কানাডায় আবাসনের অধিকার সম্পর্কে যা কিছু জানতে হবে

এপ্রিল ৯, ২০২০

কানাডায় নবাগত একটি পরিবারকে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্য ছয় মাসের ভাড়া অগ্রিম চেয়েছে বাড়িওলা। কারণ এর আগে তাদের কানাডায় বাড়ি ভাড়া নেওয়ার কোনও রেকর্ড নেই, কানাডায় ঋণ বা পেশাদারির কোনও সনদও ছিলো না। আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসকারী একজন সিঙ্গেল মাদারকে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বাড়ির মালিক কারণ ওই নারীর সন্তান আছে এবং সে সামাজিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। একটি তরুণীকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়নি কারণ তার পূর্ণকালীন চাকরির মেয়াদ এখনও এক বছর পুরো হয়নি।

উপরে বর্ণিত এসব দৃশ্যচিত্রের মধ্যে মিল কোথায়? মিল হলো, এগুলোর সবই আবাসনসংশ্লিষ্ট বৈষম্য।

কানাডার মানবাধিকার আইনে আবাসন নিয়ে বৈষম্য করা ১০০ ভাগ অবৈধ। আইনে বলা আছে যে, কানাডায় প্রত্যেক ব্যক্তির সমান সুযোগ থাকতে হবে এবং অন্য নীতিমালার পাশাপাশি প্রত্যেকেই সবরকম বৈষম্যমুক্ত পরিবেশে বসবাস করবে।

এই প্রতিবেদনে আবাসন নিয়ে নবাগতরা যেসব অভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন সে সম্পর্কে আলোকপাত করার পাশাপাশি আবাসন বিষয়ে উল্লেখিত এক বা একাধিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে আপনার আবাসন ও আইনগত অধিকারের কোন বিষয়গুলো জানা দরকার সে বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে।

পরিস্থিতি ১: ক্রেডিট রেটিং, কানাডায় বাড়িভাড়ার আগের উদাহরণ অথবা পেশাগত রেফারেন্স না থাকার কারণে কোনও বাড়িওলা যদি আপনাকে বাড়ি ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানান। যদি তারা বলেন যে, আপনাকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া যেতে পারে যদি ১২ মাসের ভাড়া অগ্রিম দিয়ে দেন।

কানাডার মানবাধিকার আইনে আবাসন নিয়ে বৈষম্য করা ১০০ ভাগ অবৈধ। আইনে বলা আছে যে, কানাডায় প্রত্যেক ব্যক্তির সমান সুযোগ থাকতে হবে এবং অন্য নীতিমালার পাশাপাশি প্রত্যেকেই সবরকম বৈষম্যমুক্ত পরিবেশে বসবাস করবে। ছবি: 1top.org

আপনাকে যা জানতে হবে:

বাড়ি ভাড়ার আগের রেকর্ড বা ক্রেডিট রেটিং না থাকা অথবা সংশ্লিষ্ট নথিপত্র যোগাড় করা সম্ভব নয় বলে কাউকে বাড়ি ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানানো বাড়িওলার দিক থেকে বৈষম্যমূলক। বাস্তবতা হলো, আগের বাড়িওলার রেফারেন্স এবং ক্রেডিট রেটিং না থাকা আর দুর্বল রেফারেন্স ও দুর্বল ক্রেডিট রেটিং থাকা মোটেই এক কথা নয়। সম্ভাব্য ভাড়াটের কাছে কোনও রেফারেন্স বা ক্রেডিট রেটিং না থাকলে বাড়িওলাকে অবশ্যই অন্য কোনও বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। কিন্তু কানাডায় প্রফেশনাল রেফারেন্স পাবার বা ক্রেডিট রেটিংয়ের সুযোগ নেই এমন নারী, নবাগত, তরুণ ইত্যাদি বিশেষ শ্রেণির লোকেদের সঙ্গে বৈষম্য করা যাবে না।

ক্রেডিট রেটিং না থাকার কারণে কোনও বাড়িওলা ভাড়া দিতে অস্বীকার করলে কি করতে পারেন:

