কানাডায় এশীয়বিরোধী হেট ক্রাইম বৃদ্ধির নিন্দা করেছেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো

ভ্যাঙ্কুভার প্রদেশের এশীয় কমিউনিটির বিরুদ্ধে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় চলতি বছর হিংসাজনিত অপরাধের সংখ্যা প্রায় আট গুণের কাছাকাছি বেড়েছে

জুন 16, 2020

২২ মে, ২০২০: করোনা মহামারির সময়ে এশীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয়দের বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত অপরাধের সংখ্যা বিপুলভাবে বেড়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত ২২ মে এর নিন্দা করেছেন।

প্রতিদিনের সংবাদ সম্মেলনে ট্রুডো বলেন, “ঘৃণা, সহিংসতা ও বৈষম্যের কোনও জায়গা কানাডায় নেই। কানাডীয় হিসাবে আমরা যেরকম, এরা (ঘৃণা, সহিংসতা ও বৈষম্যকারীরা) সেরকম নয়।”

তিনি স্বীকার করেন যে, চলতি বসন্তে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ভবন ও মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে এবং অনেক মানুষ মৌখিকভাবে গালাগালি ও শারীরিক হামলার শিকার হয়েছেন।  খবর হাফিংটন পোস্টের। রিপোর্ট করেছেন সামান্থা বিটি।

করোনা মহামারির সময়ে এশীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয়দের বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত অপরাধের সংখ্যা বিপুলভাবে বেড়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত ২২ মে এর নিন্দা করেছেন। ছবি : গেটিইমেজ

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সারাদেশের এশীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয়দের বলছি, জেনে রাখুন, আমরা সবাই আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। ঘৃণা আমাদের মাঝে বিভেদ তৈরি করবে, এমনটা আমরা হতে দেবো না।”

ট্রুডোর এসব মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাজাত্যবোধসঞ্জাত ও বর্ণবাদী টুইট বার্তা এবং নোভেল করোনাভাইরাসকে “চীনা ভাইরাস” বা “উহান ভাইরাস” বলে অভিহিত করার দৃষ্টান্তের একেবারেই বিপরীত। এসব পরিভাষার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে এশীয় কমিউনিটিকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। আর এর ফলশ্রুতিতেই পরিকল্পিতভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

চলতি মহামারির সময়কালে আমেরিকায় এশীয়-আমেরিকানদের ওপর শারীরিক হামলা ও মৌখিকভাবে গালাগালির ১৭০০ টিরও বেশি ঘটনা ঘটেছে বলে শুধু পুলিশের কাছেই রিপোর্ট করা হয়েছে।

কানাডায় যারা নিজেদের কমিউনিটিতে সহিংসতা ও প্রকাশ্য বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন সেইসব কানাডীয়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ট্রুডো।

ট্রুডো বলেন, “যেখানেই বর্ণবাদের দেখা পাওয়া যাবে সেখানেই আমাদের সোচ্চার হওয়া দরকার যাতে আমরা এটা বন্ধ করতে পারি।”

ভ্যাঙ্কুভার পুলিশ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার একই সময়ে এশীয় কমিউনিটির বিরুদ্ধে প্রায় আট গুণ বেশি ঘৃণাজনিত অপরাধের তদন্ত করছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এধরণের অপরাধ এতটা বেড়েছে।

ভ্যাঙ্কুভার পুলিশ বলছে, তারা এশীয়-বিরোধী ২৯টি প্রত্যক্ষ হামলার ঘটনা নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে জাতিগত পরিচয় নিয়ে কটূক্তি, ভাঙচুর ও আঘাত করার মামলা আছে। গত বছর একই সময়ের মধ্যে এধরনের মাত্র চারটি ঘটনা ঘটেছিলো। ডেপুটি চিফ কনস্টেবল হাওয়ার্ড চাও শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। এছাড়াও পুলিশ আরও ১০টি মামলার তদন্ত করছে যেগুলি তাদের ভাষায় ঘৃণাপ্রসূত অপরাধ বা হেট ক্রাইম হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে।

চাও বলেন, “যে বিষয়টি বিশেষভাবে বেদনাদায়ক বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেটি হলো চায়নাটাউনের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত স্থাপনাগুলোয় ঘৃণাপ্রসূত ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালানো। এটি হচ্ছে এমন একটি জায়গা যেটি আমাদের নগরীর সত্যিকারের পরিচয় তুলে ধরতে সহায়ক। এমন একটি সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এধরণের অপরাধের ঘটনা সত্যিই মর্মান্তিক।”

এর আগে চলতি গ্রীষ্মেই ভ্যাঙ্কুভার পুলিশ নগরীর পূর্ব-এশীয় কমিউনিটির বিরুদ্ধে হেট ক্রাইম ঘটতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছিলো। পুলিশ জানায়, এক ব্যক্তি একটি বাসস্টপে একজন এশীয় নারীর দিকে এগিয়ে আসে এবং তার মুখে ঘুষি মারে। পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “হামলার ঘটনাটি সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতেই ঘটেছে বলে মনে হয়, কারণ হামলার শিকার ও হামলাকারীর মধ্যে আগে থেকে দৃশ্যত কোনও যোগাযোগ ছিলো না।”