওয়া কানাডীয়রা যেসব অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো, উদ্বেগ (২৫%), শান্ত (১৯%) এবং হতাশ (১৯%)।

–         অংশগ্রহণকারীদের চার শতাংশ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচন এবং বর্ণবাদ বিরোধিতার মত বিষয়গুলি তাদের কাছে “সবচেয়ে বড় চিন্তার” বিষয়।