উপরে যেসব তথ্য দেয়া হলো সেগুলো বাড়িওলাকে বলতে পারেন অথবা আপনার পক্ষ থেকে কথা বলার জন্য কোনও হাউজিং অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান থেকে একজন পেশাজীবীকে বেছে নিতে পারেন। বাড়িওলার কাছে ব্যাখ্যা করুন যে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে সুরক্ষা আইন আছে তার আওতায় বাড়ি ভাড়া পাওয়ার অধিকার আপনার আছে। তাদের বলুন যে, একজন নবাগত হিসাবে আপনার জন্মস্থান এবং/অথবা জাতীয়তার কারণে আপনাকে বাড়ি ভাড়া দিতে অস্বীকার করা আইনবিরুদ্ধ (বৈষম্যের বিরুদ্ধে সুরক্ষার অন্য ব্যবস্থার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে লৈঙ্গিক অবস্থা; বিয়ে বা পরিবার সম্পর্কিত অবস্থা; জাতিগত পরিচয়; গোষ্ঠী, বর্ণ, জন্মগত জাতিসত্তা এবং বংশ পরিচয়; ধর্ম বা বিশ্বাস; বয়স; প্রতিবন্ধিতা; যৌন প্রবণতা; আয়ের উৎস; এবং রাজনৈতিক বিশ্বাস)। ক্রেডিট রেটিং এবং/কিংবা রেফারেন্স না থাকার অজুহাতে আপনাকে বাড়ি ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানানোর মধ্য দিয়ে তারা আসলে পরোক্ষভাবে আপনার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন কারণ আপনি কানাডায় নবাগত।

পরিবর্তে আপনি বাড়িওলাকে ব্যাংক স্টেটমেন্টের আকারে আপনার সঞ্চয়ের প্রমাণপত্র কিংবা (যদি চাকরি থেকে থাকে) আপনার নিয়োগপত্র, আপনার নিজ দেশের রেফারেন্সসমূহ, ব্যাংকের পুরনো চেকবই দেখাতে পারেন কিংবা একজন গ্যারান্টর বা যুগ্ম-স্বাক্ষরকারীর নাম দিতে পারেন (যুগ্ম-স্বাক্ষরকারী হলেন এমন কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যারা, আপনি অপারগ হলে যারা ভাড়া পরিশোধ করবে)। এর পরও যদি বাড়িওলা আপনার বিষয়টি বিবেচনায় অস্বীকৃতি জানায় এবং আপনি মনে করেন যে, এটি বৈষম্যমূলক তাহলে আপনার প্রদেশের মানবাধিকার কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। কমিশনই ঠিক করবে বাড়িওলা মানবাধিকার লংঘন করেছে কিনা। যদি আপনি জিতে যান তাহলে ওই প্রদেশের কোনও মানবাধিকার ট্রাইব্যুনাল আপনাকে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার জন্য, তাদের ভাড়াটে নির্বাচনের নিয়ম পাল্টানো কিংবা মানবাধিকার লংঘনের দায়ে আপনাকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বাড়িওলাকে নির্দেশ দিতে পারে। জেনে রাখা ভালোÑ এটি হতে পারে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

আর আপনার কখনই দুই মাসের বেশি বাড়ি ভাড়া অগ্রিম দেয়া উচিৎ হবে না। যেসব বাড়িওলা অভিবাসী ও শরণার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ অগ্রিম হিসাবে আদায় করেন, যেখানে অন্য বাড়িওলারা করেন না সে ক্ষেত্রে বেশি অর্থ আদায়কারীরাও আসলে মানবাধিকার সম্পর্কিত আইন লংঘন করেন। এ বিষয়ে আপনি আপনার প্রদেশের আবাসন বিষয়ক পরামর্শ দানকারী সংগঠন যেমন, সেন্টার ফর ইকুয়ালিটি রাইটস ইন অ্যাকমোডেশন অথবা মানবাধিকার বিষয়ক আইনি সহায়তা কেন্দ্রের পরামর্শ নিতে পারেন।

