কানাডায় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে হুমকি বাড়ছে : আরসিএমপি

জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ১৩০টি হুমকির ঘটনা ঘটেছে যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১০০টি

সেপ্টেম্বর 12, 2020

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে হুমকির ঘটনা ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আরসিএমপির তথ্যে এমনটাই জানা গেছে। খবর সিবিসি নিউজের।

পুলিশ বাহিনীর প্রোটেক্টিভ পুলিশিং ইউনিট চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে ট্রুডো ও তার মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে হুমকির ১৩০টি ফাইল খুলেছে। এইসংখ্যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১০০টি। ২০১৯ সালের পুরো বছরে আরসিএমপি এধরণের ২১৫টি হুমকির ঘটনা লিপিবদ্ধ করে।

হুমকি বাড়ার এই পরিসংখ্যান প্রথম প্রকাশ করে টরন্টো স্টার পত্রিকা।

আরসিএমপি হুমকির ধরণ প্রকাশ করবে না তবে তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কিছু ঘটনার উল্লেখ রয়েছে যাতে কিছু লোক শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে হয়রানি ও সম্ভাব্য সহিংসতা চালানোর হুমকি দিয়েছে বলে বলা হয়।

অটোয়ার রিদাউ হলের সামনে দাঁড়ানো কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। ছবি : সিটিভি

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পর্যটন, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রী লিসা ম্যাকলোড-এর একজন মুখপাত্র সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেন, বছরের মধ্যে মন্ত্রী দ্বিতীয়বারের মত পুলিশের পাহারায় রয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়,“নারী রাজনীতিকরা যে হয়রানির শিকার হন সে বিষয়ে সিএফআরএ’কে সাক্ষাৎকার দেবার পর হুমকি দিয়ে ই-মেল পাঠানো এবং অটোয়ায় তার ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষতি করার ব্যাখ্যাহীন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী ম্যাকলোড আবারও পুলিশি পাহারায় রয়েছেন, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি।”

২০১৯ সালে প্রদেশের অটিজম সহায়তা তহবিলে অর্থ বরাদ্দ দেয়ার পদ্ধতি পরিবর্তনে তার ভূমিকার জন্য যে প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া ঘটে তার প্রেক্ষিতে ম্যাকলোড সর্বশেষ পুলিশি নিরাপত্তা নিয়েছিলেন। তখন একজন ৪১ বছর বয়সী নারীকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক হয়রানি এবং মন্ত্রীর বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে উদ্ঘাটিত এক ভিডিওতে এ ব্যক্তিকে অবকাঠামো ও কমিউনিটিস বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথারিন ম্যাককেনার নির্বাচনী এলাকার অফিসে একজন কর্মচারির বিরুদ্ধে অশালীন ভাষায় চিৎকার চেঁচামেচি করতে দেখা যায়। এই ঘটনায় অটোয়ার পুলিশ বিভাগ হেট ক্রাইমের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করে।

সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ৯০ মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি অটোয়া সেন্টারে এমপির অফিসের দরজার সামনে এসে কলিং বেল চাপে। একজন মহিলা কর্মচারী দরজা খুলে লোকটিকে অফিস এখন বন্ধ বলে জানালে লোকটি অশ্লীল ভাষায় চিৎকার করতে থাকে। এক পর্যায়ে মহিলা কর্মচারী দরোজা বন্ধ করে দিতে গেলে লোকটি ম্যাককেনাকে নারীর জননাঙ্গের সঙ্গে তুলনা করে গালি দেয়।

ম্যাককেনা এসব চিৎকার চেঁচামেচিকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এধরণের ঘটনা অহরহই ঘটে, যদিও তা পুলিশের কাছে কমই জানানো হয়।

তিনি বলেন, “এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শুধু আমাকে, আমার কর্মচারী বা পরিবারের সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটলো তা নয়। রাজনীতিকদের নিয়ে প্রায়শই এধরণের ঘটনা ঘটে, কখনও নারী রাজনীতিকদের সঙ্গে।”

গত শরতে পুননির্বাচিত হবার পর ম্যাককেনার নির্বাচনী কার্যালয়ের জানালায় তার ছবিতে রঙ স্প্রে করে একই রকম নোংরা বিষয় চিত্রিত করা হয়।

