কানাডায় হাইরাইজ কন্ডোর সোনালী দিন কি অতীত হয়ে গেছে?

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কন্ডোর বাজার মন্থর হয়ে পড়বে বলে স্ট্যাটিস্টিক কানাডার দুটি নতুন রিপোর্টে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে

সেপ্টেম্বর 12, 2020

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কন্ডোর বাজার মন্থর হয়ে পড়বে বলে স্ট্যাটিস্টিক কানাডার দুটি নতুন রিপোর্টে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

তাহলে হাইরাইজ ভবনের সোনালী দিন কি অতীত হয়ে যাচ্ছে? স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা মনে করে, ঘটনা সেরকমই হতে পারে। সংস্থাটি চলতি সপ্তাহে দুটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যাতে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে, ঘরে বসে কাজ করার ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হওয়া এবং মহামারিকালে স্বল্পমেয়াদি ভাড়াবাড়ির ব্যাপক প্রচলনের বিষয়টি দীর্ঘ মেয়াদে কন্ডোর চাহিদা হ্রাস করতে পারে। খবর হাফিংটনপোস্ট এর। রিপোর্ট করেছেন ডানিয়েল টেনসার।

স্ট্যাটসক্যান চলতি সপ্তাহে বলেছে, “ঘরে বসে কাজ করার বিষয়টি ব্যাপকতর হয়ে ওঠায় আমরা হয়তো দেখবো যে বৃহত্তর আবাসন সুবিধার চাহিদা বাড়ছে যা এককভাবে একটি পরিবারের বসবাসের জায়গা হবে। এতে করে কন্ডোর চাহিদা পাল্টে গিয়ে আলাদা বাড়ির চাহিদা বাড়তে পারে।”

বাড়ি নির্মাতারা হয়তো ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসতে শুরু করবে। তারা তাদের নতুন বাড়িতে ঘরে বসে কাজ করার মত অতিরিক্ত অফিসের জায়গা রেখে  নকশা প্রণয়নের বিষয়ে প্রাধান দিতে পারে।

টরন্টো নগরীর কেন্দ্রস্থলে হাইরাইজ ভবনের দৃশ্য। ছবি: কন্ডোস.সিএ

চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত এক আউটলুকে সংস্থাটি পূর্বাভাস দেয় যে, দেশের তিনটি বৃহৎ আবাসন বাজার টরন্টো, মন্ট্রিল ও ভ্যাঙ্কুভারে কন্ডোর বাজার চাপের মুখে পড়বে।

সংস্থাটি বলেছে, “মহামারির আগে টরন্টোতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা নগরীর বাইরের এলাকাগুলোতে আবাসন খুঁজে নিচ্ছিলো। নগরী থেকে মানুষের এই বহির্মুখি জোয়ার কিছুটা খর্বিত হয় অভিবাসনের জোয়ারে। কিন্তু মহামারির কারণে অভিবাসনের পরিমাণ কমে গেছে। এতে করে মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদে কন্ডোর দর পড়ে যেতে পারে।”

টরন্টোর মতই ভ্যাঙ্কুভারে স্বল্পমেয়াদি ভাড়ার আবাসন সুবিধা ব্যাপকতর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে এবং তাতে স্বল্প ও মাঝারি মেয়াদে কন্ডোর দর পড়ে যেতে পারে।”

রিয়েল এস্টেট বিষয়ক পোর্টাল জুকাসা’র (Zoocasa) এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত জুনে টরন্টোর ভবনগুলোতে এয়ারবেডঅ্যান্ডব্রেকফাস্ট পদ্ধতির অনুকূল (Airbnb-friendly) কন্ডোর প্রাপ্তি ২৫৭ শতাংশ বেড়ে যায়। এক বছর আগে নগরীতে সার্বিকভাবে ভাড়ার বাড়ির প্রাপ্যতার তুলনায় এটি ছিলো ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি।

এদিকে, ক্রেতাদের একটি বড় অংশ নগরীর প্রান্তে বা একেবারেই নগরীর বাইরে বাড়ি খুঁজছেন। এটি এক নতুন প্রবণতা যেটি বিশ্বের অনেক শহরেই দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নিউ ইয়র্ক, লন্ডন এবং সান ফ্রান্সিসকোর উপসাগর এলাকা। টরন্টোতে যেমন অনেক ক্ষেত্রেই চলমান প্রবণতার ত্বরণ ঘটেছে।

অন্টারিও রিয়েল এস্টেট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে সাম্প্রতিক এক ন্যানোস জনমত সমীক্ষায় জবাব দানকারীদের ৬০ শতাংশই বলেছে, পল্লী এলাকায় বসবাস করাটা তাদের কাছে মহামারির আগের সময়ের চেয়ে এখন বেশি আবেদন রাখে বলেই তারা মনে করেন।

কটেজ কান্ট্রিতে জনস্রোত

রিয়েল এস্টেট-এর এজেন্টরা গ্রেটার টরন্টোর কাছে নগরীর উত্তরে মুসকোকা কটেজ-কান্ট্রি অঞ্চলের খবর জানাচ্ছে সোৎসাহে। এটি রিয়েল এস্টেট বোর্ডের আওতাধীন এলাকা এবং এখানে গত জুনে বিক্রির পরিমাণ এক বছর আগের এই মাসের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

লেকল্যান্ড-এর অ্যাসোসিয়েশন অব রিয়েলটরস-এর প্রেসিডেন্ট ক্যাথারাইন ইনিস এক বিবৃতিতে বলেন, “ওয়াটারফ্রন্টের সম্পত্তির জন্য বর্তমানে যে চাহিদা সেটা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। ইতিহাসের যে কোনও মাসের চেয়ে এই জুনের বিক্রির পরিমাণ সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়ে যাচ্ছে।”

আর টরন্টোর রিয়েল এস্টেট বোর্ড যখন আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছে যে গত জুনে বাড়ি বিক্রির পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির দামও প্রায় ১২ শতাংশ হারে বেড়েছে তখন এ শহরে কন্ডোর বাজারে বেশ মন্দা চলছে।

এক বছর আগের চেয়ে গত জুনে কন্ডোর বিক্রি ১৬.৩ শতাংশ কম অথচ বিচ্ছিন্ন বাড়ির বিক্রি বেড়েছে ৫.৬ শতাংশ।

এমএলএস হোম প্রাইস ইনডেক্সে দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক মাস ধরে টরন্টো, মন্ট্রিল ও ভ্যাঙ্কুভারে কন্ডোর দাম কমে গেছে বা এর বিকাশ থেমে গেছে।

সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে টরন্টো রিয়েল এস্টেট এজেন্ট ডাও ভুকাসোভিক উল্লেখ করেন যে, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়ির দাম অত্যন্ত চড়া হওয়ার কারণেও লোকেরা নগরীর বাইরে বাড়ি খুঁজতে শুরু করেছে।