পরিস্থিতি ২: বাড়িভাড়ার কোনও আবেদনপত্রে আপনার বৈবাহিক অবস্থা, যৌন অভ্যাস, এবং/অথবা জাতিগত পরিচয় সম্পর্কিত প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত থাকলে অথবা যদি আপনি এমন কোনও ভাড়ার আবেদনপত্র পান যেখানে আপনার সামাজিক বীমার নম্বর দিতে বলা হয়েছে।

আপনাকে যা জানতে হবে:

বৈষম্যের বিরুদ্ধে সুরক্ষার যেসব ব্যবস্থা রয়েছে সেসব বিষয়ে (লৈঙ্গিক অবস্থা; বিয়ে বা পরিবার সম্পর্কিত অবস্থা; জাতিগত পরিচয়; গোষ্ঠী, বর্ণ, জন্মগত জাতিসত্তা এবং বংশ পরিচয়; ধর্ম বা বিশ্বাস; বয়স; প্রতিবন্ধিতা; যৌন প্রবণতা; আয়ের উৎস; এবং রাজনৈতিক বিশ্বাস) জানতে চাওয়া হয়েছে এমন আবেদনের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। বাড়ি ভাড়ার আবেদনে বৈষম্যবিরোধী সুরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত কোনও প্রশ্ন, যেমন, ‘আপনি কি অন্তঃস্বত্তা?’, ‘আপনার বয়স কত?’, ‘আপনি কি কানাডার নাগরিক?’ থাকলে এগুলি বৈষম্যমূলক বলে অথবা আপনার প্রতি একজন বাড়ির মালিকের বৈষম্য করার ইচ্ছার নমুনা হিসাবে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। তবে উল্লেখ করা দরকার যে, ক্রেডিট চেক করার অংশ হিসাবে আপনাকে কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে হবে যেমন, আপনার জন্ম তারিখ।

ওই ধরণের বাড়িভাড়ার আবেদন পেলে আপনি কী করতে পারেন:

ভাড়ার আবেদনপত্র যতদূর সম্ভব পুরোপুরি পূরণ করুন। কোনও ঘর ফাঁকা রাখবেন না। উদাহরণ স্বরূপ, যদি ফরমে কোনও কানাডীয় বাড়িওলার বা পেশাগত রেফারেন্স চাওয়া হয় তাহলে লিখুন যে, আপনি একজন নবাগত এবং আপনার কোনও কানাডীয় রেফারেন্স নেই। ফরমে যদি জানতে চাওয়া হয়, আপনি কানাডীয় কিনা তাহলে লিখুন, ‘না’ এবং আপনার জাতীয়তা লিখুন। মনে রাখবেন, ফরম অসম্পূর্ণ থাকলে বাড়িওলা সেটিকে আপনাকে বাড়ি ভাড়া না দেওয়ার অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করবে। বাড়িওলা যদি আপনাকে অন্যায়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে তাহলে আপনি তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন যদি ফরম পুরোপুরি পূরণ করা থাকে।

অনেক বাড়িভাড়ার আবেদনে আপনার সোশাল ইন্স্যুরেন্স নম্বর (এসআইএন) চাওয়া হতে পারে একথা বলে যে, আপনার ক্রেডিট রেটিং পরীক্ষা করার জন্য এটি দরকার। এটা জানা জরুরী যে, কারও ক্রেডিট পরীক্ষার জন্য বাড়িওলার এসআইএন নম্বর জানার দরকারই নেই। তাদের জন্য আপনার পূর্ণ নাম, বর্তমান ঠিকানা এবং জন্ম তারিখ জানাই যথেষ্ট।

কোনও বাড়িওলা যদি এসআইএন নম্বর দেবার জন্য চাপাচাপি করে তাহলে তা দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন (এবং বাড়ি ভাড়া না পাবার ঝুঁকি নিতে পারেন) অথবা তাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, তিনি কিভাবে এটির নিরাপত্তা রক্ষা করবেন যাতে কেউ এটি পেয়ে অপব্যবহার না করতে পারে?

