কানাডায় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ মোকাবিলার পরিকল্পনা নেয়ার জন্য অটোয়ার প্রতি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আহ্বান

নভেম্বর ৩, ২০২০

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : টরন্টোর বাইরের একটি মসজিদে জাসিফকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনার পর কানাডায় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী গ্রুপগুলো ভেঙ্গে দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানায় মানবাধিকার সংগঠনগুলো। খবর কানাডিয়ান প্রেস এর। রিপোর্ট করেছেন নাথান দেনেত্তি । বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর একটি জোট গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দেশের শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী গ্রুপগুলোকে ভেঙ্গে দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণের আহবান জানিয়েছে। গতমাসে টরন্টোর আন্তর্জাতিক মুসলিম সংগঠনের মসজিদের বাইরে মারাত্মকভাবে ছুরিকাহত ৫৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি ওই খোলামেলা আহবান জানানো হয়। মসজিদের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ আসলিম জাসিফের মৃত্যুর ঘটনাটি বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ (হেট ক্রাইম) হিসাবে তদন্ত করার জন্য পুলিশের প্রতি দাবি জানানো হয়।

টরন্টো পুলিশের খুন বিষয়ক স্কোয়াডের প্রধান গত মাসে বলেন, ছুরিকাঘাতের পেছনে বিদ্বেষ কাজ করেছে তেমন কোনও প্রমাণ তদন্তকারীরা তাৎক্ষণিকভাবে না পাওয়ায় এটিকে কেবলই একটি সম্ভাব্যতা বলা যেতে পারে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর টরন্টোতে মোহাম্মদ আসলিম জাসিফের দাফন অনুষ্ঠানে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার পরিবারের সদস্যরা। কফিনের ওপর ঝুঁকে পড়ে কাঁদছেন তার মেয়ে বেবে জাসিফ (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)। ছবি: দি কানাডিয়ান প্রেস

যে সংগঠনগুলো ট্রুডোর কাছে খোলা চিঠি লিখেছে তারা বলেছে, ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা রোধে সরকারের সক্রিয় হওয়ার দরকার আছে।

তারা লিখেছে, “আমরা কানাডীয়রা, সে আদিবাসী, কৃষ্ণাঙ্গ, মুসলিম, ইহুদি, শিখ, খ্রিস্টান বা অন্য কোন ধর্মের এবং অশ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের যা-ই হই না কেন, আমরা আক্রান্ত হচ্ছি, আমাদের ঘরে, আমাদের উপাসনালয়ে এবং আমাদের সমাবেশে। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী সংগঠনের হাতে আমরা হামলার শিকার হচ্ছি।”

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে, ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিমস, ওয়ার্ল্ড শিখ অরগানাইজেশন, দ্য সেন্টার ফর ইসরায়েল অ্যান্ড জুইশ অ্যাফেয়ার্স, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং দ্য কানাডিয়ান এন্টি-হেট নেটওয়ার্ক।

সব রাজনৈতিক দলের প্রতি সাহায্যের আহবান

সংগঠনগুলো শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী গ্রুপগুলো ভেঙ্গে দেয়ার একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ওই ধরণের উগ্র গ্রুপগুলোর মোকাবিলায় সহায়তার জন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনগুলো। তারা লিখেছে, “আমরা সরকারের সঙ্গে চলমান সংলাপের অপেক্ষায় আছি যাতে এই মুহূর্তে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।”

পুলিশ গতমাসে বলেছিল, ১২ সেপ্টেম্বর জাফিস যখন মসজিদের বাইরে বসে ছিল তখন তার ওপর হামলা চালিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়।

গুইলারমে ‘উইলিয়াম’ ফন নিউটিজেম (৩৪)। এই লোকটি মোহাম্মদ আসলিম জাফিসকে ছুরিকাঘাত করার দায়ে অভিযুক্ত। ছবি: Guilherme Von Neutegem/Facebook)গুইলারমে ‘উইলিয়াম’ ফন নিউটিজেম (৩৪)। এই লোকটি মোহাম্মদ আসলিম জাফিসকে ছুরিকাঘাত করার দায়ে অভিযুক্ত। ছবি: Guilherme Von Neutegem/Facebook)

জাফিসকে হত্যার দায়ে গুইলারমে ‘উইলিয়াম’ ফন নিউটিজেমের বিরুদ্ধে ফার্স্ট ডিগ্রি খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তকারীরা গতমাসে বলেছে, হত্যার কোনও উদ্দেশ্য কিংবা হত্যার শিকার ব্যক্তি ও ঘাতকের মধ্যে কোনওরকম সম্পর্ক জানা যায়নি।

কানাডার এনটি-হেট নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছে যে, সামাজিক মাধ্যম ইউটিউবে ডরষষরধস ঠড়হ ঘবঁঃবমবস নামের একটি অ্যাকাউন্টে এমন স্তুতিগান ও প্রতীক রয়েছে যেগুলো হত্যার উস্কানি দেয় এমন একটি নয়া নাৎসি গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ওই নেটওয়ার্ক আরও অভিযোগ করেছে যে, একই নামের অ্যাকাউন্ট থেকে টুইটারে একটি শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী গ্রুপকে অনুসরণ করা হয়। এই অ্যাকাউন্টটি খুনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরই কিনা কানাডিয়ান প্রেস তা খতিয়ে দেখেনি।