রিদাউ হলের অনুপ্রবেশকারী

জুলাই মাসে রিদাউ হলের গেট উড়িয়ে দিয়ে পিকআপ ট্রাক নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ার ঘটনায় ম্যানিটোবার বাউসম্যান-এর কোরে হুরেনকে গ্রেফতার করা হয়। এই রিদাউ হল এলাকায় গভর্নর জেনারেলের আবাসিক ভবন রয়েছে এবং বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারেও এখানেই অবস্থান করছে।

কোরে হুরেন কানাডার নিরাপত্তা বাহিনীর রিজার্ভিস্ট। পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় সে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। তার কাছে ছিল একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, দুটি শটগান এবং চারটি ছুরি। সিবিসি নিউজ জানায়, তার কাছে বেশ কিছু পরিমাণ গুলিও ছিল।

হুরেনের বিরুদ্ধে মামলায় ২২টি অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে হুমকি উচ্চারণ করার অভিযোগ আছে। আরসিএমপির জাতীয় নিরাপত্তা টিমকে ওই ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে আভাস দিয়েছিলেন প্রিভি কাউন্সিলের প্রাক্তন শীর্ষ আমলা মাইকেল ওয়েরনিক। গত বছর হাউজ অব কমন্স কমিটির এক সভায় তিনি সতর্ক করেছিলেন যে, কানাডার রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এতটাই তলিয়ে গেছে বলে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যাতে গুপ্ত হত্যার চেষ্টা পর্যন্ত ঘটে যেতে পারে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়েরনিক এমপিদের মিটিংয়ে বলেন, “প্রকাশ্য আলোচনাতেও লোকেরা যখন ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ এবং ‘বিশ্বাসঘাতক’এর মত শব্দ উচ্চারণ করে তখন আমি তাদের উস্কানিমূলক আলোচনা সহিংসতায় পর্যবসিত হবার আশঙ্কা করি।” তিনি বলেন, “ওইসব শব্দই গুপ্ত হত্যার দিকে ঠেলে দেয়। আমি উদ্বিগ্ন যে, এই দেশে এবছর নির্বাচনী প্রচারণার সময় কেউ হয়তো কাউকে খুন করতে যাচ্ছে।”

সিবিসির দি হাউস অনুষ্ঠানে এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে ওয়েরনিক বলেন, দায়িত্বে থাকার সময়ে কানাডার রাজনীতিকরা যে অসদাচরণ ও সহিংস হুমকির মুখোমুখি হন তার প্রকৃত পরিমাণ জানলে কানাডাবাসীরা মর্মাহত ও শঙ্কিত হবেন।”

সিবিসির পাওয়ার অ্যান্ড পলিটিকস অনুষ্ঠানে গত বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে ম্যাককেনা বলেন, তিনি এখন যে অসদাচরণের মুখোমুখি হচ্ছেন রাজনীতিতে ঢোকার আগে সে বিষয়ে তিনি প্রস্তুত ছিলেন না।”

তিনি বলেন, “এখন আমি আর মুখচোরা লাজুক নই। আমি তীব্র বিতর্কে লিপ্ত হতে পারি। যদিও আমার মনে হয়, যে পরিমাণ ঘৃণা এবং ক্ষুব্ধ সমালোচনা ও অসদাচরণ পাচ্ছি সেটা আশা করিনি।”

ম্যাককেনা বলেন, জনগণকে রক্ষার জন্য বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক পদক্ষেপ অবশ্যই নিতে হবে। এর মধ্যে সামাজিক মাধ্যমের কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকতে পারে।

তিনি বলেন, “আমরা কেমন সমাজ চাই সে বিষয়টি তুলে ধরা খুবই জরুরী। আমি রাজনীতিতে এসেছি গুণগত পরিবর্তন আনার জন্য… এখানে কীভাবে ক্ষুব্ধ সমালোচনা ও অসদাচরণ করা হয় সে বিষয়ে কথা বলার জন্য নয়। কিন্তু যতক্ষণ আমরা এ বিষয়ের সুরাহা করতে পারছি ততক্ষণ প্রকৃত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সামনে নিয়ে আসা কঠিন হবে।”