কানাডায় যে কোন ভাড়াটে বা সম্ভাব্য ভাড়াটের কিছু আইনী অধিকার আছে। এসব অধিকার কেবল আপনার বাড়িভাড়া পাবার পরই প্রযোজ্য হবে এমন নয় বরং আপনি যখন বাড়িভাড়া পাবার জন্য হন্যে হয়ে খোঁজাখুজি করছেন তখনও এই আইনি অধিকার প্রযোজ্য হবে। কারণ বর্তমান কানাডার অনেক শহরেই বাড়িভাড়া পাওয়া এখন এক কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আবাসন নিয়ে বৈষম্য বিষয়ে এবার আমরা বাড়িভাড়া নিতে গিয়ে নবাগতরা যেসব সাধারণ বৈষম্যমূলক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন সেসব বিষয়ে আলোকপাত করবো। কানাডার মানবাধিকার আইনে যেসব কথা বলা আছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার বাইরেই ওইসব পরিস্থিতি সৃষ্ট করা হয়। পার্কডেল কমিউনিটি লিগ্যাল সার্ভিসের সামাজিক অধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা এবং ইনটেক সমন্বয়কারী ভিক নাটোলা বলেন, “এটি বাড়ির মালিকদের একটি বাজারে পরিণত হয়েছে। বাড়িওলারা এমন জিনিসও দাবি করতে সচ্ছন্দ বোধ করছে যা অবৈধ। অথবা তারা আইন না জানা বা নিজেদের অধিকার না জানা লোকেদের কাছ থেকে বিশেষ সুযোগ নিচ্ছে। আইন ও অধিকারের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে এবং সাহায্যের জন্য কোথায় যেতে হবে সেটি জেনে রাখা লোকেদের জন্য খুবই জরুরী।”

পরিস্থিতি ১: আপনি সামাজিক সহায়তার (ওয়েলফেয়ার) ওপর নির্ভরশীল বলে একজন বাড়িওলা যদি বাড়ি ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানান।

আপনাকে যা জানতে হবে: আপনার আয়ের বৃহদংশ সামাজিক সহায়তা থেকে আসে এজন্যে বাড়িওলা আপনাকে বাড়ি ভাড়া দিতে অস্বীকার করলে সেটা হবে আপনার মানবাধিকার লংঘন। দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো এটাই যে, সামাজিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল অবস্থায় বাড়ি ভাড়ার খোঁজ করার অর্থ হলো এমন কোনও বাড়িওলা বা আবাসিক সম্পদ ব্যবস্থাপককে খুঁজে বের করা যিনি আপনাকে বাড়ি ভাড়া দিতে রাজি হবেন।

আপনি কি করতে পারেন: বাড়িওলাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে, স্থানীয় সোশাল সার্ভিস থেকে প্রতিমাসে সরাসরি বাড়িভাড়া পরিশোধের ব্যবস্থা করা হলে আপনার সামর্থ নিয়ে তার উদ্বেগ প্রশমিত হবে কিনা। আপনি তাকে একজন যুগ্ম-স্বাক্ষরকারী বা নিশ্চয়তাদানকারীর নাম (তিনি হতে পারেন কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যিনি আপনার অপারগতায় বাড়িভাড়া পরিশোধ করবেন) দেয়ারও প্রস্তাব দিতে পারেন। উল্লেখ্য, সামাজিক সহায়তা নেওয়ার কারণে আপনাকে সরাসরি ভাড়া পরিশোধ করতে হবে বা যুগ্ম-স্বাক্ষরকারীর নাম দিতে হবে এমনটা কোনও বাড়িওলার জন্যই জরুরী নয়।

পরিস্থিতি ২: মেরামতির প্রয়োজনে যখনই আপনার ঘরে আসেন তখনই আপনার বাড়িওলা নিয়মিতভাবে এমন প্রশ্ন করেন যে, “আপনি কি কাউকে খুঁজে নিচ্ছেন?” অথবা “আপনার জন্য একজন বয়ফ্রেন্ড খুঁজে নেওয়ার এখনই সময়।” যদি বলেন, এধরণের প্রশ্ন আপনার জন্য অস্বস্তিকর, তাহলে সে বলবে, “আধুনিক হোন।” আর তারপর সে মেরামতির কাজ আর করবে না এবং আপনার ফ্ল্যাটেও আর আসবে না।

আপনাকে যা জানতে হবে: কোনও বাড়িওলার জন্য তার ভাড়াটেকে হয়রানি করা আইন অনুযায়ী মানবাধিকারের লংঘন। এক্ষেত্রে এটি সেক্স বা লৈঙ্গিক বৈষম্যের আওতায় পড়বে। এটিও যৌন নিবেদনের পর্যায়ে পড়ে যখন কোনও বাড়িওলা যিনি কোনও সুবিধা দেয়া বা না দেয়ার মত অবস্থানে থেকে অনাকাক্সিক্ষত জেনেও যৌন নিবেদনের দিকে এগিয়ে যান।

আপনি কী করতে পারেন: বাড়িওলার সঙ্গে আপনার কথোপকথনের বিষয়গুলি লিখে রাখুন। তাকে বলুন যে, আপনার একটি সমস্যা আছে (লিখিতভাবে যোগাযোগ করা সবচেয়ে ভালো, এতে রেকর্ড থাকে), প্রতিবেশিদের সঙ্গে কথা বলে দেখুন অন্য ভাড়াটেদেরও একইরকম সমস্যা আছে কিনা। আর আপনার শহরে বা প্রদেশে হাউজিং এনফোর্সমেন্ট এজেন্সিতে একটি অভিযোগ পেশ করে রাখুন। আপনি কমিউনিটি লিগ্যাল ক্লিনিক থেকে সহায়তা পাবার চেষ্টাও করতে পারেন। অনেক সময় একজন আইনজীবী বা আইনি কর্মীর পক্ষ থেকে পাঠানো একটি চিঠি বা একটি ফোন কলেও বাড়িওলার স্বভাব দ্রæত পাল্টাতে সহায়ক হয়ে থাকে।

পরিস্থিতি ৩: কোনও বাড়িওলা যদি বলেন, আপনি যে বাড়ি ভাড়া নিতে ইচ্ছুক সেটির বেডরুমের সংখ্যার বিচারে আপনার সন্তানের সংখ্যা অনেক বেশি।

আপনাকে যা জানতে হবে: বেশি সন্তান থাকা বা বাড়ি খুব বেশি ছোট হবার কারণে কোনও মালিক আপনাকে বাড়ি ভাড়া দিতে অস্বীকার করতে পারেন না, যদি না সেটা পৌরসভার স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পর্কিত বিধিবিধান লংঘন করে। বেশি সন্তান আছে এমন পরিবারের জন্য উপযুক্ত হবে বলে বাড়িওলা আপনাকে কেবল বিশেষ কিছু ফ্ল্যাট দেখাবেন এমন সুযোগও তাদের দেওয়া হয়নি। ছেলে ও মেয়ে শিশু এক বেডরুমে ঘুমাতে পারবে না এরকম কোন স্বেচ্ছাচারী বিধির কারণে কোনও বাড়িওলা আপনাকে বাড়ি ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন না কিংবা কোনও ফ্ল্যাট “শিশুদের জন অনুপযুক্ত’ এমন ঘোষণাও দিতে পারেন না। একইসঙ্গে কোনও আবাসিক সুবিধাকে তারা “শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য” অথবা “প্রাপ্তবয়স্কদের জীবনযাত্রা” বলে চিহ্ণিত করতে পারেন না। জেনে রাখুন যে, এসব বিজ্ঞাপনের অনেকগুলোই সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃতভাবে দেয়া হয় মূলত এমন ধারণা থেকে যে, এতে ভাড়াটেরা ফ্ল্যাটটি সম্পর্কে আগ্রহী হতে পারে।

আপনি কী করতে পারেন: যা কিছু ঘটেছে তা লিখে রাখুন। আপনি বাড়িভাড়ার জন্য যে আবেদন করেছেন তার কপি এবং বাড়িওলার সঙ্গে যেসব যোগাযোগ হয়েছে তারও কপি সংরক্ষণ করুন। এ সংক্রান্ত যে কোনও চিঠি, ই-মেল, টেক্সট মেসেজ, বাড়িভাড়ার বিজ্ঞাপন এবং সংশ্লিষ্ট সেটি কোনও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকলে তারও কপি সংরক্ষণ করুন। বাড়িওলা যদি বলেন, বাড়িটি আর ভাড়ার জন্য নেই, তাহলে সেটা সত্যি কিনা যাচাই করুন। বাড়িটি কি এখনও অনলাইনে তালিকাভুক্ত দেখাচ্ছে? এক্ষেত্রে আপনি কোনও বন্ধুকে দিয়ে ওই বাড়িওলাকে ফোন করাতে পারেন প্রকৃত সত্যটা বের করার জন্য।

যদি নিশ্চিত হন যে, আপনার পরিবারের জনবল কাঠামোর জন্যই বাড়িভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানান হয়েছে, তাহলে আপনি এক্ষত্রে তৃতীয় একটি পক্ষকে, যেমন কোনও হাউজিং হেল্প সেন্টারকে এ বিষয়ে জড়িয়ে নিতে পারেন। অনেক সময় বাড়িওলারা তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারেন যদি তারা বুঝতে পারেন যে, তারা যেটা করেছেন সেটা আইনবহির্ভূত।

উপসংহারে:

আবাসন বিষয়ে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এমন মনে হলে পরিস্থিতি যেটাই হোক সব লিখে রাখুন। কোথাও কোনও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করবেন কি করবেন না সেটা না ভাবলেও ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ রাখুন। নাটোলা ব্যাখ্যা করে বলেন, “প্রতিটি ঘটনার তারিখ, সময়, কার সঙ্গে কথা বলেছেন, সে কী বলেছিল, আপনার সঙ্গে আর কেউ ছিল কিনা এসব লিখে রাখা খুবই জরুরী।”

তার ভাষায়, “যদি কখনও পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে চান যেমন, আপনার পৌর সরকারের কাছে উপস্থাপন করা কিংবা যদি মানবাধিকার ট্রাইব্যুনালে অথবা বাড়ির মালিক ও ভাড়াটেদের বোর্ডে তুলতে চান তাহলে আপনি যদি লিখিত নথি উপস্থাপন করতে পারেন অর্থাৎ কোনও ঘটনাপঞ্জী বা বিবরণী দিতে পারেন তাহলে সেটি অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে। আপনি এমন একটি ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করবেন যেটি অর্থবহতা রাখে এবং সেটাই বলে দেবে যে, আপনি নির্ঝঞ্ঝাটে জীবন যাপন করতে চান কোনও হয়রানি হতে চান না।”

স্থানীয় হাউজিং হেল্প সেন্টার এবং হাউজিং অ্যাডভোকেসি দপ্তরের নাম ঠিকানাও নিজের কাছে রাখবেন। তারা আবাসনের বাসিন্দা ও ভাড়াটেদের জন্য সহায়ক সেবা (বিনামূল্যে) দিয়ে থাকে। সেইসঙ্গে তারা আপনার ভবিষ্যৎ ও বর্তমান বাড়িওলার সঙ্গে আলোচনা কিংবা মানবাধিকার সংস্থার কাছে অভিযোগ করার ক্ষেত্রেও সহায়তা করতে পারে। আপনি এসব পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতে পারেন।

নাটোলা বলেন, “কোনও বাড়িওলার বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে মানবাধিকারের বিষয় সংশ্লিষ্ট থাকলে সমঅধিকার ও বাস্তুসংস্থান সেন্টার তাদেরকে বিশেষ ধরণের সহায়তা দিতে পারে। আইনি সহায়তা ক্লিনিকের বাইরে প্রত্যেক নগর কাউন্সিলরের নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক কিছু সহায়তা কার্যক্রম থাকে। আপনার নগর কাউন্সিলরের কাছে যেতে পারেন। বড় বড় শহরে যেখানে বাড়ি ভাড়া পাওয়া সত্যিই কঠিন সেখানে হাউজিং হেল্প সেন্টার রয়েছে। আপনি সেখানেও যেতে পারেন এবং তাদের কাছ থেকে আপনি নির্দিষ্ট করে ইংরেজিভাষী এমন কোনও কর্মীকে সঙ্গে পাবেন যে আপনাকে সাহায্য করবে।”

নাটোলা বলেন, “বাসিন্দাদের জন্য প্রচুর সহয়ক উপকরণ আমাদের রয়েছে।” -সৌজন্যে : কানাডিয়ানইমিগ্রেন্ট.সিএ